ঘটনা গত বছরের। এর মধ্যে বহু জল ঘোলা হয়ে গেছে। তো হুট করে মনে হল লেখা উচিত। তাই লিখছি।
জন প্রেস্কিল নামে এক ক্যালটেক প্রফেসর আছেন যিনি ২০১২ সালে একটা টার্ম উচ্চারণ করেন ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াটারলু এর একটা কোর্সে। 'কোয়ান্টাম সুপ্রেমেসি' এইটার মানে টা আমি একটু বলি আমাদের হাতে যে ডিভাইসগুলো থাকে এই গুলো কাজ করে হচ্ছে বিট সিস্টেম অনুযায়ী। ২বিট হলে সংখ্যাগুলো হবে ০০, ০১,১০,১১ এই প্রতিটা সংখ্যা আলাদা। অন্যদিকে কোয়ান্টাম মেকানিকস দিয়ে আমি যদি ডিভাইস বানাতে চাই তাহলে আমি ব্যবহার করতে হবে কিউবিট। এই কিউবিট অনুযায়ী ০০,০১,১০,১১ এই সবগুলো সংখ্যা সুপারপজিশনে থাকবে-বলা যেতে পারে একসাথে থাকবে। এখন আমি যদি সাধারণ ক্লাসিকাল সিস্টেম অনুযায়ী ০০ থেকে ১১ এ যেতে চাই তাহলে আমাকে চার ধাপে যেতে হবে- প্রথমে ০০, তারপর ০১ এইভাবে ১১ এ আসতে হবে। অন্যদিকে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং অনুযায়ী আমার একবার হিসেব করলেই হবে-কারন এই চার টা অবস্থা থাকে। এতে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং অনুযায়ী হিসেব খুব ফাস্ট হয়- এক্সপনেন্সিয়ালি ফাস্ট হয়। জন প্রেস্কিল ২০১২ সালে বলেছিলেন আমরা যদি কোয়ান্টাম কম্পিউটার আর একটা ক্লাসিকাল কম্পিউটার কে যদি হিসেব করতে দেই তাহলে যদি কোয়ান্টাম কম্পিউটার এক্সপনেন্সিয়ালি ফাস্ট হিসেব করতে পারে তাহলে আমরা বলতে পারব কোয়ান্টাম কম্পিউটার ক্লাসিকাল কম্পিউটারের চেয়ে ভাল কাজ করতে পারে। আমরা যদি এই দক্ষতা অর্জন করতে পারি তাহলে আমরা এইটাকে বলব কোয়ান্টাম সুপ্রেমেসি।
২০১৯ সালের অক্টোবর এর দিকে গুগল নেচার এ একটা পেপার পাবলিশ করল, এই পেপার এর কারণে কি কি হইছে আমি একটু বলি। আইবিএম বেশ কয়েকবছর বছর বুঝতে পারতেছে মুর ল এর দিন মনে হয় শেষ হয়ে আসতেছে। এইজন্য এরা উঠেপড়ে কোয়ান্টাম কম্পিউটার বানানোর চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে ওদের বেশ কয়েকটা কোয়ান্টাম কম্পিউটার আছে-৮ কিউবিট, ১৪ কিউবিট, ৩২ কিউবিট এমন। ওরা আইবিএম কোয়ান্টাম এক্সপেরিএন্স নামে একটা ওপেন প্লাটফরম ও তৈরি করেছে যেখানে আপনি ঘরে বসে সার্কিট বানায়ে দিলে ওরা সেইটা ওদের কোয়ান্টাম কম্পিউটার এ রান করে আপনাকে রেসাল্ট দিয়ে দিবে। গুগল এই পেপার পাবলিশ করার পর প্রথম আতে ঘা লাগে আইবিএম এর। এক সপ্তাহের মাথায় আইবিএম ব্লগে লিখে গুগল যা দাবি করছে টা পৃথিবীর সবচেয়ে পাওয়ারফুল সুপার কম্পিউটার দিয়ে করা যাবে যদি ঠিকঠাক মত প্রোগ্রাম করে দিতে পারি। এইবার একটু বলি গুগলের এই দাবির পর ইভাঙ্কা