দেশে আসলে সব দিক থেকে উগ্রতা বাড়ছে। চরম পর্যায়ের এক্ট্রিমিস্ট হচ্ছে মানুষজন। এর সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হচ্ছে সম্প্রতি মা ছেলের ক্রিকেট খেলা। আমি যখন প্রথম ছবিটা দেখি আমার সত্যি খুব ভাল লেগেছিল ছবিটা, যে মা ছেলেকে নিয়ে ক্রিকেট খেলছে। এবং ভাল লাগার মতই একটা ছবি। আমার আর কোন দিকে আর নজর আসে নাই, ছেলে টুপি মা বোরকা পড়া আমি এইসব নিয়ে ভাবি নাই। কিন্তু যা হল যা হচ্ছে চূড়ান্ত লেভেলের বিরক্তিকর জিনিস। ইসলামিক মানুষগুলো আবার তথাকথিত মুক্তমনা গুলো যেভাবে সুন্দর একটা ছবিকে ডাস্টবিন বানাল। আমি বুঝি না মানুষের এত মাথা ব্যথা কেন? আমি আসলে দুইদিকের কথাই শুনলাম শুনে মনে হল দুই পক্ষের এক উগ্রতার যুদ্ধে বিশ্বাস করেন জয় হবে ইসলামিক মানসিকতার লোকগুলোর, যা রাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর। আমি এইখানে বলব কেন মুফতি কাজি ইব্রাহিম, আল্লামা শফি এবং একই সাথে আসিফ মহিউদ্দিন এর মত লোকজন কে চরমভাবে দমন করা উচিত।
আমি কয়েকদিন আগে আমার এক বন্ধুর সাথে কথা বলছিলাম, ও কথা প্রসঙ্গে বলল- তুই কেন তারেক মনোয়ার, কাজি ইব্রাহিম এদের মত লোকদের কথা শুনতে যাস। এদের কথার তো কোন আগামাথা নাই। দেখেন বাংলাদেশের মানুষ যতই বলি যে স্বাক্ষরতার হার বাড়ুক না কেন, আমি নিজে কাছ থেকে অনেক শিক্ষিত মানুষ দেখি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ার কারণে। বেশিরভাগেরই ক্রিটিকাল থিঙ্কিং করার কোন এবিলিটি নাই, আমি ক্রিটিকাল থিঙ্কিং বলতে বুঝাচ্ছি আমি একটা মত পছন্দ করি, সেই মত আমি অপছন্দ করি বলে আপনি আমাকে কথায় কথায় অপমান করবেন, বেশিরভাগ মানুষের মেন্টালিটি হচ্ছে এই টাইপ। ফলে এদের সাথে কোন ডিসকাশনে আসা যায় না, যা হয় তা হচ্ছে বিরক্তিকর এনালজি। এবং কোনোভাবে যদি বুঝতে পারে যে আমি ধার্মিক না, সে নাস্তিক প্রমান করতে উঠে পড়ে লাগবে। আবার উল্টোটাও সত্যি, যারা ধর্ম চর্চা করে ওদের বেশ গালি খেতে হয় নাস্তিক টাইপের লোকদের থেকে। কিন্তু যে যাই বলেন না কেন দিন শেষে হেফাজত তারেক মনোয়ার একটা বিশাল সিম্পেথি পায়। যা খুবই ভয়ংকর। এই সিম্পেথি পায় বলেই এরা শক্তিশালী। এখন আমি একটু বলি এরা কেন এই সিম্পেথি পায়? ধরুন বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। এরা সবাই বুঝে যে তারেক মনোয়ার, কাজি ইব্রাহিম আজাইরা কথা বেশি বলে। তারা আরও ভাল স্কলার মুফতি মেঙ্ক, মাসুদি এদের কথা শুনে। এখন বাকি যে ১৫ কোটি লোক এদের বড় একটা অংশ খুবই গোবেচারা টাইপ। গ্রামে থাকে, কিন্তু ইমান আছে ফলে কোন হুজুর যা বলে তাই ঠিক। হুজুর যদি বলে মেয়েদের তেতুলের মত তাই ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। এরা মেনে নেয়। মেয়েদের বেশি পড়াশুনা করা উচিত না, এরা পড়তে দিবে না। আপনি এদের বুঝাতেও পারবেন না, যে মেয়েরা সব করতে পারবে। এদের কাছে ইউটিউব, ফেসবুক যাওয়ার কারনে ব্লগারদের যে একটা আলট্রা শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ছিল এরা এত ষ্টুপিড লেভেলে এ এসে চিন্তা করতে হিমশিম খাচ্ছে। এবং এই হিমশিম খেতে যেয়েই এরা এদের মত ভুলভাল বকে ফলে তৈরি হয় আসিফ মহিউদ্দিন এর মত স্টুপিড।
