আমাদের প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশ এক অদ্ভুত ক্রান্তিকাল পার করছে, স্বাধীনতার পর এরকম ভয়াবহ অবস্থার ভিতর দিয়ে দেশ কোনদিন যায় নি। আমি আজকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পয়েন্ট আউট করার চেষ্টা করব।
১। সংখ্যালঘুদের উপর আঘাত
দেশের যেকোন সাধারণ নাগরিকের উপর আঘাত বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের উপর পরিকল্পিত আঘাত কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দেশকে অস্থিতিশীল করবার অন্যতম উপাদানগুলোর একটি হল এই দেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র জন গোষ্ঠীগুলো । এদের উপর যে বা যারা আঘাত করছে তাদেরকে ছিন্নিত করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির ব্যাবস্থা করা হোক।
২। ধর্মানুভুতিতে আঘাত
বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রিয়। তাদের ধর্মানুভুতির উপর আঘাত তারা কোনভাবেই সহ্য করে না। আমি মনে করি দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগোষ্ঠির ধর্মানুভুতিতে আঘাত প্রদানকারী রাজিবকে শহীদ ঘোষণা দিয়ে সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেওয়া হয়েছে। রাজিবের এইরকম নৃশংস হত্যা কোন সভ্যদেশ মেনেনিতে পারে না। কিন্তু গত কয়েকদিনের অরাজকতা, পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে আমাদের সভ্য হতে আরো অনেক অনেক বছর বাকি। এইরকম অসভ্য দেশে রাজিবের মত একজন চরম ইসলাম বিদ্বেষীকে শহীদ ঘোষণা দিয়ে তার বাসায় গিয়ে সমবেদনা জানিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে দেশকে অস্থিতিশিল করা হয়েছে ।
৩। জাতীয় পতাকার অবমাননাঃ
জাতীয় পতাকা আমাদের জাতীয়তার প্রতিক, এটার প্রতি অবমাননা অবশ্যি দুঃক্ষজনক। যারা এই কাজের সাথে জড়িত তাদেরকে খুজে বের করে শাস্তি দেওয়া হোক।
৪। হুজুগে মিডিয়া
বিডিআর বিদ্রোহের সময় সকাল বেলা দেখেছি সকল মিডিয়া একসাথে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যিকির করছে বিকালের দিকে দেখলাম তাদের স্বর পরিবর্তন হয়ে গেছে আর সন্ধ্যার পরেতো পুরাই উল্টায়া গেছে। একিরকম পরিস্থিত দেখেছি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও। মিডিয়া কর্মীদের কাজ হল সংবাদ পরিবেশন করা। তারা যদি রাজনীতি শুরু করেন তাহলে বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমার ধারণা এইদেশের ৯০ ভাগ সাংবাদিক হয় ১৪ দল না হয় ১৮ দলের নগ্ন সমর্থক। এই রকম নগ্ন সমর্থকদের দিয়ে সাংবাদিকতা তো হবেই না, এরা বড়জোর দেশেকে অস্থিতিশীল করার উপাদান হতে পারে, যেটা এখন হচ্ছে।
৫। হলুদ সাংবাদিকতা
বুয়েটে পড়াকালীন সময়ে ততকালীন বুয়েট ছাত্রকল্যান পরিচালকের কাছে গিয়েছিলাম সিডর আক্রান্ত মানুষদের জন্যে সংগ্রহ করা খাবার, বস্ত্র আর টাকা নিয়ে বাগেরহাটে যাওয়ার জন্য গাড়ির রিকুইজিশন চাইতে । কথা প্রসঙ্গে আমি পেপার এর রেফারেন্স দিয়ে আমাদের গাড়ির প্রয়োজনিয়তার কথা জানালে স্যার আমাদেরকে বলেছিলেন 'ওরা তো সবাই নিজেদের মত করে কিচ্ছা কাহিনি লিখে ওদের কথা শোনার দরকার নাই'। স্যারের কথার গুরুত্ব এখন বুঝি। হলুদ সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান যেমন শাহবাগে নাস্তিক ছাড়া অন্য মানুষ দেখেন না তেমনি মতিউর রহমান মসজিদে জামায়াত শিবিরের বাইরে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের দেখেন না। সম্পাদক পর্যায়ের লোকদের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে বাকিদের কি অবস্থা হবে সেটা সহজেই অনুমেয়।
