আওয়ামীলীগ বাংলাদেশের সাথে একটা মাইন্ড গেম খেলতেছে, এবং সবচেয়ে নিকৃষ্টতম একটা গেম খেলতেছে। বাংলাদেশ সৃষ্টির পিছনে এই দলটার যেমন বিশাল ভুমিকা আছে তেমনি এই বাংলাদেশ যদি কোন কারনে যদি ধংস হয়ে যায় এর জন্য বড় একটা অংশে দায়ী থাকবে আওয়ামীলীগ। গতকাল আদনান স্যারের সাথে বেশ কিছুক্ষন ব্যাপারটা নিয়ে আলাপ হল, উনার একটা পোষ্ট পড়লাম। "আমি আওয়ামীলিগের ফ্যাসিজম আরো ১০ বছর সহ্য করতে রাজি আছি, কিন্তু হেফাজত কে এক মিনিট ও না" " হেফাজত কে পিটায়ে ছাতু বানায়ে দেয়া উচিত" আপনি কি বুঝতেছেন আওয়ামীলীগ কি রকম মাইন্ডগেম খেলেতেছে এই দেশের সাথে? চলেন একটু বুঝে আসি।
আদনান স্যারের পোষ্টের একটা লাইন ছিল এমন- আমেরিকার প্রশাসন ভাবতেছে, বৈদেশিক শক্তির কাছে আমরা যে রুথলেস এইটা প্রমান করতে হবে তাহলে বৈদেশিক শক্তি আমাদের ভয় পাবে, আবার একইভাবে আমাদের সিম্পেথি ও অর্জন করতে হবে যাতে ওরা আমদের রুথলেস ও না ভাবে। তো আমেরিকার সরকার এইটা কেম্নে করবে? করার একটা উপায় হচ্ছে জনগণ সবসময় হিউম্যানিটির পক্ষে ফলে মানূষ ভাব্বে দেখছ আমেরিকার জনগন কত ভাল, অন্যদিকে সরকার একদম রুথলেস থাকবে ফলে বৈদেশিক শক্তি আমাদের ভয় পাবে। বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ ঠিক একই কাজটা করতেছে।
আমার বাসার পাশে বেশ বড়সড় একটা মাদ্রাসা আছে। এই মাদ্রাসাতে ছেলেগুলো গতকাল এগারোটার দিক থেকে একটা সিএনজিও রাস্তায় নামতে দেয় নাই। ওদের কে বললাম যে দেখ ভাই আমি আমার দাদী কে নিয়ে হাসপাতালে যেতে চাচ্ছি, ওরা বলল- দেশে হরতাল চলতেছে, লীগ/ দল হরতাল দিলে আপনাকে তো মুখে না করতেছি, ওরা এসে গাড়ী ভেঙ্গে দিয়ে চলে যেত। আর আপনার কি ইসলামের জন্য মায়া নাই এতগুলো মানুষ মারল, এর তো প্রতিবাদ করা উচিত। দেখেন আমাদের দেশের তৌহিদি জনতা মানুষ মেরে ফেলতে ইসলামের জন্য বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না। গতকাল রফিকুল ইসলাম মাদানীর একটা বক্তব্য শুনছিলাম, সেইখানে ও বলতেছে গাজয়ায়ে হিন্দ মনে হয় চলে আসছে- এইটা যদি চলে আসেই আমি মোদির জিভ টেনে ছিড়ে ফেলব। আর আমি এই জিভ টেনে কার জন্য ছিড়ে ফেলব- আল্লাহর জন্য, আমার মায়ের জন্য না, মামুনুল হকে জন্য না, বাবুবনগরীর জন্য না। এই দেশের তৌহিদি জনতার সমস্যা ঠিক এইজায়গাটা তেই এরা মানুষকে বিন্দুমাত্র সম্মান করে না। আমি কিছু কথা বলি এইটা নিয়ে- খুব সম্ভবত ইনভেস্টিগেশন ৩৬০ নামে যমুনা টিভির একটা প্রোগ্রামে "কালেমার জামাত" নামে একটা পর্বে একটা তরুন ছেলের কথা বলতেছিল, যে তার মায়ের সেবা