somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসার চারাগাছ - কেবলই সূচনা

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১)

ছেলেটি ছোট, মেয়েটিও ছিল ছোট। থাকতো পাশাপাশি বাড়িতে। অনেক ছোটবেলা থেকেই তাদের বন্ধুত্ব। ভালবাসার মানে বোঝার মত বয়স হয়নি। কিন্তু তবুও ছেলেটির মেয়েটির প্রতি এক অদ্ভুত ধরনের আকর্ষণবোধ ছিল। না বুঝেই তাকে অনেক ভালবাসতো। মেয়েটি পাশে থাকলে নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হতো ছেলেটির। তাকে না দেখলে মনে হতো কি যেন নেই, কি যেন নেই। সব সময় তার পাশাপাশি থাকতে চাইতো। তাদের মাঝে বোঝাপড়াটা ছিল অসাধারণ। দুজনের মাঝে প্রায়ই খুনসুটি লাগতো, মারামারি, খামচি দেয়া চলতো। মেয়েটি মাঝে মাঝে রাগ করে গাল ফোলাতো। তখন নানা রকম কৌশল করে তার রাগ ভাঙাতো ছেলেটি। আবার একসাথে খেলা শুরু করতে দেরী হতো না।

মাঝে মাঝে অসুস্থ থাকলে মেয়েটি খেলতে বের হতো না। তখন বেশিন থাকতে না পেরে ছেলেটি নিজেই মেয়েটির বাসায় চলে যেত। লেগো, পুতুল, বল নিয়ে খেলতো, তাকে সঙ্গ দিত। মেয়েটির বাসায় তার অবাধ যাতায়াত ছিল। বাসায় মেয়েটির সমবয়সী কেউ ছিলনা। তা ছাড়া মেয়েটির আম্মুও ছেিেনজের ছেলের মতই দেখতেন। তাদেও পরিবারটিও ছিল অসাধারন। আধুনিক ও রুচিসম্পন্ন।

কখনো খেলতে ইচ্ছে না থাকলে তারা কয়েকজন একসাথে ঘুরতে বের হত। ছেলেটি ছিল একটু দুরন্ত প্রকৃতির, পাড়ার সমস্ত ঝোপঝাড় ছিল তার নখদর্র্পণে। সে ঘুরিয়ে দেখাত কোথায় পাখির বাসা, পাখির ডিম, বুনো ফুল। ফুল বড় ভালবাসতো মেয়েটি। বিভিন্ন জায়গা থেকে মেয়েটির জন্য ফুলের গাছ নিয়ে আসতো। নতুন কোন গাছ পেলে আনন্দের সীমা থাকতোনা। তার আনন্দ দেখে খূশী হত ছেলেটি।

ছেলেটি যেমন মেয়েটিকে পছন্দ করতো, মেয়েটিও করতো। দুজনের মাঝে বোঝাপড়াটা ছিল অসাধারণ। এভাবেই একসাথে ঘোরা, একসাথে খেলা করতে করতে সময় কাটতে থাকে। বাড়তে থাকে ভালবাসার ছোট্ট চারাগাছ।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে ছেলেটি ভালবাসার বর্ণমালা শিখতে থাকে। ছেলেটি জানে সে মেয়েটিকে অনেক ভালবাসে, এও বোঝে মেয়েটি তাকে পছন্দ করে। কিন্তু সেটা কি ভালবাসা নাকি শুধুই পছন্দ, এটা সে কখনোই বুঝতে পারেনি।

ছেলেটি রাত জেগে অনেকবার পরিকল্পনা করেছে মেয়েটির কাছে নিজের ভালবাসার ডালা মেলে ধরবে; কিন্তু অজানা কোন এক ভয়ে বলতে পারেনি কখনও। জানাতে পারেনি মেয়েটি চলে যাবার আগ মূহুর্ত পর্যন্ত। হয়তো বয়স কম ছিল।

মেয়েটি কাশ সিক্স বা সেভেন-এ থাকাকালীন সময়ে মেয়েটির বাবা-র কর্মত্রে ঢাকা শহরে বদলী হয়। ফলে মেয়েটি সপরিবারে ঢাকায় চলে আসতে বাধ্য হয়।

