লেখা লেখি বেশ বিরক্তিকর একটা জিনিস মনে হয় ইদানীং। তার উপর গত কয়েকদিন যাবত দেখতেছি আমি একটা অদ্ভুত অভ্যাশ গড়ে ফেলছি ঘুমাতে যায় রাত ৯ টায় ঘুম থেকে উঠি খুব ভোরে সকাল ৭ টায়। উঠেও যে বিশাল কিছু করে ফেলি ব্যাপার টা কিন্তু তা না। লাস্ট তিন দিন যা করলাম তা হচ্ছে ডারউইন নিয়ে একটু পড়াশুনা করলাম। মঞ্জুরুল ইসলাম রিফাত ভাইয়ের একটা পোস্ট নিয়ে দেখলাম বেশ আলাপ আলোচনা হচ্ছে। মানুষজন কাউন্টার, এন্টী কাউন্টার দিচ্ছে এই পোস্টের। শুয়ে বসে দুই পক্ষের লেখা পড়লাম। তো আমাকে কাওসার ভাই বলল সুব্বর আহমেদ এর কিছু টক শুনতে। আমি শুনলাম। উনার টকের একটা কথা আমার খুব ভালো লাগছে “ ডারউইন এ আসলে গল্প বলা হয়” আমার আজকের পোস্ট এইটা নিয়েই।
আমি আসলে একটু ভাবলাম এই বিবর্তন নিয়ে আব্রাহামিক ধর্ম প্রচারকগুলো কেন এত বিরুদ্ধে। আমি যা বুঝলাম এইটার একটা বড় কারণ হচ্ছে গল্প। বিবর্তনে মানুষ বানর থেকে আসছে, এইটা অনেক পুরান ক্যাছাল। বিবর্তনের পক্ষের লোকজনের ব্যাখ্যা হচ্ছে মানষ আর বানরের কমন একটা বংশধর আছে। কিন্তু একটা থেকে আরেকটা আসে নাই। আমার কথা হচ্ছে মানুষ বানর থেকে আসলেও কিছু যায় আসে না। কারণ আমার কাছে এইটা একটা গল্প। এই গল্প সত্য নাকি মিথ্যা এইটা যার বিচার করতে ইচ্ছে করে করুক। ফসিল নিয়ে আসুক, ব্যাখ্যা করুক। আমরা একটু হিন্দু পুরান থেকে ঘুরে আসি।
হিন্দু পুরানে, আমি যদি ভুল না বলে থাকি বিষ্ণুর দশ অবতারের একটি মনু হিসেবে ব্রহ্মার বর পেয়ে পৃথিবীতে আসছিল। এই মনু হচ্ছে মাছের আরেক নাম। পৃথিবীতে প্রলয় আসল মনু তখন সমস্ত প্রানিকুল পিঠের উপর চড়ায়ে প্রানীকুল কে রক্ষা করেছিলেন। আচ্ছা গল্প কি চেনা চেনা মনে হচ্ছে? আচ্ছা ঠিক আছে চলেন একটু বাইবেলের জেনেসিস থেকে ঘুরে আসি নোয়াহ বিশাল এক নৌকা বানালেন সমস্ত প্রানিকুল কে রক্ষ করার জন্য। উনার দুই ছেলে কে নিয়ে উঠলেন কিন্তু এক ছেলে এক মেয়ের প্রেমে পড়ে আর নৌকায় উঠল না। চাইলে এমা ওয়াটসনের নোয়াহ একটা মুভি আছে দেখে আসতে পারেন। এতটুক ঠিক ছিল। এইবার আমি একটা প্রশ্ন করি হিন্দু কি আব্রাহামিক ধর্ম, একটা হচ্ছে ভারতীয় পুরান আরেকটা ধরে নিচ্ছে বেথেলহামের ঘটনা। মিলল কিভাবে? তারো পরে আসে ইসলাম ধর্ম নুহ নবির ঘটনা। ঘটনা গুল এত ম্যাচ করে কিভাবে? এইগুলোর কারণ হয়ত গল্প।