ট্রাম্প তার অফিসিয়াল টুইটারে টুইট করেন যে আমেরিকা চায়নার আগে কোয়ান্টাম সুপ্রেমেসি অর্জন করেছে। ইভাঙ্কা ট্রাম্প সুন্দর পিছাই এর সাথে দেখা করেন- স্কাইমর প্রসেসর (৫৪ কিউবিট এর যে সার্কিট দিয়ে গুগল তাদের ফলাফল পাবলিশ করে) দেখে আসেন এবং প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের একটা প্রজেক্ট পাশ করান। চায়না- আমেরিকা তখন বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে- চায়না কিছুদিন আগেই কোয়ান্টাম কমিউনিকেশন দিয়ে পৃথিবী এবং মহাকাশে বার্তা আদান-প্রধান করে। চায়না সাথে সাথে সমপরিমাণ একটা বাজেট পাশ করে কোয়ান্টাম কম্পিউটার দেভ্লপের জন্য। পরে সবকিছু ঠাণ্ডা হয়- নেচারের পেপারের একজন রিভিউয়ার স্কট আরন্সনের একটা ব্লগ আর্টিকেলের কারণে- স্কট আরন্সন গুগলের পেপারের একজন রিভিউয়ার ছিলেন।
গুগলের ঐ পেপারটা আসলে কিছুক্ষণ এর জন্য এক অথর ভুলে অনলাইনে ফেলে রাখেন- এর মধ্যেই পেপার টা লিক করে। পেপারে গুগল রেন্ডম নাম্বার জেনারেট করে দেখায়- ৫৪ কিউবিটের এক প্রসেসর নাম স্কাইমর- আসলে ১ কিউবিট কোন কারণে কাজ করছিলনা এই ৫৩ কিউবিট দিয়েই গুগল ফলাফল প্রকাশ করে দেখায় যে এই কাজটা করতে একটা ক্লাসিকাল কম্পিউটারের কয়েক মিলিয়ন বছর লাগবে, সেইখানে স্কাইমরের লেগেছে কয়েক মিনিট। গুগল দাবি করে তারা কোয়ান্টাম সুপ্রেমেসি অর্জন করেছে। আইবিএম এই দাবি ডিবাঙ্ক করে বলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী সুপার কম্পিউটারের এই কাজ করতে লাগবে ২দিন যদি ঠিকঠাক মত প্রোগ্রাম করে দেয়া যায়। স্কট আরন্সন উনার ব্লগ লিখেন গুগল এবং আইবিএম যা বলছে দুইটি সঠিক। উনার যেই মতটা আমার সবচেয়ে বেশি ভাল লাগছে টা হচ্ছে এমন- গুগলের কোয়ান্টাম সুপ্রেমিসি দাবি করার মানে এই না যে এইটা বাজারে চলে আসবে এখনো প্র্যাক্তিকাল অনেক কাজে ক্লাসিকাল কম্পিউটার কোয়ান্টাম কম্পিউটারের চেয়ে অনেক ভাল কাজ করে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে আরও কাজ করতে হবে, আরও স্পিড অর্জন করতে হবে।
এইসব কিছুর নাটিগুটি হচ্ছে জন প্রেস্কিল। এই প্রফেসর কয়েক মাস আগে দেখলাম টুইটারে আরেকটা টুইট করছে- কোয়ান্টাম উইন্টার লিখে। উনার দাবিটা কি আমি সেইটাই বুঝলাম না। আট বছর আগের এক টার্ম দিয়ে একমাস কোয়ান্টাম রিসার্চাদের হাত পাগল বানায়ে রাখছিল এখন কি উনি হোয়াইট ওয়াকার নামাতে চাচ্ছে। আর টুইটার জিনিসটা ফেসবুকের চেয়ে বেশ মজার- পিটার শর এক টুইট করলে ডেভিড ডয়েছ সেইখানে রিপ্লাই দেয় বাকি পদার্থবিদরা বসে বসে মজা নেয়।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০২০ রাত ৮:৫৫