এরা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগীতায় যেতে চায় না। আপনি মনে করেন, টেলিটক যদি পুরোদমে মাঠে নামতো- এরা কেউ কি টিকতে পারতো?? যে অপারেটর কোম্পানীগুলো এখানে ব্যবসা করছে, তাদের সরাসরি আয়ের উৎস এদেশের মানুষ। তারা প্রচুর বিনিয়োগ করেছে, কিন্তু সেটা খরচ হচ্ছে কোথায়? ঐ টাকার কতটুকু এদেশে থাকছে?
ভেন্ডর কোম্পানী গুলো তাদের ইকুয়েপমেন্ট বিক্রি করছে; এর দাম কত? গ্রামীন ব্যবহার করে এরিকসন, বাংলালিংক সিমেন্স, এরিকসন ও হুওয়ায়েই ইকুয়েপমেন্ট। নেটওয়ার্ক তৈরিতে যে ইকুয়েপমেন্ট লাগে সেগুলো হচ্ছে বিটিএস, বিএসসি, এমএসসি, এইচএলআর, আইএন প্রভৃতি। প্রতিটির দাম আকাশচুম্বি। একটু উদাহরণ দেই, সিমেন্স এর একটা বিটিএস এর দাম ৫০ লক্ষ টাকা, এরকম বিটিএস বাংলালিংক কিনছে মাত্র দুটো বিভাগের(ঢাকা ও খুলনা) জন্য মোট প্রায় ১৭০০ টা। সারা দেশে তাহলে তাদের কটা বিটিএস আছে, চিন্তা করুন? আর গ্রামীন ফোন, তাহলে সারা দেশে তার নেটওয়ার্ক বিস্তার করতে কতটা বিটিএস বসিয়েছে, একবার ভাবুন। এর বাইরে অন্য ইকুয়েপমেন্ট তো আছেই। ট্রান্সমিশনও প্রতি বিটিএস সাইটে, বিএসসি সাইটে করতে হয়। বিটিএস এর চেয়ে বিএসসির দাম বেশি, তার চেয়ে এমএসসির। এর বাইরে আছে সফটওয়্যারের দাম। একটা উদাহরণ দেই, আইএন এর একটা সফটওয়্যার আপগ্রেডেশনের জন্য ভেন্ডর কোম্পানি একটি আইএন এর চেয়ে বেশি দাম(কয়েক লাখ ইউরো) নেয়। এবার সর্বমোট বিনিয়োগটা অনুমান করতে পারছেন?
এখন কথা হচ্ছে, এই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ ওরা এখানে খাটিয়েছে কেন? কারণ, তারা খাটিয়েছে এটা জেনে যে, সে মুনাফা করতে পারবে; নিশ্চয় আমরা দূরদূরান্তে বসে আরামে মোবাইলে কথা বলতে পারবো, সেজন্য না এবং এটুকু জেনে রাখুন, এই কলের মাধ্যমেই গ্রামীন ফোন ইতিমধ্যেই তার প্রায় পুরা বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে। তারমানে, এই ক'বছরে আমাদের দেশের মানুষের পকেট থেকে কত বিলিয়ন টাকা তারা হাতিয়ে নিয়েছে হিসাব করুন!!!
আর, বাংলালিংক যদি লসেও থাকে, তাতে আমাদের কি কোন লাভ হয়েছে? তারাও কিন্তু এই মানুষের পকেট থেকেই তো টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে! কেনাবেচার যে কথা হচ্ছে, সেটা বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির একটা অতি সাধারণ ও স্বাভাবিক ঘটনা। বাংলালিংক এই দৌড়ে টিকতে না পারলে হয়তো বিক্রি করে দিবে কোম্পানি, যেমনটা ক’দিন আগে করেছে ওয়ারিদ এবং এর মাধ্যমে তার বিনিয়োগকৃত টাকা তুলেই নিয়ে যাবে, সে টাকা তো আর এদেশে থাকছে না! আর গ্রামীন যেহেতু লিডিং, তারা মনোপলির দিকে যাবে। এগুলো সবই ব্যবসা। আর আমরা হচ্ছি সেই ব্যবসার মূল সোর্স মানে মূল অর্থ যোগান দাতা। এবার ভারতকে দেয়া হচ্ছে টেলিকরিডোর। ভারতী এয়ারটেল ও রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্স যৌথভাবে বিটিআরসির কাছে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের টেলিকরিডোর স্থাপন করার অনুমতি চাওয়ায় সরকার এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি। তবে এ বিষয়ে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে।
