বলটা ছিলো ১৩০ কিলোমিটারের চেয়ে সামান্য বেশি গতির। অফস্ট্যাম্প থেকে বেশ খানিকটা বাইরে এবং শর্ট। আপাত দৃষ্টিতে সাদামাটা একটা বলই ছুড়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান।
স্ট্রাইকে থাকা ডিন এলগার অন্য যে কোনো সময় এই বলটা স্বাচ্ছন্দে পুল করে দিতে পারবেন নিশ্চিত। কিন্তু আজ পারলেন না। প্রথমে চাইলেন ছেড়ে দিতে, পরে চালিয়ে দিলেন ব্যাট। তার মনের দোটানা মূর্ত হয়ে উঠলো ব্যাট ছুঁয়ে চলে যাওয়া বলির গতিতে। মিডউইকেটে ক্যাচটা লুফে নিতে তেমন কোনো কষ্টই হলো না মুমিনুল হকের। ইতিহাসের দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৯৯ রানে আউট হলেন এলগার।
মাত্র এক রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি মিস করেছেন এমন ব্যাটসম্যানের সংখ্যা আসলে সব মিলিয়ে ১২ জন। তবে দুজন, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার এবং কুমার সাঙ্গাকারা ১৯৯ রান করে নটআউট ছিলেন। এলগারসহ বাকি দশজন হয়ে গেছেন আউট। পুড়েছেন সীমাহীন যন্ত্রণায়।
গতকাল এলগারের ভুল ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে ৯৭ রানে আউট হন অ্যাইডেন মার্করাম। টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি মিস করার তালিকায় যোগ হয়ে যায় তার নাম। আজ এলগার নিজেই পুড়েছেন যন্ত্রণায়; নিজেরই ভুলে। তার ভুলটা আগুন জ্বালিয়ে গেছে মার্করামের মনেও।
মুমিনুল যখন ক্যাচটা ধরে এলগারের বিদায় নিশ্চিত করে দিয়েছেন, ঠিক তখনই টিভি ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছিলো মার্করামকে—বন্ধু এলগারের ডাবল সেঞ্চুরি মিসের কষ্টে তার দুই হাত তখন মাথায়।
১৯৯ রানে গিয়েও যে কেউ ডাবল সেঞ্চুরি মিস করতে পারেন, তা প্রথম ‘প্রমাণ’ করেন মুদাসসর নজর। পাকিস্তানের এই ব্যাটসম্যান ১৯৮৪ সালে ভারতের বিপক্ষে ফয়সালাবাদে এই ‘স্বাদ’ নেন। পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানকে দেয়া এই স্বাদ ভারত ফিরে পায় আজহারউদ্দিনের মাধ্যমে। ১৯৮৬ সালে কানপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৯৯ রানে আউট হন আজহার। মুদাসসর তার ক্যারিয়ারে একটি ডাবল সেঞ্চুরি পেলেও আজহার কখনো ১৯৯ রানকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি।
মুদাসসর নজর আর আজহার উদ্দিনের দেখানো পথে পরে হেঁটেছেন ম্যাথু ইলিয়ট (অস্ট্রেলিয়া), সনাথ জয়সুরিয়া (শ্রীলঙ্কা), স্টিভ ওয়াহ (অস্ট্রেলিয়া), ইউনিস খান (পাকিস্তান), ইয়ান বেল (ইংল্যান্ড), স্টিভ স্মিথ (অস্ট্রেলিয়া), লোকেশ রাহুল (ভারত) ও ডিন এলগার। এদের মধ্যে ম্যাথু ইলিয়টের ক্যারিয়ার সেরাই ছিলো ১৯৯। এই রানকে তিনি ছাড়িয়ে যেতে পারেননি। এই রানকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি লোকেশ রাহুলও। তবে এখনো তরুণ রাহুলের সামনে নিশ্চয় সুযোগ আছে। সুযোগ থাকছে এলগারের সামনেও।
১৯৯ রানে অপরাজিত থাকা ফ্লাওয়ার ও সাঙ্গাকারা, দুজনই ডাবল সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন তাদের ক্যারিয়ারে। ফ্লাওয়ার তার ক্যারিয়ারের একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরিটি পান ওই ১৯৯ রানে অপরাজিত থাকার কষ্টের আগেই। আর সাঙ্গাকারা তো ২০০ ছাড়িয়ে গেছেন মোট ১০বার। ১৯৯ রানের দুঃখটা হয়তো ক্যারিয়ার শেষে মনেই নেই!
এ তো গেলো ১৯৯-এর দুঃখের কথা। ১৯০-এর ঘরে গিয়েও যারা ডাবল সেঞ্চুরি মিস করেছেন, তাদের ছোট একটা ইতিহাস জানা যাক! ১৯৯ যারা করেছেন, তাদের বাদে ১৯০-এর ঘরে বিভিন্নি রানে আউট হওয়া মোট ব্যাটসম্যনের সংখ্যা ৬২ জন! নটআউট ছিলেন মোট ছয় জন। দুঃখটা নিশ্চয় তাদেরও কম নয়!
পুনশ্চ: আচ্ছা, মিডউইকেটে ক্যাচটা ধরার সময় কি মনটা একটু কেমন কেমন করেছে মুমিনুল হকের? করলেও করে থাকতে পারে; তিনি নিজেও তো ব্যাটসম্যান!
মূল লেখাটা এখানে- টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার।