শাবা আবদুল্লাহ
১.
বাঁশপট্টি। বিশাল বিশাল কয়েকটি কড়ই গাছের তলায় বসে বাঁশ কাটছে ওরা। নির্দিষ্ট মাপে বাঁশ কাটা। ফর্মা দিয়ে এক মাপের কাটা শেষ হলে অন্য মাপের কাটা শুরু হয়। এমনই চলে আসছে নিত্যদিন। ঠুক ঠাক শব্দ সুন্দর এক ঝংকার তুলে ধরে। কয়েকজন শক্ত সামর্থ লোকের এক নাগারে বাঁশ কাটা বেশ উপভোগ্য। মাঝে মাঝে কেউ বিড়ি টানে, আবার কেউ ফরমায়েশি কোন ছোকরাকে দিয়ে চা এনে সবাই মিলে খায়। গাছতলায় বাঁশ কাটার জন্য ছাউনি আছে। তবে গরমকালে কেউ এসব ছাউনিতে বসে বাঁশ কাটে না। ছাউনির বাইরে ঝির ঝির বাতাসে মনের আনন্দে বাঁশ কাটে তখন।
- ঐ দেখ্ দেখ্ বেটিটা আইতাছে। বাঁশ কাটতে কাটতে হঠাৎ নুরু মিয়া বলে ওঠে।
সবাই নড়ে চড়ে বসে।
- বেশ খাসা মাল রে। তারা মিয়া বলে।
- হ, একদিন বেশ সোন্দর ছিল রে। নুরু বলে।
- একদিন ক্যান, এহনো সোন্দর। তারা মিয়া আবার বলে।
- এই বেটি চা খাবি? চান্ডু বলে।
মহিলা বিড় বিড় করতে থাকে। কোন দিকে ওর খেয়াল নেই। আধা দৌঁড়ে সে হেঁটে চলছিল। কাঁধের কাপড় হাতে ধরে ওই গতিতেই সে হাঁটতে থাকে। পেছনে পেছনে ছুটতে থাকে চার-পাঁচ বছর বয়সী শিশুটি। একটা গাছের গোড়ায় গিয়ে বসে ওরা।
মহিলা পুটলি থেকে খাবার বের করে। পঁচা-গন্ধ এক পারুটি। আপন মনে খেতে থাকে। শিশুটি হা করে চেয়ে থাকে। হঠাৎ শিশুটা মহিলার হাত থেকে এক টুকরা পারুটি টান মেরে দেয় দৌঁড়। পুটলি রেখে মহিলাও ছেলেটাকে ধরার জন্য ছুটতে থাকে। ছেলেটা ততক্ষণে পগার পার, আর পায় কোথায়!
মহিলা ফিরে এসে দেখে তার পুটলিটা নেই। একটা কুকুর তা মুখে নিয়ে ছুটছে। সেও আবার কুকুরের পেছনে ছুটতে থাকে।
পথের ধারের লোকজন সবাই যেন তামাশা দেখছে। হাসাহাসি করছে। কে একজন পানি ছুড়ে মারল। মহিলা দাঁড়িয়ে গেল। লোকজনকে গালাগালি করতে লাগল। সবাই আরো মজা পেল।
মানুষ কৌতুক করতে বা দেখতে পছন্দ করে। সেটা যতই নির্মম হোক না কেন। কাঊকে কৌতুকের পাত্র বানাতে পারলে নিজেকে নিয়ে খুব গর্ববোধ করে। অসহায়
এ মহিলাকে দেখে যেন মজার এক উপহাসের পাত্র পেয়ে যায় তারা। এবার একজন গরম চা ছুড়ে মারল। মহিলা কঁকিয়ে ওঠে।
মহিলার এমন দুরাবস্থা দেখে কবরস্থানের বদু দারোয়ান তেড়ে এসে লোকদের বলল, কিরে তোরা পাগলি দেখেই এমন করবি, ওরা কি মানুষ না?
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৩৭