শিরোনামে যে লেখাটা দেখতে পাচ্ছেন এইটা হচ্ছে জেমস ব্যাল্ডুইন এর একটা উক্তি। গতকাল Where Hands Touch নামে একটা মুভি দেখলাম। মুভির শুরু হয়েছে এই লাইনটা দিয়ে। মুভির প্রেক্ষাপট একটু বলি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধদের সময় জার্মান নাজি বাহিনী কালো আর শ্বেতাঙ্গ দের মধ্যে বিয়ে খুব জোর করে দমন করার চেষ্টা করেছে। এইরকম কালো বাবা আর শ্বেতাঙ্গ মায়ের একটি কালো মেয়েকে নিয়ে ই মুভির কাহিনী। এই মুভির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাক্য মনে হয়েছে আমার কাছে- I am German, I love Germany no matter what I am, there is no jew, no good jew, no black, we all are German. আমার দেশে ইদানীং সবকিছুর ই একটা মেরুকরণ করার চেষ্টা করা হয় এবং এইটা খুব সচেতনভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে করা হয়। আমি অনেকগুলো ঘটনা নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করব।
সাস্ট ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র মাহির চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাস্ট প্রশাসনের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার চাই
বাংলাদেশের একটা আবর্জনার নাম হচ্ছে ছাত্রলীগ আর ছাত্রদল। এরা যে কি পরিমাণ অসভ্য এদের কয়েকটা ঘটনা বলি। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে আমার বেশ কিছু কাগজপত্রের জন্য সাস্টে যেতে হয়, তখনও আমার ক্লাস শুরু হয় নাই। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। ছাত্রলীগ মারামারি করে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে ফেলছে, ওরা আর কিছু পারুক আর না পারুক এই কাজ টা খুব ভাল ভাবে করতে পারে। তো ভাবলাম ক্যাম্পাস ফাকা আব্বু আর আমি জাফর স্যারের সাথে দেখা করে আসি। তো কথা প্রসঙ্গে আব্বু জিজ্ঞেস করছিল যে বিশ্ববিদ্যালয় কবে খুলতে পারে। স্যার দেখলাম খুবই বিব্রত হল উনি উত্তর দিলেন- আমার সোনার ছেলেরা পড়াশুনা বাদ দিয়ে, মাঝে মাঝে একটু মারামারি করতে চায়। ওদের কিছু বলা যায় না, সহ্য ও করা যায় না। শীঘ্রই খুলে ফেলবে। বিশ্ববিদ্যালয় খুলার পর বিপুল স্যার আমাদের মেডিক্যাল অফিসারের সাথে দেখা করাতে নিয়ে যাওয়ার পর মেডিকেল অফিসার বললেন- তোমরা এইখানে আসবা মারামারি করে হাত পা ভেঙ্গে ফেলার পর। এছাড়া আর আসো না। বিপুল স্যার তখন বললেন- দেখ উনি খুব ইনফরমাল কিছু কথা বলছেন, যা খুবই কম বলা হয়। এইতো গেল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে আমাদের ধারনা।
আমি তখন ২/১ এর ফাইনাল এক্সাম দিচ্ছিলাম, ইলেক্ট্রনিক্স-১ এক্সাম দিয়ে মাত্র বের হলাম আইআইসিটি বিল্ডিং থেকে, টঙে যাব এমন সময় দেখলাম রেজিস্টার বিল্ডিং এ বেশ হইচই। সকালে এক্সাম দিতে যাওয়ার সময় ইয়াসমিন ম্যাডাম আর জাফর স্যার কে ওইখানে দেখেছিলাম। এক্সাম শেসে যে গণ্ডগোল হচ্ছিল সেইটা হচ্ছে- ছাত্রলীগ এসে শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলেছে। জাফর স্যার ক্ষোভে বৃষ্টিতে ভিজলেন, পুরো বাংলাদেশে এ নিউজ হল। একবার ভাবুন ছাত্রলীগ কি পরিমাণ বেয়াদব, অসভ্য, ওদের নেত্রী শেখ হাসিনা ওদের কি পরিমাণ অসভ্যতা শিখায় যে- শিক্ষকরা একটা আন্দোলন করছে সেইখানে যেয়ে শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলে চলে আসে। এরপরের মজাটা জাফর স্যার নিল- কয়েকদিন পর বললেন যে- আমার ছাত্রদের উপর আমার কোন রাগ নাই, ওরা ছোট মানুষ ওরা ভুল করেছে। ওদের কে বুঝালে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার স্যারের উপর খুব রাগ উঠেছিল সেদিন এবং ঠিক এই একটা জিনিস আমি স্যারের সাথে মিলাতে পারি না। আমি ফাইনাল ইয়ারে উঠে বুঝেছি উনি কতটা অসহায় এইখানে, চাইলেও ছাত্রলীগ আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে বলা যাবে না।বললে কি হবে ছোট্ট একটা ঘটনা বলি।
