somewhere in... blog

চার মাস্তান

১৬ ই মে, ২০১০ রাত ১২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের এ পাড়া আর ও পাড়া মিলে মোট চার জন আছেন, যাদের দেখলে ভয় না পেয়ে উপায় থাকে না। এই চারজনের একজনকে আবার হিরো না বলে গতি নেই। তার নাম তামজীদ। চেহারাটা হিরোদের চেয়ে মন্দ নয়, তবে চুলগুলো ফালতু এটা বলতেই হবে। ফালতু চুলের জন্য তার প্রেমিকা তাকে তিনবার ত্যাগ করেছিল। তবু চুল তো বাদ দেয়া যায় না! ছোট ও করা যায় না, লোকে আর ভয় যদি না পায়?
একটা মজার ব্যাপার আছে, এরা চারজনে যেখানেই যাবে তো একসাথে না গিয়ে আলাদা কখনোই যাবে না। এ নিয়ে তামজীদের একটা মন্তব্য আছে, “একা আসবা একা যাবা তো তুমি তো নিয়মের বাইরে গেলে না। আমরা তো নিয়ম মানতে পারিনা। অনিয়ম করে অভ্যাস যে!” সমাজে আরো যারা মাস্তানী করে তারা যে নিয়মে মাস্তানি করে এরা সে নিয়মও মানে না। তবু এরা মাস্তান। এলাকার মাস্তান। চার জনের গ্রুপ। থাকে সর্বদা একসাথেই। বাকি তিনজনের নাম মিনার, রবিন ও সগির। পাড়া মাতানো স্বভাব চারজনের-ই। কোথাও বিয়ে লেগেছে? চারজনেই হাজির হবে। বাজনা বাজানোর লোক আর লাগবেনা, এরাই যথেষ্ট। কথা হচ্ছিল এই চারজনের ব্যপারে।
সেদিন হিরোর মনে কি আসলো কে জানে, তমিজউদ্দিনের মেয়ে অরুনাকে দেখে চোখমুখ স্থির করে দাঁড়িয়ে গেলো। অরুনা ভয় পেয়ে গেলো। এই ভয় পাওয়াটা কিন্তু স্বাভাবিক নয়, অরুনাও জানে। তবু কি আর করা, হিরোকে তো কিছু একটা বলতে হবে?
অরুনা কাছে আসতেই হিরো বলে বসল, তোমাকে ডিস্টার্ব করতে চাইনি, তবু দেখ, আমি আসলে আর কোন দিন মানুষ হব না কি বলো, হা হা হা, হা হা হা।
অরুনা আরো ভয় পেল, এই শালা বলে কি? বিয়ে টিয়ে করবে নাকি, আল্লাহ রক্ষা করো!
অরুনা চুপ করে আছে দেখে হিরো আবারও বলল, তোমাকে দারুন লাগছে আজ, আমার কি মনে হচ্ছে জানো?
অরুনা বলল, কি মনে হচ্ছে?
মনে হচ্ছে তুমি যদি রাজি থাকতে তবে আজ ঠিক এক্ষুনি আমি তোমাকে বিয়ে করে আমার আস্তানায় নিয়ে যেতাম। হ্যাঁ তাই করতাম।
এবার মেয়ের মাথা খারাপ হবার পালা। এই পাগলা বলে কি? আরে আমি কি এই পাগলার জন্য আমার জীবন গড়ছি? পাগলের হাতে পড়ার চেয়ে মরা কি অনেক ভাল নয়? অরুনা ঠান্ডা গলায় বলল, আমি এখন যাই ভাইজান, আপনি বড় বেশি বাজে বকেন আজকাল। আপনার জন্য কিছু করতে পারলে আমি খুশি হতাম, কিন্তু ভাইজান এখন যে কিছু করতে পারছি না?
আমার জন্য কিচ্ছু করা লাগবে না, শুধু আমার সাথে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাও।
অরুনা যেতে যেতে, তা তো পারলাম না ভাইজান।


এই হলো হিরোর নতুন কর্ম-চিন্তার শুরু। হিরো ভাবে এক হিরোর দলে করে আরেক। হিরোর ভাবনা অরুনাকে বিয়ে করে, ভাল সংসার করে, জীবন টা কাটায়। হিরোর বাকি বাহিনি ভাবে, হিরোর আবার মেয়ে দরকার, তাই নতুন এই অফার! “নো প্রবলেম ওস্তাদ। আমাদের ওপর ভরসা রাখুন, সব ok করে দিবো। আপনি চোখ বন্ধ করা থেকে চোখ খুলে যখন তাকাবেন তখন-ই দেখবেন অরুনা হাজির”।
হিরোর চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। বলল, “তোরা কি সত্যি বলচিস?”
“মিথ্যা বলে লাভটা কি ওস্তাদ?”
হ্যাঁ, তাই তো? কি লাভ কি লাভ?
এই হল শুরু অরুনার পথ আগলানো। চার বাহিনীকে দেখতে দেখতে ভয় ব্যাপারটা কেটে গেলো অরুনা নামের মেয়েটির। সে তো রোজ আসে এই পথে, রোজ রোজ ওরাও আসে দেখা করতে সেই মেয়ের সাথে। পাঁচজনের জীবনের একটা ডেইলি রুটিনে দাঁড়িয়ে গেল ব্যাপারটি। প্রতিদিন একই কথা একই উত্তর।
সগির বলবে, অরুদি আমাকে মাপ কর, তোমাকে আমাদের হিরোর যে খুব খুব বেশি ভালো লাগে? কি করি বলতো?
অরুনার উত্তর, আমি কি বলব, আমি কি পুরুষ যে ইচ্ছে করলেই সব করতে পারবো? আমার তো একটাই জীবন নাকি সগির? এই জীবন তো আমি গুন্ডা মানুষের হাতে বিলিয়ে দিতে পারিনা!
মিনার আর রবিন এগিয়ে আসেনা কখনো। ওরা দাঁড়িয়ে থাকে হিরোর সাথে। হিরো কথা বলে না। কাজ করে। রবিন আর মিনার সগিরকেই কাজটা দিলো। সগিরের আবার মেয়ে পটানো স্বভাব ভাল-ই জানা আছে। সে তাই শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ যে কঠিন একটা পরীক্ষা গো, এতে কি আর সফল হওয়া যায়? অরুনা হলো বুদ্ধিমতি মেয়ে। ওর সাথে পেরে ওঠা এত সহজ না। ওদিকে হিরোকে না বলাও যাবে না। হিরোর মন খারাপ হলে দল থেকে চলে যাবে। তখন তাদের তিন জনের কি হবে? তারাতো হিরো ছাড়া অচল। সগির ভাবতে থাকে, কি করবে কি করবে? কিন্তু মাথা যে খালি খালি লাগছে? তবু যেন আশার আলো ফুটে বের হয়ে এলো স্বপ্ন, সগিরের চোখ আরো উজ্বল হল। সে ঠান্ডা মাথায় চলে এলো হিরোর পাশে। ফিশফিশ করে বলল, ওস্তাদ, পকেটের অস্ত্র বের করে হাতে নাও।
হিরো বলল, মাথা খারাপ, অরুনার সাথে মাস্তানি? আমি এটা পারবো না রে সগির।
মাস্তানি না ওস্তাদ, জান দিবো তবু হারবো না সেই প্রস্তাব আমি তাকে দিতে চাই।
কাকে?
অরুনাকে।
তুমি কি রাজি?
হিরো বেশ কিছুক্ষন ভাবল। তারপর আস্তে করে বলল, চল, আজ্ আমরা তাই করি।
মিনার আর রবিন এক কথায় রাজি হয়ে গেলো। পরাজয় মানবো না তবু, মন যদি না পাই জান দিয়ে কি হবে? হিরোকে ডিজলাইক করছে, তবে যে আমাদেরও সেই একই অবস্থা! বাঁচা আর মরা নিয়ে এ কেমন পাগলামিতে জড়ানো?
পথ আবারো আগলে ধরল চারজন। টার্গেট অরুনা। অরুনা স্থির চোখে তাকিয়ে দেখলো, এই চারজন আজ দারুন উৎসাহী, যে কোন খারাপ কাজ করে ফেলতে পারে। তাই সে কি বলবে বুঝতে পারলো না। হা করে তাকিয়ে থাকল। চারজনের বাহিনীতে সবার চোখ জ্বলজ্বল করছিলো। যেন দ্বপ করে জ্বলে উঠবে এখন-ই।
সগির বলল, দিদি, কথা দাও । তুমি যদি আজ ফিরিয়ে দাও তবে আমরা এই জায়গা থেকে কেউ জীবিত ফিরবো না। লাশ হয়ে ফিরব। এই দেখো, বলেই চার জনে ছুরি বের করে যার যার বুকের কাছে ধরল।
অরুনা এবার এতো ভয় পেলো যে এদের দেখলে মানুষ কোন দিন ও এতো ভয় পায় নি। ওর বুকের স্পন্দন গেলো মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে। সে কি বলবে, এই দৃশ্য দেখে হজম করার ক্ষমতা কি তার আছে?
মানুষ কিভাবে এমন কাজও করতে পারে? তার মাথায় আসে না। একটা মেয়ের জন্যে জীবন দান? তাও আবার চারজনে-ই। এরাই তো ভালোবাসা পাবার হকদ্বার। অথচ এরা হচ্ছে সবচে’ বেশি বঞ্চিত। সমাজ কেমন মুল্যায়ন করে আমাদের? মন বুঝে কিছু কি করে? না কি সমাজ বুঝতেই চায়না তার অংগ এবং অংশকে?

অরুনার মাথায় বুদ্ধি আসে, সে বলে বসল, ছি ছি, একি ধ্বংশাত্মক কথা? একটি মেয়ের জন্য চারজন মানুষ মরবে? তার চেয়ে একজন মেয়ে মরাই ভালো, জগতের চারটি জীব তো বাঁচলো? আপানারা কি বলেন?
না, আমরা তোমাকে মরতে দিতে পারি না, তোমার কোন দোষ নেই। আমরাই মরবো, যদি তুমি হিরোকে বিয়ে না করো।
হিরোকে তো বিয়ে করা যাবে না , আমি বলেছিলাম। আমাকে আপনারা মেরে ফেলুন। আমি মরে যেতে চাই। তবু বিয়ে করতে চাই না, হিরোকে না। অরুনা কান্না শুরু করলো।
হিরো , তার হাতের ছুরি নিয়ে বুকের কাছে ঠেকাল, আস্তে করে বলল, সগির, রবিন, মিনার, ভাই আমার । তোরা মরতে যাস না, আমার জন্য তোরা মরবি এটা কেমন রে, আমি মরে যাবো, তোরা দেখিস সব কিছু যেন ঠিক ঠাক চলে।
অরুনার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। সে চোখের বিন্দু বিন্দু জ্বলের কারনে সামনের দিকটা ভাল করে দেখতে পারছিল না।
সগির বলল, ওস্তাদ আমি বেঁচে আর কি হবে, তোমার সাথে যাব। ব্যর্থতা’র চেয়ে মরা ভাল।
রবিন আর মিনার বলল, না ভাই এতোদিন একসাথে ছিলাম আজো একসাথে যাবো, সবাই রেডি হও।
ওরা সবাই তৈরি হল। মৃত্যুর খুব কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকা চার যুবকের জন্য অরুনার মায়া হলো। সে চিৎকার করে বলল, থামুন, থামুন আপনারা। আমাকে চান? হিরোর জন্যে?
সবাই বলল, হ্যাঁ, তাই চাই, শুধু হিরো চুপ করে রইল।
এই সামান্য চাওয়ার জন্যে জীবন লাগে না ভাই, আমি শুধু একটা বিনিময় চাই।
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল, কেউ বিঝতে পারছে না কি সেই বিনিময়?
সগির বলল, বল দিদি, তোমার বিনিময় কী?
আপানাদের এই মাস্তানী স্বত্তা, আমাকে এর পুরোটাই দিয়ে দিতে হবে।
মাস্তানী স্বত্তা? এ যে আমাদের এতোদিনের পেশা, একি দেয়া যায়? এটা ছাড়া টিকব কিভাবে আমরা?
যে কোন কাজ করে টিকে থাকা যায় ভাই, তবু বলুন আমাকে আপনারা মাস্তানী স্বত্তার পুরোটাই দিয়ে দিবেন?
চিন্তায় পড়ে গেল সবাই। মাস্তানি ছেড়ে দিয়ে বেঁচে থাকা যায় না। মাস্তানি ছেড়ে দিলে মনে হবে, রাজা থেকে নেমে চাকর হওয়া। তার চেয়ে কি পৃথিবী ছেড়ে দেয়া ভাল নয়?
হঠাৎ করে এই ডিসিশন কেউ দিতে পারল না। তবে সবার হাত থেকেই একে ছুরি পড়ে গেল মাটিতে। অরুনার দু’চোখ বেয়ে তখনও অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। সগিরের মাথা ঝিম ঝিম করতে লাগল। রবিন হিরোকে আজ হঠাৎ হিরো না বলে তামজীদ ভাই বলে ডাক দিল। কিন্তু তামজীদ সে ডাকে সাড়া না দিয়ে রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করল। বাকিরা তাকে ফলো করল। অরুনা খুব যত্ন করে তাদের চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখল।



৯৭০ বার পঠিত
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে আমি.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১১

কে আমি?.....

Jean-Paul Charles Aymard Sartre (আমরা সংক্ষেপে বলি- জ্যা পল সাত্রে) নাম ভুলে যাওয়া একটা উপন্যাসে পড়েছিলাম, জার্মানীর অর্ধ অধিকৃত ফরাসীদের নিয়ে।

'হিটলারের সৈন্যরা প্যারিস দখল করে নিয়েছে। কয়েকশো মাইল দূরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভোজন -শিল্পী- বাঙালি

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯


আমাদের বাঙালির রান্নাঘরে পঞ্চ ব্যাঞ্জন আয়োজন নিয়োজন করেন মা দাদী নানীরা কিন্তু কোন মাছের সাথে কোন সবজী যায় ,মাংসের ঝোলে কতটা গাঢ় হবে সেটুকু নির্ধারণ করেন আমাদের বাবা দাদা... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে না!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:০৮


বেশ কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করার জন্য সমাজের একটি বৃহৎ অংশ দাবী জানিয়ে আসছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপি কে অনেকে দায়ী করছে কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পকে আধুনিকায়নের চেষ্টা

লিখেছেন জটিল ভাই, ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

বনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১৩

বর্তমান সময়ের রাজনীতি নিয়ে আমার আমার পর্যবেক্ষণ সমুহঃ
১। শেখ হাসিনা এখন হুমকি ধামকি না দিয়ে হাল্কা পাতলা কান্না কাটি করলে এবং দুঃখ প্রকাশ করলে আওয়ামী লীগের উপকার হত।
২।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×