আজকে বিকেলে হুট করে মনে হল বাহির থেকে একটু ঘুরে আসি। এলাকার রাস্তায় হাটার সময় খেয়াল করলাম যে আরও দশ বারো বছর আগে আমার বয়স যখন ১২-১৩ ছিল তখন যেইভাবে ছেলেরা ঘুড়ি উড়ানো নিয়ে এলাকায় দলবল নিয়ে হইচই করত এখনও একইরকম হইচই হয়। কিন্তু দশ বারো বছর আগের সেই পুরাতন ছেলেমেয়ে গুলো এখন আর নাই। আগে চায়ের দোকানে যে বয়স্ক দাদার বয়সী লোকজন আছর নামাযের পর বসে আড্ডা দিত তাদের মধ্যে কিছু আছে কিছু নাই। আমার না মাঝে মাঝে সন্ধ্যে হলেই কেন যেন শরত চন্দ্রের বিরাজ বৌ উপন্যাসের বিরাজের মত দূর কোন এক বাসার মা, নতুন তরুণী বৌ, বাচ্চা কিছু ছেলেমেয়ের হইচই ভেবে বেশ উদাস হই। আমি মাঝে মাঝে ভেবে পাই না এই মহাবিশ্বে প্রানীকুলের প্রয়োজন কি? একই চক্র বারবার হাজার হাজার বার ফিরে ফিরে আসে। আচ্ছা একটা থট একপেরিমেন্ট করা যাক।
ধরে নিলাম সকল প্রানীকুল বুঝে গেছে যে এই পৃথিবী হচ্ছে মায়ার খেলা, আজ যে অনাগত শিশুর ভুমিকা পালন করছে কয়েক বছর পর সে পালন করবে বাবার তারপর দাদার তারপর মারা যাবে। এই চক্রটা বিরুদ্ধে সকল প্রজাতির সকল সদস্য হুট করে বিপ্লব করল। আপনার কি মনে হয় এই বিপ্লব সফল হবে? আমার মোটেও মনে হয় না। কেন হবে না জানেন- একবার ভাবুন আপনি শেষ মানব সন্তান আপনি মারা গেলে এই মানব প্রজাতি ধংস হয়ে যাবে, আপনার অস্তিত্ব পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে। এইটা ভাবা বিশাল এক কষ্টের কাজ। আপনি পাগল হয়ে যাবেন- আপনি চাইবেন আপনার সত্তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম থেকে টিকে থাকুক। আমি আরেকটু বুঝানোর চেষ্টা করি, বেশ কয়েক বছর আগে বিভুতিভূষনের একটা গল্প পড়েছিলাম, বাবা ছেলেমেয়েদের কষ্ট করে কলকাতা পাঠায়ে লেখাপড়া শিখায়, ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখে বেশ বড় ডাক্তার হয় এই প্রথম প্রজন্ম বাবার পৈত্রিক ভিটার সাথে যোগাযোগ রাখে। এখন এই প্রথম প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা কলকাতায় পড়াশুনা করে তারপর সেইখানেই বড় হয়, নাড়ির টান অনেকখানি কমে যায়। তারপরে প্রজন্মের বেলায় দেখা যাবে সেই পৈত্রিক ভিটা একটা পোড়া বাড়িতে পরিণত হয়। এইবার যারা আজ দেশের বাইরে থাকেন আমি জানি না তাদের কি অনুভুতি কাজ করে কিন্তু আমি বাজি ধরে বলতে পারি এদের দেশের প্রতি এইযে আবেগের কারণ তার মূল হচ্ছে এইটাই, এরা চায় এই দেশটা টিকে থাকুক। এরা একটা নাড়ির টান ধরে রাখতে চায়, কিন্তু কয়েক প্রজন্ম পর এই টান বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এই টান টিকায়ে রাখার জন্য যত আয়োজন। এইখানে বিপরীত লিঙ্গের একটা বিশেষ ভুমিকা আছে বিশেষ করে প্রজাতির নারী সদস্যদের। যারা ব্লু প্লানেট ডকুমেনটারি দেখেছেন তারা দেখবেন যে একটা পুরুষ পাখি বংশ রক্ষার জন্য একটা নারী প্রজাতি কে কতভাবে প্রলুব্ধ করে। কতভাবে শ্রেনী সংগ্রামে লিপ্ত হয়। মানুষ প্রজাতি ও এইটাই করে। আমার কেন যেন মনে হয় আমরা যতই নারীদের অধিকার দেয়ার কথা বলি না কেন, আমি খুব কম নারী পেয়েছি যারা পতি/ স্বামীর প্রতি সাবমিসিব না। আমার মাথায় আসে না, একটা মেয়ে আজীবনের জন্য তার পৈত্রিক সম্পর্ক ছিন্ন করে একটা ছেলের সাথে নতুন ভাবে সম্পর্কে লিপ্ত হয়। একটা সম্পুর্ন নাড়ির টান ছিন্ন করে নতুন করে একটা