somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“উড়তা পাঞ্জাব” ফিল্ম রিভিউ

২৪ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“উড়তা পাঞ্জাব”। গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছুই পাঞ্জাবকে নিয়ে হলেও এটা এক অর্থে সর্বত্রই যুব সমাজের এক ন্যক্কারজনক চেহারা ফুটিয়ে তুলেছে। আমি শুধু ভারতকে নয় বাংলাদেশকেও এই তালিকাতে রাখতে পারি। পাকিস্তান থেকে আসা একটা হিরোইনের প্যাকেট ঘটনাচক্রে হাতে পেয়ে যায় এক বিহারি মেয়ে মারি ওরফে আলিয়া ভাট। সবসময় যে নিজেকে একজন হকি খেলোয়াড় হিসেবে ভাবতে ভালবাসত সেই মেয়েটাই নিজের সব সমস্যার সমাধান করার নিমিত্তে সেই প্যাকেটটা বিক্রি করে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। অন্যায় কাজ হলেও ব্যাপারটা তার জীবনকে অসাধারণ রূপ দিতে পারবে বলে সে বিশ্বাস করতে শুরু করে। যোগাযোগ শুরু করে একদম প্রাথমিক পর্যায়ের মাদকসেবীদের মাধ্যমে, তাদেরকে কমিশনের কথা বললেও ঘুরে ফিরে সে চলে যায় অন্য কারো কাছে… প্যাকেট নিয়ে রওনা হয় শহরের উদ্দেশ্যে। জীবন এখন শুধুই উপভোগের।

টমি একজন বিদেশ ফেরত রকস্টার গায়ক। এই চরিত্রে শাহিদ কাপুর একজন পাগলাটের ভূমিকা পালন করেছেন। ড্রাগসের নেশাতে সে নিজেকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে মনে উঠিয়ে দেয়। একের পর এক গণ্ডগোল লাগিয়ে জেল হাজতেও যেতে হয়। নিজের দলের লোককেও গুলি করে বসার মতো কাণ্ডটাও ছোট হয়ে দাঁড়ায় যখন সে আরও ভয়ঙ্কর কিছু করে বসে দর্শকদের সাথে। সেটা জানতে অবশ্য আপনাকে চলচ্চিত্রটি দেখতে হবে। টমি একদিন আবিষ্কার করে এই ড্রাগসের নেশাটাই সবকিছু ধ্বংসের কারণ। সে নিজেকে এবং নিজের অনুসারীদের ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের শোধরানোর উপায় কি ?

পাঞ্জাবের এক পুলিশ সরতাজ সিং বা দিলজিৎ একজন সাধারণ মানুষ। কিছু টাকা পয়সা পেলে ড্রাগস ভর্তি গাড়ি ছেড়ে দিতে তার কোন আপত্তি নেই। মানুষটার জীবন একদিন উলটপালট হয়ে যায় যখন সে নিজের ভাইকে ড্রাগসের কারণে মৃত্যুমুখে দেখে। সিদ্ধান্ত নেয় সবকিছুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার। একা সে নিজে সিস্টেমটাকে কিভাবে বদলাবে সেটা তখনো জানে না। মজার ব্যাপার এই চলচ্চিত্রের জন্য সরতাজ সিং চরিত্রে প্রথমে সাইন করেছিলেন অভিষেক বচ্চন, যদিও পরবর্তীতে তিনি অভিনয় করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এছাড়া ইমরান হাশমি সহ আরও অনেকের সাথেই পরিচালক কথা বলেছিলেন।

প্রীত সাহানির চরিত্রে ছিলেন কারিনা কাপুর। একজন ডাক্তার যিনি ড্রাগসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছেন। ঘরে ঘরে এব্যাপারে সতর্ক করার পাশাপাশি নিজেও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র চালান। ঘটনাচক্রে সরতাজ সিং এর ভাই সেখানেই ভর্তি হন। সেখানেই তাদের পরিচয় হয় এবং দুইজন একসাথে হানা দেয় ড্রাগস ব্যবসায়ীদের আস্তানায়। সেসময় সেখানে কারো উপস্থিত না থাকার কথা থাকলেও হুট করে চলে আসে সবাই। নিজেদের কিভাবে রক্ষা করবে তারা ?
হিরোইন বেচতে গিয়ে মারি ধরা পড়ে সেই মাদক ব্যবসায়ীদের হাতেই। তাকে বন্দি করা হয় বদ্ধ চিলেকোঠাতে। দিনের পর দিন ধর্ষিত হতে হতে সে তার জীবনের সবটুকু আনন্দ হারিয়ে ফেলে। জীবনের প্রতি ঘেন্না ধরে যাওয়া চোখের সামনে শুধু ভেসে থাকে একটা “গো গোয়া” বিলবোর্ড। প্রথম সুযোগেই সেখান থেকে সটকে পড়ে সে। কিন্তু যাবে কোথায় ? এদিকে পিছু লেগেছে সবাই। দৌড় শুরু করলো মারি।