এয়ারটেল সম্প্রতি বাংলাদেশের ওয়ারিদের ৭০ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়েছে। এই শেয়ার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এয়ারটেল গত বছরের শেষ দিকে টেলিকরিডোর দেয়ার আবেদন করে। জানা গেছে, এ করিডোর দিয়ে তারা ফাইবার অপটিক ক্যাবল স্থাপন করে উত্তর-পূর্ব ভারতের ৭ রাজ্যের সঙ্গে টেলিযোগাযোগ সহজ ও সস্তা করতে চায়। তারা আসামে টেলিকরিডোরের জন্য দুটি রুটের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো কলকাতা-মেহেরপুর-ঢাকা-জাফলং এবং অন্যটি কলকাতা-মেহেরপুর-ঢাকা-কুমিল্লা-আগরতলা রুট। বর্তমানে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো ভিস্যাটের মাধ্যমে ভারতের কেন্দ্র ও বহির্বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত, যা খুবই ব্যয়বহুল।
বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই করিডোর নেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতে টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট ইত্যাদি সস্তা হবে ও বিনিময়ে বাংলাদেশ কিছু চার্জ বা ভাড়া পাবে। কিন্তু এর মাধ্যমে আবার উত্তর-পূর্ব ভারতের স্বাধীনতাকামীদের কথোপকথন মনিটরিং থেকে শুরু করে ফাইবার অপটিক কেবলের টেলিকরিডোরের নিরাপত্তার নামে বাংলাদেশের ওপর ভারতের সামরিক ও টেকনোলজিক্যাল নজরদারি এবং নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হবে। অন্যদিকে দেশের যোগাযোগ খাতের ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ খর্ব হবে এবং তা বিপজ্জনকভাবে প্রতিবেশীর হাতে চলে যাবে।
ভারতী এয়ারটেল ভারতের সর্ববৃহত্ টেলিকম কোম্পানি। এর গ্রাহকসংখ্যা ১১ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি। কোম্পানিটি সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। ফলে মুনাফা বাড়াতে দেশের বাইরে বিনিয়োগ করার উদ্যোগ নেয়। দক্ষিণ আফ্রিকার এমটিএন মোবাইল কোম্পানির সঙ্গে ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের মার্জার বা একীভূত হওয়ার প্রস্তাবনা ব্যর্থ হওয়ার পর ওয়ারিদের ৭০ শতাংশ শেয়ার কিনে কার্যত বাংলাদেশে একটি মোবাইল কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। প্রশ্ন উঠেছে, ১৫ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে এরই মধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহকসংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ, বাংলালিংকের গ্রাহকসংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ, একটেলের গ্রাহকসংখ্যা ৮৮ লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার পরও কেন কোম্পানিটি বাংলাদেশের বাজারে বিনিয়োগ করতে এলো?
এর পেছনে মূলত দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, বাংলাদেশের মোবাইল কোম্পানিগুলোর গ্রাহকসংখ্যা অনেক হলেও এর ঘনত্ব বা টেলিডেনসিটি ভারতের তুলনায় এখনও অনেক কম। ভারতের টেলিডেনসিটি যেখানে শতকরা ৪৬ ভাগ, বাংলাদেশে সেখানে মাত্র ৩২ ভাগ। ফলে এয়ারটেলের পক্ষে সুযোগ রয়েছে এর গ্রাহকসংখ্যা আরও বাড়ানোর। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ফাইবার অপটিক কেবল ভারতের কেন্দ্র থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতে নিয়ে যাওয়া এবং সেখানকার বিশাল বাজার ধরা।
ওয়ারিদ সূত্র থেকে জানা যায়, ভারতী এয়ারটেল এরই মধ্যে বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী পাঠিয়েছে। তারা কাজে যোগও দিয়েছে। ওয়ারিদের শেয়ার কেনার ক্ষেত্রেও এয়ারটেল কৌশলের আশ্রয় নেয়। ওয়ারিদের মোট মূল্য ১ কোটি টাকা দেখিয়ে মাত্র ৭০ লাখ টাকা বা ১ লাখ ডলারের বিনিময়ে ওয়ারিদ টেলিকমের ৭০ ভাগ শেয়ার কিনে নেয়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, ওয়ারিদ একটি লোকসানি কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে, ফলে টোকেনমূল্য দিয়ে ওয়ারিদকে এয়ারটেল কিনে নিচ্ছে। পরে এয়ারটেল ওয়ারিদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের জন্য আরও ৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে বলে বিটিআরসিকে জানিয়েছে।
