যতই দিন যাচ্ছে দৈনন্দিন জীবনের সব কিছুতেই আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাবহার অপরিহার্য হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে সময় গণনার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়োগ আমরা ১০০% নিশ্চিত করতে পেরেছি। যেমনঃ কখন সূর্য উদয় হবে, কখন তা অস্ত যাবে। কবে চন্দ্রগ্রহণ হবে, কবে পূর্ণিমা হবে এইসব তথ্য কিন্তু আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্যে আগাম পেয়ে যাচ্ছি। সময় গণনার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির এই ব্যাবহার আমাদের ধর্ম-কর্মকেও আরও সহজ করে দিয়েছে। একটা সময় ছিলো যখন গ্রাম বাংলার মানুষ ছায়া মেপে যোহর, আসরের নামাজের সময় নির্ধারণ করতো। এখন কিন্তু আমরা তা করিনা। আমরা আজ ঘড়ি দেখেই নামাজ পড়তে যাই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে আমরা শুধু যোহর বা আসর কেন, আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বাৎসরিক সময়সূচীও বের করে ফেলেছি। আমরা রমজান মাসের কবে কখন সেহেরী করবো আর কবে কখন ইফতার করবো তার সময়সূচী কিন্তু রমজানের ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে রমজান মাস শুরুর আগে থেকেই আগাম পেয়ে যাচ্ছি। দিন রাত্রির সময় গণনা, চন্দ্র সূর্য এর পরিক্রমণ কাল সব কিছুই আমরা আগাম জানি এবং সেই মোতাবেক মানি। কিন্তু কেবল রমজান মাস আসলেই রোজা কবে থেকে শুরু হবে আর ঈদ কবে হবে এই বিষয়টির জন্য আমরা পুরোপুরি ডিজিটাল থেকে এনালগ হয়ে যাই। যার ফলে রমজান মাস আসলে আমার দেশের সীমানা থেকে চাঁদ কবে দেখা যাবে তার জন্য আমরা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি।
চাঁদ দেখা কমিটির ভাষ্য মতে গতকাল ৫ই জুলাই, ২০১৬ ইং তারিখে দেশের কোথাও চাঁদ দেখা যায়নি। কিন্তু গতকাল ৫ই জুলাই,২০১৬ বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ কিন্তু ঠিকই উদিত হয়েছিলো। কিন্তু আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে দেশের কোথাও চাঁদ দেখা যায়নি। এক্ষেত্রে আমরা প্রযুক্তির সাহায্য নিতে পারতাম। কিন্ত সমস্যাটা ঐখানেই। এই একটা জায়গায় এসে আমরা ডিজিটাল থেকে উল্টো এনালগ হয়ে যাই। তাই সত্যটা জেনেও আজ আমরা তা পরিহার করলাম।
আমরা যদি আজ astronomical website গুলোর দিকে একটু তাকাই তাহলেই সত্যটা বেরিয়ে আসবে যে বাংলাদেশের সীমানায় গতকাল ৫ই জুলাই চাঁদ উঠেছিলো কিনা।
Source: http://www.moongiant.com/phase/today/
Source: Click This Link
Source: Click This Link
চন্দ্র তার নিজ অক্ষের চারপাশে ঘোরার পাশাপাশি পৃথিবীর চারপাশেও ঘোরে। চন্দ্রের এই পৃথিবীর চারপাশে ঘূর্ণায়মান থাকাকালে আমরা চাঁদকে বিভিন্ন আকৃতিতে দেখতে পাই। এই পথ-পরিক্রমায় চাঁদের এই বিভিন্ন আকার-আকৃতিকে মোট ৮টি phase এ নামকরণ করা হয়েছে। এর প্রথম ২টি phase এর নাম যথাক্রমে new moon & waxing crescent.
New moon phase এ চাঁদ সূর্যের সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান করার জন্য চাঁদকে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে দেখা যায়না। চাঁদকে দেখতে পাওয়া শুরু হয় মূলত এই waxing crescent phase থেকেই। উপরের প্রতিটি ছবি খেয়াল করে দেখুন বাংলাদেশ সীমানা থেকে চাঁদ দেখতে পাওয়ার সাপেক্ষে গতকাল ৫ই জুলাই ছিল ১ম waxing crescent phase. সুতরাং এটা নিশ্চিত করেই বলা যায় যে গতকাল ৫ই জুলাই, ২০১৬ ইং তারিখে বাংলাদেশের আকাশ সীমায় শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছিলো। কিন্তু মেঘাচ্ছন্ন আকাশের কারণে আমরা তা দেখতে পাইনি। আর গতকাল বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন।
আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য যে মধ্যপ্রাচ্চে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখতে পাওয়ার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়াতেও গতকাল ৫ই জুলাই শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। তারা আজ ৬ই জুলাই পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর পালন করছে।
ম্যাপের দিকে খেয়াল করে দেখুন যে মধ্য প্রাচ্চের দেশসমুহ বাংলাদেশের পশ্চিমে অবস্থিত আর অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া এই দেশগুলো বাংলাদেশের পূর্বে অবস্থিত। বাংলাদেশের পূর্ব ও পশ্চিমের দেশগুলোতে যেখানে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলো সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান সেই দেশগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে হওয়া সত্ত্বেও সেখানে কেও চাঁদ দেখতে পেলোনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:২২