somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এপার্টমেন্ট কিনতে চান? কয়েকটি ফ্রি উপদেশ: বুকিং-এর পুর্বে একটু সচেতন হোন

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শুরু হয়েছে রিহ্যাব মেলা। লক্ষ লক্ষ টাকা ছাড়, বিদেশ ভ্রমন আর কত প্রলোভন পেপার-টিভি খুললেই। জায়গা কিনে ঢাকা শহরে বাড়ি করার স্বপ্ন দেখাও এখন বেশীর ভাগ মানুষের সাধ্যের বাইরে। তাই খুব সহজেই মধ্যবিত্ত মানুষ দালান নামের বস্তিতে ছোট একটি খুপরি কিনতে যেয়ে এসব লোভে পড়ে যায়। সঠিক বিচারের সুযোগ-অভিজ্ঞতা না থাকায় যাবতীয় সঞ্চয় এবং ব্যাঙ্ক ঋণের আকারে আগামী ৫-১০ বছরের সম্ভাব্য সঞ্চয় বিনিয়োগ করে এসব ভদ্ররূপী প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে যান এবং নাকের জল-চোখের জল এক করে হা-হুতাশ করতে থাকেন। এরি প্রেক্ষিতে নিজের এবং কাছের বন্ধুদের অভিজ্ঞতার আলোকে কয়েকটি উপদেশ, যারা এপার্টমেন্ট কিনতে যাচ্ছেন, তাদের জন্য।

সর্বশেষ কিস্তি সময়ের সাথে নির্ধারিত না করে হস্তান্তরের সাথে সম্পৃক্ত করুন। ধরুন প্রস্তুতকারী (ডেভেলপার) জুন ২০১১ সালে বিল্ডিং হস্তান্তর দেখিয়ে শেষ কিস্তি করলো ২০১১ সালের মে বা জুন মাসে। আপনি এই কিস্তিতে একটি বড় পরিমানের টাকা (৫-১০ লাখ) রাখার চেষ্টা করুন এবং শর্তটি এভাবে লেখান যে বিল্ডিং টি হস্তান্তরের জন্যে তৈরী হওয়া সাপেক্ষে আপনি এই কিস্তি দিবেন। এখন কোন কারনে যদি তারা ছয়-নয় মাস দেরী করে আপনি এই টাকা দেবার জন্যে বেশী সময় পাবেন। শুধু তাই নয়, আপনার হাতে একটি প্রস্তুতকারী র উপর চাপ প্রয়োগের অন্তত একটি উপায় থাকল। একটি অংশ যদি ব্যাঙ্ক লোন হয়ে থাকে, এই কিস্তিটি অবশ্যই লোনের টাকা থেকে দিন। কিছু টাকার সুদ পরে শুরু হলো।

যে সাইজের জন্যে মুল্য নির্ধারন হবে তার কত অংশ আপনার নিজস্ব (এপার্টমেন্টের ভিতরে) এবং কতটুকু সাধারন (কমন) তা সুস্পষ্ট ভাবে লিখিত করুন। এবং সাধারন জায়গা কি কি ধরে হিসাব করা হবে সেটি নির্ধারন করে নিন। পরবর্তীতে এটি মেপে বুঝিয়ে নিবেন। এই জায়গায় ডেভেলপাররা ভাল ছিল মারে।

জমিটির মালিক কে এবং তিনি কয়টি ফ্লাট পাবেন জানতে পারলে ভালো হয়। ধরুন দশ ফ্লাটের বিল্ডিং-এ জমির মালিকের ৫টি ফ্লাট। সেক্ষেত্রে তিনি পরবর্তীতে আপনাদের বিভিন্ন ভাবে প্রভাব খাটাবেন। যদিও এ ক্ষেত্রে খুব বেশী কিছু করার থাকে না।