কিন্তু ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ওয়ারিদের মালিক ধাবি গ্রুপের স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুসারে ওয়ারিদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে ধাবি গ্রুপের ৭৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার কথা। প্রশ্ন উঠেছে এই ৭৫ কোটি ডলার গেল কোথায়? ওয়ারিদ কি এতই দেনাগ্রস্ত যে এর দাম এখন মাত্র ১ লাখ ডলার? অথচ নেটওয়ার্কের কাজে ওয়ারিদ এরিকসন বা মটোরোলার কাছ থেকে যেসব যন্ত্রপাতি কিনেছে সেগুলোর দাম হিসাব করলেও তো ৫০ থেকে ৬০ কোটি ডলারের কম হবে না! ওয়ারিদের ব্যবহৃত প্রায় তিন হাজার বিটিএসের এক একটির দামই ৫০ হাজার ডলার, সেই বিটিএসগুলোর কন্ট্রোলার হিসেবে ব্যবহৃত মোট ২৫টি বিএসসি’র এক-একটির দাম কমপক্ষে আড়াই লাখ ডলার, এর সঙ্গে যুক্ত হবে এমএসসি, আইএন, ভাস, ট্রান্সমিশন ইকুইপমেন্ট ইত্যাদির মতো আরও মূল্যবান যন্ত্রপাতির দাম। সঙ্গে রয়েছে ব্র্যান্ড ভ্যালু, লাইসেন্স ফি ইত্যাদির হিসাবও। এ বিষয়ে ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিষয়ক ওয়েবসাইট ভিসি সার্কেল একটি হিসাব প্রকাশ করে যেখানে বলা হয়, ‘ওয়ারিদের সম্পদের মূল্যায়ন করে বলা যায় এর পরিমাণ ৫০ থেকে ৫৫ কোটি ইউএস ডলার হবে, ফলে ভারতী এয়ারটেলকে ৩০ থেকে ৩৫ কোটি ডলারে ওয়ারিদের ৭০ ভাগ শেয়ার কিনতে হতে পারে।’
তাহলে এই ১ লাখ ডলার বা ৭০ লাখ টাকার মতো কম দাম দেখানোর রহস্য কী? এর আসল বিষয় হলো বিটিআরসি’র একটি নিয়ম—বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১-এর ধারা ৩৭(১) অনুসারে বিটিআরসি থেকে লাইসেন্স পাওয়া কোনো কোম্পানি অন্য কোনো কোম্পানিকে লাইসেন্স বিক্রি করতে পারবে না। কিন্তু ৩৭(৩)-এর ঝ উপধারা অনুসারে শেয়ার হস্তান্তর করতে পারবে। আর এই শেয়ার হস্তান্তরের সময় শেয়ারের মূল্যের ৫.৫ ভাগ বিটিআরসিকে দিতে হবে। এখন ওয়ারিদের ৭০ ভাগ শেয়ারের মূল্য ৩০ কোটি ডলার দেখালে এর ৫.৫ ভাগ অর্থাৎ ১ কোটি ৬৫ লাখ ডলার বা ১১৫.৫ কোটি টাকা বিটিআরসিকে দিতে হতো। কিন্তু শেয়ারের মূল্য নামমাত্র ৭০ লাখ টাকা দেখানোর কারণে এখন বিটিআরসিকে দিতে হবে ৭০ লাখ টাকার ৫.৫ ভাগ অর্থাৎ মাত্র ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
মূল বিষয়টা আরেকটু পরিষ্কার করার চেস্টা করছিঃ
এখানে দু'ধরণের কোম্পানী আছে- অপারেটর(জিপি, বিলিংক, একটেল, ওয়ারিদ, সিটিসেল ইত্যাদি) ও ভেন্ডর(সিমেন্স, এরিকসন, হুওয়ায়েই ইত্যাদি)। অপারেটর একটি দেশী ও বাকিগুলো প্রধানত বিদেশী। দেশী, বিদেশী সব অপারেটরই ইকুয়েপমেন্টের জন্য বিদেশী কোম্পানীর উপর নির্ভরশীল। এই ব্যবসার মূল লক্ষ্য ও উৎস অর্থের যোগানদাতা গ্রাহক(আমাদের দেশের জনগণ)। শুরুতে প্রতিটি অপারেটর প্রচুর বিনিয়োগ করে তার বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পাবার সম্ভাবনা ও মুনাফার সম্ভাবনা পরিমাপ করেই, কারণ তারা এখানে ব্যাবসা করতে এসেছে- কোন দাতব্যালয় খুলতে নয়। সেই তুলনায় ভেন্ডরের বিনিয়োগ কম বা নেই বললেই চলে। (হুওয়ায়েই এর অবশ্য প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশী)। ইকুয়েপমেন্ট বিক্রির পুরো টাকাটা তাদের পকেটে। অপারেটর তার বিনিয়োগের বড় অংশ বলতে গেলে সিংহভাগ খরচ করে ইকুয়েপমেন্ট কিনতে। সেটা চলে যায় বিদেশী ভেন্ডর কোম্পানীতে।
