এ আর এমন কি , তাই না !
আর টিভি র সংবাদে প্রচার, পত্রিকার সম্পাদকীয় কলাম , কতিপয় ফেসবুক স্ট্যাটাস !
এই তো অনেক বেশি !
মুক্তিযোদ্ধা !!!
এত সময় কোথায় আমাদের ?
জাতির পিতা ?
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ।
বঙ্গজননী ?
- শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ।
এনাফ ।
একটা জন্ম, একটা বাংলাদেশের জন্ম দিতে আর কয়জন লাগে রে ভাই !
এই তো এনাফ ।
কি বলেন ভাই, আঁতুড়ঘর এর বাইরে এসে যেমন বলে তেমনি কেউ কি বলবে না যে জন্ম হয়ে গেছে ?
- ভাই, একটু আস্তে করে বলেন । পেটে তো টাকা পড়বে না । যে বাইরে এসে বলছে , তাঁর নাম আগে বললে তো হবে না । ডাক্তার আগে কনফার্ম করছে না যে ‘আপনি মা হতে চলেছেন’- তাইলে ডাক্তার থেকে নাম বলা শুরু করতে হবে । বুঝতে হবে, বাপু !
তাইলে মুক্তিযোদ্ধা ?
- এরা আবার কারা !!! আজকে পেত্থম নাম শুনলাম ।
ভাই বলতে পারেন- মৃত্যুকে চোখ রাঙিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে স্ত্রী-সন্তানের মায়া ত্যাগ করে কারা ৯ টা মাস লড়েছিল ? কারা তাঁরা ?
- ভাই, আপনিও না । এত মশকরা কেমনে করতে পারেন ! তাঁরা কি কিছু করেছে নাকি ? মুক্তিযোদ্ধা তো দেশ জন্ম নেওয়ার পরে আসছে । চ্যাপ্টা চ্যাপ্টা পাতার মতো আন্ডা খেতে । একটু বেশি ই খায় আর কি !
বলতে পারেন – স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের আজ কত বয়স ?
- ৪৫ ।
ভাবতে পারেন – এখনও মুক্তিযোদ্ধার সঠিক তালিকা প্রণয়ন হয় নি !
- কি বলেন ভাই, এত তাড়াতাড়ি প্রণয়ন করলে কি ‘সৎ’ এর ইজ্জত থাকে ?
আর মুক্তিযোদ্ধা র সামাজিক নিরাপত্তা তো কয়েক প্রজন্ম এর পরের কথা । এত এত চাওয়া থাকলে কি আর চলে ? এসব মানা । ওরা রিকশা চালাবে । মাথা গুঁজানোর মতো জায়গা হবে না – এটাই তো সত্য । কিন্তু চেয়ারম্যান এর জন্যে বাইরে থেকে দামি গাড়ি আনা – উহ ! ওসব শুনে না, বাপু । সব মিথ্যা । ওসব খেলনা গাড়ি !
ভাই, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় তো ২০০১ সালের পর বাসা ৩ বার চেঞ্জ করছে ?
- এত কিছু শুনতে নিষেধ করছি না ।
ভাই, প্রথমে তিন টা রুম, এখন দুই তলা । একেবারে রকেটগতি ! কাজের পরিধিও বাড়ছে নাকি ?
- কচু !
নতুন নতুন রুম । নতুন নতুন মানুষ । রুমের ভিতর যুদ্ধ হচ্ছে । মানুষ যুদ্ধ করছে । মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছে । একেবারে টাটকা টাটকা মুক্তিযোদ্ধা । ভাতা পাবে, ফ্ল্যাট পাবে । ‘কৌটা’ ও নাকি পাবে – যাতে নিজের জন্য না, নাতি-নাতনীর জন্যে কিছু সঞ্চয় করতে পারে । আর শুন ভাই, আগের ওসব পুরাতন মুক্তিযোদ্ধা । খ্যাত ! পুরাই খ্যাত । ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল ভাবে পয়দা ডিজিটাল মুক্তিযোদ্ধা না হলে কি মানায় !
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় !
পূর্ব পদ সংখ্যা ৪৯ টা । অনুমিত পদের সংখ্যা ১০০ ।
পদ আছে ৩২ খানা । কিন্তু পদ শূন্য ৬৮ খানা ।
আগের পদ ই তো পূরণ হয় না । পদ বাড়িয়ে লাভ কি, ভাই ?
- লাভ কি মানে !
একটু কাছে আয় । এসব তো জোরে জোরে বলা যায় না । শুন - পদ বেশি, টাকা বেশি, মুক্তিযোদ্ধা ও বেশি । মানুষকে তো বলতে হবে – আমরা যুদ্ধ করছি । এত কম মুক্তিযোদ্ধা থাকলে কি আর চলে ?
