আমি তখন তৃতীয় অথবা দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র, বাসার পাশের মসজিদে হাটহাজারি মাদ্রাসা থেকে হাফেজ সম্পন্ন কারী ছাত্রদের দস্তারবন্দি উপলক্ষে এক হুজুর আসল, আমার ঠিক মনে নাই উনি আল্লামা শফি কিনা। আমার শুধু যেই জিনিসটা মনে আছে তা হচ্ছে, হুজুরের বয়ান শেষে একটা ছোট্ট ইসলামিক সাময়িকী উনি কিনতে বললেন। আব্বু কিনে দিল। আমি পড়লাম। আমার ঐ সাময়িকীর বেশ কয়েকটা জিনিস মনে আছে- কাদিয়ানীরা কেন মুসলিম না, সেইটা নিয়ে একটা প্রবন্ধ। কিন্তু যেই লেখা বেশ দাগ কেটেছে আমার মনে তা হচ্ছে কাব বিন আশরাফের ঘটনা। আমি তখন বেশ ছোট পড়ে একটা জিনিস বুঝলাম না উনাকে ছল করে মারল কেন?
অতি সম্প্রতি অভিজিত রায়ের লেখা বিশ্বাসের ভাইরাস বইটা পড়লাম। আবার যখন কাব বিন আশরাফের ঘটনা নিয়ে সে কথা বলল তখন আমি একটু ঘাটাঘাটি করার চেষ্টা করলাম, দেখলাম এইটা সহীহ বুখারীর হাদিস। এখন আল্লাহর নবী (স) কি করেছেন এইটা নিয়ে আমি প্রশ্ন তোলার কেউ না। কিন্তু আমার ভয় অন্য জায়গায়। কাব বিন আশরাফ কে মারা হয়েছে কারণ সে ইসলাম কে ব্যাঙ্গ করে কবিতা লিখত, নারীদের নিয়ে বাজে কথা বলত। এখন এই যুগে কোন আলেম যদি এসে এইটার সমর্থন দিয়ে বলে যে নবীর ওয়ারিশ আলেম হুজুর, এদের নিয়ে কথা বললে তাকেও কতল করা হবে তখন এইটা ভয়ংকর। এবং এইটা যে কত ভয়ংকর হবে আমি বলি।
জাফর ইকবাল স্যার কে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে, আমি কোন আলেমের কাছ থেকে এর প্রতিবাদ পাই নাই। প্রতিবাদ করে থাকলে ভালো, আমার জানামতে নাই। কিন্তু আলেমরা এই ধরণের ব্যাপারগুলো উস্কে দিবে, ইসলামিক দল গুলো রাজনীতি করুক আমার কোন আপত্তি নাই, কিন্তু এদের বিরুদ্ধে কথা বললে এরা যে এই ধরেনর হাদিস দিয়ে কাউকে মেরে ফেলা জায়েজ করবে না তার নিশ্চ্যয়তা কি? এর কোন উত্তর নাই। এখন তো তাও গালাগালি দিতে পারেন হাসিনাকে, হেফাজত ক্ষমতায় আসলেও এইটাও পারবেন না।
আপনার এনায়েত আব্বাসির সাথে শাহরিয়ারের বিতর্কে শাহারিয়ারের বলদা মার্কা উত্তর দেখে বেশ ভাবেন ইসলামের জয় হইছে। কিন্তু আব্বাসই যখন নিয়ামুল খানের এই প্রশ্নের উত্তর এরায়ে যায় সেইটা নিয়ে কোন কথা বলেন না- " ভাই এক লাখ টাকা দে আমার মা তাহলে বাঁচবে" এইটাও শিরক। আমি ইমাম গাজ্জালি (র) এর তাওয়াকুল্লাহ সম্পর্কিত একটা বই পড়ে বেশ ভয় পাইছি, কথায় কথায় যেই পরিমাণ শিরক করি। ইসলামিক রাষ্ট্র বানাবেন, আমার আপত্তি নাই। কিন্তু চুল পরিমাণ ভুল হলে আপনি জাহান্নামি হয়ে যাবেন এই দেশের হুজুরদের কাছে। এরা এতই কঠিন বানাবে ইসলাম কে।
শুধু তাই না, এই দেশের আলেমদের কথা শুনলে বেচে থাকার মানে খুঁজে পাবেন না। জীবনের তো কোন মানেই নাই, আমরা একটা মায়া তে থাকি। আমি একমাত্র মুফতি মেঙ্কের ইউটিউবের কমিউনিটি পোস্ট গুলো পড়লে তাও কিছু মানে খুঁজে পাই, আর এই দেশের আলেমগুলো এত ভুল ধরে কথায় কথায়, মনে হয় আল্লাহ আমারে মাফ করবে না। যাদের সমর্থন দিচ্ছেন বুঝে শুনে দিয়েন। বিশৃঙ্খলা তৈরি করে ইসলাম আনার পর, একই হাদিস আপনার উপর ও প্রয়োগ হতে পারে। বেশ স্পর্শকাতর একটা বিষয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:১১