দেখেন আমরা সবাই গল্প বলি। এই গল্প বলার একটা শক্তি আছে। এবং শুধু গল্প বললেই হয় না গ্রহনযোগ্যতা থাকতে হয়, যে গল্পের গ্রহনযোগ্যতা যত বেশি সেই গল্প তত বেশি শক্তিশালী। সে গল্প মানুষ তত বেশি গিলবে। এবং যত বেশি মানুষ কে এই গল্প বলাতে পারবেন তত বেশি গল্পটা টিকে যাবে। জগতে হাজার বিজ্ঞানী আছে কিন্তু আইন্সটাইনের নাম সবাই জানে কেন? কারণ তার গল্প আছে রিলেটিভিটি প্রমান, আর এই গল্প ২০০ বছরের নিউটনের পদার্থ বিজ্ঞান ভেঙ্গেচুরে দিছে। আমরা প্রত্যেক্টা মানুষ একেক্টা গল্প। আমি ছোট বেলায় আমার আব্বুর গল্প শুনতাম চট্টগ্রাম সাতাকানিয়ার, ফলে জায়গাটা এখনো আমার কাছে রোমাঞ্চের। আমি যতবার সাস্টের জাহানারা ইমাম হলের সামনে দাড়াইছি আমার ততবার মনে হইছি আমি হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবাল স্যারের বলা গল্পের স্বাক্ষি। আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করি গত বছর কোন নোবেল জয়ীর কথা মনে পড়ে আপনার চোখ বন্ধ করে অভিজিৎ এর কথা বলবেন। কারণ তার গল্প আমাদের সাথে মিলে। আমরা রিলেট করতে পারি। মুক্তিযুদ্ধে কারো পা হারাইছে এইটা বলার চেয়ে তার যুদ্ধের গল্প শুনতে রোমাঞ্চ হয়
বিবর্তন ঠিক এই কাজটাই করছে। সব কিছু কে একটা গল্প নিয়ে আসছে। ধর্ম কিভাবে পৃথিবীতে আসছে এইটা নিয়েও একটা গল্প আছে, যে অনেক অনেক কাল আগে পাহাড়ের পাদ দেশে কিছু বাইসন মেরে আদিম মানুষ ছেলে পুলে নিয়ে খাচ্ছিল। চাদের আলো বেশ মজা হচ্ছে। হুট করে দেখল সব অন্ধকার হয়ে গেল। তারা ভাবা শুরু করল চাঁদ কোন কারণে রেগে গেছে তাই তাদের অন্ধকারে ফেলে দিল। শুরু হল চাদের পুজা করা। ধীরে ধীরে সুর্য্যের। এইগুলো গল্প। কোন প্রমান নাই কিন্তু রেফারেন্স আছে। পিরামিড আদিম মানুষ কিভাবে বানাইছে এইগুলো নিয়ে হাজার হাজার গল্প আছে। কিন্তু অই গল্প গুলোই যে সত্যি তার কোন প্রমান নেই কিন্তু আপনি উড়ায়ে দিতে পারবেন না। অইযে বললাম হিন্দু পুরানেও বিবলিকাল ফ্লাডের কথা বলা আছে, এই গল্প যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এবং এই গল্প প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলবে।
সব গল্প- মানুষ বানর থেকে আসছে কি আসে নাই কেউ জানে না, কিন্তু এই গল্প নিয়ে তর্ক করার একটা মোহ আছে। মানুষ বানর এই পুর্বপুরুষের দুই সন্তান এই গল্প বললে পুরুত, পোপ, হুজুর রা যে আজীবন বলে আসছে মানুষ শ্রেষ্ঠ এইটার মুলে আঘাত হানে, আর এই গল্প বলে এইটাই প্রমান করা হয় যে মানুষ অন্য আর দশটা সাধারন প্রানীর মত। এইখানেই আস্তিক নাস্তিকের ব্যাপারট তৈরি হয়। কারণ ডারউইন মানুষ কে কুকুর বিড়ালের পর্যায়ে নিয়ে আসছে, কিন্তু ধর্মে মানুষ স্বর্গে ছিল এক পাপের কারণে পৃথিবীতে আসছে। সুতরাং এই দ্বন্ধ চলবেই। কারণ গল্পটাই যে আলাদা।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:০৯