পুনরুত্থান বলতে আসলে কি বোঝায়? তা কখন এবং কিভাবে সংগঠিত হয়?
পুনরুত্থান বলতে পুনরায় উত্থিত হওয়া বা উঠাকে বুঝায় । প্রচলিত ধারণা মতে পুনরুত্থান বলতে মৃত্যুর পরে কিয়ামতের দিন পুনরায় জীবন লাভ করাকে বুঝায় । কিন্তু সুফী সাধকদের মতে মানুষ মারা যাবার পর একমাত্র কেয়ামতের সময়ই যে কেবল সে পুনরায় উত্থিত হয় ব্যপারটা আসলে সেরকম নয়। পুনরুত্থান একটি চলমান পক্রিয়া। মৃত্যুর পর কেয়ামতের পূর্বেই একটি আত্মার তার কর্মফল অনুসারে, উপযুক্ত পরিবেশে একাধিকবার পুনরুত্থান ঘটে। বিষয়টি কোরআন-হাদীসের আলোকে ব্যাখ্যা করা হলো।
আল্লাহ্ বলেন, “তোমরা কেমন করে কুফরী কর? অথচ তোমরা মৃত ছিলে, আমি তোমাদের জীবিত করেছি, আবার মৃত্যু দিব, আবার জীবিত করবো, অতঃপর তোমরা আমার দিকেই ফিরে যাবে”। (সুরা বাকারাঃ ২৮)
সবার ধারণা যে কেবল মাত্র দুনিয়া ধ্বংসের পরেই পুনরুত্থান ঘটবে। আগেই বলেছি এই পুনরুত্থান একটি চলমান পক্রিয়া। উপরের আয়াতটার দিকে খেয়াল করুন। প্রথমে বলা হয়েছে যে "তোমরা মৃত ছিলে, আমি তোমাদের জীবিত করেছি"। "তোমরা মৃত ছিলে” এই অংশ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, যে জনগোষ্ঠীকে উল্লেখ করে আল্লাহ্ এই কথা বলেছেন তারা একটি জীবনকাল অতিবাহিত করে মারা গিয়েছিলো। এই আয়াতে মানব সৃষ্টির পূর্বের কথা কিন্তু বলা হয়নি। কারণ, সৃষ্টির পূর্বাবস্থাকে কখনও মৃত বলা যায় না। হযরত আদম (আঃ) কে আল্লাহ্ যখন সৃষ্টি করেছেন তখন কিন্তু এটা বলা হয়না যে আল্লাহ্ হযরত আদম (আঃ) কে মৃত থেকে জীবিত করেছেন।কারণ, সৃষ্টির পূর্বের অবস্থাকে মৃত বলার কোন সুযোগ নেই। মানুষ আত্মার বাহন। এই আত্মা যখন দেহ থেকে বের হয়ে যায় তখনই কেবল "মৃত" শব্দটা ব্যবহার করা যায়। সৃষ্টিহীন অবস্থাকে কেও মৃত বললে তা হবে যুক্তির খাতিরে যুক্তি দেয়া। পবিত্র কোরআনে আছে, “প্রত্যেক নফসকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।” অর্থাৎ প্রত্যেককেই মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে তথা মরতে হবে। সুতরং এই আয়াত থেকেই বোঝা যায় মারা যাওয়ার ব্যাপারটা কেবলমাত্র জন্মানোর পরেই হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি এখনও জন্মায়নি সে আবার মৃত থাকে কিভাবে? খুব ভালো করে পড়ুন আয়াতটা। এই আয়াতে একই আত্মার ৩বার জন্মানোর ইঙ্গিত রয়েছে। “অথচ তোমরা মৃত ছিলে...” এই আয়াত একটি (প্রথম) জীবনকালের ইঙ্গিত বহন করে। “আমি তোমাদের জীবিত করেছি, আবার মৃত্যু দিব।” এখানে