ছেলেটি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল খবরটি শুনে। সেদিন আর তার খেলা হয়নি। অদ্ভূত বিষন্নতায় ঢাকা পড়েছিল তার মনের আকাশটা। নির্দিষ্ট দিনে সকল খেলার সাথি-দের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অন্যত্র চলে যায় মেয়েটি। চলে যায় ছেলেটির হৃদয়ের একটা অংশ। ভাঙা মন নিয়ে পড়ে থাকে ছেলেটি। দুপূরে বেরাতে যাওয়ার উৎসাহ পায়না, বুনো ফুল গুলো নির্ভয়ে বংশবিস্তার করে, পাখির ডিম চুরি হয়ে যায়। ছেলেটি বোঝে মেয়েটি তার কাছে কি ছিল। প্রতিণে তার অভাব অনুভব করে। মন কেঁদে যায়; নিজেও কাঁদে লুকিয়ে লুকিয়ে। পড়ায় মন বসেনা, বইয়ের পাতায় পাতায় মেয়েটির ছবি ভেসে উঠে। ঘুরতে ভাল লাগেনা, খেলতে ভাল লাগেনা। তার উৎসাহ চলে গেছে অনেক দূর। কিন্তু ছেলেটি বাইরের কাউকে বুঝতে দেয়নি তার মনের অবস্থা। সবার সাথে মিশেছে আগের মতই। কথা বলেছে, দূষ্টুমি করেছে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে চৈত্রের শূষ্কতা বয়ে বেড়িয়েছে দিন-রাত।

পরবর্তী দুই বছর দেখা হয়না তাদের। দু’বছর পর একদিন স্কুল থেকে ফিরে এসে দেখে মেয়েটি আর তার আম্মু এসেছে। অনেকন আগেই এসেছে, এখন চলে যাচ্ছে। মেয়েটিকে দেখে বুকে মোচড় দিয়ে উঠে তার। চোখে পানি চলে আসে। কিছু বলবে, হায়, তাদের যে এখন যাবার বেলা। কিছুই বলা হলনা। মেয়েটির চোখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করে, পারেনা। ছেলেটির বুকে ঝড় বইয়ে দিয়ে আবার তারা ফিরে যায়।

এরপর কেটে গেছে অনেক বছর। ছেলেটি পার হয়েছে কলেজের আঁঙিনা। আঁকতে শিখেছে ভালবাসার মানচিত্র। তার সাথে নিজেকে মিলিয়ে অবাক হয়, সে কত ভালবাসে মেয়েটিকে! প্রতিদিনই কিছু সময় স্মৃতির গভীরে হারিয়ে যায় সে। অনুভব করে সেই ছোট্ট মেয়েটির হাতের স্পর্শ। ভূলতে পারেনা একটি দিনের জন্যও। আহ্ মেয়েটি যদি জানতো! মেয়েটি যদি দেখতো তার ভালবাসার সেই ছোট্ট চারাগাছ আজ কত বড় মহীরূহে পরিণত হয়েছে। স্বশব্দে বুকের গভীর থেকে দীর্ঘনিঃশ্বাস উঠে আসে।।

.......................................................


