বুঝতে পারছিনা নোয়া মুভির দেখার পর কেমন লাগল তা কিভাবে লিখব। কারন এর প্রেক্ষাপটটি এপিক কেন্দ্রিক যার অনেক কিছুই আমার অজানা। তবে প্রেক্ষাপট যাই হোক মুভিটি মন ছুয়ে গিয়েছে আমার। তবে সেই মনের কিছু কথাই বলা যাক নোয়াকে নিয়ে।
মুভিটি একটু ধীর গতির তবে প্রতিটি বিষয় তার পূর্ববর্তী বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত খুব সুন্দরভাবে তাই বোর হওয়ার কোন প্রশ্নই আসেনা। ছবির শুরু মানবজাতির স্বর্গ থেকে বিতারন দিয়ে যারা পৃথিবীকে দিনে দিনে সংঘাতময় করে তুলেছে। নোয়ার তখন শৈশব। এই সংঘাত তার পিতার জীবন নিয়ে নেয় তারই সামনে। সে ছুটে পালিয়ে যায়, যেন জীবনের কঠিন বাস্তবতা থেকে দূরে যেতে চায়। জীবন তাকে মুক্তি দেয়না। নোয়া বড় হয়, তার সংসার হয় এবং তাদের নিয়েই সে এগিয়ে চলে। নোয়া একদিন সৃষ্টিকর্তার ইশারা পায়। পৃথিবী ধ্বংস হবে এবং তাকে বাঁচাতে হবে নিষ্পাপদের। সৃষ্টিকর্তার সাহায্য নিয়ে তার নৌকা বা আর্ক তৈরি শুরু হয়। একসময় শেষও হয়। নানা প্রজাতির জোড়া প্রানী তাতে আশ্রয় নিতে শুরু করে। কিন্তু সংঘাত চলতে থাকে আর নোয়ার কিছুু বিশ্বাসে তার প্রিয়জনরাই কষ্ট পেতে থাকে। একসময় মহাপ্লাবন আসে........................না, আর বলছিনা কারন এরপর অনেক কিছুই ঘটে যা আমি মুভি দেখার আগে ভাবতেও পারিনি তাই কিছু রহস্য থাকুক।
মুভির গ্রাফিক্স অসাধারন। ত্রিমাত্রিক বলে সবকিছুই উপলব্ধি করেছি। মহাপ্লাবনের শিকার মানুষের বাচাঁর আকুতি, ঝড়ের ভয়াবহ গর্জন সবকিছু যেন আমাকে নোয়ার নৌকার যাত্রী করে দিয়েছিল। কতবার যে চোখ বন্ধ করেছি কে জানে!
সৃষ্টিকর্তার প্রতিশোধ এত ভয়ানক হতে পারে! অবশ্যই পারে। যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন পরম মমতায় তার প্রতি অবাধ্যতার ফল স্বরূপ যে শাস্তি আসবে তার কোন ধারনা পাওয়া সম্ভব নয়। তবে তার অতি সামান্য আজ মনে হয় উপলব্ধি করলাম।
মুভিতে কোন এক মুহুর্তে নোহা স্রষ্টার সৃষ্টির পরিক্রমা বর্ননা করে যা শুরু হয় এক মহা বিষ্ফোরন দিয়ে। ধীরে ধিরে পৃথিবীর সৃষ্টি, প্রানের সৃষ্টি, মানবজাতির আগমন ও সহিংসতায় পৃথিবীর করুনতম পরিনতি যেন আমার চোখের সামনে দেখতে পাই এবং ভাবি খুব কি মন্দ হত যদি এই পৃথিবীতে সংঘাত না হত! কেই বা চায় ভয়াবহতা, ধ্বংসের সাক্ষী হতে!
তবে স্রষ্টা পরম দয়াময়। তার সৃষ্টিকে তিনি ভালবাসেন, তাই তাকে ক্ষমা করেন এবং নতুন ভাবে বাচাঁর পথ দেখান। কার তিনি মহানুভব, তিনি মহান! নোহা মুভির শেষটা এরকমই যেখানে ধ্বংসের ভয়াবহতার পরেই সৃষ্টির আনন্দ উপভোগ করেছি প্রানভরে।
স্রষ্টা আমাদেরকে ধ্বংস এবং সৃষ্টি, যুদ্ধ এবং শান্তি, প্রতিশোধ এবং ক্ষমা সবকিছুরই আস্বাদন করিয়েছেন। কিন্তু আমরা জীবনে কোনটিকে বেছে নিব সেটাই সবকিছু। স্রষ্টা যেমন সৃষ্টিতে অতুলনীয়, তেমনি ধ্বংসে ভয়ানক। আমরা যেন এটা না ভুলি।
সবশেষে এটাই বলব যে নোয়া মুভির থীম সঠিকভাবেই এসেছে মুভিটিতে। মুভিটি দেখলে আপনিও কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে যাবেন আর ভাববেন স্রষ্টা ও তার সৃষ্টি নিয়ে। ছবিটি দেখুন একবার, ভালো লাগবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৩২