এদিকে আবারো টমির বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছে গ্রেফতারী পরোয়ানা এবং পিছনে লেগেছে ক্ষিপ্ত জনতা। জীবন হাতে নিয়ে পালাচ্ছে সে। নিজের লোকেরাও তাকে ধিক্কার জানাতে শুরু করে। হঠাৎ করেই সামনে হাজির হয় মারি।





চারটা ভিন্ন ভিন্ন গল্পকে একসাথে এক যায়গায় আনার কৃতিত্ব অবশ্যই নির্মাতা অভিষেক চৌবে এবং গল্পকার সুদীপ শর্মার। এটা সত্যি একটা ভিন্ন ধরণের গল্প ভারতের চলচ্চিত্রের জন্য। এবছর এপ্রিলে ট্রেইলার মুক্তির পর থেকেই তীব্র আগ্রহের মুখে থাকা চলচ্চিত্রটির প্রতি সদয় ছিলেন না সেন্সর বোর্ড। তারা ৮৯ টি কাট করতে বলে এবং পুরো চলচ্চিত্র থেকে ৯৪ বার আসা পাঞ্জাব শব্দটিকে নিষিদ্ধ করার দাবী জানায়। এবং সেখানেই শেষ না তারা কিছু দৃশ্য পুরোপুরি নতুনভাবে দেখানোর জন্য নির্দেশ দেয়, যেটা নিশ্চিতভাবেই চলচ্চিত্রটিকে একেবারে বদলে দিত। রাজনীতিবিদরাও কাদা ছোড়াছুঁড়ি শুরু করেন নিজেদের মধ্যে। প্রযোজক অনুরাগ কশ্যপ এব্যাপারে তাদের বিরত থাকার অনুরোধ জানান। চুপ করে ছিল না বলিউড সমাজ। তারাই এর প্রতিবাদে সরব হয়ে উঠে এবং প্রচুর তর্ক বিতর্কের শেষে নির্মাতারাই শেষ হাসি হাসেন। তাদেরকে তখন মাত্র একটি দৃশ্য বাতিল করতে হয়েছে।

সমস্যাটার সমাধান সেখানেই হতে পারতো কিন্তু যখন সেন্সরবোর্ডে জমা দেওয়া “উড়তা পাঞ্জাব” এর কপি অনলাইনে প্রকাশিত হয়ে পড়ে তখন রীতিমত প্রযোজনা সংস্থার মাথায় বিনা মেঘে বজ্রপাত, কেননা এখনো সিনেমা হলেই এটা মুক্তি পায়নি।

অবশেষে একইসাথে এটা ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, পাকিস্তান এবং আমেরিকাতে মুক্তি পায় “উড়তা পাঞ্জাব”। ৪৫ কোটি রুপি ব্যয় করে নির্মিত চলচ্চিত্রটির প্রথম দিনেই ভারতে আয় করে ১০.০৫ কোটি রুপি।

এই চলচ্চিত্রের টেকনিক্যাল ইস্যুতে সবচেয়ে বড় দিক অভিনেতা নির্বাচন। আমার মনে হয়েছে সবাই যার যার যায়গা থেকে সর্বোচ্চটা দিতে পেরেছে। বিহারী মেয়ে চরিত্রে আলিয়া ভাটকে দেখে আমার চোয়াল হাঁ হয়ে গেছিল। ঠিক তেমনি রকস্টার শাহিদ কাপুর তো একাই পুরো চলচ্চিত্র দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। বাকিরা যার যার যায়গায় ছিলেন অসাধারণ। কোন বলিউডি গ্ল্যামারাস মেকয়াপ বা আইটেম সং অথবা প্রেম ভালবাসার গান ছাড়াও যে চলচ্চিত্র হিট হতে পারে তার উজ্জ্বল উদাহরণ “উড়তা পাঞ্জাব”।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×