দ্বিতীয় জীবনকালের ইঙ্গিত রয়েছে। “আবার জীবিত করবো…” এখানে তৃতীয় জীবনকালের ইঙ্গিত রয়েছে। মারা যাবার পর যদি একেবারে কেয়ামতের সময়ই কেবল পুনরুত্থান ঘটত তাহলে সংখ্যাটা হতো ২ বার। অবশ্য এই আয়াতে জন্ম-মৃত্যুর ধারাবাহিক ঘটনাকে বোঝানোর জন্য তিনবার পুনরুত্থানের প্রসঙ্গ এসেছে। কিন্তু বিষয়টি এরকম না যে পুনরুত্থান কেবল তিনবারই সংগঠিত হয়। আমরা বিশ্বাস করি যে মৃত্যুর পর পুনরুত্থান হবে। কিন্তু বিশ্বাসের একটা জায়গায় ভুল করি তা হলো যে এই পুনরুত্থান শুধুমাত্র কিয়ামতের সময়ই হবে। কিন্তু পুনরুত্থান একটি চলমান পক্রিয়া।
আল্লাহ্ বলেন, "যে ব্যক্তি মৃত ছিল, যাকে আমি পরে জীবিত করেছি এবং যাকে মানুষের মধ্যে চলবার জন্য আলো দিয়েছি, সেই ব্যক্তি কি ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে অন্ধকারে রয়েছে এবং সেই স্থান হতে বের হবার নয়? এরুপ সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের দৃষ্টিতে তাদের কৃতকর্ম শোভন করে রাখা হয়েছে। (আল-আনআমঃ ১২২)”
আয়াতের প্রথম অংশে আছে, “যে ব্যক্তি মৃত ছিল, যাকে আমি পরে জীবিত করেছি...” পুরো বক্তব্যটাই কিন্তু অতীত কালে। আয়াতটি থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে আল্লাহ্ যে মৃত থেকে জীবিত করেছিলেন তা এই দুনিয়ার বুকেই। এটা কিয়ামতের পরে নয়। এই আয়াতে কিন্তু কেয়ামতের দিন “জীবিত করা হবে” বলা হয়নি। বলা হয়েছে “জীবিত করেছি” অর্থাৎ কেয়ামতের পূর্বেই মৃত কোন ব্যক্তিকে জীবিত করা হয়েছিলো। সুতরাং পুনরুত্থান যে শুধু কেয়ামতের সময়ই হবে তা নয়। কেয়ামতের পূর্বেই অর্থাৎ এই জগত ধ্বংসের পূর্বেই একটি আত্মার একাধিকবার পুনরুত্থান ঘটে।
পুনরুত্থান সম্পর্কিত আরও কিছু আয়াত।
“তিনি মৃত থেকে জীবিতের আবির্ভাব ঘটান এবং তিনিই জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন। এবং ভূমির মৃত্যুর পর তাকে পুনরুজ্জীবিত করেন। এভাবে তোমরা উত্থিত হবে। (সুরা রুমঃ ১৯)”
এই আয়াতের শেষে আছে “ভূমির মৃত্যুর পর তাকে পুনরুজ্জীবিত করেন।” এটা দ্বারা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে কেয়ামতের সময় পৃথিবী ধংসের পর মানুষকে আবার পুনরুত্থান ঘটানো হবে। কিন্তু এই আয়াতের প্রথম অংশে যে আছে “তিনি মৃত থেকে জীবিতের আবির্ভাব ঘটান এবং তিনিই জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন….” এই cycle তো কেয়ামতের আগেই। তাহলে কেয়ামতের পূর্বে আল্লাহ্ কি মৃতকে আবার জীবিত করেন না?