৬। আন্তর্জাতিক মিডিয়া
দেশের সবাই যদি হলুদ সাংবাদিকতা করে তাহলে আমরা কোন খবর বিস্বাশ করব ? এইক্ষেত্রে আমার ব্যাক্তিগত উপলব্ধি হল আন্তর্জাতিক মিডিয়া ১-১০% এর বেশি খবর টেম্পারিং করে না। তাই সর্বোচ্চ বিশ্বাসযোগ্য খবর পেতে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার বিকল্প আমি আপাতত দেখি না। মনের মত খবর না পেলে কেউ কেউ হয়ত বলবে কোন কোন গ্রুপ সকল আন্তর্জাতিক মিডিয়া কিনে ফেলেছে কিন্তু ওরা এত সহজে বিক্রি হওয়ার জিনিস না।
৭। সহনশীলতার অভাব
মানুষের বাক স্বাধীনতা, আর মত প্রকাশের স্বধীনতা থাকবে এটা স্বাভাবিক তাই বলে অন্যমতের কাউকে আপনি মেরে ফেলতে চাইবেন, জবাই করতে চাইবেন, বাড়িতে আগুন দিবেন এটাতো কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। আমরা যদি একে অপরের প্রতি সহনশীল না হয় তাহলে আমাদের পক্ষে কোনদিন-ও একটি সুখী এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেষ গঠন করা সম্ভব না। কোন গ্রুপ যদি খারাপ-ই হবে তাহলে জনগন নির্বাচনে তাদেরকে বর্জন করবে। কয়েক বছর পার হলে তাদেরকে আর খুজে পাওয়া যাবে না। আপনার মতের বিরোধীতা কেউ করতেই পারে তাই বলে সে রাজাকার কিংবা নাস্তিক অথবা ধর্মবিদ্বেষী এটা মনে না করে সে কি বলে সেটা ভালো করে শুনুন।
৮। অশ্লীল গালিগালাজ
মনের অজান্তে আমরা অনেকেই কোন কোন রাজনৈতিক দলের বিরাট বিরাট কর্মী বনে গিয়েছি। আমরা এখন যে যত খারাপ করে গালি দিতে পারি সে তত বড় বুদ্ধিজীবি বনে গেছি । এই ধরনের অশ্লীল গালি গালাজ কোন সভ্য শিক্ষিত মানুষের কাছ থেকে আমারা আশা করতে পারি না। আমি অনেক্কেই চিনি যারা কাউকে গালি দেওয়া ত দুরের কথা গালি শুনলে অন্যদিকে চলে যেতেন তারাও আজকে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার চেষ্টা করছেন । এটা নিশ্চিত ভাবে ন্যাক্কারজনক।
৯। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নিজের নাক কাটা
কম্পিউটার আর ফটোশপের কল্যাণে আমরা সবাই এখন অনেক কিছু হয়ে গেছি। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্যে এক ঘটনার সাথে আরেক ঘটনা এটে দিচ্ছি এমনকি অপরের যাত্রা ভঙ্গের জন্যে নিজের নাক কাটতেও দ্বিধা করছি না।
১০। পুলিশের উপর আক্রমন ও পুলিশের নির্বিচারে গুলি
পুলিশের উপর আক্রমন মানে রাষ্ট্রের উপর আক্রমন এটা কোন একটি দেশের সার্বিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত করবে। যারা এরকম করছেন দয়া করে এই পথ পরিহার করে দেশকে বাঁচান। পুলিশের উপর আক্রমন যেমন মানা যায় না তেমনি জনসাধারণের উপর অথবা কোন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উপর পুলিশের নির্বিচারে গুলি বর্ষণ-ও অত্যন্ত নিন্দাজনক।
১১। রাজনীতিতে পলিটিক্স
এই দেশটা এখন স্পষ্টত-ই দুই ভাগে বিভক্ত। একদল মুক্তিযুদ্ধ কে নিয়ে রাজনীতি করবার জন্যে সাধারণ মানুষকে ব্যবহার করতে চাইছে আরেকদল ধর্মিনুভুতিকে পুজি করে ক্ষমতায় আসতে চাইছে। তাদের সবার উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন আর সেটা হল ক্ষমতা। যেই লোকটি পুলিশের গুলিতে জীবন দিচ্ছে অথবা শাহবাগে এসে আন্দোলনের কারণে যার জীবন হুমকির মুখে তাদের মন্ত্রী এম্পি হওয়ার খায়েশ নাই। কিন্তু তারা বুঝে না যে তারা এই দেশের ক্ষমতা লিপ্সু রাজনীতির শিকার।
এতগুলা কথা লিখব ভেবে লেখা শুরু করি নাই। অনেক কিছু লিখার পরেও অনেক কিছুই বাকি থেকে গেছে। এই লেখাটা কারো কোন উপকারে আসবে কিনা জানি না তবে কারো উপকারে আসলে আমার কষ্ট সার্থক হয়েছে বলে মনে করব।