কোটা আন্দোলনের সময় স্যার কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল উনার মত কি এই নিয়ে। উনি আসলে কোটা নিয়ে কিছুই জানতেন না। আমার বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকরা বুঝালেন যে পাবলিক সার্ভিস এক্সামে ৫২% কোটা। উনি বাইরে এসে বললেন- আমার ছাত্ররা যদি এখন মনে করে যে মুক্তিযুদ্ধ কোটা বা অন্যান্য কোটার কারণে ওদের মেধার মূল্যায়ন হচ্ছে না তাহলে বাদ দেয়া যেতে পারে। মুক্তিযুদ্ধ কোটার কারণে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মোটেও অসম্মান করা যাবে না। ঘটনা যেইটা হল- শেখ হাসিনা সংসদে কোটা বাতিল নিয়ে কথা বলতে যেয়ে বললেন- শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও দেখি এখন কোটার বিরুদ্ধে কথা বলে, কোটাই বাদ। জাফর স্যার এর পরের সপ্তাহে এমন অস্পষ্ট একটা কলাম লিখেছেন যে আমি পড়ে কিছুই বুঝি নাই ঐ লেখার। স্যার অসহায় কেন? স্যারের উপর যখন SUST EEE FEST-2018 এ যখন আক্রমণ হল তখন উনাকে এয়ার এম্বুলেন্স করে ঢাকা না নিয়ে আসলে, উনাকে আমরা ফিরে পেতাম না হয়ত। সিএমএইচে সিভিলিয়ান হয়েও এক্সেস পেয়েছেন। এত কিছু করার পর সরকার চাইবেই সরকারের পক্ষে কিছু বলুক। কিন্তু জাফর স্যার তবু উনার সীমাবদ্ধতা থেকে কিছু বলার চেষ্টা করেন। আমি এখন একটা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শিক্ষক আমি বুঝি যে কতটা অসহায় জীবন যাপন করি। এইটা একটা দেশের নিয়ম হতে পারে না, যে সে ভিন্ন মত পোষণ করে বলে তাকে মেরে ফেলতে হবে। আস্তিক নাস্তিক আওয়ামীলীগ বিএনপি আদিবাসী সবাই বাংলাদেশি। বৈচিত্র্য গ্রহণ করার মানসিকতা খুবই জরুরী। আবার সবার জন্য সমান নাগরিক অধিকার প্রযোজ্য, একই আক্রমণ জাফর স্যার না হয়ে অন্য কোন সাধারণ মানুষ হলে, সাধারণ মানুষ এয়ার এম্বুলেন্স পেত না। এই করোনার সময় আমি অন্তত এই সাম্য আশা করেছিলাম। কিন্তু কি হল?
সবাই দেশে চিকিৎসা নিচ্ছে মোহাম্মদ নাসিমের পরিবার সিঙ্গাপুর নিয়ে যেতে চাচ্ছে। উনি স্বাস্থ্য মন্ত্রী ছিলেন, উনি যদি সত্যি দেশের চিকিৎসকদের উপর, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা উপরের ভরসা করতে পারতেন তাহলে উনি এবং উনার পরিবার সিংপুর নিয়ে যেতে চাইতেন না । এইসব প্রশ্ন করা অধিকার আমার আছে। এইসব বলার অধিকার আমার আছে। উনি যে কি পরিমাণ অব্যবস্থাপনার মধ্যে রেখে গেছেন স্বাস্থ্য খাতকে সেইটা উনি ভাল জানেন। উনার মৃত্যুতে মানুষ এই কারণে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে যে- লাভের গুড় পিপড়ায় খায়। সাস্টের শিক্ষার্থী মাহির ঠিক এইরকম একটা প্রতিক্রিয়া জানালো। ছাত্রলীগ কি করল, প্রোক্টর কে বলল যে মাহির এই কারণে শাহপরান হলের সামনে বসে নাকি নাসিম কে নিয়ে স্ট্যাটাস দিছে। অথচ ছেলেটা ঢাকায়। ছেলেটা স্ট্যাটাসে কিছুই বলে নাই- সাকা চৌধুরী বেচে থাকলে হয়ত বলতেন " আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে" ওপাড়ে ভাল থাকবেন নাসিম- এমন কি বাজে স্ট্যাটাস ছিল আমরা মাথায় আসে নাই। ছেলেটা চাপে পড়ে লাইভে এসে ক্ষমা চাওয়ার পরও প্রশাসন ডিজিটাল আইনে মামলা দিল। আর সাস্ট প্রশাসন একটা উজবুক। এই স্ট্যাটাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানহানি কিভাবে হয় আমার জানা নেই। সাস্ট কে উজবুক বলার কারণে আমার নামে ও মামলা দিয়ে দিতে পারে। পাশ করে বের হয়ে গেছি। এই এক সুবিধা। তাও ঠিক নাই ছাত্রলীগ ফুসলায়ে অনেক কিছু করতে পারে। ওরা কি কি করতে পারে তার দুইটা ঘটনা বলি।
