পথে-ঘাটে একলা চলাফেরা করলে কি হয়? জাস্ট নিজের মতন করে নিজেকে উপলব্ধি করা যায়, নিজে যা তাই-ই হয়ে মানুষের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করা যায়, নিজেকে ছোট বড় যা খুশি ভাবা যায়, সাময়িক এই সকল যাত্রায় সহায়- সম্পত্তি অর্থবল শক্তির প্রয়োজন হয় না, অচেনা মানুষজন কার কি আছে এসব জেনে কাউকে সাহায্য সহযোগিতা করতেও আসে না।
কথায় আছে আপনের থেকে পর ভালো পরের থেকে জঙ্গল ভালো, কখনো কখনো জঙ্গলের থেকে ভার্চুয়াল লাইফের মানুষ ভালো আবার ভার্চুয়াল মানুষের থেকে অচেনা মানুষ ভালো, সবকিছু মিলিয়ে মানুষ সামাজিক জীব মানুষ একা থাকতে যেহেতু খুব একটা পারে না সেক্ষেত্রে নিরাপদ মানুষ অবশ্যই জীবনে চলার পথে দরকার আছে।
আর নিরাপদ মানুষদের ভেতর অচেনা মানুষরাই সেরা, এদের বেশির ভাগ কথা কাজ সাহায্য-সহযোগিতা হয় নিঃস্বার্থ।
আমাদের দেশের ছাত্রসমাজ হরতাল কিংবা হরতালের অনুকরণে হোক বা যে কারণেই হোক যে কয়টা আন্দোলন তারা বিগত কয়েক বছর করলেন সব কয়টা আন্দোলনে রাস্তাঘাট এবং পরিবহন অবরোধ করে আন্দোলন করাটাই তাদের মাথায় সেরা উপকরন হিসেবে গণ্য হল এবং প্রতিবারই আমরা সাধারণ পাবলিক জীবনের সর্বোচ্চ দুর্ভোগ পোহাতে পোহাতে সেই সকল আন্দোলন বাহ বাহ করতে বাধ্য হলাম, বাংলাদেশে একটা নতুন প্রথা চালু হয়েছে আপনি যে কোন আন্দলনের বিপক্ষে দুটা কথা বলেন, কিংবা বলেন আপনার সেই আন্দোলনের জন্য হয়রানি কিংবা দুনিয়ার কষ্ট করতে হইছে তাহলেই আপনি রাজাকার।
সবশেষ নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সময় প্রথম দিন রাস্তাঘাঁট অবরোধ এবং সকল গাড়ি ঘোড়া বন্ধ শুনে আমাদের অফিসের এক মেসেঞ্জার ট্রেনে করে তার বাড়ি গাজিপুরের দিরাচরন নামে স্থানে যাবে শুনে, আমি পায়ে হেঁটে উত্তরা ফেরার চাইতে ট্রেনে করে যদি এয়ারপোর্ট পর্যন্ত পৌঁছাইতে পারি এই এইরকম অন্ধকারে ঢিল ছোরার সিদ্ধান্ত নেই এবং বনানী রেলস্টেশনে পৌছাই।
আমি ইহকালে কোনোদিন ট্রেনে চরিনাই, কাজেই দিনটি ছিল আমার জন্য স্পেশাল এবং সুন্দর।
ট্রেন আসবার আগেই আমাকে ওয়ার্নিং দেয়া হয়েছে যে লোকাল ট্রেনে ওঠা যেন তেন ব্যাপার না বিশেষ করে এইরকম গাড়ি চলাচল বন্ধের দিনে, এটা অলিম্পিক গেমের যেকোন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের মতই কঠিন। কাজেই ট্রেন আসবার সাথে সাথে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। সামনের দিকে এগিয়ে দাঁড়াতে হবে, ডান দিকে দাঁড়াতে হবে, যুদ্ধ করবার জন্য বামে দাঁড়ানো বোকামি এই ডিরেকশন দিলো আমাদের অফিসের অতি বিজ্ঞ মেসেঞ্জারের বন্ধু। ট্রেনে ওঠার পদ্দতিগুলো শুনতে শুনতে আমি ধারণা করলাম পৃথিবীর কত জ্ঞান এখনো জানিনা কত কি আমার জানতে বাকী শিখতে বাকী।