বড় মাপের কোম্পানীতে লাভ-লোকসানের হিসাব একটু অন্যরকম। এমন অনেক ইনভেস্ট তারা করে, যার মুনাফা হয়তো তাদের হাতে আসবে ১০/১৫ বছর পরে বা তারও আরো পরে। তাদের ইনকাম ফোরকাস্টিং এর একটা বিষয় থাকে। গ্রামীনফোনও কিন্তু বিগত বছরগুলোতে বিনিয়োগের অনেক পিছনে পিছনে দৌঁড়িয়েছে। তারপর বর্তমানে এসে বিনিয়োগকৃত টাকা তুলে ফেলেছে। এই বছরগুলোতে তাদের অবস্থানকে অর্থনীতির ভাষায় লস বলা হয় না। তেমনি, বাংলালিংকের বর্তমান অবস্থাকেও লস বলা যায় না। বাংলালিংকের সমস্যা হচ্ছে, বর্তমান প্রতিযোগিতায় তারা পুঁজির দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছে।
এই কোম্পানী গুলো যে টাকা খাটাচ্ছে, তা কিন্তু এ দেশে কোন উৎপাদন খাতে নয়, এটাকে বলে সেবা খাত। সেবা খাত দেশের উৎপাদনে ভূমিকা রাখে পরোক্ষ ভাবে। তাদের বিনিয়োগের অংকটা অনেক বিশাল, কিন্তু সেটা এদেশে কোন সরাসরি কাজে লাগছে না, কিছু কর্মসংস্থান ছাড়া। সিংহভাগই চলে যাচ্ছে, ভেন্ডর কোম্পানীর হাত ধরে বিদেশেই। আমরা টেলি সেবা কিনছি চড়া মুল্যে। চড়া মূল্য নির্ধারিত হয়, ২৫ পয়সা/ মিনিট কথা বলা দিয়ে না, এদেশ থেকে কত অর্থ আমরা হারাচ্ছি- তা দিয়ে। আনুমানিক একটা হিসাব দিয়েছি। হিসাবটা কিছু প্রাপ্ত উপাত্তের উপর ভিত্তি করে, কিন্তু প্রকৃত চিত্র মতে হয়তো আমরা আরো বেশী অর্থ হারাচ্ছি। গ্রামীনের বিনিয়োগ দেখুন আর হিসাব করুন বছর দিয়ে ভাগ দিয়ে। তাহলে বুঝতে পারবেন, কত টাকা চলে যাচ্ছে।
একটা দেশের জিডিপি গণনা করা হয়, তার উৎপাদন ও তার আয় দিয়ে, অবশ্যই তা থেকে খরচ বাদ দিয়ে। হিসাব করুন এই বিনিয়োগ আমাদের জিডিপিতে কি প্রভাব রাখছে? ঋণাত্মক প্রভাব। এখানে এই সেবার পরোক্ষ ভূমিকাও গৌন। কেননা, সেবাখাতের পরোক্ষ ভূমিকা উল্লেখযোগ্য তখনই হয় যখন সেদেশ উৎপাদনের সাথে জড়িত থাকে ও ঐ সেবাটি উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। আমাদের বাংলাদেশে শিল্প কোথায়?
দেখা গেছে, টোটাল টক আওয়ারের ৮০%, আনঅফিসিয়াল/ননবিজনেস কল। প্রকৃতপক্ষে এই হার আরো বেশী হবে, কেননা অফিসিয়াল/বিজনেস কলগুলোরও একটা উল্লেখযোগ্য অংশ আনঅফিসিয়াল/ননবিজনেস।
হুওয়ায়েই এর প্রাথমিক বিনিয়োগের কথা এ প্রসঙ্গে বলি। তাদের অফারটা হচ্ছে অনেকটা এরকম, আমাদের ইকুয়েপমেন্ট দিচ্ছি, সেট করেও দিচ্ছি, এখন কোন টাকা লাগবে না, ইকুয়েপমেন্ট লাগানো মানেই কল, আর কল মানেই টাকা, তারপর তোমরা সেই টাকা থেকে আমার ইকুয়েপমেন্টের টাকাসহ(দুবছর পর) সার্ভিস চার্জ দিয়ে দিও (একটেলের সাথে এগ্রিমেন্ট দ্রষ্টব্য)। এরা এত নিশ্চিত যে, মাগনাতেও ইকুয়েপমেন্ট বেচতে দ্বিধা বোধ করে না। এই নিশ্চিন্ত হবার সোর্স কিন্তু ঐ একটাই - কল, মানে আমাদের কষ্টার্জিত টাকা।।
টেলিকমিউনিকেশনে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এত উতলা হয়ে কেন এখানে বিনিয়োগ করেছে? একটাই কারণ, এই সেক্টর থেকে মুনাফার দারুণ ও নিশ্চিন্ত সুযোগ। প্রশ্ন আসতে পারে গ্রামীণ ফোন ইতিমধ্যে ৩০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে- আমরা কি পারবো একটা খাতে এত টাকা বিনিয়োগ করতে? গ্রামীণ ফোন তার প্রাথমিক পুঁজি বছর খানিক আগেই তুলে নিয়েছে। আর সেটা এখানকার জনগণের পকেট থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার মধ্য দিয়েই। ফলে চিন্তা করুন- আপনি যে ৩০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা ভাবছেন, সেই টাকার চেয়েও বেশী টাকা ইতিমধ্যে আমাদের দেশের মানুষের পকেট থেকে খোয়া গেছে! কয়েক বছর থেকেই- গ্রামীণ তার টার্ণ ওভারের একটা বড় অংশ এখানে বিনিয়োগ করছে। অর্থাৎ, এই বিনিয়োগ তারা বাইরে থেকে আনছে না। এটা এ দেশের মানুষের পকেট থেকে হাতিয়ে নিয়ে এখানেই বিনিয়োগ করছে- উদ্দেশ্য আরো বেশী টাকা হাতিয়ে নেয়া। বাংলালিংকও এতদিনে তার প্রাথমিক পুঁজি তুলে ফেলতে পারতো (বর্তমানে সে মার্জিনের খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে); কিন্তু প্রতিযোগিতায় খুব ভালোভাবে থাকার উদ্দেশে সে তার টার্ণ ওভারের পুরোটাই এখন পর্যন্ত রিইনভেস্ট করছে- যার উদ্দেশ্য আরো বেশী টার্ণ ওভার। বেশী বিনিয়োগ করা মানে বেশী টার্ণ ওভার। মানে- বেশী সুইচ, বিটিএস, বিএসসি, টিআরএক্স; মানে বেশী কল ক্যাপাসিটি, বেশী গ্রাহক, বেশী কল, বেশী টাকা। গ্রামীণ ফোনের বাৎসরিক অপারেটিং প্রোফিট (খরচাপাতি বাদে) ৮০০ মিলিয়ন ইউএসডি, আর বাংলালিংক ও একটেলের প্রত্যেকের প্রায় ২০০ মিলিয়ন ইউএসডি। ৬/৭ বছর আগে (৭টাকা/মিনিটের যুগে) গ্রামীণ ফোনের মাসিক অপারেটিং প্রোফিটই ছিল প্রায় ২০০ মিলিয়ন ইউএসডি (ভিতরে ভিতরে যে আরো অনেক বেশী আয় এদের ছিল এবং এখনো আছে- ভিওআইপির ট্যাক্স ফাঁকির মত- সেটা সাম্প্রতিক ঘটনায় স্পষ্ট)।
গত বছরের নভেম্বর মাসের রিপোর্ট মতে, দেশের মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর মোট গ্রাহক সংখ্যা আবারও কমেছে। গত অক্টোবর মাসের তুলনায় নভেম্বরে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর গ্রাহক কমেছে ৮ লাখ ৫০ হাজার। ঐ এক মাসে সার্বিকভাবে মোবাইল ফোনের গ্রাহক কমলেও তিনটি অপারেটরের গ্রাহক সংখ্যা আবার বেড়েছে। কমেছে অন্য তিনটি অপারেটরের গ্রাহক। গত অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে ছয় অপারেটরের মধ্যে একটেল, সিটিসেল এবং টেলিটকের গ্রাহক কমেছে। এর মাধ্যমে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে কোটি গ্রাহকের মর্যাদাও হারিয়েছে একটেল। অন্যদিকে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক এবং ওয়ারিদের গ্রাহক উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, অক্টোবর মাসের শেষে দেশে মোট মোবাইল গ্রাহক ছিল ৫ কোটি ১৪ লাখ। নভেম্বরের শেষে সেটি দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৫ লাখ ৫০ হাজারে। এ সময় শুধু একটেলের গ্রাহক কমেছে ২১ লাখ ২০ হাজার। এতে করে তাদের গ্রাহক সংখ্যা কোটির নিচে নেমে এসেছে। গত অক্টোবর মাসে একটেলের গ্রাহক ছিল ১ কোটি ৯ লাখ ৯০ হাজার। নভেম্বরের শেষে সেটি দাঁড়ায় ৮৮ লাখ ৭০ হাজারে। সিটিসেল ১৯ লাখ ৮০ হাজার থেকে ১০ হাজার কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৭০ হাজারে। একমাত্র রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর কোম্পানি টেলিটকেরও গ্রাহক ১০ হাজার কমে ১০ লাখ ৬০ হাজার হয়েছে। কিন্তু এতদসত্ত্বেও, এক মাসে ২১ লাখের বেশি গ্রাহক কমে গেলেও এতে খুব বেশি চিন্তিত নয় একটেল। তাই প্রশ্ন জাগতে পারে কেন তারা চিন্তিত নন? এর কারণ হলো, তারা খুব ভাল করেই জানেন যে বর্তমান আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় তাদের এ নেতিবাচক প্রভাবও কেবলই সাময়িক, তাতে তাদের বিনিয়োগ উত্তরনে তেমন কোন প্রভাব পড়বে না।
এবারে আসি টেলিটকের ব্যাপারে......
