somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাওন আহমাদ
স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়।তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়,তাকে সঙ্গে নিয়ে চলি।ভালো লাগে ভাবতে, আকাশ দেখে মেঘেদের সাথে গল্প পাততে, বৃষ্টি ছুঁয়ে হৃদয় ভেজাতে, কলমের খোঁচায় মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে প্রকাশ করতে...

অদ্ভুত সব গন্ধ পাই

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার অদ্ভুত এক অসুখ আছে। আমি প্রায়শই ঘোর লাগালো কিছু গন্ধ পাই। যে গন্ধ আমাকে এক ঝটকায় বহুবছর আগে ফেলে আসা বিভিন্ন স্মৃতি বিজড়িত স্থানে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়। আমি সেইসব জায়গায় চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে সরু একটা টানেলের ভিতর দিয়ে গভীর থেকে গভীরে তলিয়ে যেতে থাকি। তলিয়ে যেতে যেতে মস্তিষ্কে এলোমেলো ভাবে ঘুরতে থাকে সেই সময়ের সুন্দর-অসুন্দর স্মৃতিরা যা আমি বহুকাল ধরে পুষে রেখেছি। আমি ভীষণ স্মৃতিকাতুর মানুষ। স্মৃতি জমিয়ে রাখার জন্য আমার হরেক রকমের বয়াম আছে। সেখানে আমি আমার স্মৃতি গুলোকে খুব যত্নে পুষে রাখি।

তো যা বলছিলাম, আমার অদ্ভুত এক গন্ধের অসুখ আছে। যে গন্ধ আমাকে বর্তমান থেকে অতীতে নিয়ে বিচরণ করায়। একদিন মাগরীবের নামায আদায় করে রুমে বসে চা খাচ্ছিলাম হঠাৎ নাকে অদ্ভুত রকমের মায়া জড়ানো একটা গন্ধ পাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিলো গন্ধ টা আমার খুব কাছের, খুব আদুরে আর পরিচিত। আমি চোখ বন্ধ করে, বারবার নাক টেনে, গন্ধ শুকতে শুকতে চলে গেলাম আমার শৈশবে, আমার নানা বাড়িতে। যে বাড়িটার প্রত্যেকটা জায়গায় আমার স্মৃতির আনাগোনা। আমরা যখন নানা বাড়ি যেতাম তখন আমাদের নানী নিজ হাতে আমাদের রান্না করে খাওয়াতেন। নিজ হাতে কথাটি এই কারণে বললাম কারণ তার তখন যথেষ্ট বয়স হয়ে গিয়েছিলো। রান্না করার মতো অবস্থা তার ছিলো না। তাই আমার মামীরা তাকে রান্নার দায়িত্ব থেকে অবসর দিয়েছিলেন।

কিন্তু আমরা যখন বছরের নির্দিষ্ট একটা সময়ে নানাবাড়ি যেতাম তখন আমার নানীর কষ্ট হলেও আমাদের জন্য রান্না ঘরে ঢুকে যেতেন। নানীরা এমনই হয় আসলে, নাতীনাতকুরদের জন্য কলিজা খুলে দিয়ে দেন।আমার নানীও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। নানী রান্নাঘরে ঢুকে এটা-সেটা হাতড়ে, নিজ হাতে পাটায় মশলা পিষে তারপর রান্না করতেন। নানী যখন মশলা পিষতেন তখন আমি নানীর পাশে বসে মশলা পিষা দেখতাম। খুব সুন্দর একটা গন্ধ আসতো সেই পেষা মশলা থেকে। সন্ধ্যাবেলায় রুমে বসে চা খেতে খেতে এই গন্ধটাই আমি পাচ্ছিলাম।

এইতো সেদিন রাতে অফিস থেকে বের হয়ে বাস-স্টপের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ একটা গন্ধ পেয়ে থমকে গেলাম। এটা সেই গন্ধ, যে গন্ধটা কৈশরে আমি আমার পছন্দের মানুষের গা থেকে পেতাম। এতো গুলো বছর পর ভালোবাসাহীন ইট-কাঠের শহরে এই গন্ধ কিভাবে এলো! ভাবতে ভাবতে বাসে উঠে বসলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে।

