somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওপারে ভালো থাকবেন অভিজিৎ হিরা, রিফাত, প্রতীক দা, শাহরিয়ার ভাই (এরা সবাই জীবনের উদ্যম হারায়ে ফেলেছিল- আত্মহত্যা করে তা প্রমান করে গেছে)

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বিল গেটস এর সাথে পাল্লা দিয়ে বই পড়তাম, আমি প্রতিটা বই পড়তাম আর সেইগুলো আমার ফেসবুকে রিড লিস্টে রেখে দিতাম। অনেক পড়ে গুডরিডস এর সন্ধান পাওয়ার পর সেইখানে বই এর নাম যুক্ত করা শুরু করি। এই শেষ চার-পাচ মাসে আমি মাত্র একটা বই পড়েছি। ম্যাক্সিম গোর্কির অনুবাদ একটা বই বইয়ের নাম পৃথিবীর পথে। বইটা মাত্র শেষ হল। বইটা আমাকে বেশ একটা ধাক্কা দেয় জীবনের আদৌ কি কোন মানে আছে? জীবনের কোন ব্রেকিং পয়েন্টে গেলে আমরা আত্মহত্যার মত একটা সিদ্ধান্ত নেই। এই বইটা বেশ রয়ে সয়ে পড়ার কারণে আমাকে বেশ ভাবায় যে আসলে জীবনের কি অর্থ আছে? এইটার উত্তর হচ্ছে- আছে এবং নাই। আপনি কিভাবে দেখতে চান, এবং এই জীবনের অর্থ থাকা, না থাকার বিভাজনকারী রেখা বেশ সুক্ষ। একটু এদিক সেদিক হলেই আপনি জীবনের অর্থ খুজে পাবেন আবার পাবেন না। এই কারণে কেউ আত্মহত্যা করলে আত্মহত্যাকারীর জীবনে কি এমন কষ্ট ছিল যে বাচতে পারল না, এই প্রশ্ন করা হচ্ছে বোকামী। এতক্ষন আমি ভুমিকা বলে গেলাম, এখন একটু ব্যাখ্যা করতে চাই যে জীবনের মানে আছে আবার নাই এইটা বেশ সুক্ষ।

মানুষ আপনার কাছে কি? এইটার কোন উত্তর নাই। কারণ একজন জীব্জ্ঞানী মানুষকে যেইভাবে দেখবে, একজন মনোবিজ্ঞানী ঠিক একইভাবে দেখবে না। আবার একজন রসায়নবিদের কাছে মানুষ হচ্ছে কতগুলো রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফল। আমি খাচ্ছি, সেইখানে কিছু বিক্রিয়া হচ্ছে, এই বিক্রিয়া মস্তিকে কিছু সংকেত দিচ্ছে সেই সংকেত পুষ্টি যোগান দিচ্ছে। এইভাবে আমরা কাজকর্ম চালাচ্ছি। এখন এই সংকেতের বিক্রিয়ার কার্যক্রম কি আজীবন একই রকম থাকে? থাকে না। আমার দীর্ঘদিনের একটা প্রশ্ন ছিল যে মানুষের বয়স বাড়ে কেন? কেন বয়স্ক হয়? এর উত্তর হচ্ছে দেহের ক্রোমোজমে টলিমারেজ নামক একটা অংশ আছে যেইটা এই এজিং এর জন্য দায়ী। এই কাজের জন্য যখন নোবেল প্রাইজ দেয়া হল, তখন থেকে বিজ্ঞানীরা উঠে পড়ে লাগছে এই এজিং নিয়ে গবেষণার জন্য, কোন ভাবে যদি দীর্ঘদিন বাচা যায়। কিন্তু এইটা কি সম্ভব? মানুষ যত বয়স বাড়তে থাকে তত সে স্মৃতিভ্রষ্ট হতে থাকে। এখন এইভাবে ভাবলে মনে হবে আমি আমার মস্তিষ্ক চালনা করছি, আমার কোন হাত কখন নড়বে আমি সিগন্যাল দিচ্ছি। কারণ সব কিছু ভিতরেই হচ্ছে। এখন ধরেন মারা গেলেন। মারা গেলে কি হবে? রাসায়নিক ভাবে মাটিতে বেশ কিছু মাইক্রোব আছে, ওরা এই শরীর কে ডিকম্পোজ করা শুরু করবে। তারপর আমি শেষ। আপনার কোণ অস্তিত্বও নাই। আমি যে এই মহাকালের কোন একটা সময় ছিলাম সেইটার অস্তিত্ব পুরোই অর্থহীন। যারা আল্ববেয়ার কামুর মিথ অব সিসিপাস বইটা পড়েছেন, তারা সেখানে দেখেছেন কিভাবে সিসিপাস একটা পাথর পাহাড়ের চুড়ায় পৌছানোর জন্য নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু সে পারছে না। জীবন এইটাই, আপনি বারবার চেষ্টা করে যাবেন, আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। দর্শনে এই ব্যাপারটা বলা হয় "এক্সিস্টেনশিয়ালিজম" কোন অর্থ নাই, ভেবে দেখেন আপনি এক বেলা খাবারের জন্য এই চাকরি করেন, এইটা করেন সেইটা করেন। আপনি আপনার জীবন থেকে বেশ কিছু মানুষ বাদ দেন, বিশেষ করে আপনার পরিবার কে আপনার কোন অস্তিত্ব নাই, আপনি কোন মানে খুজে পাবেন না। কেন যাবেন এত কষ্ট করতে, এরা যদি না থাকে?

