ভূমিকাঃ
বাংলা ভাষা পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ একটি ভাষা। এ ভাষার রয়েছে হাজার বছরের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য।
বর্তমানে বাংলা ভাষা, ভাষাভাষীর দিক থেকে পৃথিবীর চতুর্থ, বহুল প্রচলিত ভাষা। এই ভাষায় কথা বলে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ। আর এই বাংলা ভাষা, আমাদের মাতৃভাষা। কিন্তু এই বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা রুপে পেতে অনেক আন্দোলন ও বুকের তাজা রক্ত দিতে হয়েছে। ভাষার জন্য জীবন দিয়ে শাহাদত বরন,শুধুমাত্র বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই হয়েছে,যা পৃথিবির অন্য কোন ইতিহাসে নজিরবিহিন।
দিনটি ছিল বৃহঃস্পতিবার, ১৩৫৮ সালের ৮ ই ফাল্গুন (১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২১ ই ফেব্রুয়ারী)।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র এবং কিছু রাজনৈ্তিককর্মী মিলে মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের সামনে এলে,পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার দায়ে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য করে গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন,সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ আরো অনেকে।
বাঙ্গালি জাতির জন্যে এই দিনটি অত্যন্ত শোকাবহ দিন।
অতঃপর অর্জন ও উদযাপনঃ
১।১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ হতে প্রতি বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারি তারিখে মহান ভাষা আন্দোলনের শহিদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে,শহিদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও পুস্পস্তবক অর্পন করা হয়।
২। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে(১৩৬২ বঙ্গাব্দ)পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার, বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষার স্বীকৃতি প্রদান করে।
৩। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন বাংলাদেশ পর থেকে শহিদ দিবস হিসাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে এই দিন সরকারি ছুটি।
৪। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ হতে, ভাষা শহিদদের সম্মানে, বিশিস্ট ব্যাক্তিদের একুশে পদক প্রদান করা হয়।
৫। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দ হতে, বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে অমর একুশে গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হয়, পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে।(তবে বইমেলার গোড়াপত্তন হয়েছিল ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে)
৬। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো, ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করে।
এতকিছুর পরও সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন হয়নি।
সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনের জন্য, আমার ৮টি প্রস্তাবনা (যে সব পদক্ষেপ গ্রহন করা যেতে পারে)
১। বাংলাদেশ, ভারত সহ পৃথিবীর বিভিন্নপ্রান্তে বসবাসরত প্রায় ৩০ কোটি মানুষের জন্যে এক ও আভিন্ন,“প্রমিত বাংলা বর্ষপঞ্জি’’প্রনয়ন করতে হবে।
(যেখানে বঙ্গাব্দ থাকবে প্রধান হিসাবে এবং খ্রিস্টাব্দ ও হিজরী সন থাকবে অতিরিক্ত হিসাবে। আমি বিশ্বাস করি বাঙ্গালীদের একান্ত ইচ্ছাশক্তি, গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা এবং বাংলা একাডেমি (ঢাকা,বাংলাদেশ) ও পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি (কলকাতা,ভারত) এর যৌথ প্রচেষ্টায় ,
“প্রমিত বাংলা বর্ষপঞ্জি” প্রনয়ন করা সম্ভব।
২। বাংলাদেশের সকল দাপ্তরিক কাজ সম্পাদন হবে বাংলা ভাষায় এবং উক্ত, “প্রমিত বাংলা বর্ষপঞ্জি’’অনুসারে।(যেমনঃ সরকারী, বেসরকারীসহ সকল চাকুরীজিবিদের বেতন হবে বাংলা মাস অনুযায়ী)
৩। জাতীয় সকল দিবস বাংলা তারিখে উদযাপিত হবে, তবে আন্তর্জাতিক দিবস সমুহ পূবের ন্যায় উদযাপিত হবে।(যেমনঃ শহিদ দিবস ২১শে ফেব্রুয়ারীর পরিবর্তে ০৮ই ফাল্গুন, আর ২১শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস(International Mother Language Day)উদযাপিত হবে। আর বইমেলার নামকরন করা যেতে পা্রে, এভাবে-“অমর ৮ই ফাল্গুন গ্রন্থমেলা-১৪২৪” যা ফেব্রুয়ারীর পরিবরতে পুরো ফাল্গুন মাস জুড়ে আয়োজন করা যেতে পারে)
৪। মৌলিক চাহিদার বস্তুসমুহসহ,ব্যাবসা/বানিজ্য,যানবাহন সকল ক্ষেত্রে নাম,বিবরন ও অন্যান্য তথ্য বাংলায় লিখতে হবে।(যেমনঃ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা, বিনোদন,যাতায়াত ব্যাবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রে)
৫। সকল শিক্ষার মাধ্যম হবে বাংলায় (তবে বিশ্বায়নের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য, ইংরেজি থাকবে ২য় ভাষা হিসাবে)
৬। উচ্চ আদালত সহ সকল আদালতের রায় প্রকাশিত হবে বাংলা ভাষায়।
৭। গণমাধ্যম সমুহে ব্যবহৃত হবে, প্রমিত বাংলা ভাষা, বিশেষ ক্ষেত্রে ইংরেজি ব্যবহৃত হতে পারে। তবে কোনভাবেই বাংলা ও ইংরেজীর সংমিশ্রন করা যাবেনা, যাহা গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে বিবেচ্য করতে হবে।
৮। বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হবে সম্পূর্ণ দেশীয় সংস্কৃতিতে এবং নিবন্ধিত প্রান্তিক কৃষক, শ্রমিক সহ সকল সরকারি,বেসরকারী চাকুরিজীবি বৈশাখী ভাতা পাবে।
সর্বোপরি আমাদের মেধা,মনন,চিন্তা,চেতনা বাংলায় প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
বাংলা ভাষার জন্য অপরিসীম ভালোবাসা।তবেই পাব সর্বস্তরে বাংলা ভাষা।
লেখকঃ
মোঃ সাখাওয়াত হোসেন
(কবি ও সাহিত্যিক)
ই-মেইলঃ[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৪৫