( লেখাটা বছর খানেক আগের, ছেলেটি কলেজ শেষ করে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়। এই সময় সে মেয়েটির বর্তমান ঠিকানা আবিষ্কার করে ফেলে। কিন্তু হঠাৎ করে গিয়ে দেখা করার মত সুযোগ পায়না। বিধাতাই নিজ হাতে তার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দেন। মেয়েটি যেখানে থাকে সেই এলাকায়ই ছেলেটির এক খালার বিয়ে হয়। সুযোগ টা হাতছাড়া করেনা ছেলেিিট। বিয়ে চলাকালীন সময়েই একদিন হঠাৎ করে মেয়েটির বাসায় চলে যায়। তাকে রিসিভ করে মেয়েটির বড় ভাই। ছেলেটিকে দেখে আন্টি (মেয়েটির মা) অনেক খুশি হন। মেয়েটিকে দেখার জন্যে ছেলেটির মনে যেন জ্বলোচ্ছাস বইতে শুরু করে। তার বুকের ঝড় আরও বাড়িয়ে দিয়ে মেয়েটি ঘরে ঢোকে। ঘরে ঢুকেই মেয়েটি ছোটখাট একটা চিৎকার দিয়ে ফেলে তার নাম ধরে। ছেলেটির মনে ীণ আশার দোলা জাগে মেয়েটি কি তাকে পছন্দ করতো ! তাকে দেখে ছেলেটির চোখ যেন সরেনা। শেষবারের চাইতে ঢের বেশী সুন্দরী হয়েছে সে। চোখ ফেরানো মুশকিল। বাইরে অবশ্য কিছুই বুঝতে দেয়নি ছেলেটি। অনেকদিন পর দেখা, সেদিন অনেক কথা হয় তাদের সবার সাথে। কিন্তু সময় অফুরন্ত নয়। বিদায় নিতেই হয়। মেয়েটিকে চোখের আড়াল করতে একটুও মন চায়না ছেলেটির, আবার আসবে কথা দিয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে সে। সেদিনও তার গোপন কথা গোপনই থাকে।

তার দেয়া কথামত ছেলেটি এর পরেও কয়েকবার মেয়েটির বাসায় যায়। কিন্তু কোনবারই সে তার ভালবাসার কথা মেয়েটিকে জানাতে পারেনি। কোন কারণে মেয়েটি যদি তাকে প্রত্যাখ্যান করে তবে তার কি হবে তা সে ভাবতে চায়না। মেয়েটিকে তো চিরদিনের জন্য হারাবেই উপরন্তু মেয়েটির পরিবারের সকলের ভালবাসা ও স্বহৃদ্যতা হারাবে। তাই সাহস করে বলা হয়নি। আজও নিরবেই বংশবিস্তার করে চলেছে তার ভালবাসার ছোট্ট চারাগাছ।)
...................

পরবর্তি পর্ব গুলো


(২) ..:: ভালবাসার চারাগাছ - না বলা কথাগুলো (১) ::..

(৩) ..:: ভালবাসার চারাগাছ - না বলা কথাগুলো (২) ::..

(৪)
..:: ভালবাসার চারাগাছ - অপেক্ষার মধ্যরাত ::..

(৫)

..:: ভালবাসার চারাগাছ - কষ্ট প্রহর ::..
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১০ বিকাল ৪:৫২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিরোনামহীন ...

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:১৯





****
আরো দেখতে চাইলে ভেতরে আসেন ...







...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুগে-গুজবে বাংগালী....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:২৩

হুজুগে-গুজবে বাংগালী....

"হুজুগে-গুজবে বাংগালী"- বলে আমাদের একটা দুর্নাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে। গুজব আর হুজুগ যমজ ভাই।
গুজব বা হুজুগের সবকিছু মানুষ কিনতে পারে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্যোতনা দেয় অন্ধ বিশ্বাস।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হে অনন্যা তোমার কথিকা

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৫২



তোমার ভাবনা আজ মনের ভিতর ডাল-পালা মেলে
পত্র-পল্লবে সুশোভিত হয়ে বিচিত্র সব ফুলের দেশে
আমায় নিয়ে জোছনার স্নিগ্ধ আলোয় অপরিমেয়
সুখের চাদরে আচ্ছাদিত করে আমায় বিমোহীত করে।

তোমার প্রফাইল পোষ্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক জিয়ার কি হবে তাহলে!

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৪২

আজকের এই বিশেষ দিনে নাহিদ ইসলাম ঠিক সকাল ৯টায় উঠে দেখলেন, সোশ্যাল মিডিয়া ভরে গেছে শুভেচ্ছাবার্তায়। কেউ লিখছে "আমাদের ভবিষ্যতের নায়ক", কেউ বলছে "নেক্সট লিডার"।

চা হাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে নাহিদ ভাবছেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

শুভ জন্মদিন নাহিদ ইসলাম

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:২৪



জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল নাহিদ ইসলাম।তোমরা এই জেন-যি প্রজন্ম সবাই আমার সন্তানের বয়সি বলে তুমি হিসাবে সম্বোধন করে এই পোস্ট লিখছি। রাজপথের মিটিং মিছিল থেকে জুলাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×