ছুটিতে দেশে বেড়াতে আসা- এমন কিছু আমার জীবনে এই প্রথম। তাই এই ভ্রমনটি আমার কাছে অনেক প্রিয় ছিল। এই ধারাবহিক আমার প্রিয় ভ্রমন নিয়েই। ৩টি পর্ব থাকছে এ ধারাবাহিকে। চলুন শুরু করি ভ্রমন পর্ব-১ দিয়ে।
ভ্রমনের শুরু ১২ই ফেব্রুয়ারী রাত ১০.১৫তে দেরাদুন রেল স্টেশন থেকে। ট্রেনের নাম উপাসনা এক্সপ্রেস যা প্রায় ১৬০০ কিমি পাড়ি দিয়ে মাত্র ২৯ ঘন্টায় আমাকে পৌছে দিবে কলকাতার হাওড়া রেল স্টেশনে। গত এক মাসে এই ট্রেন প্রায় প্রতিদিন দেরীতে ছাড়লেও আজ একদম সঠিক সময়ে দেরাদুন ছাড়ল।
ট্রেনে উঠেই বিছানা করে শুয়ে পড়লেও কিছুক্ষন পরেই এক পরিবারের অনুরোধে অন্য কোচে থাকা তাদের একটি বার্থের সাথে আমার বার্থ এক্সচেন্জ করতে হল। নতুন বার্থে সিফট হয়ে আবার বিছানা করে ঘুম দিলাম। ঘুম থেকে উঠলাম সেই সকালে। বাইরে তখর কুয়াশার শুভ্র চাদর যার ভেতর থেকে সূর্যের উকি-ঝুকি উপভোগ করলাম কিছুটা সময়।
ফ্রেশ হয়ে, নাস্তা করে জানালার পাশে বসে পড়লাম। ট্রেন লখ্নৌ শহরে পৌছে গেল। লখ্নৌ নবাবের শহর। তার রেল স্টেশনও তাই নবাবী ঢংয়ের। ভারতীয় রেলপথে ভ্রমনকালীন আমার দেখা সব রেল স্টেশনের থেকে এটা এক্কেবারেই ভিন্ন।
লখ্নৌ পার হতেই দেখা মিলল বিশাল রিয়েল এস্টেট প্রজেক্টের। মাইল জুড়ে এমনভাবে নগন নির্মান করা দেখতে ভালো লাগলেও গ্রামীন পরিবেশের উপর এর প্রভাব আমায় চিন্তায় ফেলল।
ট্রেন চলছে দ্রুতগতিতে। কোথাও কোন লেট তো নেই বরং আধা ঘন্টা এগিয়ে চলছে। ট্রেন যেন আজ আমার জন্যই ছুটছে। ফাঁকা স্টেশন, ছোট্ট রেল ব্রিজ সবকিছুকে পিছনে ফেলে ট্রেন এগিয়ে চলছে।
কলকাতার পথে এবারের ট্রেন ভ্রমনে অনেকগুলো নদী পার হয়েছি আমি। ছোট্ট শান্ত নদী, মাঝারী বহমান নদী এবং বিশাল অথচ চরে ঢাকা নদী......প্রতিটি নদীই আমাকে বাংলাদেশের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল।
দুপর গড়িয়ে বিকেল। ট্রেন চলছেই। গ্রামের মাঝ দিয়ে চলতে চলতে দেখলাম সেচের এক দারুন পদ্ধতি। প্রথমে দেয়াল ভাবলেও পরে জানলাম সেচের পানি একটি খামার পাড়ি দিয়ে দূরের খামারে নিতেই এমন পদ্ধতি।
সন্ধ্যা নামতে চলল। পাটনায় ট্রেন থামলে কোচের সব যাত্রী নেমে গেল। কলকাতার যাত্রী বলতে কোচ এস৫ এ শুধুই আমি। একাকী পাড়ি দিতে হবে বাকী পথ। ট্রেন আবার ছুটে চলল। সন্ধ্যা নামছে, সবাই ঘরে ফিরছে। ফিরছি আমিও।
রাত নেমেছে বাইরে। ছবি তোলা যদিও বৃথা তবুও আকাশের চাঁদ-মেঘের লুকোচুরি দেখে ক্যামেরার সর্বোচ্চ ব্যবহার করলাম।
রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম থেকে উঠলাম রাত ২.৪৫ নাগাদ। ফ্রেশ হতে হতেই একদম সিডিউল টাইম ভোর ৩.১৫ মিনিটে ট্রেন হাওড়ায়। ট্রেন থেকে নেমে ওয়েটিং রুমের পথ ধরলাম। ট্যাব, ফোন, ক্যামেরা রিচার্জ করে, নাস্তা করে অবশেষে রওয়ানা করলাম বেনাপোলগামী বাসের সন্ধানে।
প্রি-পেইড ট্যাক্সিতে ১৫০ রূপী দিয়ে ভোর ৫টায় পৌছালাম মারকিউইস স্ট্রীটে। যেতে যেতে স্ট্রীট লাইটের আলোয় কলকাতাকে দেখলাম।
মারকিউইস স্ট্রীটে পৌছে দেখি ভোর ৫.৩০ এ ছাড়বে সোহাগ পরিবহনের বাস। ২৫০ রূপীতে বর্ডার পর্যন্ত পৌছাবার টিকেট কিনলাম। সোহাগ পরিবহনের বাসগুলো ভালো তবে সিটগুলো কম্প্যাক্ট। তবে সকালের নাস্তা কমপ্লিমেন্টারী থাকে টিকেটে।
বাস ঠিক সময়ে ছাড়ল। এ.সির কারনে ঝাপসা হয়ে যাওয়া জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে কুয়াশা ভেবে ঘুমিয়ে পড়লাম। এই বোকামীর কারনেই বাইরের কিছু দেখা হলনা। সবাই নিজের জানালা মুছে নিলেও তাকে কুয়াশা ভেবে ঘুমিয়ে পড়া আমার ঘুম ভাঙ্গল নাস্তা পেয়ে। নাস্তা শেষ করতেই বাস বর্ডারে পৌছে গেল।
বাস থেকে নেমে ইমিগ্রেশন, চেকিং শেষ করে বাংলাদেশে পা রাখতে সময় লাগল মাত্র ২০ মিনিট। বাংলাদেশ কাস্টমসে যখন দেখল আমি স্কলারশিপ নিয়ে ভারতে গবেষনা করছি তখন ব্যাগতো খুললইনা বরং বলল এরা দেশের গর্ব, দেশের সম্মান, এদের জন্য ডিটেক্টরই যথেষ্ট, ব্যাগ খুলতে হবেনা। ভালো লাগল তাদের এই আস্থায়। অবশেষে ছুটি শুরু হল
বাংলাদেশে আমার প্রবেশ দিয়েই পর্ব-১।সমাপ্ত। পর্ব-২য়ে থাকবে ছুটি শেষে বেনাপোল হয়ে কলকাতা ফিরে আসা এবং ৬ ঘন্টায় কলকাতা শহর ঘুরে দেখার বর্ননা ও ছবি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:৫৬