somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অহনা (২য় পর্ব)

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রিং বাজছে হেড এডমিন স্যারের উনি রিসিভ করছেন না, আবার ফোন দিয়ে লম্বা সময় ধরে অহনা অপেক্ষা করতে থাকলো রিং বাজতে বাজতে শেষ হলো কেউ ধরলো না। ঘড়িতে দেখলো পাঁচটা বিয়াল্লিশ মিনিট, মাগরিবের আজান দেয় পাঁচটা পঁয়ত্রিশে, স্যার হয়তো নামাজে দাঁড়িয়েছে অনুমান করে অহনা।
সারাদিন এরা যত অন্যায়, যত মিথ্যা, যত রকম দুর্নীতি করুক না কেন এরা নামাজ পড়ে সবাই সঠিক সময়, এই জিনিসটা অনেকদিন থেকেই অহনা লক্ষ্য করেছে।

অসহায় ভাবে চারদিকে তাকালো ও।
প্রায় সাড়ে সাত মিনিট পরে এডমিন হেডের ফোন আসলো, ফোন রিসিভ করে এডমিনের হেড মোহাম্মদ সামাদ স্যারকে বিস্তারিত জানালো অহনা।
উনি বললেন
-কোন সমস্যা নেই, একটু অপেক্ষা করেন দেখি অফিসে কে আছে তাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি আইটিতে; এটা বলে একটু থেমেই আবার কিছু মনে হতেই বললেন; আচ্ছা আচ্ছা আমাদের ওলিকে পাঠালেও তো হবে, ওর কার্ডে এক্সেস আছে সব সময়ের জন্য, আপনি একটু অপেক্ষা করেন টেনশনের কিছু নাই।

কিছুক্ষণ পর হেলে দুলে ওলি ভাই আসলেন, লক খুলে ভেতরে ঢুকেই বললেন-

- ম্যাডাম, ৫ টার পরে তো অটো লক হয়ে যায় দরজা আপনি আসার সময় কোন পিয়নকে বলে আসলেই তো হতো। আর আমারে ফোন দিতেন। এডমিন স্যারের কাছে ফোন দেয়ার কী দরকার ছিল? তার কথা তো জানেন, সবকিছু সিরিয়াসলি নেয়। আপনার জন্য কতগুলো ঝাড়ি খেলাম।
কি যে ঝাড়ি খেয়েছে সেতো অহনা বুঝতেই পারছে, ডিপার্টমেন্টের ছেলেদের চামচামি করে সামাদ স্যার সে দেবে তাকে ঝাড়ি!! যত্তসব মিথ্যা কথা।
- কি ভাবতেছেন? কাজ কি কমপ্লিট করছেন? গিফটের কার্টুনটা বের করেছেন তো?"

অহনা ক্লান্ত স্বরে জবাব দেয়,
- হ্যাঁ, কাজ কমপ্লিট। কার্টুনটা দরজার বাইরে রেখেছি।
-এখুনি যাইয়েন না, ওয়েট করেন, পিয়ন আনোয়ারকে বলি আসতে, এসে কার্টুনটা নিয়ে যাক,
-সেজন্য আমাকে থাকতে হবে কেন আপনি দিলেই তো হল,
-কি বলেন আপনার থাকতে হবে না? আপনার দায়িত্ব এটা আপনার কাছ থেকে রিসিভ করবে সে, যদি কোন কিছু মিসিং হয়! তখন তো আমারই জবাবদিহি করতে হবে। যুক্তি দিয়ে কথা বলছে, কিছু করার নেই বাধ্য হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে অহনা।
এরপর অনেকক্ষণ অপেক্ষা করা হলো আনোয়ার আর আসেই না। আজ বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত কয়টা বেজে যাবে কে জানে রাস্তায় যে জ্যাম! অসহায় কন্ঠে অহনা বলে -কই ভাইয়া ফোন দিয়েছেন? আনোয়ার তো আসছে না। বলতে বলতেই ও লক্ষ্য করে ওলির চোখে ঘোলাটে দৃষ্টি, একভাবে অহনার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বললো
- তারপর ম্যাডাম কি খবর আপনার বলেন তো?
- কি? কি খবর? বিরক্ত হয় অহনা
-এই যে সোনার যৌবন এইভাবে শেষ করতেছেন বিয়ে-শাদী করা লাগবে না?
- আপনি আনোয়ার ভাইকে আরেকবার ফোন দেন।
- আনোয়ার আসতেছে তো বললোই, আজ কি কাজ আছে? চলেন এক সাথে কফি খাই, কোনখান থেকে ঘুরে আসি।
- কি?
- না মানে একসাথে কোথাও বসলাম কফি খেলাম
- কি সব বলেন না বলেন, দেখেন আমি আনোয়ারের অপেক্ষা করতে পারবো না আমার বাসায় ফিরতে দেরি হয়ে যাবে আমার বাসা অনেক দূরে আপনি তো জানেনই ।
- আরে যাবেনই তো আরেকটু দাঁড়ান না, চলে আসবে এখুনি।