মৃত্যুর পর কেয়ামতের পূর্বেই যে মানুষকে আল্লাহ্ আবার জীবিত করেছেন তার আরও প্রমাণ পবিত্র কোরানেই আছে। আল্লাহ্ বলেন, "সে বলল মৃত্যুর পর কিরুপে আল্লাহ একে জীবিত করবেন? অতঃপর আল্লাহ তাকে একশত বছর মৃত রাখলেন। পরে তাকে পুনর্জীবিত করলেন। (আল-বাকারাঃ ২৫৯)"
এইযে আল্লাহ্ বললেন যে একশত বছর মৃত রাখলেন। পরে তাকে পুনর্জীবিত করলেন। এটা কি কেয়ামতের পরের ঘটনা? পুরো বক্তব্যটাই তো অতীত কালে বলা হয়েছে।
কেয়ামতের পূর্বেই যে মানুষের পুনরুত্থান সম্ভব সেই বিষয়ে আরও একটি আয়াত।
এরশাদ হয়েছে, " হে রাসুল ! আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা মৃত্যু ভয়ে স্বীয় আবাসভূমি পরিত্যাগ করেছিল? তারা ছিল হাজার হাজার, অতঃপর আল্লাহ্ তাদেরকে বলেছিলেন, তোমাদের মৃত্যু হোক । অতঃপর আল্লাহ্ তাদেরকে জীবিত করেছিলেন । নিশ্চয় আল্লাহ্ মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল কিন্তু অধিকাংশ লোক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।“ (সূরা বাকারাঃ ২৪৩)
এই আয়াতের দিকে ভালো করে লক্ষ্য করুন। আল্লাহ্ বলেছেন, “অতঃপর আল্লাহ্ তাদেরকে বলেছিলেন, তোমাদের মৃত্যু হোক । অতঃপর আল্লাহ্ তাদেরকে জীবিত করেছিলেন ।” (কেয়ামতের পর) জীবিত করবেন বলা হয়নি। যা বলা হয়েছে তা কিন্তু অতীতকালের ঘটনা।
একটা মানুষ যখন তার হায়াতে জিন্দেগি সমাপ্ত করে মারা যায় তার কর্মফল অনুযায়ী সে সেরকম একটা পরিবেশে আবার জন্ম নেয়। এবং এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে যতক্ষণ না আত্মার উন্নতির মাধ্যমে সে আল্লাহ্তে বিলীন না হয়। কারণ এই আত্মার আত্মিক অবস্থায় অর্থাৎ দেহ ছাড়া কখনো উন্নতি বা অবনতি হয়না। এই আত্মার উন্নতি অবনতির জন্য দেহ আবশ্যক। অর্থাৎ পরকালে শাস্তি হবে রূহের বা আত্মার। এই আত্মা পাপ অথবা পুণ্য যাই অর্জন করুকনা কেন তা দেহের ভিতর অবস্থান কালেই সম্ভব। দেহ থেকে আত্মা বের হয়ে গেলে অর্থাৎ মৃত্যুর পরে সে চাইলেও নতুন করে কোন পুণ্য অর্জন করতে পারবেনা।
দীর্ঘ দিনের একটা ভাবনা- কেন মায়ের পেটে থেকে মানুষ বোবা হয়ে জন্ম নেয়? মায়ের পেটে থেকে অন্ধ হয়ে জন্ম নেয়? কেন মায়ের পেটে থেকে প্রতিবন্ধী, বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম নেয়? কেন মায়ের পেটে থেকে বাচ্চাটা কালো হয়? মায়ের পেটে থেকে ফর্সা হয়? জন্ম থেকেই কেউ হিন্দুর কোলে জন্ম নেয়। কেউ মুসলমানের কোলে জন্ম নেয়। কেউ বৌদ্ধের কোলে জন্ম নেয়। কেউ খ্রিষ্টানের কোলে জন্ম নেয়। কেউ মোমেন ব্যক্তির কোলে জন্ম নেয়। কেউ কাফেরের কোলে জন্ম নেয়। এই জন্মের ব্যাপারে এই বাচ্চারতো কোন অপরাধ নেই। তাহলে তাকে এই কাফেরের ঘরে কেন পাঠালো? আরেক জনকে কেন মোমেনের কোলে পাঠালো? এই সব বৈষম্যের কি কারণ? এর উত্তর জানতে হলে আরও গভীর ভাবে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর মিলিত অবস্থা (Zygot) মায়ে গর্ভে যাওয়ার একশ বিশ দিন পর দেহটা পূর্ণ হয়। পূর্ণ হওয়ার পরে আল্লাহ ফেরেশতা পাঠান। ফেরেশতারা এসে তার ভাগ্যে লিখে দিয়ে যায় যে সে কতদিন বেঁচে থাকবে, কতদিন সে কি কাজ করবে, কখন-কোথায় তার মৃত্যু হবে। ফেরেশতারা লিখে দিয়ে যাওয়ার পরে আল্লাহ বলেন আমার ‘রূহ থেকে রূহ তোমার ভিতর ফুঁকে দিলাম।’ (সুরা আল হিজরঃ ২৯) এরপর রূহটা ঐ গর্ভে থাকা মানব শিশুর মাঝে ফুঁকে দেয়া হয়। এই রূহ মানব দেহের ভিতরে ফুঁকে দেয়ার আগেই কিন্তু ভাগ্য লিপিবদ্ধ হয়। এখন মায়ের পেটে থেকে বাচ্চাটার যখন চার মাস পূর্ণ হলো, তখনইতো তার ভাগ্যলিপি লিখা শেষ। কত বছর সে হায়াত পাবে। কখন তার মৃত্যু হবে। সে অন্ধ, বধির, বোবা বা বিকলাঙ্গ হবে নাকি সুস্থ দেহ নিয়ে জন্ম নিবে। কাফেরের ঘরে জন্মাবে নাকি মুমিন ব্যাক্তির ঘরে জন্মাবে সর্ব বিষয়ে তকদিরে লিখা শেষ।
আবার এটাও মনে রাখতে হবে যে একজনের পাপের জন্য অন্য জন দায়ী নয়। অর্থাৎ পিতা যদি পাপ করে ছেলে দায়ী হবে না। ছেলে পাপ করলে পিতা দায়ী হবে না। মা পাপ করলে মেয়ে দায়ী হবে না। তাহলে বাচ্চাটা কবে কখন পাপ করল? আর কবে কখন পুণ্য করলো যে যার বদৌলতে একজন অন্ধ, বোবা বা বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম নিল আর আরেকজন সুন্দর দেহ কাঠামো নিয়ে জন্ম নিল। একজন সোনার চামুচ মুখে নিয়ে জন্ম নিল আর আরেকজন পথের ভিখারির ঘরে জন্ম নিল। আল্লাহ্ এরশাদ করেন, “ আমি আমার রুহু থেকে রুহু আদমের ভিতর ফুঁকে দিলাম।”(সুরা আল-হিজরঃ ২৯) অর্থাৎ আদম তথা মানুষের ভিতর ফুঁকে দেয়া রুহু মূলত আল্লাহ্র নুরময় সত্ত্বার একটি অংশ। মানুষের দেহে এই পবিত্র রুহু প্রবেশ করার পর ষড়রিপুর দ্বারা অপবিত্র হয়ে যায়। এই রুহু পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত আর সেই পরম আত্মার সাথে মিশতে পারেনা।ফলে একটা জীবনকাল অতিবাহিত হওার পর তাকে তার কর্মফল অনুযায়ী আরেকটি উপজিক্ত পরিবেশে প্রেরণ করা হয়। আসলে এই রুহু যখন কোন দুঃখ কষ্টময় পরিবেশে জন্ম নেয় সেটাই তার দোযখ এর শাস্তি আর এই রুহু যখন পুণ্য কর্মের বিনিময়ে শান্তিময় স্থানে জন্ম লাভ করে সেটাই তার বেহেশতের শান্তি। তবে চূড়ান্ত বেহেস্ত তখনই লাভ হয় যখন যথাযথ সাধনার মাদ্ধমে রুহু পবিত্র হয়ে তথা আত্মিক পরিশুদ্ধতা অর্জনের মাদ্ধমে পরম আত্মার সাথে আবার মিশে যায়।
আসলে যে ব্যক্তিটি সোনার চামুচ মুখে নিয়ে জন্মায় বুঝতে হবে যে সে তার পূর্বের জনমে কোন ভাল কাজের প্রতিদান হিসেবে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে এই অনুগ্রহ পেয়েছে। আর যে পথের ভিখারীর ঘরে জন্মায় বুঝতে হবে যে এটা তার পূর্বের জনমের কোন পাপের শাস্তি। তা নাহলে এই প্রশ্ন ওঠাই সাভাবিক যে আল্লাহ্ কি এই ভিখারির প্রতি অবিচার করলেন? কারণ আপনি-আমি জন্মালাম সচ্ছল পরিবারে আর সে জন্মাল ভিখারী হিসেবে। আসলে সে তার শাস্তিকাল পার করার জন্য ভিখারীর ঘরে জন্মেছে। আল্লাহ বলেন, কিয়ামতের দিন আমি তাদের সমবেত করবো অন্ধ, বোবা, ও বধির করে, ওদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়। তাদের আবাস্থল হবে জাহান্নাম। যখনই উহা স্তিমিত হবে আমি তখন তাদের জন্য অগ্নি বৃদ্ধি করে দিবো। (সূরা বনী ইস্রাইলঃ ৯৭)
