স্যরি মা এবারের মা দিবসে তোমার কাছে আসতে পারলাম না।শহরের যান্ত্রিকতায় এতোটাই যান্ত্রিক হয়ে গেছি যে সময় করে উঠতে পারলাম না।গত নয়টি বছর ধরে প্রতি মা দিবসে তোমার কাছে আসি,তোমার পাশে শুয়ে তোমায় জড়িয়ে ধরি।তোমার বুকে মাথা রাখি।তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি ঠিক মনে রাখতে পারি না।প্রতিবেশীর ডাকে ঘুম ভাঙ্গে।বাবা মারা যাবার পর মা তুমি অনেক কষ্টে আমাকে বড় করেছো।কখনো বাবার অভাব বুঝতে দাও নি।বাবার অভাব কি আমি জানতাম না।তুমি সারা রাত কাপড় সেলাই করতে,আর দিনে মানুষের বাসায় কাজ করতে।তুমি যখন অনেক রাতেও কাপড় সেলাই করতে আমি হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে তোমায় বলতাম,মা এবার একটু ঘুমাও।তুমি বলতে বাবা ঘুম আসে নারে,তুই ঘুম যা।মা তুমি যখন মাঝ রাতে হঠাৎ হঠাৎ ডুকরে ডুকরে কাদতে,আমি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম।তোমার চোখের পানি সইতে পারতাম না তাই আমিও কাদতাম নিরবে যেন তুমি বুঝতে না পারো।তুমি আমায় বলতে যখন পড়াশুনা করে বড় হবো,বড় চাকুরি করবো তখন আর আমাদের কষ্ট থাকবে না।সব দুঃখ শেষ হয়ে যাবে।তোমার জন্য একটা বড় ঘর বানাবো,একটা লাল টুকটুকে বউ আনবো,তুমি তোমার নাত নাতনীর সাথে হৈ হোল্লর করে দিন পার করবে।তোমার স্বপ্ন পূরন করার জন্য উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকার পথে রওয়ানা দিলাম।তুমি আমায় বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমো দিয়ে বললে বাবা সাবধানে যেও।ভালো করে পড়াশুনা করো।চিন্তা করো না আমি ভালো থাকবো।তারপর যত টুকু চোখ যায় তুমি চেয়ে থাকতে।যখন ঢাকা থেকে তোমার কাছে যেতাম,তুমি দৌড়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে কপালে চুমো দিতে আর সবাইকে বলতে এই তোরা কই?দেখ আমার মানিক এসেছে,আমার বুকের ধন এসেছে,আমার রতন আমার বুকে এসেছে।এমনি করে দিন গুলো কেটে যাচ্ছিলো।পড়াশুনা শেষ করে একটা বড় চাকুরি নিলাম।চাকুরি নেবার পর মাকে বললাম মা এবার ঢাকায় চলে আসো,গ্রামে আর কত দিন থাকবে?তুমি বললা বাবা,এটা তোর বাবার ভিটা,এই ভিটা ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না।তুমি গ্রামেই রয়ে গেলে।যেদিন আমি প্রথম বেতনের টাকা পেলাম উড়ে চলে গেলাম তোমার কাছে।তোমার হাতে সমস্ত টাকা তুলে দিলাম।টাকাগুলো হাতে নিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলে,আর আল্লাহর কাছে প্রান খুলে দোয়া করলে।সেই টাকা দিয়ে তুমি গরিব মানুষদের খাওয়ালে।মানুষ কে বলতে লাগলে আমার সোনার মানিক বড় হয়ে গেছে,ও বড় চাকুরি করে।তারপর আবার তোমার চোখে জ্বলে ভরে যায়।আর বলতে আজ তোর বাবা বেচে থাককলে আমার চেয়ে বেশি খুশি হতো।তোমার কথা মতো বাড়ির কাজ শুরু করলাম।কাজ শেষ হয়ে গেল।এদিকে কাজেরর চাপে এতো ব্যস্ত হয়ে গেলাম যে তোমার কাছে যেতেই পারছি না।তুমি বললে আমাকে নিয়ে একসাথে নতুন ঘরে যাবো।তাই তুমি নতুন ঘরে গেলে না।অবশেষে একদিন সময় পেলাম।রাতে মাকে বললাম মা আমি কাল আসছি,কাল তুমি আর আমি নতুন ঘরে উঠবো।মা তুমি আনন্দে আত্নহারা হয়ে গেলে।আমি রাত পোহাবার অপেক্ষায় রইলাম।খুব ভোরেই আমি মায়ের উদ্দ্যেশে রওয়ানা দিলাম।মাঝ পথে আসতেই একটা ফোন এলো।রিসিভ করতেই ওপাশে শুনতে পেলাম কান্না।আমি কান্নার কারন জানতে চাইলে ওপাশ থেকে বলল খোকা তোর মা আর নেই।না ফেরার দেশে চলে গেছে।মারা গেছে তোর মা।একথা শোনার পর যেন আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো।আমি বললাম কি সব আবল তাবল কথা বলছেন।মায়ের সাথে আমার কথা হয়েছে।মা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।আজ আমরা নতুন ঘরে উঠবো।মাকে সাদা কাপড় পড়িয়ে সবাই অপেক্ষা করছে আমার জন্য।আমি ধীর পায়ে মায়ের কাছে গিয়ে ডাকলাম মা তোমার মানিক এসেছে।ওঠো আমরা নতুন ঘরে যাবো আজ।মা মাগো আমার কপালে চুমো দিবা না?চেয়ে দেখ মা আমি এসেছি।তুমি আমার সাথে আর অভিমান করে থাকতে পারো না।মা তোমার স্বপ্ন পূরন হলো না।আমি পারলাম না মা তোমার স্বপ্ন পূরন করতে।তুমি তো বলেছিলে তুমি আর আমি একসাথে নতুন ঘরে যাবো।তবে কেন এখন তোমার বানানো নতুন ঘরে গেলে।আমার বানানো নতুন ঘরে আমাকে নিয়ে কে যাবে?আমি একা কেমন করে থাকবো ঐ ঘরে?তুমিতো জানো তোমার খোকা ভয় পায়।জানো মা আজও সেই ঘর খালি পড়ে আছে।আমি যাইনি,যেতে পারিনি তোমায় ছাড়া।আজ আমার সব আছে,তোমার নাত নাতনি ও আছে।শুধু নেই তুমি মা।মা আমি ও ঘুমের মাঝে দেখতে পাই তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরেছো,আমার কপালে চুমো দিচ্ছ।সবাইকে ডেকে বলছো এই তোরা কে কোথায় আসিস,দেখো আমার বুকের ধন এসেছে।আমি আজও যখন মায়ের কাছে যাই,মায়ের কবরের পাশে শুয়ে মায়ের বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে বলি মা আমায় একটু আদর করো।আমাকে একটু জড়িয়ে ধরো মা।আমার বুক টা শূন্য শূন্য লাগছে মা।মা দেখ নতুন ঘর,তোমার নাত নাতনি সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
মা তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো মা।আকাশের তারা হয়ে সারাটি জীবন আমায় আলোর পথ দেখিও।আজ এই মা দিবসে আবার বলছি,মা তোমাকে অনেক ভালোবাসি।বড় ভালোবাসি মা।।
সাইফুল আরিফিন কাব্য।