অহনা দ্রুত ফোন বের করতে নেয় আনোয়ারকে কল দেওয়ার জন্য, কল দিতে দিতে মোবাইলের দিকে চোখ রেখেই ওলিকে বলে, আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে আপনি কার্টুনটা আনোয়ারের কাছে দিয়ে কাজ শেষ করেন। আমি আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারব না। আপনি কার্ডটা দেন আমি পাঞ্চ করে বেরিয়ে যাই।

কি হতে কি হয়ে গেল কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ শক্ত করে ওলি অহনার হাত ধরে ফেললো, বলল
-তোমাকে আমি কি পরিমাণ পছন্দ করি অহনা তুমি তো জানো না, এই জীবনে যদি তোমায় না পাই এই জীবন বৃথা, তুমি আমাকে বলো তুমি কি আমার হবে শুধু আমার?
হতবাক অহনা ওলির থেকে হাতটা ছাড়িয়ে আনতে চাইলেও ব্যর্থ হলে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বললো
-হাত ছাড়েন; হাত ধরছেন কেনো? আপনি হাত ছাড়েন, আপনি এই সব কি উল্টা পাল্টা কথা বলছেন, ছাড়েন হাত,

ভয়ে হোক কিংবা আতঙ্কে হোক ঠাস করে এক চড় বসিয়ে দেয় ওলিকে, চড় দেয়ার পর মুহুর্তেই প্রথম যে কথাটা অহনার মনে হলো সেটা হচ্ছে ছেলেদের গাল তো মেয়েদের মতনই নরম, দূর থেকে অহনা ধরে নিয়েছিল ছেলেদের গাল শক্ত খসখসে। শুধু চড় দিয়েই থেমে থাকল না, ওলির হাত থেকে টেনে আইডি কার্ড নিয়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে কার্ড পাঞ্জ করে বেরিয়ে গেল।
পেছনে ওলি পা পিছলে পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলে নেয়ার চেষ্টা করতে করতে সিঁড়ির একদম শেষ মাথায় পড়ে গেল। একবারও পিছনে না তাকিয়ে অহনা দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে ছুটতে ছুটতে অফিসের লম্বা করিডোর দিয়ে বের হতে হতে মনে মনে ভাবলো যেইখানে এই ঘটনাটা হল সেখানে সিসি ক্যামেরা থাকার কথা। ঘটে যাওয়া ঘটনা ওর কাছে স্বপ্নের মত লাগলো। সামনেই হঠাৎ আনোয়ার আসায় ওর কাছে ওলির আইডি কার্ডটা দিয়ে হাতের ইশারায় বেজমেন্ট দেখিয়ে দিয়ে অহনা অফিসের বাইরে বেরিয়ে এলো।
অফিসের লম্বা লন পার হয়ে রাস্তায় হেঁটে আসতে আসতে রুনু আপুর ফোন আসলো, মোবাইল হাতে নিয়ে রীতিমতো হাঁপাতে হাঁপাতে অহনা বলল
-হ্যালো
-কি হয়েছে অহনা? হাঁপাচ্ছো কেন? তুমি ঠিক আছোতো? বের হয়েছো বেসমেন্ট থেকে? আমি তো ওলি ভাইকে ফোন করলাম ডিপার্টমেন্ট হেডকে ফোন করলাম তোমার টেনশনে,
-হ্যাঁ আপু ঠিক আছি, কিন্তু একটা সমস্যা হয়ে গিয়েছে?
-কি সমস্যা?
-আপু ওলি ভাই আমার হাত ধরেছে, হাত ধরে উল্টাপাল্টা কথা বলছিল!
-কি সর্বনাশ কি বলছিল?
-বলছিল আমাকে তার পছন্দ এইটা সেইটা
-কি বলো
-হাত ছাড়াতে অনেক কষ্ট হয়েছে থর থর করে কাঁপছিলাম তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে এসেছি,
-তুমি এখনই এইটা এইচ আর হেডের কাছে গিয়ে রিপোর্ট করো, অথবা আমাদের ডিপার্টমেন্টের হেড স্যারের কাছে গিয়ে ঘটনা খুলে বলে আসো,
-আপু আমি একদম কথা বলার মতন অবস্থায় নাই, আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। শনিবার তো অফিস বন্ধ একবারে রবিবার এসে স্যারকে জানাবো।
-ওলি ভাই এরকম একটা কাজ করলো ছি ছি ছি ছি ছি ছি, মেয়ে মানুষ একা পাইলে পুরুষদের হুশ থাকে না দেখছি।
-আপু আমি এখন সোজা বাসায় যাচ্ছি, রবিবারে অফিসে এসে বলব, এই বলে ফোন রেখে দিয়ে অহনা হনহন করে হাঁটতে লাগলো। আগামীকাল শুক্রবার আপাতত এই ঘটনাটা হজম করতে হবে। বৃহস্পতিবার হওয়ায় সবাই আগে আগে অফিস থেকে বের হয়ে গিয়েছে। শনিবার অফিস বন্ধ একদম রবিবারে ব্যাপারটা নিয়ে কি করা যায় ভাবা যাবে। (চলবে)