শুনলাম এত সব জীবিত মুক্তিযোদ্ধা দেখে নাকি মানুষ আবার বলাবলি শুরু করছে – ৩০ লাখ মানুষ মরে নাকি ? এত মরতে পারে না ।
শালার মূর্খ মানুষ – বুঝলই না !
‘সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ’- এই যখন ভিশন, তখন আর বলে কি হবে । (পুরোটা লেখি নি)
একলাই করবে সব- বাকি সব ঘোৎ ঘোৎ করে নাক ডেকে ঘুমোবে ।
আহা – করবে না ! মুক্তিযোদ্ধা আছে না ! তারাই তো করবে সব । তাই আজও তাঁরা রিকশা চালায়, দিনশেষে মাথা গুঁজানোর মতো ঠাইটুকু ও আর জুটে না কপালে । আর ডিজিটাল মুক্তিযোদ্ধা সব এসির বাতাসে পীড়িত করছে ।
স্বদেশপীড়িত ?
- ভাই, লজ্জা দিলেন ! ও কি আর আমরা বুঝি । এ তো মাথার উপর দিয়ে যায় । তবে ভাই মানবপীড়িত, অর্থপীড়িত আছে ।
মানবপীড়িত !!! ? তাইলে তো আপনার মানুষ ই হয় না !
- হ ভাই । একটু আধটু তেল দিয়ে সময় কাটে আর কি ।
আর মিশন ! সেখানেও মুক্তিযোদ্ধা র অপশন টা পরে ।
ব্যাপারটা অনেকটা এরকম – হাতে টাকা আসছে । আগে বাবা-মা র জন্য কিছু ? নাহ ! তা কি করে হয় । আগে গার্লফ্রেন্ড (বউ না !) এর সাথে মজা নিয়ে আসি । তারপর দেখা যাবে । আছেন ই তো তাঁরা !
হুম । তাঁরা আছেন ই । তাঁরা ১৯৭১ সালে ছিলেন । তাঁরা আজও আছেন । এবং তাঁরা থাকবেন ।
মুক্তিযুদ্ধ চেতনায় বিশ্বাসী, আর মুক্তিযুদ্ধ চেতনার বিরোধী – সবাই খুব ভালো আছেন । শুধু মুক্তিযোদ্ধা র ই ভালো থাকা টুকু আর হয়ে ওঠে না । তাই তো আজও তাঁরা নিজের আঙুল নিজের মুখে পুরে জীবন চালাচ্ছেন, অন্যের মুখে দিয়ে নয় । তাঁরা এখনও নিজের সম্মান টুকু বুঝে । সেখানেই আমাদের গর্ব ।
মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল , মুক্তিযোদ্ধা সংসদ – আরও কত কি ! জেলায়- উপেজেলায় এক বা একাধিক নাম কা ওয়ালা সংগঠন । শুধু কাজের অভাব টা আর কি !
একজন কলামিস্ট তাঁর কলামে লিখেছেন – “যে জাতি তাঁর বীরদের সম্মান দিতে জানে না সে জাতির ঘরে বীর জম্মায় না ।“ হয়তো বা তাই । আর আমার মনে পড়ছে ‘বাবা কেন চাকর’ মুভির শেষ টা । মুক্তিযোদ্ধা রা কোনদিন অভিমান করতে পারেন না আমাদের ওপর, কিন্তু আমরা প্রাপ্য সম্মান টুকু না দিলে আমরা হয়তো খোয়াতে পারি অনেক কিছুই । তাঁরা যেদিন যুদ্ধে নামার শপথ করে, সেদিনই হয়তো বা মৃত্যু কে মেনে নিয়েছে । কিন্তু আজ যখন সে জীবিত – তাঁর বাকিটুকু জীবন সুন্দর করার দায়িত্ব সরকার ভালভাবে নিতে পারে ।
শুধু হতাশার কথা ই শেষ । এমনটা না । আশার কথাও আছে । জেলায় – উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা র জন্য আবাসন কমপ্লেক্স নির্মিত হচ্ছে । তবে সেটা যাতে মুক্তিযোদ্ধারা পায়, সেটা যাতে বেহাত না হয়ে যায় – সরকার সেদিকে যাতে নজর দেয় ।
ভালো থাকুক তাঁরা ।
ভালো থাকুক মুক্তিযোদ্ধা ।
নাতি- নাতনী আগে নয় । আগে জীবিত মুক্তিযোদ্ধা , তারপরে বাকি অন্য কিছু ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৫৪