না করে আল্লাহর রাস্তায় ঘর থেকে বের হয়ে গেছে। সাংবাদিক বলল- আপনার মা যে না খেয়ে থাকেন সেইটা কি দেখেন, ঘরে পানি পরে সেইটা চোখে পড়ে? অই তরুন ছাগলটার উত্তর ছিল- আমি মায়ের চেয়ে আল্লাহ কে গুরুত্ব দিচ্ছি বেশি। আমি জানি না এরা কোন ইসলাম পালন করে? আমি তো ভাবি- আল্লাহ আমার মায়ের চেয়ে বেশি দয়ালু। আমি আল্লাহর কাছে মাফ চাইলে সে মাফ করলে, কিন্তু আম্মু কষ্ট পেলে তো সেইটার ক্ষমা চাইতে জান বের হয়ে যাবে। কারন মা মানুষ, তার অনুভুতি। শুধুমাত্র পরিবারকে সাপোর্ট দেয়ার কারনে নিজের বেশ কিছু স্বপ্ন ঠিকমত পুরন করতে পারতেছি না, সেইখানে এই মাদ্রাসার ছেলেগুলো, মামুনুল হক, রফিকুল মাদানী এদেশের মুসলমানদের এমন এক লোভ দেখাচ্চে যার কারনে মানুষ মেরে ফেলতেও এরা দ্বিধা করবে না।
আমি ইসলামের চেয়ে এই মানুষের সাথে ন্যায় বিচার হচ্ছে কিনা তা নিয়ে বেশি চিন্তিত। এই হেফাজত মোটেও তা করতে পারতেছেনা। এই কারনেই ওদের কঠোরভাবে দমন করা উচিত। আমি আমার নানা কে দেখছি এই ধরনের লোক। উনি তাবলীগ করতেন, বছরে তিন চিল্লা দিতেন, আর সারাদিন মসজিদে থাকতেন। কিন্তু উনি উনার একটা নাতি নাতনির ও নাম জানতেন না। উনার যেই ছেলে নামাজ পরতেন না, সে ছেলের দেয়া ফল-ফলাদি ঈদের পাঞ্জাবী অথবা খরচ নিতেন না। এর ফলাফল টা হইছে নানা মারা যাওয়ার এক বছরের মধ্যে আমার নানীর ঘর নাই। উনার চার ছেলেমেয়ে এইসব দখল করে নিছে, অথচ আমার মামারা বেশ শিক্ষিত। একজন গাজীপুর রাজেন্দ্রপুর কলেজের শিক্ষক। সে পর্যন্ত আমার নানী কে প্যারা দিছে, তাকে নানার ঘরে পর্যন্ত থাকতে দেয় নাই। নানা মারা যান ২০১৪ সালে আর নানী মারা যান ২০২০ সালে, এই ছয় বছর নানী যেই কষ্ট পাইছে, তা বলার বাইরে। কেন এই কষ্ট পাইছে? একটা সহজ উত্তর উনি আল্লাহর রাস্তায় এত সময় দিছে যে উনার স্ত্রীর দিকে উনার তাকানোর সময় হয় না, উনার ছেলেমেয়েদের মার সাথে কি ব্যবহার করতে হবে সেইটা শিখানোর সময় হয় নাই। মরে মরুক আমার কি, পরকালে আমি বাচলেই হইছে। অথচ এই বোকাচোদাগুলো ইসলাম পুর্নাঙ্গ জীবনবিধান মুখে মানবে, কিন্তু কাজে মানুষকে যন্ত্রনা দিবে।
হেফাজত/ ইসলামিক কোন দল এই দেশে ক্ষমতায় আসলে, ওরা একটা ভিন্নমতের লোকরেও বাচতে দিবে না। সবচেয়ে আফসসের ব্যাপার হচ্ছে বেশ শিক্ষিত লোকজন এই ব্যাপারগুলো বুঝতেছে না। আপনি একবার বুঝেন নুরুল হক নুরুর মত রামছাগল হচ্ছে এইদেশে ইসলামিক জনতার কাল্ট লিডার। বিএনপি এর হারুনুর রশিদ যখন সংসদে কথা বলত ২০১৯ এর দিকে তখন মনে হত যাক একটা বিরোধি পক্ষ পাওয়া গেছে, এখন আমি বুঝি এই লোক হচ্ছে