প্রথম পর্বের লিঙ্ক
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:১১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ড. ইউনূস যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন: সেভেন সিস্টার্স দখল করতে বলেননি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০২ রা মে, ২০২৫ রাত ৮:৩২


পাকিস্তান-ভারতের এক্স মিলিটারি কর্মকর্তারা জোশে অনেক কথাই বলে থাকেন তাদের জনগণকে আলী বুঝ দেয়ার জন্য। ভারতের প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানে হামলার বিষয়ে ভারতের সেনাবাহিনীর সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইস্টার আইল্যান্ড রহস্যময় মোয়াই

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৫ রাত ৮:৪৩



১৭শ শতাব্দীতে ইউরোপীয় নাবিকদের মাঝে একটা মিথ প্রচলিত ছিল। মিথটা হচ্ছে দক্ষিণ গোলার্ধে ভারত মহাসাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে বিশাল অঞ্চল জুড়ে একটা মহাদেশ রয়েছে। এটাকে তারা টেরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এনসিপিকে আমাদের দেশের তরুণ-যুবা'রা ক্ষমতায় দেখতে চায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৩ রা মে, ২০২৫ রাত ১২:৪৫

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধে পাড়া-মহল্লায় জনতার আদালত গঠনের ডাক দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি তথা এনসিপি। দেশের বৃহত্তম ইসলামী দল 'ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ' তথা চর মোনাইয়ের পীর সাহেবের দল এনসিপিকে আগে থেকেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাতৃ ভাণ্ডার

লিখেছেন ঠাকুরমাহমুদ, ০৩ রা মে, ২০২৫ রাত ৩:২৬



আমাদের দেশে মিষ্টি পছন্দ করেন না এমন মানুষ পাওয়া বিরল ব্যাপার। ঢাকা চট্টগ্রাম রুটে যারা যাতায়াত করেন মাতৃ ভাণ্ডারের সাথে পরিচিত নন এমন মানুষও মনে হয় খুব বেশি নেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

এনসিপি জামায়াতের শাখা, এই ভুল ধারণা ত্যাগ করতে হবে

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৩ রা মে, ২০২৫ সকাল ১০:৪৪

প্রিয় রাজীব ভাই,
আপনি আমার আগের পোস্টে কমেন্ট করেছেন যে, এনসিপি জামায়াতের শাখা। আপনার এনালাইসিস ভুল! ওরা জামায়াতের শাখা নয়। এনসিপি-কে বুঝতে হলে, আপনাকে জামায়াতকে জানতে হবে। আমি একটু বিস্তারিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×