টানা ৪ ঘণ্টার ট্রেইল শেষে একটা পাড়াতে থামলাম, এখানে ব্যাকপ্যাক রেখে, আমরা যাব তিনটি ঝর্না দেখতে, আর বিকেলে আবার ফিরে যাব, গতকালের গন্তব্যে, (উল্লেখ্য, বিশেষ বর্ণনা এবং পরবর্তী প্রভাবের কারনে! পাড়াটির নাম উহ্য রাখা হল)।
যাইহোক, এখানে সবাই কিছুক্ষণ বিশ্রাম ও সকালের খাবার সেরে আমরা শুরু করবো আমাদের আজকের মূল এডভেঞ্চার। তো কারবারির ঘরে ঢুকে, রাজকীয় ড্রইং রুম দেখে আমরা সবাই অবাক! কাঠের কারুকাজের সব আসবাব, চারপাশেই, চমৎকার কারুকাজের কাঠের সোফা! (কোন পাহাড়ি পাড়াতে এই প্রথম দেখা!), প্রতিটি জানালার সাথে, কাঠের সেলফ, আর নিচের যে পাটাতন (মেঝে বা বসার জায়গা) সেটাও অসাধারন দক্ষতা ও শ্রমের মিশ্রনে এক অপার সৌন্দর্য, যে সৌন্দর্য দেখে সবাই অভিভূত!
এসব দেখেই আমরা সবাই অনেক চাঙ্গা হয়ে উঠলাম, এবং ভেবে রাখলাম, যে, আজ রাত না হয় এ পাড়াতেই থাকা হোক? কিন্তু আলোচনা শেষে সময়ের হিসেব করে ঠিক হল, দুপুরে ফিরে চূড়ান্ত ভাবে ঠিক করা যাবে যে, থাকব না থাকবনা। যাইহোক,ভীষণ ক্লান্তির সামান্ন অবসন্নতা দূর করার জন্য, ব্যাগ থেকে ট্রেকিং টনিক মিরিন্ডার বোতল বের করা হল, বোতলের মুখে হাত দিয়ে... প্রথম মোচড়টা প্রায় দিয়েছি...... ছিছিছিছিততততত............ শব্দটার শুরু হতেই...... আবার মুখ বন্ধ হয়ে গেল, হাতের অজান্তেই, হাত তার মুখ খোলার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে!
পাশের রুমের,পর্দার নিচে,ওপাশের বিস্ময় দেখে, দুখানি পায়ের বিমোহিত সৌন্দর্য! পাহাড়ি বিস্ময়! চোখ ও হাতের মধ্যে বোধয় কোন গোপন সন্ধি ছিল! কারন চোখের বিস্ময়ের সাথে সাথে হাত বোতলের মুখ খোলার কাজ থামিয়ে দিয়েছে! মনে, মনে ভাবছি, পাহাড়েতো অনেক এসেছি, কিন্তু এমন মন মাতাল করা সুন্দর পা এর আগেতো কখন দেখিনি? কি দারুন সূক্ষ্মতায় পায়ের যত্ন নিয়েছে সে! পাহাড়ি পা, অথচ, এতটুকু দাগ বা এই শিতেও তার কোথাও ফাটা নেই! (যেটা শীতের স্বাভাবিক রুক্ষতায়, সবারই কমবেশি হয়), কি কমনীয় তার পায়ের গোড়ালি! ঠিক যেন কচি শসার পিছনের অংশ! ফুল ঝড়ে যাবার পরে, হালকা হলুদ আভায়, অদ্ভুদ মসৃণ ও কমনীয়! আর কিযে যত্নে, আলতো করে, নখের নন্দনিকতাও ফুটিয়ে তুলেছে! তা আমার নজর এড়ালোনা! হঠাৎই এলো, আবার হঠাৎই চলে গেল...
ভাবছিলাম, যার পা-ই এমন আকর্ষণীয়! সে না যেন কেমন হবে! ঠিক করলাম, যতবার ওঁই পা চোখে পড়বে, ততবার মিরিন্ডার বোতল থেকে এক মুখ করে মিরিন্ডা ফেলে দেব! কারন আমার মিরিন্ডার যে উপযোগ তা তো মিটছেই! শুধু পা দেখেই! আবার এলো! আমি দু-মুখ মিরিন্ডা ফেলে দিলাম! কারন? এবার, আর প্রথম বার, দুবার পা দেখার জন্য, দুবার! ভাবছি, তার বাকি সব না জানি কি অস্থিরতা নিয়ে অপেক্ষা করছে! আমি আর কিছুই দেখতে চাইনা! আমার শুধু পা দেখেই সকল ব্যাথা মিটে যাবে! আর কিছুই আমি দেখতে চাই না! আমি শুধু তাকিয়ে, পাশের রুমের পর্দার নিচে! এভাবে কেটে গেল প্রায় এক ঘণ্টা আর নিঃশেষ হল আমার মিরিন্ডার বোতলের ২০০মিলি!