মাঝেমধ্যেই আমার কর্পূর আর আগরবাতির গন্ধে ঘুম ভেঙ্গে যায়।মনে পড়ে যায় সেই শৈশবের কথা। যখন আমি লাশের ভয়ে লাশ দেখতে যেতাম না। আশেপাশে কেউ মারা গেলে কর্পূর আর আগরবাতির গন্ধে সারারাত জেগে পাড় করে দিতাম।


গন্ধ পাওয়ার এমন আরও অনেক ঘটনা আছে আমার। আমি আলু পোড়া আর কাপড় পোড়ানোর গন্ধ পাই, ধূপ জ্বালানোর গন্ধ পাই, মা-বাবার কাপড়ের গন্ধ পাই, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফুলের গন্ধ পাই। এসব গন্ধ পেতে পেতে আমি নিজেই মনে হয় একটা গন্ধ হয়ে গেছি। কিছুদিন আগে আমাদের অফিসের একটা মিটিং এ বস হুট করে বলে বসলেন, শাওন ভাইয়ের শরীর থেকে মিষ্টি একটা গন্ধ আসে। যা খুব কাছে গেলে অনুভব করা যায়। এটা শুনে আমার কলিগরা আমার দিকে ঢ্যাপঢ্যাপ করে তাকাচ্ছিলো। লজ্জায় মনে হচ্ছিলো আমি চেয়ারের নিচে ঢুকে যাই।

জানিনা এমন গন্ধ পাওয়ার বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যা আছে কিনা তবে হুটহাট এমন গন্ধ পেতে আমার ভালোই লাগে। এই গন্ধ গুলো আমাকে আমার অতীতে ভ্রমণ করায় সেই সাথে আমার স্মৃতি গুলোকেও জীবন্ত করে তুলে।
ছবিঃ গুগল
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৫১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=স্নিগ্ধ সকালে নিমন্তন্ন চায়ের=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৭ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩



ঘুম রেখে এসো দখিনের বারান্দায়, কী স্নিগ্ধ আলো,
উড়ছে চিল উঁচু তলা ছুঁয়ে, লাগবে তোমারও ভালো,
চা করেছি, চুলায় জল করছে টগবগ, দিয়েছি চা পাতা
তুমি এলেই কাপে ঢালবো, খুলবো প্রেমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এরই নাম স্বাধীনতা?

লিখেছেন জটিল ভাই, ২৭ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৮

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

ব্লগার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত বিরোধিতা ও ৮০০ কোটি টাকা গচ্ছা যাওয়ার কাহিনী!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৭ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০০


"ভারত আমাদের শত্রু যে প্রজন্ম তা বুঝতে পারবে তারাই হবে শ্রেষ্ঠ প্রজন্ম"- মওলানা ভাসানী। জুলাই অভ্যুত্থানের পিছনে শেখ হাসিনা রেজিমের দুঃশাসন ও বিগত ২/৩ টি নির্বাচনে ভারতের নগ্ন হস্তক্ষেপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিঙ্গেল বোর্ড কম্পিউটিং

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৭ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৫৩


বিগত বেশ ক'বছর ধরেই প্রযুক্তি বাজারে সিঙ্গেল বোর্ড কম্পিউটার (এস.বি.সি.) এর বেশ রমরমা অবস্থা চলছে। যারা প্রযুক্তি নিয়ে খোঁজ-খবর রাখেন তারা হয়তো জেনে থাকবেন মূলত রেসবেরী পাই ফাউন্ডেশনের উৎপাদিত পাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাউল এবং ইস্কনের দর্শন-সংস্কৃতি ইসলামের জন্য হুমকি - রিপ্লাই

লিখেছেন আজব লিংকন, ২৮ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৫৫

সুন্দর লিখেছেন।।
ইস্কন ও বাউল এক নয়।।
কিন্তু আপনি যা বুঝাতে চাচ্ছেন তার সাথে আমি অনেকটাই একমত। কিছু মানুষের ইসলামের নামে অন্য মতাদর্শীদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং সুক্ষ্ম কৌশলে নির্যাতন ও নিপীড়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×