টেলিটক বাংলাদেশ লিঃ (কোম্পানী) কোম্পানী এক্ট, ১৯৯৪ এর অধীনে ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বরে ২০,০০০,০০০,০০০ টাকা মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করে। এটিই দেশের একমাত্র সরকারী অর্থায়নে পরিচালিত মোবাইল কোম্পানী। এর বর্তমান চেয়ারম্যান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব সুনীল কান্তি বোস। তাছাড়া পরিচালক পর্ষদ গঠিত ১০ জন সদস্য নিয়ে যারা বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার।
টেলিটক/বিটিটিবি মোবাইল মার্কেটে আসার আগেই এর খুব গুরুত্বপূর্ণ দুটি সুবিধা ছিলঃ
ক) ইতিমধ্যে তৈরী একটা ক্ষেত্র- টেলিটক সিম বাজারে আসার ঘোষণার আগে থেকে সিম কেনার লম্বা লাইন দ্রষ্টব্য, যেটা অন্যান্য অপারেটরদের অর্জন করতে বেশ কিছু বছর পার করে দিতে হয়েছিল।
খ) বিটিটিবির ইতিমধ্যে তৈরী একটা অবকাঠামো- যা তার প্রাথমিক বিনিয়োগকে অর্ধকের বেশী কমাতে সক্ষম।
বাংলাদেশের মার্কেট পোটেনশিয়াল উপরের আলোচনায় যদি বুঝতে পারেন, তবে এটাও বোঝার কথা যে, কলের টাকা থেকেই রিইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে এই খাতে টেলিটক/বিটিসিএল আগাতে পারতো। একটেল, গ্রামীণ ফোন, বাংলা লিংক এরা যেসব ভেণ্ডর থেকে ইকুয়েপমেন্ট নেয় তার বড় অংশই নেয় বাকিতে হুওয়ায়েই এর সাথে একটেলের চুক্তি বা, গ্রামীণ ফোনের সাথে হুওয়াইয়ের চুক্তি দ্রষ্টব্য)। ফলে প্রাথমিক বিনিয়োগ এখন আরো কম, কেননা এর মাধ্যমে ব্যবসা করার পর মুনাফা থেকে ইকুয়েপমেন্টের মূল্য পরিশোধ করার সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। টেলিটক এ ধরণের কন্ট্রাক্টে গেলে, তার জন্য প্রাথমিক বিনিয়োগ তাহলে কতখানি দরকার? এখনো এই ঢিলেতালে চলার মধ্যেও টেলিটক কিন্তু প্রতিবছর ভালোই আয় করছে।
এখন হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে টেলিটক নিয়ে যে, যেখানে এই মোবাইল কোম্পানী গুলো এত কমে কলরেট অফার করছে, সেখানে তারা এত অবকাঠামোগত সুবিধা নিয়েও কেন এর কম কলরেট রাখতে পারে না, এখনো কেন ভাল নেটওয়ার্ক সিস্টেমও গড়ে তুলতে পারেনি?
সরকার থেকে বাড়তি বিনিয়োগ নয়, তার বাৎসরিক লভ্যাংশকে পুনঃবিনিয়োগই কর্তৃপক্ষ ঠিক ভাবে করে না। যতখানি নেটওয়ার্ক তারা গড়ে তুলেছে, সেটিকেও ঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না, এতদিনেও নিজস্ব এক্সপার্টিজ গড়ে তোলেনি। উপরন্তু, বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে লসের পরিমাণ বাড়িয়েছে। তার মধ্যে একটি উদাহরণ দেইঃ সিমেন্স বাংলালিংকে যে দামে ইকুয়েপমেন্ট বিক্রি করে- একই ইকুয়েপমেন্ট তার কয়েকগুণ বেশী দামে টেলিটকের কাছে বিক্রি করে।
আসুন কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজি,
কেন টেলিটক পূর্ণ উদ্যমে চালানো হয় না? কেন টেলিটক সিম বাজারে আসতে এত সময় নেয়া হল? গ্রামীণ ফোন ও বাংলালিংক মার্কেটে একটা স্ট্যাবলিশড অবস্থায় যাবার পরেই কেন টেলিটক বাজারে আসবে? এসবে কাদের লাভ হয়েছে বা এখনো হচ্ছে? সিটিসেল/জিপি যে সময় মার্কেটে এসেছিল- সে সময় থেকেই যদি তৎকালীন বিটিটিবি (বর্তমান বিটিসিএল) টেলিটক মাঠে নামাতো? বিটিসিএল-এর প্রস্তুত অবকাঠামোতে খুব অল্প খরচে নেটওয়ার্ক স্ট্যাবলিশ করতে গ্রামীন ফোন বা বাংলালিংক এর তুলনায় অনেক কম সময় কি লাগতো না? (যেখানে জিপি বিটিসিএল-এর রেলওয়ের ব্যাকবোন নামমাত্র মূল্যে লীজ নিয়ে সেখান থেকে বেআইনি ভাবে সাবলিজ দিয়ে ব্যবসা করতে পারে!) গুড উইল ধরে রাখার জন্য সামান্য চেস্টা করা কি যেত না?