বুকিং দেবার আগে অবশ্যই প্রকল্পের অবস্থান দেখে নিবেন। ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে এমন প্রকল্প হলে ভাল হয়।
উক্ত প্রস্তুতকারীর এর অন্য কোন হস্তান্তরিত প্রকল্পের গ্রাহকের সাথে কথা বলার সুযোগ বের করে তার অভিজ্ঞতা জানুন। আপনার কাছের কেউ এপার্টমেন্ট কিনে থাকলে তাদের অভিজ্ঞতা জানুন এবং পরামর্শ গ্রহন করুন।

প্রস্তুতকারীর নামে প্রভাবিত হবেন না। আপনার রাজী হওয়া বিষয় গুলো চুক্তিপত্রে সঠিক ভাবে লেখা হলো কিনা দেখে নিন। বিশেষ করে লিফট, জেনারেটর, বিদ্যুতের তার এবং পানির পাইপ ভালো কম্পানীর কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন।

বুকিং যখন দিয়েই ফেলেছেন, অন্য ক্রেতা (আপনার হবু প্রতিবেশী)দের সাথে এবং জমির মালিকের সাথে পরিচিত হউন। জমির মালিকের সাথে সমঝোতা করে প্রস্তুতকারীর কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্যে একজন অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারকে পরামর্শক (কন্সাল্ট্যান্ট) হিসাবে নিয়োগ দিতে পারলে খুব ভালো হয়।

এবার সংক্ষেপে আমার পরিচিত কয়েকজনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করিঃ
একজন ২০০৫ সালে ফ্লাটের দাম পরিশোধ করে ফ্লাট হস্তান্তর পেয়েছেন ২০০৯ সালে।
একজন সচেতন জমির মালিক চারতলা হয়ে যাবার পর বূয়েট থেকে টেস্ট করিয়ে দেখেন নিম্নমানের রড ব্যবহার করা হয়েছে। এবং তারা চার তলার বেশী করা যাবে না বলে মতামত দিয়েছে। এটি ছয় তলা ডিজাইন ছিল।

একজন জমির মালিক বাড়ি হস্তান্তরের পর চারটি ফ্লাট একটি এনজিও কে রেস্ট হাউস করার জন্য ভাড়া দিয়েছেন। এখন এনজিওর প্রশিক্ষণার্থী (যারা গ্রাম থেকে আসেন) ৪০জন থাকেন আর তাদের ব্যাবস্থপনার জন্য ১০ জন স্টাফ । অন্য এপার্টমেন্ট-এ উঠা পরিবারগুলোর ত্রাহি মধুসুধন অবস্থা। অথচ এটি একটি আবাসিক বিল্ডিং।

আমার এক কলীগ মার্চ ২০০৯-এ নিজের এপার্টমেন্ট-এ উঠার কথা। এখন পর্যন্ত (মার্চ ২০১০)উঠতে পারে নি।

আমার এক বন্ধু ফ্লাট হস্তান্তর পাবার আশ্বাসে দুই মাস পুর্বে ভাড়া বাসা ছাড়ার নোটিস দেন। নির্ধারিত সময়ে ফ্লাট পায় নি। অপরদিকে সেই বাসাও ভাড়া হয়ে গেছে। পরে অন্য একটি বাসা শেষ মূহুর্তে এসে ভাড়া করে আরো তিন মাস ভাড়া বাসায় থাকেন।

প্রায় সব গুলি ক্ষেত্রে প্রস্তুতকারী (ডেভেলপাররা) বেশ পরিচিত। এদের বিজ্ঞাপন গুলি সহজেই গ্রাহক কে আকৃষ্ট করে। এদের কেনার আগে ও পরের কথার মধ্যে অনেক ফারাক। এদের কাস্টমার সার্ভিস মানে শুধু বকেয়া টাকা আদায় করা।

আপনি যদি এতদূর পর্যন্ত পড়েই থাকেই তাহলে বুঝা যাচ্ছে এ বিষয়ে আপনার আগ্রহ আছে। আপনাকে নিরুতসাহিত করা আমার উদ্দেশ্য নয়। একটু সচেতন হলে যদি আপনার ভোগান্তি যদি কিছুটাও কমে তাহলেই আমি খুশি। আপনার জন্য শুভ কামনা।


সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১০ বিকাল ৫:৩৯
৩৩টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×