বাদল দিনের প্রথম কিংবা দ্বিতীয় কদম ফুল নয়...
এই মধ্য বর্ষায় কোনো এক বাদল দিনে হাতে কদম ফুল ।
টুপটুপ করে বৃষ্টি ঝরে পড়ছে ...
আর বিন্দু বিন্দু হয়ে জমা হয় কদম ফুলটায় ।
দেখতে অদ্ভুত সুন্দর !
কিংবা কখনো গোলাপ...
লাল গোলাপ , সাদা গোলাপ , হলুদ গোলাপ , গোলাপি গোলাপ ... ।
হাতে নীল গোলাপ এখনো দেখা হয় নি ।
কিন্তু নীল গোলাপ আমার বড্ড পছন্দের ।
হাতে একমুঠো গোলাপ,
টুপটুপ করে বৃষ্টি ঝরে পড়ছে ...
আর বিন্দু বিন্দু হয়ে জমা হয় গোলাপের পাপড়িটায় ।
দেখতে অদ্ভুত সুন্দর !
কিংবা কখনো হাতে নাম না জানা সবুজ পাতা দিয়ে মোড়ানো সাদা ফুল ।
নামটা বড্ড জানতে ইচ্ছে করছে ।
ভাবছি , জিজ্ঞেস করবো ।
আবার ভাবছি , থাক অন্য কোনো দিন জেনে নিব ।
নিত্য দেখি , নিত্য ভাবি – আজ ও অজানায় থেকে গেলো ।
থাক, আর এক দিন ...।
দু হাতের মুঠোয় দুটো ফুল ...
আলতো করে বাঁকানো ।
টুপটুপ করে বৃষ্টি ঝরে পড়ছে ...
আর বিন্দু বিন্দু হয়ে জমা হয় ফুলটায় ।
দেখতে ভারি অদ্ভুত সুন্দর.......!!!
কখনো ছোট্ট মেয়েটার হাতে, কখনো ছোট্ট ছেলেটার হাতে ফুল ।
কখনো এ গাড়ির কাচে আলতো করে টোকা,
কখনো ও গাড়ির কাচে,
একটার পর একটা ... ।
ফুল নেয়ার জন্য মন খারাপ করা আকুতি ... ।
হয়তো হাতের ওই ফুল বিক্রির টাকায় এই মন খারাপ করা মধ্য দুপুরে মিলবে দিনের প্রথম আহার ।
কেউবা ফুল নেয়,
কেউবা গাড়ির কাচে ই খুলে না ।
কখনো ছোট মেয়েটার মুখে হাসি...
তো কখনো ছোট ছেলেটার মুখে ।
হাসিটা বড্ড সুন্দর । বড্ড সুন্দর !!!
......জ্যাম এ । ট্র্যাফিক জ্যাম এ ।
হুড তোলা রিকশায় পেছন দিকে হেলান দিয়ে এসব দেখছি । বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য পা রঙিন প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানো । তবুও এক ফোঁটা, দু ফোঁটা করে বৃষ্টি এসে মুখে আঁচড় দিয়ে যাচ্ছে । শার্টের হাতা অর্ধেক ভেজা । খানিকটা হেঁটে আসার পর রিকশা পাওয়ায় পায়ে বালু কাঁদা লেগে এখন কেমন একটা অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে ।
ভাবছি , কখনো এই বৃষ্টিতেই একটুখানি ভেজার জন্য মন উতলা হয়ে উঠে । আর আজ বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য ।
ভিজতে যে একেবারেই ইচ্ছে করছে না – এমনটা না । আজও ইচ্ছে করছে । কিন্তু নিরুপায় । এই নিরুপায় হয়েই রিকশায় বসে অপেক্ষা করছি , কখন ‘সিগনাল’ দিবে ... ।
...... একেবারে ঠিক সামনের রিকশায় ‘কাপল’ । দেখি, প্রেয়সীর হাত প্রিয় এর গলায় মমতায় জড়ানো ।
আবার বাম পাশের রিকশায় ও ‘কাপল’ । এবার দেখি , প্রিয় এর হাত প্রেয়সীর কোমরে আলতো করে ছোঁয়ানো ।
পাশের রাস্তায় বিপরীত দিক থেকে আসা রিকশায় শুধু দু জোড়া চোখ ই দেখা যায় ... ।
খানিকক্ষন । খানিকক্ষণ পর ।
এখন তাকিয়ে আছি ডান পাশের গাড়ির পিছনের কাচটায় ।
কোনোটা ছোট্ট , কোনোটা আরেকটু বড় – অনেকগুলো বৃষ্টির ফোঁটা । যেন দিনের আলোয় গাড়ির কাচে আঁধার রাতের এক খণ্ড আকাশ । তারা খসে পড়ে যাওয়ার মতো কখনো বা এক ফোঁটা আরেক ফোঁটার সাথে মিশে নিচে গড়িয়ে পড়ছে । গড়িয়ে পড়ার সময় চকচক করে উঠছে । দেখতে ভারি সুন্দর !
এবার সামনের এ গাড়ি থেকে ও গাড়ি ।
কোথাও লেখা ‘উজজল ভাই’ , কোথাও বা ‘দাদা ভাই’
তো কোথাও লেখা ‘ইসমাইল মিস্ত্রি’ ; আবার কোথাও বা ‘বিকল্প পরিবহন’ ।
আরেকটু ছোট করে... কোথাও লেখা ‘আল্লাহ্ সর্বশক্তিমান’ ;
কোথাও বা ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত’ ;
কিংবা কোথাও লেখা ‘প্রেমের তাজমহল’ ।
তার সামনের গাড়িটায় কি লেখা যেন , ‘ মহাপাপ ............... ।‘
যাহ্ শালা , পড়তে পারলাম না । সিগনাল টা ছেড়ে দিল এত তাড়াতাড়ি । আরেকদিন ।
পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে দেখি “ ১ টা ঘন্টা আমি জ্যাম এ বসে আছি “ ।
মন্দ না । আবার মন্দ ও বটে ।
‘ কখনো একা একা ই সময় এত ভালো যায় কেন ? ‘ – এখন যেতে যেতে তাই ভাবছি ।
আর বৃষ্টি ।
এখনও টুপটুপ করে পড়ছে ।
পড়ুক ।
মন্দ লাগছে না ।
বেশ ভালো লাগছে ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৩:৪১