দেখতে দেখতে ছুটি শেষ হয়ে যায় আমার। প্রবাসে ফিরতে হবে এবার। কলকাতা হয়ে দেরাদুন ফিরে যাওয়ার পথে কলকাতা ঘুরে দেখব এমনটাই পরিকল্পনা ছিল। পর্ব ২ কলকাতায় ফিরে যাওয়া ও কলকাতায় ঘুরে বেড়ানো নিয়ে। ছবির সংখ্যা বেশী হওয়ায় পর্বটিকে ২.১ এবং ২.২ এ ভাগ করতে হল। আজ ঘুরব কলকাতার পথে-ঘাটে, পরবর্তী পর্বে কলকাতার জলপথে। তো চলুন বেড়িয়ে পড়ি।
খুলনা থেকে আমি কলকাতার উদ্দ্যেশে রওয়ানা করি সকাল ৪.৩০ মিনিটে। যশের রোড ধরে এগিয়ে যাচ্ছি কিন্তু মন পড়ে আছে বাসায়। পথ চলতে যশোর রোডে দুপাশে থাকা গাছের সারি যা প্রায় বারাসাত পর্যন্ত বিস্তৃত তার ইতিহাস জানলাম। কালীগন্জের জমিদার কালীবাবু তার মায়ের আদেশে রাস্তার দুপাশে গাছ লাগিয়েছিলেন পথচারীদের ক্লান্তি দূর করতে।
সীমান্তে পৌছে দেখি এখনও ইমিগ্রেশন শুরু হয়নি। ৬.৩০ মিনিটে পতাকা উত্তোলন করা হল এবং শুরু হল ইমিগ্রেশন।
সকাল থেকেই প্রকৃতি কিছুটা অশান্ত ছিল। অশান্ত আমার মনও। কিন্তু জীবন এমনই। যাই হোক প্রিয়জনদের বিদায় জানিয়ে ইমিগ্রেশন শেষ করে ভারতে পা রাখলাম। ১০ মিনিটেই কাজ শেষ! কলকাতা যাওয়ার প্রথম বাস গ্রীনলাইনের যা ছাড়বে সকাল ৮টায়। টিকেট নিয়ে বাস ছাড়ার অপেক্ষায় রইলাম। সীমান্ত তখনও বেশ শান্ত। মানুষের আনাগোনা বাড়ছে ধীরে ধীরে।
বাস ঠিক সময়ে ছাড়ল। মন খারাপ থাকায় চুপটি করে ঘুমিয়ে গেলাম। মাঝে খাবারের বিরতি এবং আরারও ঘুম। দুপর বারোটায় মারকিউইস স্ট্রীটে বাস থামল। ট্রেন রাত ৮.৩০ মিনিটে। এরই মধ্যে কলকাতা ঘুরে দেখতে হবে। তাই দেরী না করে ট্যাক্সি নিয়ে সোজা হাওড়া রেল স্টেশনের পথ ধরলাম।
পথে চোখে পড়ল মুড়ির টিন। এমন বাস যে বাংলাদেশে নেই তা নয় কিন্তু এটি দেখতে সেই সত্তরের বাসের মত ছিল। ছোটবেলায় খুলনা শহরে এমন বাস চলত। অনেকদিন পর সেই বাস দেখে ভালোই লাগল।
সাদা পোশাকধারী কলকাতা পুলিশের দেখা পেলাম মাঝ রাস্তায়। সাদা পোশাকের পুলিশ শুধু কলকাতায়ই নয়, বিশাখাপট্টমেও দেখেছিলাম। তবে মুভিগুলোর কল্যানে সাদা পোশাকধারী পুলিশ বলতে আমরা কেন যেন কলকাতার পুলিশকেই বুঝি
ট্রাফিক জ্যাম পেরিয়ে, এ মোড়-ও মোড় ঘুরে ট্যাক্সি উঠে এল হাওড়া ব্রীজের উপর। ব্রীজে রংয়ের কাজ চলছে দেখলাম। তার মানে কলকাতা হয়ে আবার যখন বাংলাদেশ যাব তখন চকচকে হাওড়া ব্রীজের দেখা পাব।
স্টেশনে পৌছে দেরী না করে লকার রুমে ছুটলাম। ব্যাগ লকারে রেখে প্রি-পেইড ট্যাক্সিতে চেপে রওয়ানা করলাম কলেজ স্ট্রীটের দিকে। কফি হাউজ এবং কলেজ স্ট্রীট, এ দুটো ঘুরে দেখাই আমার উদ্দ্যেশ্য।
ট্যাক্সি থামল কফি হাউসের সামনে। মান্না দের কফি হাউজের সামনে আমি! কি সৌভাগ্য আমার। সবচাইতে প্রিয় বাংলা গানগুলোর একটির জন্ম যাকে ঘিরে সেখানে আজ আমি! খুবই আনন্দ হচ্ছিল আমার।
কফি হাউজে বসেই খাবারের মেনু হাতে তুলে নিলাম। আরি বাপস্! সবই তো পাওয়া যায় এখানে এবং দামও কম।
খাবারের অর্ডার দিয়ে চারিদিকে চোখ বুলালাম। নোটিশ আর বিল বোর্ড দেখে বুঝতে পারলাম এর গুরুত্ব এখানে কতটুকু!