ট্রেনে ওঠার পর অন্তর থেকেই নির্গত হল যে চরম ভুল হয়ে গেছে, আমি সত্যিকার অর্থেই নরকে প্রবেশ করেছি এর থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় হাটাই ছিল বুদ্ধিমানের কাজ।
যা হবার তা হয়ে গেছে, এক একটা ভুল মুহূর্ত যখন জীবন থেকে চলে যায় তখন চুল ছিঁড়ে কান্নাকাটি করে হাতে পায়ে ধরেও সেই মুহূর্ত আর জীবনে ফিরে আনা যায় না। কাজেই আমি চাইলেও ট্রেন থেকে নামতে পারবোনা। নিয়তির ভয়ঙ্কর পরিনতি মেনে নিয়ে সামনে কি হয় বা খারাপটাই হবে জেনে বুঝেও ধৈর্য ধরা বা না ধরেও অপেক্ষা করার নামই জীবন।
ট্রেনে ওঠা বলতে আমি দরজা থেকে সামান্য সামনে পর্যন্ত একটু খানি কেবল এগিয়ে, মনেহল কোটি কোটি মানুষে ঠাসা এক অদ্ভুত যাত্রা শুরু হল, আমার সামনেই এক চল্লিশের কাছাকাছি বয়সের দাড়িওয়ালা, মেয়ে মানুষ যেহেতু তার পাশে তার গায়ের সাথে গাঁ লাগিয়ে দাঁড়ানোর সুযোগ যখন এলোই সেই সুযোগ কিছুতেই হাত ছাড়া করা যাবেনা মনের এক লোক দাঁড়িয়ে, আমার ডানে বামে পেছনে সাইডে কোনায় সবখানে পুরুষ আর পুরুষ, একটা ছেলে ইচ্ছে করে কনুই দিয়ে আমায় ছুয়ে দিচ্ছে, শরীরের সাথে মিশে আছে সব, বাকীদের কারো ভেতরে নোংরামি মনের ছায়া ও দেখতে পেলাম না।
এত ভীরে কোন মেয়ে ট্রেনে উঠতে পারার কথা না, আমি সেদিন উঠতে পেরেছি আমার অফিসের মেসেঞ্জার ড্রাইভার ও তাদের পরিচিত বন্ধুগনদের সহযোগিতায়। আমাকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে তারা আর উঠতে পারে নাই বুঝতে পারলাম আশেপাশে কিংবা দূরে ও তাদের ছায়া ও না দেখে।
নিয়ম অনুযায়ী ট্রেন চলতে শুরু করার পাঁচ মিনিটের মাথায় আমি বুঝতে পারি আর মাত্র কয়েক মুহূর্ত; এরপর হয়তো আমি দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করতে যাচ্ছি একেবারে ত্যাগ না করলেও কাছাকাছি কিছু ঘটতে যাচ্ছে।
চোখে অন্ধকার দেখতে দেখতে এবং প্রচণ্ড ভীরের ভেতরে যেহেতু পড়ে যাবার জায়গা নেই কাজেই বসে পড়তে পড়তে অনুভব করি, মানুষ বেঁচে থাকে মরে যাবার জন্য কিংবা মরে যাওয়াটাই হচ্ছে জীবনের সার্থকতা কিংবা দুঃখ বেদনা জড়া যন্ত্রণা রোগ শোক থেকে মুক্তির শান্তিময় যাত্রা।
বাকী অংশ কাল লিখবো।।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৪৩