সিস্টেম মানুষই তৈরী করে, মানুষই ভাঙ্গে। প্রতিটা নতুন সিস্টেম গড়ে উঠে পুরাতন সিস্টেমের অসংগতিগুলো শুধরে নিতে, যা হবে মানুষের কল্যাণকামী। কিন্তু এটাও ঠিক যে একটা সিস্টেম গড়ে তোলার পরে, সেই সিস্টেম না ভাঙ্গা পর্যন্ত দু’একজন মানুষের আলাদা কাজ-কারবারে তেমন কিছুই হয় না। সেখানকার পরিচালক ও কর্মচারীদের বাদ দিয়ে নতুন মানুষ আনলেও অবস্থার কোনই উত্তরণ ঘটবে না। সিস্টেম না পল্টিয়ে ঐ মানুষ পাল্টালে দৃশ্যপট কিছুই পাল্টাবে না। কেননা ঘাপলাটা দু’একজনের সততার সমস্যায় নয়, সমস্যা আসলে সিস্টেমের।
গ্রামীন ফোন, বাংলালিংক, একটেলরা টেলিটকের সাথে প্রতিযোগীতায় কখনোই টিকতে পারতো না। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা সবসময়ই এটাই চায়- একটা অবাধ প্রতিযোগীতাহীন মার্কেট। সেজন্যই তাদের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান নিয়ে এত এলার্জী। সেকারণেই বিশ্বব্যাংকের প্রথম ও প্রধান শর্তই থাকে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারী করতে হবে। গ্যাটস চুক্তিরও মূল ধারাই প্রাইভেটাইজেশন! এখানে নোবেল বিজয়ী, আমাদের তথাকথিত গর্ব(!!) ইউনুস, মোর্শেদ সহ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নানাধরণের দালালেরা, সরকারে থাকা সুবিধাভোগীরা, ওদের কেনা গোলাম আমলারা তাদের হয়ে একাজটি সহজ করে দিয়েছে; ওদের কারণেই টেলিটক বাজারে আসতে এত দেরী হয়, গ্রামীন ফোন, বাংলালিংক, একটেল, সিটিসেলরা এত সহজে, আরামে এবং এত সুবিধা নিয়ে এখানে অবাধে ব্যবসা করে যেতে পারে!
রাষ্ট্র সাবসিডি দেয় মানে জনগণের টাকাই সে এলোকেট করে। কেননা রাষ্ট্রের টাকা মানে জনগণেরই টাকা। আবার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান মানেও কিন্তু জনগণেরই প্রতিষ্ঠান। ফলে, জনগণের প্রতিষ্ঠানকে ভালো করে চালাতে যদি জনগণের টাকা সাবসিডি আকারে যায়, আমি আপত্তির কিছু দেখি না। কিন্তু জনগণের টাকা যদি- ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে যায়- বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে যায়- সেটা অনেক আপত্তিকর। সেটা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।
এরই মাঝে বিতর্কিত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) বিল ২০১০ সংসদে উত্থাপিত হয়েছে গত ১৩ জুন। এরপর বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটি বিষয়টি নিয়ে এ পর্যন্ত চারটি বৈঠক করেছে। এর দুটি বৈঠক হয়েছে বিটিআরসি ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে। টেলিযোগাযোগ নীতিমালার ৪.২.২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘টেলিযোগাযোগ নিয়ামক কমিশন এমন একটি স্বশাসিত কমিশন হইবে যাহা ইহার স্বাধীনতা বজায় রাখিবে। কমিশনের প্রধান এবং অন্যান্য সদস্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে নিয়োগপ্রাপ্ত হইবেন।’ অপরদিকে, প্রস্তাবিত আইনে প্রতিষ্ঠানটিকে ক্ষমতা শূন্য করা হয়েছে। টেলিযোগাযোগ লাইসেন্স দেয়া, ফি ও ট্যারিফ নির্ধারণ, পরামর্শক নিয়োগ এবং প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা বিটিআরসির কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয়েছে। লাইসেন্সের শর্তাবলী সংশোধন এবং লাইসেন্স বাতিল বা স্থগিত করার ক্ষমতাও সরকারের কাছে দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত আইন সংসদে পাস হলে বিটিআরসির আর তেমন কোনো কাজ থাকবে না। বিটিআরসিকে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। দ্বৈত কর্তৃত্বের কারণে যে কোনো কাজে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হবে। ফলে কমিশনের কর্মকাণ্ড আরো স্থবির হয়ে পড়বে। যা এই খাতের জন্য হবে এক অপূরণীয় ক্ষতি। প্রস্তাবিত আইনটি মূলতঃ টেলিযোগাযোগ নীতিমালা ১৯৯৮-এর পরিপন্থী। বিটিআরসি এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১ জাতীয় টেলিযোগাযোগ নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। নীতিমালায় কমিশনকে (বিটিআরসি) টেলিযোগাযোগ আইনের অভিভাবক উল্লেখ করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, কমিশন হবে স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত। যে কারণে সংসদে উত্থাপিত প্রস্তাবিত আইনটি টেলিযোগাযোগ নীতিমালার পরিপন্থী।
বর্তমান সরকার আমাদের মত প্রকশের স্বাধীনতায় কতটা সোচ্চার (!), তা হয়তো ইতোমধ্যেই আমাদের বোধগম্য হয়েছে। সরকারের কাজের সমালোচনা করা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম বন্ধ হতে আমরা দেখেছি, আমরা প্রত্যক্ষ করেছি ক্ষমতার জোরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের বন্ধ হয়ে যাওয়া। নির্ভরযোগ্য সুত্র মতে, সরকারের আই টি বিশেষজ্ঞরা (!) প্রায় শতাধিক ওয়েব সাইটকে (সংবাদ ভিত্তিক+ম্যাগাজিন+ব্লগ) সরকারের জন্য হুমকি স্বরূপ জানিয়ে ইতোমধ্যে এগুলো বন্ধ করার কাজ শুরু করেছে। এখানে উল্লেখ্য যে, বন্ধ হয়ে যাওয়া বা হতে যাওয়া ওয়েব সাইটগুলোর বেশির ভাগই বাম ভাবাপন্ন।
উপরের আলোচনা থেকে একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মোবাইল শিল্প আমাদের অর্থনীতিতে ঋণাত্বক ভূমিকা রাখছে। বিদেশী কোম্পানিগুলোর এই ব্যবসার ফলে আমরা প্রতি মাসে বিরাট অংকের টাকা হারাচ্ছি; আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে, বৈদেশিক রিজার্ভ কমছে, মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। রিজার্ভ কমা ও মূল্যস্ফীতি বাড়ার অনেক কারণের এটাও অন্যতম প্রধান কারণ। এখানে বিনিয়োগকারী বিদেশী, তারা সেবা বিক্রি করছে, আমরা সেবা কিনছি। সেবা কিনছি নগদ অর্থ দিয়ে, যেহেতু কিনছি বিদেশীদের কাছ থেকে, সেহেতু তা আমদানী- এবং তার ফলাফলও নেগেটিভ। এর পরোক্ষ প্রভাবও গৌণ। এই অর্থনৈতিক ঋণাত্বকতার দায়দায়িত্ব নিতে হবে আমাদের সরকারগুলোকেই। যার প্রধান কারণ হলো এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা। তারা দেশী ও বিদেশী উভয় গুরুর কাছেই নতজানু(লোভে-লাভে)। এই যখন রাষ্ট্রীয় মনোভাব সেখানে সাধারণের আশার জায়গাটা নিতান্তই নগণ্য। তবু মানুষ আশায় বুক বুক বাঁধে, নতুন করে বাঁচার আশায়। তাই আমাদের সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। দরকার সচেতনতা ও আত্মোপলব্ধি, যার দ্বারা ঐ সরকারগুলোকে বাধ্য করতে পারি নতজানু না হতে, নচেৎ তাদেরকে উচ্ছেদ করতে।।
উৎসর্গঃ মহান বিপ্লবী কমরেড চে গুয়েভারা (আজকের দিনেই (৯/১০/৬৭ইং) সাম্রাজ্যবাদের পা চাটা কুত্তারা তাঁকে হত্যা করছিল)
আন্তরিক কৃতজ্ঞতাঃ ব্লগার দিন মজুরের প্রতি।
৯/১০/১০ইং
(বি.দ্রঃ মূল লেখাটি গত বছরের (২০০৯) শেষাংশে লেখা, যা পর্যায়ক্রমে সংযুক্তির মাধ্যমে বর্তমান রূপ ধারণ করেছে)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১১ বিকাল ৩:১১