পাবলিক আরিফ আজাদের বই পড়ে, ঠিক এই কারনে যে সে নাস্তিকদের জবাব দিচ্ছে, যেই জবাব গুলো দিচ্ছে সেইগুলো হচ্ছে লেম। পড়লেই বুঝা যায়। আমি দুইটা এক্সাম্পল দেই। সাজিদ-২ বইয়ে, সে নারীদের শস্যক্ষেত্র এর সাথে তুলনার ব্যাখ্যা করতে যেয়ে একটা জায়গায় বলছে যে তোমাদের কাছে সুকান্তের চাঁদ ঝলসানো রুটি এইটা যদি ভাল লাগে তাহলে নারিরা শস্যক্ষেত্র এই লজিক ও ভাল লাগা উচিত। স্টুপিড একটা এনালজি ছিল দুইটা কারনে, আমি জানি কুরান শ্রেষ্ঠ আমি কেন সুকান্তর সাথে তুলনা করে কুরান বুঝাব। আর আরিফ আজাদ আয়াতের ব্যাখ্যা দিতে যেয়ে যেমনে মন চায় সঙ্গমের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। নোংরা ভাষায় বললে আপনি ব্লো জব, এনাল, হেন্তাই, বিডিএসএম সব করতে পারবেন মেয়েদের কোন সম্মান নাই। আপনার সস্ত্রী হচ্ছে পতিতা, পর্ণ স্টার তাই এইসব করতে পারবেন। কিন্তু এই আয়াতে শানে নুজুলের ব্যাখ্যা আরিফ আজাদ ঠিক মতই দিছে যে জাহেলিয়াতের যুগে নারীদের যেভাবে ট্রিট করা হত ইসলামিক যুগের ট্রিট টা কেমন হবে, তখন এই অভয়বাণী দেয়ার জন্য এই আয়াত নাজিল হয়। এখন আরিফ আজাদ, তারেক মনোয়ারের মত লোকজন মুল কথা ঠিক রেখে এমন এমন ব্যাখ্যা দিবে যে শুনলে মনে হবে যে মেয়েদের জন্মই হইছে পতিতাবৃত্তি করার জন্য, আর ইসলাম এইটাকে সাপোর্ট করে। রাস্তায় যেই লোক রিকশা চালায় সে কিন্তু পড়তে পারে না অর জানে না কিভাবে হুজুর যা বলছে টা ঠিক কিনা যাচাই করার কোন উপায় আছে কিনা। এই জানে না বলেই আরিফ আজাদ, কাজি ইব্রাহিম যা বলে শুনতে ভাল লাগে তাদের। এবং বিশ্বাস করেন এরা যদি ভোট দেয় নিঃসন্দেহে তারেক মনোয়ার, কাজি ইব্রাহীমজিতবে। এবং ঠিক এই কারনেই ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত। কেন নিষিদ্ধ করা উচিত সেইটা ব্যাখ্যা আমি একটু পর দিচ্ছি। তার আগে আরিফ আজাদ ক্রিস্টমাস নিয়ে সাজিদ-২ তে বলছে যে ২৫ ডিসেম্বর আসলে ক্রিস্টমাস না। আরে ছাগল যেই লোক ড্যান ব্রাউনের ভিঞ্চি কোড বই পড়ছে সে জানে যে ক্রিশ্চান ধর্ম কিভাবে প্যাগান থেকে আসছে। হুদাই একটা ভাব নিয়ে কই জিনিস নিয়ে তিন পর্ব লিখছে।
দেখেন আমি একটা জিনিস মনে প্রানে বিশ্বাস করি রাষ্ট্রের আইন হওয়া উচিত সেকুলার। ফলে অভিজিত রায়, আসিফ মহিউদ্দিন এদের উপর একটা প্রচ্ছন্ন সাপোর্ট আছে আমার। কোন ধর্মভিত্তিক দল যদি ক্ষমতায় যায় আপনি কখন কিছু নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে পারবেন না, কারন কুরআন বলে দিছে আজ থেকে আমি পরিপূর্ণ। ফলে আপনার উন্নত হয়ার ব্যাপারটা লিমিটেড। তারেক মনোয়ার আর কাজি ইব্রাহিম স্টাইলে যদি বলি কুরআন দেখে যতই নিউটন মহাকর্ষ আবিষ্কার