নিঝুম রাতে বসে আছি একা জানালার পাশে
সারা দুনিয়া ঘুমিয়ে পড়েছে কেউ নেই ধারে কাছে।
কী নীরব, নিথর, ছিমছাম! বাতাস কহিছে কথা
ঝির ঝির ধারায় কানে মুখে চুমো দিয়েছে যথা।
কী আরাম! কী শীতল! আহ্ কী শান্তি!!
দিবসের তীব্র উত্তাপের নেই সে ক্লান্তি।
ষষ্ঠ তলার জানালার পাশে দেখছি সারা জগতখানি
কত সে শান্ত, কোলাহল শূন্য, নেই কদর্য রূপখানি।
আমি যেন গাছ-গাছালির উপর শূন্যে বসে আছি
হাওয়ার তালে চুলগুলো কেবলি করছে নাচানাচি।
দেখছি, এই গহীন রাতে কোন এক পথিক
খোলা রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে আসছে ঠিক,
সে যে অনেক দূরে, ছায়া ছায়া দেখা যায়
স্পষ্ট নয়, হাওয়ায় উড়ছে কাপড় তায়।
সে কি পুরুষ, নাকি নারী? নাকি অন্ধকারের ধুয়াশা?
বাইনিকুলার থাকলে হয়তো হয়ে যেতো খোলাসা।
অপেক্ষায় আছি আমি আর ভাবছি বসে, বিষণ্ণ তাতে-
কোন্ দুখিত মনে হে পথিক, হাঁটছো তুমি এতো রাতে?
জনমানবহীন নির্জন এ পথে, কোন্ গন্তব্যে চলছো তুমি?
তোমার কি নেই কোন আবাসভূমি?
নাকি তোমায় বের করে দিয়েছে, দেয় নি কোন আশ্রয়?
নাকি তোমায় কেউ ভালবাসে না, পাও নি কোন প্রশ্রয়?
নাকি তুমি প্রিয়জন হারিয়েছো-
উদভ্রান্তের মতো ঘুরে চলেছে?
নাকি একটু হাওয়া খেতে রাস্তায় নেমেছো-
ধীর লয়ে হেঁটেই চলেছো?
আর আমি তো জেগে আছি এই রাতে
অপেক্ষায়, ওরা আসবে বলে যাইনি শুতে।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, দেখা যাচ্ছে ওই...
এবার স্পষ্ট হচ্ছে তবে-
ও তো নারী নয় কোন!
একজন পুরুষ, কেবলই একজন যুবক-
যুবতী নয় কোন।
যাক বাঁচা গেলো, সে কোন যুবতী নয়-
সে নিরাপদ, তার নেই কোন ভয়।
কোন হিংস্র শার্দুল থাবা দিবে না
একাকী পেয়ে কেউ তুলে নিবে না
রক্ষক সেজে কেউ ভক্ষক হবে না।
মলিন মুখে হাঁটছে সে,
কী হয়েছে তার?
জনশূন্য এ পথে, গহীন এ রাতে
বিষণ্ণ মনে হে পথিক! কেন হেঁটে চলেছো
হেঁটেই চলেছো?
উড়ছে তোমার গামছাখানা
লুঙ্গি আর গেঞ্জি পড়ে চলছো তুমি।
চেহারাটা পুরোপুরি দেখছি এখন-
আহা কী মলিন, কী করুণ!
তুমি কি দিনমজুর?
সারাদিন খাওনি কিছু?
কাজ জোটেনি আজকে তোমার?
নাকি ভাড়া দিতে পারনি বলে
তাড়িয়ে দিয়েছে তোমায়?
তাই এই রাতে নেমেছো পথে।
আমি ডাক দিলাম-
এই শুনুন, একটু থামুন।
লোকটি থামলো না।
হয়তো আমার কথা শুনে নি।
উপরে গাছের আড়ালে বলে
নিচ থেকে আমায় দেখে নি।
লোকটি চলতেই থাকলো।
আমি আবারো প্রাণপনে ডাক দিলাম-
লোকটি থামলো না, বাসা পেরিয়ে চলে গেলো।
আমি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম
দেখি লিফট বন্ধ, সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলাম।
দেখলাম গেট বন্ধ। কী হয়েছে জানতে চেয়ে
দারোয়ান গেট খুলে দিলো।
হাপাতে হাপাতে এসে দেখি, রাস্তায় লোকটি নেই-
অনেক আগেই হয়তো কোন অলি-গলিতে
ঢুকে পড়েছে সে।
খুঁজলাম এদিক সেদিক,
কোথাও নেই সে।
আমি ফিরে আসলাম আমার কামরায়
আমি ছাড়া আর কেউ নেই এ বাসায়।
আমি তো ওদের অপেক্ষায় আছি
আগামীকাল আসবে ওরা জানি-
আমার প্রিয়তমা আর চার সন্তান
জুড়ে আছে ওরা হৃদয়ের পুরো স্থান।
আমার এই জানালার স্বর্গীয় সুখ
বেশি দিন থাকবে না আর।
বিরাট খোলা রাস্তা
উত্তরের কী দারুণ সবুজ অরণ্য
একদিন ঢাকা পড়ে যাবে
দেখা যাবে না আর জানালা থেকে।
শহুরে ঘিঞ্জি পিঞ্জরে
আবদ্ধ হবে সব।
আমার মনে হয় আমি ছেড়ে পালাই
ইট প্রাচীরে ঘিঞ্জি বস্তি এই শহর থেকে।
২৭.০৮.১৮ : রাত ১১.৫০- রাত ২.০০
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:১৮