এবং ঠিক এই জায়গাটাতেই আমরা জীবনের মানে তৈরি করি। আমরা কতগুল রুপক তৈরি করে আনন্দ নিতে চাই। আমরা চাই আমাদের বাবা মা, স্ত্রী সন্তান, ভাইবোন ভালো থাকুক, ওদের নিয়ে ভালো থাকতে চাই। আনন্দে সময় কাটাতে চাই, আনন্দের কিছু উপলক্ষ করতে চাই। এই উপলক্ষ তৈরি করেই বলি যে- জীবন আনন্দময়। আসলে জীবন ও একটা রুপক জিনিস। আমি যখন রাস্তায় একা একা হাটি তখন একটা খেলা খ করি। দেখুন রাস্তায় হাটার সময় কোন লোক কি ভাবছে আপনি জীবনে বলতে পারবেন না। আমি কি ভাবছি সেইটা অন্যরা বলতে পারবে না। এখন আমি একটা লোকের পাশাপাশি হাটা শুরু করি, তারপর এই লোক্টা এখন কি ভাবছে? দেখেন আমার নখের ডগার সামনের একটা মানুষ অথচ আমি বলতে পারছি না সে কি ভাবছে। তারপর আমি লোকটাকে ক্রস করে কয়েকপা সামনে চলে যাই, তারপর আবার স্লো হয়ে লোকটার পাশে হাটা শুরু করি, এইরকম কয়েকবার হাটার পর আমি এখন বলতে পারি লোক্টা কি ভাবছে, লোক্টা ভাবছে- আমি এমন করছি কেন? ধান্দাটা কি? এই খেলা খেলে আমি একটা ব্যাপার বুঝি, আমি একটু আগেই জানতাম না যে লোক্টা কি ভাবছে, তার ভাবনা আমি ধরতে পারছি না, হয়ত কোন স্ট্রেসে আছে সেইটা ভাবছে। কিন্তু আমি উনাকে আমার মত করে ভাবতে বাধ্য করি কিছুক্ষন পর। আমার কেন যেন মনে হয় জীবনটা এমনি আমরা জোর করে ভাবতে বাধ্য করি। এই কারনে বলছিলাম জীবনের অর্থ আমরা জোর করে খুজতে চাই।

ম্যাক্সিম গোর্কির পৃথিবীর পথে ঠিক এইভাবেই তার ছেলেবেলার অনেক গুলো চরিত্রর কথা এনে বলতে চেয়েছেন, এদের জীবন সেই আদি একঘেয়েমিতায় ভর্তি- মদ, মেয়ে, আর অমানুষের মত খাটা তারপর হুট করে মরে যাওয়া। আমার দাদা এই কাজ করে গেছে, আমার বাবা, আমিও ঠিক একই কাজ করব কিন্তু প্রজন্ম ভিন্ন এবং প্রেক্ষাপট ভিন্ন ফলে, কাজগুলো ভিন্ন হয়। আমার দাদা মাঠে সময় দিত, আমার বাবা অফিসে দেয় আর আমি একটা চাকরি (পড়াই) সবই খাটা। কিন্তু কেন? একদম গুড় কোন কারণ নাই। জহির রায়হানের সেই হাজার বছরের পুরোনো রাতের মত, এই রাত এই সময় মহাকালে হাজার হাজার বার ফিরে ফিরে আসছে, মহাকাল খুব নিষ্ঠুর সে কাউকেই মনে রাখবে না, তো মহাকাল যেহেতু মনে রাখবেই না, তো মহাকালের কিছু অংশ তো হওয়ার চেষ্টা করা উচিত। এই চেষ্টার উদ্যম যাতে প্রতিটা মানুষের থাকে, এই চেষ্টাই জীবন। আবু সায়ীদ স্যার এর মত বলব, জীবনে দুরন্ত গতিতে চলার পথে হুট করে থমকে দাড়ায়ে দেখবেন পাশের মানুষটার উদ্যম যাতে নষ্ট না হয়।

ওপারে ভালো থাকবেন অভিজিৎ হিরা, রিফাত, প্রতীক দা, শাহরিয়ার ভাই (এরা সবাই এই উদ্যমটা হারায়ে ফেলেছিল- আত্মহত্যা করে তা প্রমান করে গেছে , আমি মাঝে মাঝে হারায়ে ফেলি, দোয়া করবেন যাতে কখনো না হারাই)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:৩৩
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×