অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি খবর আমি যখন পাই তখন সবে মাত্র অফিস শেষে বাসায় ফিরেছি । প্রথমে বুঝতে চেষ্টা করলাম কোন অভিজিৎ ? ব্লগ লিখছি আজ প্রায় বছর ছয়, সাত হলো । কম বেশি অনেককেই চিনি । আমি ব্যক্তিগত ভাবে একটু অলস হওয়ায় বিভিন্ন ব্লগে ছুটে বেড়াই না । ঘুরে ফিরে তিনটি ব্লগেই লিখে চলেছি । তার মধ্যে প্রথম দুটো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাকি আছে এই ব্লগটি । তাও আবার মডারেটরের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় এই ব্লগটিও ছেড়ে দেবের হুমকি দেওয়ার একদিন পর মডারেটর তার লাল রং এর সংকেত বদলে নীল রং করে দিয়েছে ।
মডারেটরেরই বা কি দোষ আমি জন্ম থেকে ঠোট কাটা হওয়ায় কারো সঙ্গেই বেশি দিন বনিবনা হয় না । আপোষ করতে শিখিনী তাই । তারপর উপর বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়ে সবাই কমবেশি অতন্কে আছে ।
অভিজিৎ কে চিনতে পারলাম না । কিন্তু খবরটি শুনার পর থেকে অস্থির হয়ে পরলাম । অভিজিতের আহত স্ত্রীর রক্ত মাখা পোষাকে সাহায্যের জন্য বাড়িয়ে রাখা হাত দেখে আমার বুক হাহাকার করে উঠল । সারারাত ঘুমাতে পারলাম । শুক্রবারটিও ক্যামন যেন কাটল । কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলাম না । পরিস্থিতিটা ঠিক লিখে বোঝাতে পারবো না । অভিজিৎ সম্পর্কে ধীরে ধীরে জানতে পারলাম । কিছুটা মিডিয়া, কিছুটা ব্লগ আর বাকিটা ফেসবুকের কল্যাণে । সব জানার পর আমার অভিজিতের উপর রাগ চাপল । আর অভিজিতের পরিবারের জন্য হলো দু:খ ।
অভিজিতের এই পরিণতির জন্য আমি প্রথমেই অভিজিতকে দায়ী করবো । রাজীব বা থাবা বাবার মৃত্যুর পর আমি লিখেছিলাম, আর যাই করুণ না কেন মানুষের বিশ্বাস নিয়ে খেলা করা ঠিক নয় । ধর্ম হচ্ছে যার যার বিশ্বাস । এবং একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার এখানে আঘাত করা ঠিক নয় । সবাই মুহাম্মদ নন যে সব কিছু হাসি মুখে মেনে নেবে । বাংলাদেশেও শিব সেনাদের মতো হাজার হাজার মানুষ বাস করে যারা সব কিছু সহজে নেয় না । যার যার কৃতকর্মের ফল তাকে ভোগ করতে হবে ।
অভিজিৎ তার কর্মের ফল ভোগ করেছে । নিরীশ্বরবাদ, নাস্তিকতাবাদ নিয়ে আমার একটি লেখা এই ব্লগেই রয়েছে । সেখানে আমি লিখেছি - "নাস্তিকরা কোন বিশেষ মতাদর্শের অনুসারী নয় এবং তারা সকলে বিশেষ কোন আচার অনুষ্ঠানও পালন করে না। অর্থাৎ ব্যক্তিগত ভাবে যে কেউ, যে কোন মতাদর্শে সমর্থক হতে পারে,নাস্তিকদের মিল শুধুমাত্র এক জায়গাতেই, আর তা হল ঈশ্বরের অস্তিত্ব কে অবিশ্বাস করা । একবিংশ শতাব্দীতে কয়েকজন নাস্তিক গবেষক ও সাংবাদিকের প্রচেষ্টায় নাস্তিক্যবাদের একটি নতুন ধারা বেড়ে উঠেছে যাকে "নব-নাস্তিক্যবাদ" বা "New Atheism" নামে ডাকা হয়। এরাই এখন নাস্তিকবাদ নিয়ে ফেসবুক,টুইটার আর ব্লগে নাড়াচাড়া করছে ।
নাস্তিকবাদের ভিত্তি হচ্ছে ঈশ্বর বা স্রষ্টার অস্তিত্বকে অবিশ্বাস করা । কিন্তু নাস্তিকবাদের কোথাও নেই যে, এক জন নাস্তিক কোন আস্তিককে গালাগালি করবে । কিংবা ঈশ্বর বা স্রষ্টার ব্যাঙাত্তক উক্তি বা হাসি তামাশা করবে । কিন্তু বাস্তবে তাই হচ্ছে যে, ক'জন নামধারী নাস্তিক ফেসবুক বা টুইটারে কিংবা ব্লগে রয়েছে তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে । অন্যের ধর্মবিশ্বাসে আঘাত করা । বিশেষ করে মুসলমানদের এরা বিশেষ কোন কারণে টার্গেট করে নিয়েছে ।"
