আগের পর্বগুলি
(১) ..:: ভালবাসার চারাগাছ - কেবলই সূচনা ::..
(২) ..:: ভালবাসার চারাগাছ - না বলা কথাগুলো (১) ::..
××××××××××××××××××××××××××××××××××
(৩)
..:: ভালবাসার চারাগাছ - না বলা কথাগুলো (২) ::..
.... মেয়েটি তখন রেজাল্ট সংগ্রহের জন্য স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল। ওর A+ পাওয়ার খবর শুনে অনেকটা হাপ ছেড়ে বাঁচে ওর ভাইয়া। ছেলেটি নিজের বাসায় খবরটি জানায় খুব উৎসাহের সাথে। যদিও তার উচ্ছাসের কারন এক মামী ছাড়া আর কেউ জানতোনা তখন।
রাতে মেয়েটির বাসা থেকে ওর আম্মু ছেলেটির আম্মুর কাছে ফোন করে সুখবরটি জানায় যদিও ছেলেটির কল্যানে তা আগে থেকেই জানা হয়ে গেছে। ছেলেটির সাথে কথা হয় মেয়েটির। অভিনন্দন জানায় তাকে। মেয়েটি ছেলেটিকে বাসায় যাওয়ার দাওয়াত দেয়। ছেলেটি সায় দেয়। সে তো অবশ্যই যাবে, অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষন এসেছে। না গেলে কি করে হবে?
নিজের ছুটি শেষ, কয়েকদিন পর ঢাকার পথে ঢাকার পথে রওনা হয় ছেলেটি, সাথে করে নিয়ে আসে বড় একটি পরিকল্পনা।
একদিন সপ্তাহ শেষে মেয়েটির বাসায় দুরুদুরু বুকে উপস্হিত হয় ছেলেটি। হাতে দু'প্যাকেট মিষ্টি। ছেলেটিকে দেখে মেয়েটির মা খুব খুশি হন। কিন্তু হাতে মিষ্টি দেখে আদুরে ধমকও বাদ পড়েনা। ড্রয়িংএ বসে ছেলেটি, সাথে মেয়েটি ও তার মা। কথা চলে। চলে মাঝে মাঝে গোপনে মেয়েটির চোখের পানে চাওয়া। মাথায় পরিকল্পনা। একসময় মেয়েটির মা নাস্তা আনার জন্য ভেতরে যান, ঘরে শুধু তারা দু'জন।
- ভাইয়া, তুমি কি অসুস্হ?
- কই না তো!
- তোমাকে কেমন যেন লাগছে! কেমন যেন টেনশনে আছো মনে হচ্ছে।
- হুম টেনশন তো কতই আছে।
- কি নিয়ে, গার্লফ্রেন্ড??
ছেলেটি চমকে উঠে, ও কিছু বুঝতে পারেনি তো??
- আরে নাহ... তোমার কি অবস্হা? তোমার বয়ফ্রেন্ড কেমন আছে??
- আমার আবার বয়ফ্রেন্ড, সে কপাল কি আছে?
- কেন কেন? তুমি কাওকে পছন্দ করনা??
-

ছেলেটি জবাব না দিয়ে হাসে।
- হু হু, ভাইয়া সিক্রেট তো কিছু অবশ্যই আছে! ধরা খেয়ে গেছ, বলনা ভাইয়া!
ছেলেটি দ্রুত কিছু সিদ্ধান্ত নেয়- " হ্যা, সিক্রেট তো অবশ্যই আছে। তবে এক শর্তে বলব।"
- কি শর্ত?
- আগে তুমি তোমার সিক্রেট বল, তারপর আমি বলব।।
- ভাইয়া, আমার সিক্রেট তো কাউকে বলা যাবেনা। খুবই সিক্রেট যে।
- তাহলে আমারটাও বলা যাবেনা।
- ধুর ভাইয়া বলনা !!
এই সময় মেয়েটির মা হাতে ট্রে নিয়ে ঘরে আসেন। মেয়েটির ভাইয়াও বাইরে থেকে আসে। সবাই একসাথে ড্রয়িংএ আড্ডা দেয়। একটু পর ভাইয়া বলে তার কম্পিউটারের কি যেন প্রবলেম হয়েছে ঠিক করতে পারবে কিনা। বিবরন শুনে ঠিক করতে পারবে বলে ছেলেটি ভাইয়ার ঘরে যায়। মেয়েটি তার ঘরে যায়।
কম্পিউটার দেখার ফাঁকে ফাঁকে ছেলেটি মাঝে মাঝে বাইরে আসে বিভিন্ন ছুতা দিয়ে। তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ খুঁজতে থাকে। পরে একটা ফোন ধরার জন্য একটু বাইরে বারান্দায় আসে। ফোন শেষ করে ভাইয়ার রুমে যাওয়ার সময় ছেলেটি দেখে করিডোরে কেউ নেই। মেয়েটির মা কোন মেহমানের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত ভাইয়া নিজের রুমে কম্পিউটারের স্ক্রু লাগাচ্ছে, সেও বাইরে আসবেনা। এই চরম সুযোগ।
মেয়েটির ঘরের দরজা খোলাই ছিল। টোকা দিয়ে ছেলেটি জানতে চায় আসবে কিনা। সম্মতি পেয়ে মেয়েটির ঘরে ঢোকে সে। এবং কোন রকম ভণীতা না করেই বলে "তুমি আমার সিক্রেট জানতে চাইছিলে না?? জানতে চাও?" মেয়েটি মাথা ঝাকায়। ছেলেটির মনে হল মেয়েটি সব বুঝে ফেলেছে ঘরে ঢোকার সময়ই, চুলোয় যাক। "শোন, সারা জীবন ধরে আমার একটাই সিক্রেট ছিল। সে হল তুমি। যাকে আমি কতটুকু ভালবাসি কখনো পরিমাপ করতে পারিনি।" তারপর মেয়েটিকে দুর্বলভাবে হাত বাড়াতে বলে ছেলেটি। মেয়েটিও যেন বাধ্য পুতুলের মত হাত বাড়িয়ে দেয় ছেলেটির পানে। ছেলেটি তার কয়েক রাত জাগার ফসল দুই পাতার চিঠিটি পকেট থেকে কাঁপা কাঁপা হাতে বের করে মেয়েটির হাতে দেয়। আর কিছুই না বলে মেয়েটির ঘর থেকে বেরিয়ে আসে সে। ফিরেও তাকায়না। তাকালে হয়তো দেখতে পেতো চোখ জুড়ে রাজ্যের অবিশ্বাস নিয়ে মেয়েটি ছেলেটির গমন পথে তাকিয়ে আছে। কোন মতে ভাইয়ার বাকি কাজ দ্রুত সেরে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মেয়েটির বাসা থেকে খোলা হাওয়ায় বেরিয়ে আসে ছেলেটির। আর তখনি চোখে জমা হয় একরাশ বাঁধভাঙা শ্রাবন বাষ্প ।
....................................... ..................................
পরের পর্ব
..:: ভালবাসার চারাগাছ - অপেক্ষার মধ্যরাত ::..(৪)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৩:৪৯