নাড়ির টান তৈরি করে। এদের কিন্তু কেউ কখনই বলে নাই, কিন্তু প্রজাতি রক্ষার জন্য এরা এই কাজটায় বারবার করবে। আমি মাঝেমাঝে ভাবি হুট করে যদি সকল নারী সিদ্ধান্ত নেয় যারা তারা আর গর্ভধারন করবে না, তাহলে কি ওরা পারবে? আমার মনে হয় না পারবে। কারণ অই যে একটু আগে একটা উদাহরণ দিলাম যে জগতের শেষ মানবসন্তান হলে তার কষ্টের শেষ নেই, সে যেকোনভাবেই হোক তার লাইনেজ তৈরি করে যাবার চেষ্টা করে যাবে। কিন্তু যদি তার সাথে যদি একটি নারী প্রজাতির সদস্য থাকে তাহলে সেই নারী সদস্য যেইভাবেই হোক চাইবে গর্ভধারন করতে। এইটা একটা আনন্দের ব্যাপার।
আমি হারারি হোমো ডিউস বইয়ের এই অংশ পড়ে বেশ পেইন খেয়ে গেছি যে একটা মেয়ে কেন বারবার সন্তান নিতে চায়, কেন এত কষ্টকর একটা অনুভুতির মধ্যে দিয়ে যেতে তাদের আনন্দ আসে সুস্থ সন্তান জন্ম দেয়ার পর। এইটা একটা রিওয়ার্ড আসলে। প্রজাতির প্রতি ঐ নারী সদস্যর দায়বদ্ধতা, সেই এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে তৃপ্ত। আর প্রজাতির পুরুষ সদস্যরা ঠিক এই ব্যাপারটা কে যখন নোংরা ভাবে প্রকাশ করে তখন সেইটা হয়ে যায়, ধর্ষনের মত ঘটনা, মেয়েদের উত্যক্ত করা। কারণ হাজার বছর আগে মানূষ যখন জঙ্গলে ছিল তখন সে প্রানীদের এই ব্যাপারগুলো দেখেছে, নিজেরাও প্রানী ভাবত। মানুষ আসলেও প্রানী, সেই আদিম লালসা গুলো কে আমরা শুধুমাত্র কিছু প্রাতিষ্ঠানিক রুপে কিছু সভ্য আচরনে রুপ দেয়ার চেষ্টা করেছি। এখন প্রজাতির কিছু প্রানী এই জানোয়ারের মত আচরন করে বলেই প্রজাতির সভ্য আচরনে অভ্যস্ত সদস্য প্রচন্ডভাবে বিক্ষুব্দ হয়। এখন কেউ যখন এই ধর্ষন করে তখন সেই প্রজাতির নিয়ম ভঙ্গকারী কে শাস্তি দেয়াই বাধ্যতা মুলক। কারণ তা না হলে আপনার বংশ রক্ষার উপর সেইটা কোন না কোনভাবে এইটা আঘাত হানবেই।
বিদ্র আমি আসলে মেয়েরা বিয়ের পর কেন বাপের বাড়ি ছাড়বে সেইটার একটা কারণ খুজতে ছিলাম, আর কিছু মানুষ কেন ধর্ষনের মত বাঝে কাজে লিপ্ত হয় সেইটা একটু ভাবার চেষ্টা করেছি। কথা গুলো অন্যভাবে না নিলেই খুশি হব। আমি জানি আমার ভাবনা সঠিক না তবুও কিছু ভেন্ট আউট করা।
আমি আরেকটা ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলাম- মানুষের বয়স কেন বাড়ে। কয়েকদিন আগে একটা পোডকাস্ট শুঞ্ছিলাম যে আমরা যত খাবার খাই আমরা তত বয়স বাড়তে বা এজিং এর দিকে ঝুকি। এই এজিং হওয়ার একটা কারণ হচ্ছে বডিতে প্রচুর পরিমান ফ্রি রেডিকাল তৈরি হওয়া। এই ফ্রি রেডিকেল তৈরি হলে কি হয় সেইটা একটু বুঝার চেষ্টা করি। ফ্রি রেডিকেল এর কারণে ওজন স্তরের ওজন ভেঙ্গে অক্সিজেন হয় এই অক্সিজেন ভেঙ্গে একটি একক অক্সিজেন পরমানুতে পরিনত হয়। ফ্রি রেডিকেল হইচ্ছে সেই পরমানু যে একক ভাবে থাকে, যেমন ক্লোরিনের দুইটি পরমানু থাকার কথা কিন্তু সেইখানে যদি একটু পরমানু থাকে তাহলে সে ফ্রি রেডিকেল হবে। এখন আমরা যত খাবার খাই সেইখান থেকে যেই এটিপি তৈরি হয় সেইখানে কিছু ফ্রি রেডিকেল তৈরি হয়। এই ফ্রি রেডিকেল গুলো ইচ্ছে মত শরীরের কোষ ভেঙ্গে ফেলতে শুরু করে। এই কোষের উপর যত বেশি নির্যাতন চলে তত বেশি চামড়া কুচকে যেতে থাকে। আর এইটা সময়ের সাথে সাথে বাড়ে। কি একটা অবস্থা। খেয়েই মরা লাগবে। বেচে থাকার কোন উপায় নাই এই দুনিয়াতে আসলে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১০:১১