খাবার চলে এল। গরমা-গরম মোগলাই পরোটা, মাটন কাটলেট এবং কফি সাথে ফ্রি আলুর দম। নিমিষের সব সাবাড় করে দিলাম। তবে কফিটা খেতে গিয়ে বোকামী করলাম। বুঝতে পারিনি যে চিনি দেওয়াই আছে, শুধু নেড়ে নিতে হবে। যার ফলে কাপের শেষে এসে বুঝলাম প্রথমে কেন কফিটা বিস্বাদ ছিল। তাতে কি আসে যায়? এ যে মান্না দের কফি হাউজ! এখানে সবই অমৃত।
মান্না দে ঠিকই বলেছিলেন। কি নেই এখানে? বন্ধুদের আড্ডা, প্রেমিক-প্রেমিকার খুনসুটি, মান-অভিমান, ভালবাসা, সিরিয়াস ধাঁচের রাজনৈতিক আলাপ, ব্যাবসায়িক গম্ভীরতা.........সব কিছু যেন মিলে মিশে একাকার কফি হাউজে। একতলা, দোতালা সবখানেই কফির কাপে জীবনের গল্প।
কফি হাউজকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে এলাম কলেজ স্ট্রীটে। মনে অন্যরকম একটা ভালো-লাগা কাজ করছিল। রাস্তায় ট্রাম দেখলাম খুব কাছ থেকে। নতুন, পুরোনো...দুই রকম ট্রামই নজরে এল। কলেজ স্ট্রীটের এমাথা-ওমাথা ট্রামে চেপে ঘুরলামও। কলকাতায় ঘুরব, ট্রামে উঠবনা? ধুর, সে হয় নাকি!
কফি হাউজ দেখা হল, ট্রামে চড়া হল এবার করেজ স্ট্রীট ঘুরে দেখার পালা। দুটো বিশ্ববিদ্যালয়, একটা মেডিকেল কলেজ.....কলেজ স্ট্রীটের নামের স্বার্থকতা বুঝতে পারলাম।
কলেজ স্ট্রীটে বইয়ের বিশাল সম্ভার। যেকোন বই ই এখানে পাওয়া যায়। আমি বরাবরই বই কিনতে ভালবাসি তাই কিছু বই কিনলাম যার মধ্যে একটি ছিল ইনফার্নোর বাংলা অনুবাদ এবং আরেকটি শীষেন্দুর সাদা বেড়াল কালে বেড়াল। ৩৬ ঘন্টার ট্রেন যাত্রায় বই হাতে থাকা আবশ্যক।
সময় দুপুর ২.৩০ মিনিট। কলকাতার পথে-ঘাটে অনেকতো ঘুরলাম। এবার ফিরে যেতে হবে। কারন বাকী সময়টা কলকাতার জল পথে ঘুরতে চাই। ট্যাক্সি নিয়ে ফিরে চললাম হাওড়া। ওখানে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে পড়ব জলপথে।
পর্ব ২.১ সমাপ্ত। ২.২ আমাদের নিয়ে যাবে হুগলী নদীর মাঝে। আমরা দেখব হাওড়া ব্রীজ এবং বিদ্যাসাগর সেতু একইসাথে। সেই সাথে নদীর এপার-ওপারের নানা কিছু।
আসছি খুব জলদি.......
পর্ব ১:
Click This Link