ভেবেনিলাম, আজ রাতে অবশ্যই এ পাড়াতেই থাকবো! সুতরাং...ধিরে ট্রেকিং নীতি (দুর্নীতি) প্রয়োগ করতে হবে! বেরহব, এমন সময়... পর্দার ওপাশ থেকে আওয়াজ “পানি নেবেন না?” (কেউ হয়তো চেয়েছিল, যা আমি শুনিনি! অথচ, সবাই তো একই জায়গাতেই বসে ছিলাম! আমি শুনিনি কেন? তবে কি? চোখ ও হাতের সাথে, আমার কানও বধির হয়ে গেল?!) সবাই প্রায় নেমে গেছে, আমি ফিরে তাকিয়ে বললাম, জি, হ্যাঁ, না, মানে? আমি তো চাইনি! না দিন! আসলে আমার কথাও গুলিয়ে গেল! ফিরে তাকিয়ে আমি নিস্তব্ধ! অবাক, হতবাক, নির্বাক আর সত্যিই পুরোপুরিই প্রায় বোধহীন! সিনেমায় তো আমরা এমনই দেখি! আমার অবস্থা তো সেই সিনেমার মতই!
তিনি পানি দিলেন, আর আমি নিলাম এর বেশী সেই মুহূর্তে আর বুঝে উঠতে পারিনি! সবাই বেরিয়ে গিয়ে আমাকে ডাকছে? কিন্তু আমিতো অসাড়! কেমনে যাই! কিন্তু একজন এসে, সাথে নিয়ে চলে গেল! কিন্তু মন আর চোখতো রেখে গেলাম এ পাড়াতে! এরপরে, আমি যা করলাম সেটা অবিশ্বাস্য সবার কাছে! আমি খুবই ধীরে হাঁটছি, ইচ্ছে করেই! সবাই ভীষণ অবাক! যে আমি কিনা সবচেয়ে দ্রুত সবজায়গায় পৌঁছে যাই, সেই কিনা এতো ধীর! সমস্যা কি? একজনের জিজ্ঞাসা? “হঠাৎ করেই পেশীতে টান পড়েছে!” আমার উত্তর, আসলে টানতো পড়েছে নয়নে, পরানে, মনে, আমার সমস্ত টান যে তার দু পায়ে! সেতো কেউ জানেনা? তাকে তো কেউ দেখেনি।
পায়ের দিকে আর কে তাকায়? আমি তাকাই, মেয়েদের পা-ই যে আমাকে সবচেয়ে বেশী টানে, নজর কাঁড়ে আর তারপরে নজর উপরে ওঠে! আমি সর্বাত্মক বিশ্লেষণ করে প্রমান পেয়েছি যার পা সুন্দর সে কখনই অসুন্দর নয়! এর ব্যাতিক্রম আজও ঘটেনি! তাই কখন কারো মুখ দেখে সুন্দর মনে হলেই, তাৎক্ষনিক আমি তার পা দুটি খুঁজি! এ আমার কেমন নেশা! কেমন ভালোলাগা? আমি নিজেই জানিনা!!
এভাবেই দুটো ঝর্নার জায়গায় একটি দেখতেই ৪ ঘণ্টা লাগালাম! এরপরে বাকিটা দেখে ফিরে আসতেই সন্ধ্যাদের উঁকিঝুঁকি! সবাই হতাশ, আমি খুশি! আবারো বেইমানী! আর মনে মনে গান গাইছি............
এরপরে বিদ্যুৎহীন আধো-আলো, আধো-অন্ধকারে তার আসা-যাওয়া আর আমার অবিরত মিরিন্ডা ফেলে দেয়া!
সেইরাতে...... মুরগী রান্না করার কথা ছিল আমাদেরই, মুল ভূমিকাটা আমারই রাখার কথাছিল, কারণ যতই পাহাড়ে যাইনা কেন, পুরোপুরি আনন্দ বা রুচি করে খুব কমই খেতে পারি, তবে, যে বেলাতে নিজেরা রান্না করি, সেই বেলাতে, বেশ উপভোগ করেই খাই! কিন্তু... কথাতো কতই থাকে... কজনই বা রাখে......?
আমি তেমন কিছুই করিনি শুধু মুখ ভরে, ভরে মিরিন্ডা ফেলার নেশাতেই মাতাল ছিলাম! (উল্লেখ্য যে খুব সামান্যই খেতে পেরেছি, এই ১৫০মিলিগ্রাম! হবে হয়তো!)
কিন্তু এরচেয়েও বেশী অবাক হয়েছি, নিজের কাছেই নিজে! যখন খেয়াল করলাম আমার খওয়া শেষ হয়েগেছে! আমি দুবার ভাত নিয়েছি! (যা এর আগে, ৭ বছরেও নেইনি!) থালার সমস্ত ভাত ও মুরগির মাংস শেষ করে ফেলেছি! শুধু তার পা দেখেই!
তার বাকী সৌন্দর্যর বর্ণনা......... থাক তা, শুধু আমারই থাক............!
আহ! চার পাশের “পাহাড়” আর “তার দু-খানি পা” মিলেমিশে একাকার...............
শেষে মনে মনে এই গান ধরলাম......
"হালকা হাওয়ার মতন......,
চাইছি এসো এখন......
করছে তোমায় দেখে.........
অল্প বেইমানী মন........."
“রাখবো তোমার পায়ে...... আমি, আমার নয়ন.........!!”
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:২৪