সবকিছুর বিরোধিতা করা লাগে তাই বিরোধিতা করে। সবচেয়ে ভালো উদাহরন হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে ডয়েচ ভেলে এই আহাম্মক টা বলতেছে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে নাস্তিকতা। খালেদ বলল রাষ্ট্রের কেন ধর্ম থাকবে? এর উত্তরে কি যে বালছাল বলল। আর আওয়ামীলীগ ঠিক এইভুলটাই করতেছে, সামান্য কয়টা ভোটের জন্য এই হেফাজতের সাথে লিয়াজু করছে। লীগের ম্যান্ডেট আছে- আর কত সাম্প্রদায়িকতার লাশ পড়লে, হিন্দুদের ধর্ম কোন ধর্মই না ওয়াজে এই ধরনের কথা বলার পর গ্রেফতার না করে, ওদের আন্দোলনে চুপ থাকতে হবে। কেন এখনও এই দেশের রাস্ট্রধর্ম ইসলাম এই কথা সংবিধানে লেখা থাকবে?
আওয়ামীলীগ ঠিক এইখানেই একটা মাইন্ডগেম খেলতেছে। কাউকে কথা বলার সু্যোগ দিচ্ছে না, কিন্তু হেফাজত এমন একটা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কথা বলার গ্রাউন্ড পাচ্ছে যে, খোদ আওয়ামীলীগ বুঝতেছে না ওদের কিভাবে ডিল করবে। আমার সচেতন নাগরিকরা যে বলবে হেফাজত কে পিটায়ে ছাতু বানাক সেইটাও বলা যাবে না, কারন এই পিটায়ে ছাতু বানানোর প্রক্রিয়া আমি কথা বললে আমার উপর ও পড়বে। আওয়ামীলীগ হেফাজত কে দিয়ে প্রমান করতে চাচ্ছে, ওরা উগ্র, ওদের চেয়ে আমরা ভালো, আমরা ফ্যাসিস্ট কিন্তু আপনি চুপ থাকলে আপনি বাচবেন, আপনার ছেলেমেয়েদের বইদিব, পদ্মাসেতু বানাব, উন্নয়ন হবে, অর্থনীতি শক্তিশালী, সংখ্যালঘুদের অধিকার আমরা নিশ্চিত করব শুধু আমাদের ভোট দেন। অন্যদিকে হেফাজত কি করতেছে দেখছেন, শাল্লায় মানুষ মারতেছে, যুবলীগ নেতার বলে কিছু নাই কিন্তু গুজব ছড়াচ্ছে, বিএনপি এর লোকদের মরাল কোন গ্রাউন্ড নাই, এদের কথাবার্তা বোকাচোদাদের মত, এদের ভোট দিবেন না। আওয়ামীলীগ এই গ্রুপটাকে বাচায়ে রাখতেছে। এখনও আওয়ামীলীগের সময় আছে- দেশে কোন বিরোধী দল না থাকুক কোন সমস্যা নাই, কিন্তু বোকাচোদার মত কাজ করলে মানুষ যাতে ধুয়ে দিতে পারে সেই সুযোগ দিলেই হবে। কারন এই মুহুর্তে আওয়ামীলীগ হচ্ছে মন্দের ভালো, এই কারনে আওয়ামীলিগ তরুন প্রজন্মের ভোট বারবার পাবে। কারন সকল প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতার জায়গা আওয়ামীলীগ সচেতনভাবে ধ্বংস করছে আর এই হেফাজত কে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দিচ্ছে। এর ফলাফল হচ্ছে ভয়ঙ্কর- আরও লেইম লেইম জিনিস নিয়ে হেফাজত ইসলামিক দল গুলো আন্দোলন করার জায়গা পাবে আর তৌহিদি জনতার এই শক্তি সবাই পুজি করে চলতে চাইবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:১৩