একটা উদাহরন দেই। ধরা যাক, একটা মানুষ আদম (আঃ) এর যুগে মারা গেলো। জীবিত থাকাকালীন তার কর্ম খুব একটা ভাল ছিলোনা। ফলে কবরে যাওয়ার পর তার কবরের আজাব শুরু হল। ধর্মের বিধান অনুসারে এই আজাব কিন্তু কেয়ামত পর্যন্তই চলার কথা। তারপর কেয়ামতের পর রোজ হাশরের ময়দানে আল্লাহ্ তার বিচার কার্যের সমাধা করে রায় দিলেন যে সেই ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে।তখন সে জাহান্নামে গেলো। আবার আরেকজন ব্যাক্তি কেয়ামতের কয়েকদিন পূর্বে মারা গেলো। তার ক্ষেত্রেও দেখা গেলো যে জীবিত থাকাকালীন তার কর্ম খুব একটা ভাল ছিলোনা। ফলে কবরে যাওয়ার পর তারও কবরের আজাব শুরু হল। মাত্র কয়েকদিন কবরের আজাব ভোগ করে কিয়ামতের পর হাশরের ময়দানে আল্লাহ্র বিচার শেষে সে জাহান্নামে গেলো। তাহলে দেখা গেলো যে এই দুই জনই ultimately দোজখে গেলো। কিন্তু যে ব্যাক্তি আদম (আঃ) এর সময়ের ছিল সে মাঝখান দিয়ে কয়েক হাজার বছর কবরের আজাব ভোগ করলো আর যে ব্যক্তি কিয়ামতের মাত্র কিছু দিন পূর্বে মারা গিয়েছিলো সে মাত্র কয়েকদিন কবরের আজাব ভোগ করবে। এইখানে কি তাহলে এই দুই ব্যাক্তির বিচারের বা শাস্তি দেয়ার মধ্যে কোন সমতা রক্ষা হলো? আমরা যদি পুনরুত্থান বিষয়ে আমাদের প্রচলিত বিশ্বাসের মাঝেই থাকি তাহলে দেখবো যে মোটেও এইখানে কবরের আজাবের ক্ষেত্রে কোন সমতা রক্ষা হলনা। কারণ একই রকম পাপ কর্ম করে একজন কয়েক হাজার বছর কবরের আজাব ভোগ করলো আর আরেকজন মাত্র কয়েকদিন কবরের আজাব ভোগ করলো।তাহলে কি বলবো যে আল্লাহ এই দুই ব্যাক্তির বিচারে সমান শাস্তি দিলেন না! কিন্তু আমরা জানি যে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বিচারকার্যে এতটুকু কম-বেশী করবেননা। তিনিতো সকল দোষ-ত্রুটির উর্ধে। তাহলে কিয়ামত কি এটাও বোঝা দরকার। আরবী “কিয়াম” শব্দ থেকে “কিয়ামত” শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ দাঁড়ানো বা থেমে যাওয়া। প্রচলিত অর্থে ভবিষ্যতের কোন এক সময় অনুষ্ঠিতব্য মহাপ্রলয়কে কিয়ামত বলা হয়। পবিত্র কোরআন ও হাদীস এ কিয়ামত সম্পর্কে যেসব শাশ্বত বানী এসেছে তাতে দেখা যায় কিয়ামত দুই প্রকার। ১) মহাপ্রলয়, ২) দেহের প্রলয়। একটা মানুষ যখন মারা যায় তখন তার দেহের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সমস্ত কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে যায় এটাও ঐ মানুষটার জন্য এক ধরণের কিয়ামত। এই বিষয়ে হাদীস শরীফ থেকে আমরা সুস্পষ্ট ধারণা পেতে পারি। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, “এক ব্যক্তি হযরত রাসুল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলো, কিয়ামত কবে হবে? এ সময় তার নিকট মুহাম্মদ নামক এক আনসারী বালক ছিল। তখন রাসুল (সাঃ) বললেন, এ বালকটি বেচে থাকলে তার বৃদ্ধাবস্থায় আসার পূর্বেই তোমাদের কিয়ামত সংগঠিত হয়ে যাবে।”[মুসলিম শরীফ, ২য় খণ্ড] তাহলে বোঝ যায় যে পৃথিবী ধ্বংস হওয়াও যেমন কিয়ামত তেমনি একটি মানুষের মৃত্যুও তার জন্য এক অর্থে কিয়ামত।
আসলে অনেক কিছুই একটার সাথে আরেকটা সম্পর্কিত।আসলে দোজখ কি আর বেহেশত কি, হাসর কি এই ব্যাপারেও ধারণা থাকতে হবে। যে ব্যক্তি আগের জনমের কৃতকর্মের ফল অনুযায়ী এই জনমে কষ্টকর জীবন লাভ করেছে। এটা একধরনের দোযখের শাস্তি। পবিত্র কালামে আল্লাহ্ ফরমানঃ
"অতঃপর যারা হতভাগ্য তারা থাকবে অগ্নিতে এবং সেথায় তাদের চিৎকার ও আর্তনাদ চলতে থাকবে অনন্তকাল। সেথায় তারা স্থায়ী হবে ততদিন পর্যন্ত, যতদিন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে, যদিনা তোমার প্রতিপালক যা ইচ্ছা তাই করেন।" [সূরা হুদঃ ১০৬-১০৭]
এই আয়াতটির দিকে খেয়াল করুন। এইখানে দোযখের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে তা কি মহা প্রলয়ের পরে? আল্লাহ্ বলেছেন, “সেথায় তারা স্থায়ী হবে ততদিন পর্যন্ত, যতদিন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে,” মহা প্রলয়ের পরে হলে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকে কিভাবে? আসলে হাশরের মাঠ জগতের এই জায়গাটাই। যেখানে কাজ সেখানেই বিচার। হাদীস শরীফে রয়েছে, হাশরের মাঠে মানুষ উলঙ্গ খতনা বিহীন অবস্থায় উথিত হবে। মা আয়েশা (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞাস করলেন- ইয়া রাসূল (সঃ) মানুষ উলঙ্গ অবস্থায় উথিত হবে যে এটা কি তার জন্য লজ্জার কারন হবে না। হযরত রাসূল (সঃ) বললেন না লজ্জার কারণ হবে না। কারণ নবজাত শিশুর কোন প্রকার লজ্জা থাকে না। একই ভাবে কর্মফল অনুযায়ী বিভিন্ন অবস্থায় জন্ম নেয়ার বিষয়টাই আল্লাহ এভাবে কোরআনে ব্যাক্ত করেছেন, আল্লাহ বলেন, কিয়ামতের দিন আমি তাদের সমবেত করবো অন্ধ, বোবা, ও বধির করে, ওদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়। তাদের আবাস্থল হবে জাহান্নাম। যখনই উহা স্তিমিত হবে আমি তখন তাদের জন্য অগ্নি বৃদ্ধি করে দিবো। (সূরা বনী ইস্রাইলঃ ৯৭)
রাসুল (সাঃ) ফরমান, “শরীয়ত আমার কথা,তরিকত আমার কাজ, হাকিকত আমার অবস্থা, মারেফত আমার নিগুর রহস্য।” আসলে কোরানকে বুঝতে হলে এল্মে শরিয়ত, এল্মে তরিকত, এল্মে হাকিকত, এল্মে মারেফত এই চারটি বিদ্যায় বিদ্বান হতে হবে। কেবল মাত্র শরীয়তের জ্ঞ্যান দিয়ে কোরানের ব্যাখ্যা করতে গেলে তা কখনই পরিপূর্ণ ভাবে করা সম্ভব নয়।