আইআইসিটি বিল্ডিং উদ্বোধন নিয়ে ছাত্রলীগের মধ্যে বেশ একটা জল্পনা কল্পনা ছিল। আমি হলে ছিলাম ফাস্ট ইয়ারে, তখন ওরা বেশ খুশি ছিল আইআইসিটি বিল্ডিং উদ্বোধন হলে ওরা কে কে কোটা অনুযায়ী টাকা ভাগ পাবে তা নিয়ে আমি প্রায় হলে আলাপ করতে দেখতাম ওদের। এইটা হইতেই পারে না, এত বড় বড় প্রজেক্ট ওদের কিছু দিতে হবে না এইটা তো হয় না, এদেশে বেচে থাকার উপর ও কিছু ট্যাক্স আরোপ করা উচিত। ওরা যে কি পরিমাণ ছেস্রা আমি বুজছি আমাদের ব্যাচের নবীনবরনের সময়। ওদের টাকা না দিলে নাকি ওরা প্রোগ্রামই নামাতে দিবে না। আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কে বলব আপনারা কি এইসব ফকিন্নি, ছোটলোক গাছবলদের কথা শুনে মাহিরের নামে মামলা দিছেন? মামলা প্রত্যাহার করবেন অবশ্যই।
মুক্তিযোদ্ধা বনাম শিবির
সরকারের বিরুদ্ধে কোন কথা বলেই তাকে শিবির রাজাকার ট্যাগ এখন নিয়মিত হয়েছে । এর ফলাফল কি ভয়াবহ হবে এইটা এখনো কেউ বুঝতেছেনা। কোটা আন্দোলনের সময় একটা প্ল্যাকার্ড - আমি রাজাকার- নিয়ে জাফর স্যার খুব বিরক্ত ছিলেন। খুব স্বাভাবিক উনি উনার বাবা কে হারিয়েছেন, তারা খাওয়া কুকুরের মত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছেন উনার খারাপ লাগবেই। কিন্তু এই প্ল্যাকার্ড ভয়ঙ্কর একটা বার্তা দেয়। ৭১ কে যেইভাবে মহান করা উচিত ছিল সেইটা করতে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। একটা মহান জিনিস নিয়ে তুচ্ছ জায়গায় বার বার কথা বলে ওইটা আর মহান থাকে না ওইটাও তুচ্ছ জায়গার মত তুচ্ছ হয়ে যায়। আপনাকে সাংসদ নেতা বানানো হয়েছে জনগণ নিয়ে কথা বলার জন্য। এখন যদি আপনি আপনার বাজেট বক্তৃতার ১০ মিনিটের মধ্যে ৫ মিনিট হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি, শ্রেষ্ঠ সন্তান এইসব গদবাধা কিছু বলেন আমি চ্যানেল চেঞ্জ করতে বাধ্য হই তখন, এইটা অপমান করা তাদের। দেখেন আমাদের পূর্ব পুরুষ আমাদের একটা দেশ উপহার দিয়েছেন, উনাদের কাজ শেষ। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে এই দেশটাকে আরও সুন্দর করা, এইটাতে উনাদের সম্মান করা হবে।কথায় কথায় নাস্তিক, মৌলবাদী, শিবির রাজাকার ট্যাগ দিলে মানুষ বিরক্ত হয়ে বলবেই আমি রাজাকার। কোন যুক্তিতেই সেইটা গ্রহণযোগ্য না। বাজেট অধিবেশনে আপনার উচিত কথা বলা স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ান নিয়ে তা না করে শেখ হাসিনাকে তেল দিয়ে বেরান। খুলনায় ডাঃ রাকিব কে পিটিয়ে মেরে ফেলা হল এইটা নিয়ে কথা বলেন, ডাঃ দের কি অসুবিধা হচ্ছে তা নিয়ে বলেন। এখনো দেশে মুক্তিযোদ্ধারা না খেয়ে থাকে এইটা সমাধান না করে , সংসদে উনাদের নিয়ে কথার ফুলজুরি ছুটালে উনাদের পেটে দানা পড়বেনা। তখন খুব হাসি পায়, এইটা উনাদের অপমান করা ছাড়া কিছুই না।
শেখ হাসিনা আপনাকে কিছু কথা বলি, শেখ মুজিব রাজনীতি শিখেছেন শেরেবাংলা, সোহ্রাওয়ার্দী, ভাসানী, দেশবন্ধু এদের কাছ থেকে। আপনি কাদের নিয়ে রাজনীতি করেন কাদের কথা বলে সংসদে কান্না করেন এইটা একটু ভাববেন। তাহলেই বুঝবেন পার্থক্য কত ব্যাপক। আর যাই হোক তাদের নিয়ে সোনার বাংলা গড়া সম্ভব না।
করোনায় আপনি যেভাবে দেশ চালাচ্ছেন, কয়দিন পর মানুষই থাকবে না, সোনার বাংলা তখন লুটেপুটে ভোগ কইরেন
আপডেট সাস্ট প্রশাসন মাহিরের বিরুদ্ধে আনীত মামলা প্রত্যাহারের জন্য পুলিশের কাছে আবেদন করেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:৩৯