অভিজিত জন্মসূত্রে হিন্দু তার পাসপোর্টেও খুব সম্ভব ধর্মের যায়গায় সনাতন লেখা । অথচ তিনি নিজেকে নাস্তিক দাবী করেছেন । অন্য সব গো মূর্খ নাস্তিকদের মতো ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করেছেন । গালাগালি করেছেন । রাজীবের মতো ফেক আইডি খুলে সেখানে কোরআন কে বলেছেন, নাটকের পাণ্ডুলিপি । মুহাম্মদের জীবন ও তার স্ত্রীদের নিয়ে ও নানা কটূক্তি করছে । যা কিনা এইথিজম’(Atheism) বা নাস্তিকবাদের কোন সংজ্ঞায় পরে না ।
কেউ ঈশ্বর বা স্রষ্টায় বিশ্বাস না করতেই পারে তাই বলে যারা বিশ্বাসী তাদের বিশ্বাস নিয়ে গালাগালি করার অধিকার রাষ্ট্র কাউকে দেয়নি । বাংলাদেশের গুটি কয়েক নাস্তিকের বিশ্বাসই জন্মে গেছে যে, নাস্তিক মানেই হচ্ছে ইসলাম ও মুসলমানদের গালিগালাজ করা । শিক্ষার অভাব হলে যা হয় আর কি ? কি আশ্চর্যজনক ব্যাপার দেখুন , এরা নাস্তিক অথচ জন্মসূত্রে পাওয়া নাম উপাধি এফিডেফিট করে পরিবর্তন করে না । এর মানে হচ্ছে , সময় সুযোগ হলে আবার ধর্মের ঘাটে ভিড়ে যাবো । মুখে নাস্তিক অথচ নির্লজ্জের মতো ধর্মের লেবাস না সারা জীবন বয়ে চলে । করুণা হয় এদের জন্য । কোন কাজই ঠিক মতো করতে পারে না । কেউ নাস্তিক হবে নাকি আস্তিক হবে এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার । কিন্তু অন্য-মানুষের বিশ্বাসে আঘাত করলে বিষয়টা আর ব্যক্তিগত থাকে না । হয়ে যায় সামাজিক সমস্যা । আর এ সমস্যা যদি রাষ্ট্র দক্ষ হাতে সমাধান করতে না পারে তা হলে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটতেই থাকবে ।
এতক্ষণ যা লিখলাম, তাতে আস্তিক ভাইয়েরা আমাকে হয়তো বাহবা দিচ্ছেন , থামুন পুরোটা পড়ুন তারপর বাহবা দিন । আপনাদের প্রতি প্রশ্ন , ধর্মের মালিক কে ? কে ধর্ম নাজিল করেছেন ? কে ধর্ম টিকিয়ে রেখেছেন ? উত্তর তো একটাই স্রস্টা বা আল্লাহ্ । তিনিই সব কিছু নির্ধারণ করেন । ভাল, মন্দ , উন্নতি অবনতি কিছুই তার ইশারা ছাড়া হয় না । তবে কেন আপনারা নাস্তিকদের ব্যাপারটা স্রস্টা বা আল্লাহর উপর ছেড়ে দেন না ? নাকি স্রস্টা বা আল্লাহর উপড় আস্তা কম ? তার উপর আস্তা রাখা তো হচ্ছে আস্তিকদের জীবনের সবচাইতে বড় পরীক্ষা । কেউ যদি স্রস্টা বা আল্লাহকে গালাগালি করে তা হলে তার ও তো লাগার কথা । তারও তো ব্যথিত বা ক্ষুব্ধ হবার কথা । কৈ তিনি তো নাস্তিকদের খাবার দাবার উন্নতি কিছুই বন্ধ করে দেননি । পৃথিবীর মাত্র ওয়ান থার্ড হচ্ছে মুসলিম বাকিরা তো সবাই বিধর্মী । মুসলমানদের তুলনায় তো তারাই বেশি শক্তিশালী । এর কারণ কি ? খুঁজুন ভাল করে খুঁজুন উত্তরটা নিজেই পেয়ে যাবেন । উত্তরটা হচ্ছে এরা ধর্ম নিয়ে এতোটা বাড়াবারই করে না । যতোটা না মুসলমানরা করে । দেশে তো আইন আদালত রয়েছে - কৈই দেখলাম না তো কেউ রাজীব বা অভিজিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে থানায় গিয়ে মামলা করেছেন । যদি প্রমাণসহ মামলা করতেন তা হলে তো আর এসব হত্যাকাণ্ডের বোঝা কাঁধে নিতে হতো না । ইসলাম সব চাইতে বড় অপরাধ হচ্ছে, নর হত্যা । আর সেই কাজটিই কিনা আস্তিকদের দিয়ে ইবলিস মিয়া দিব্যি করিয়ে নিচ্ছে । এ দেশের কম জানা আস্তিকদের জন্য ও করুণা হয় ।
যে কোন হত্যাকাণ্ডই জঘন্য অপরাধ । আমি একজন ব্লগার হিসাবে চাই অভিজিতের হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত রহস্য বের করা হোক । কেননা এই পর্যন্ত যাই মিডিয়াতে প্রচার হচ্ছে তার সবাই অনুমান ভিত্তিক । কেউ ই সঠিক ভাবে বলতে পারেনি অভিজিতকে প্রকৃত পক্ষে কারা হত্যা করেছে । যারা মৌলবাদীদের দোষ দিচ্ছে তারা অনুমানের উপর ই দিচ্ছে । যেহেতু অভিজিত ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে লিখত তাই তাকে মৌলবাদীরাই হত্যা করছে । এটা অনুমান ভিত্তিক ধারণা । আশা করবো আইন শৃঙ্খলা বাহিনী । খুনিদের ধরতে সক্ষম হবে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:০২