আল্লাহ্ এরশাদ করেন, “তিনি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট, সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রুপক।সুতরাং যাদের হৃদয়ে কুটিলতা রয়েছে তারা অনুসরণ করে ফিতনা বিস্তার এবং অপব্যাক্ষার উদ্দেশ্যে তন্মদ্ধেকার রূপকগুলোর। আর সেগুলর ব্যাখ্যা আল্লাহ্ ব্যতীত কেও জানেনা। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর, তারা বলেন, আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি।” [সূরা আল ইমরানঃ ০৭] আসলে আল্লাহ্র বানীর প্রকৃত অর্থ বুঝতে হলে আল্লাহ্র সাথে যোগাযোগ থাকতে হবে। আর যারা এল্মে শরীয়তের পাশাপাশি এল্মে তরিকত, এল্মে মারেফতের জ্ঞ্যানে পারদর্শী তারাই প্রকৃত পক্ষে বলতে পারবে যে আল্লাহ্ তার বানী মোবারকের মাধ্যমে আসলে কোন বিষয়টি বুঝাতে চেয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে বাংলা ভাষায় একটি শব্দ আছে “ভালোবাসা”। এই ভালোবাসা শব্দটি একেক যায়গায় একেক অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন আমি যদি বলি, “আমি আমার মাকে ভালোবাসি” “আমি আমার বোনকে ভালোবাসি” আর “আমি আমার স্ত্রীকে ভালোবাসি”। এখানে ভালোবাসা শব্দটির বানানের কিন্তু কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু স্থান ভেদে এই তিন যায়গায় ভালোবাসার অর্থ তিনরকম।
যে পুনর্জন্ম নেয় সে কিন্তু তার পূর্ব পরিচয়ে আর এই জগতে ফিরে আসেনা। যেমনঃ ইমাম মাহদী (আঃ) এর সময়কালে ঈসা (আঃ) এর আগমন হবে। তখন তিনি রাসুল (সাঃ) এর উম্মত হিসেবেই জগতে আসবেন। তিনি কিন্তু খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ত্রাণ কর্তা হিসেবে জগতে আবির্ভূত হবেন না। সংগত কারণে তার নাম তখন হযরত ঈসা (আঃ) ও থাকবেনা।
একই ভাবে যে পুনর্জন্ম নেয় সে তার পূর্বের কিছুই জানেনা। (যদিও মাঝে মাঝে কিছু ব্যাতিক্রম লক্ষণীয়। নিচের linkগুলো click করলেই তা বুঝতে পারবেন।) কারণ স্মৃতি (memory) থাকে মস্তিষ্কে মস্তিষ্কে। এবার সে যখন নতুন করে জন্ম নিল, এই দেহের মস্তিষ্কটাও নতুন। এই নতুন মস্তিষ্কে তো আর সেই স্মৃতি জমা নাই। তাই সে জানতেও পারেনা যে সে কেন, কি কারনে এই পরিবেশে আবার জন্মালো। কিন্তু কেও যখন সাধনার মাধ্যমে অন্তর দৃষ্টি কে জাগ্রত করতে সক্ষম হয় অর্থাৎ এল্মে তাসাউফ/ এল্মে মারেফতের জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হয়। তখন তার পক্ষে জানা সম্ভব যে সে আরও কতবার কি অবস্থায় এই দুনিয়াতে জন্ম নিয়েছে।
পুনরুত্থানের বাস্তব উদাহরণঃ Click This Link
উপরের news এর মূল version: Click This Link
উপরের news এর video link: https://www.youtube.com/watch?v=ZWyHuN1G1vk
লেখার সময় প্রয়োজনীয় তথ্য নেয়া হয়েছে "আল্লহ কোন পথে" বইটি থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:০৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