করুক, নিউটনের ল দিয়ে আর রকেট বানান হত না যদি এই ল এর এক্সপেরিমেন্ট করতে না পারত। মুসলমান বিজ্ঞানী যাদের নাম নিয়ে সবাই বড়াই এরা আসলে সবাই ছিল এক-আধটু সেকুলারিস্ট। আপনি মরা মানুষের লাশ নিয়ে যদি এক্সপেরিমেন্ট যদি নাই করতে পারেন তাহলে আপনি এই রক্ত সঞ্চালন বের করতে পারতেন না। ঠিক একই কারনে আয়মান সাদিক এর যদি গোপন এজেন্ডা থাকেও এইটা সবার জন্য একটা প্লাটফরম তৈরি হচ্ছে। রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে আমি প্লাটফরম তৈরি করে দিব, এবং এই প্লাটফরম এ পারফর্ম করার সুযোগ সবার জন্য সমান। কিন্তু আপনাকে টিকে থাকতে হলে স্ট্রাগল করতে হবে। এখন ধর্মভিত্তিক হলে দেশের মেয়েগুলো বাদ, আপনি বুঝেন কি পরিমান আইডিয়া হারাবেন আপনি দেশের ৫০% বাদ দেয়ার কারনে। হিন্দুরা বাদ, ১০% আরও আইডিয়া হারাচ্ছি। এই ৪০% লোক দেশ নিয়ে ভাবা আর ১০০% লোক দেশ নিয়ে ভাবা এক জিনিস না। সহজ গানিতিক হিসাব। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অই যে বললাম দেশের বড় একটা অংশ ধীরে ধীরে এই ইসলামিক লোকগুলোকেই সাপোর্ট দিচ্ছে। বিশ্বাস করেন এখনই যদি এইসব মাদ্রাসা, অয়াজ এ নিয়ন্ত্রন আনা হয়, বাংলাদেশ পাকিস্তান হয়ে যাবে। এবং একজন আরেকজন কে সহ্য করতে পারবে না। আলিয়া বলবে কউমি রা ভুল, কউমি বলবে আলিয়া ভুল। হাট হাজারি মাদ্রাসাতে যা ঘটল তা হচ্ছে এই গ্রুপিং। তাবলীগের কার্যক্রম অনেকটা ঢিলাঢিলা কেন? এইসব মারামারির কারনে, গ্রুপিং এর কারনে। আমি তাবলীগের সাথে খুব নিবিড়ভাবে পরিচিত ছিলাম বলে আমি জানি, এরা শিবির কে দেখতে পারে না। শিবিরের মত স্টুপিড গুলোকে এমনি দেখতে পারা উচিত না, কিন্তু তাবলীগ দেখতে পারে না ধর্মীয় কারনে। পাকিস্তানে ঠিক এইটাই হয়। আসিফ মহিউদ্দিন সুষুপ্ত পাঠক টাইপের লোকগুলোর উগ্রতার এই ফল হচ্ছে হেফাজত, আল্লামা শফি। জহির রায়হান, সৈয়দ মুজতবা আলি ও লিখছে কিন্তু লিখা পড়তে ভাল লাগছে। কারন লেখায় একটা আর্ট ছিল। খুব ভালভাবে আক্রমন করা হইছে। এদের আক্রমণগুলো হচ্ছে কুসংকার এর বিরুদ্ধে, শোষণের বিরুদ্ধে। কিন্তু এখন যারা মুক্তমনা এই স্টুপিড গুলোর আক্রমন হচ্ছে ইসলামের বিরুদ্ধে। আরে আবাল যেগুলো ইসলাম কে পুজি করে ছাগ্লামি করে, রগ কাটে এদের বিরুদ্ধে কথা বল। এইসব বলদামি করস দেখেই কাজি ইব্রাহিম, তারেক মনোয়ার সুযোগ পায়।
যেই হারে দেশের মানুষ উগ্র হচ্ছে। দেশের ভবিষ্যৎ আসলেও ভয়ংকর। দেশের প্রতিটা মানুষ সমান। মুসলিমরা যদি জোরে মাইক দিয়ে অয়াজ করতে পারে, হিন্দুদেরও একই সময়ে ঢোল পিটায়ে পুজা করতে দেয়ার অধিকার থাকা উচিত। কিন্তু এইটা কখনই হবে না উলটো অয়াজিন চিল্লায়ে বলবে মুসলমানের এই দেশে কোন সাহসে এরা এইসব করে, বিশ্বাস করেন বন্ধ করে দিবে পুজা। আমি খুব অপেক্ষা করছি সামনের রমাজনের জন্য, পহেলা বৈশাখ আর রমজান একসাথে পড়বে। পাঁপড় খেতে খেতে মজা দেখব।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:১৪