পরার্থপরতার জন্য দক্ষিন এশিয়ার ইতিহাসে প্রবাদপুরুষ হলেন সম্রাট হর্ষবর্ধন। ঐতিহাসিকদের বিবরণ অনুসারে হর্ষবর্ধন ছিলেন অতি দানশীল রাজা। প্রতি চার বছরে একবার তিনি প্রয়াগের মেলায় তাঁর সর্বস্ব দান করতেন। সব কিছু দেয়া হয়ে গেলে তিনি তাঁর নিজের গায়ের কাপড় দান করে গঙ্গায় স্নান শেষে অন্যের বস্ত্র ধার নিয়ে বাড়ি ফিরে আসতেন। ইতিহাসের এই কিংবদন্তী নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে কোন বিতর্ক নেই। তবুও কিংবদন্তীটি নিয়ে ছাত্রজীবনে আমার কিছু দ্বিধা দ্বন্দ ছিল। কিন্তু এসব প্রশ্নের জবাব আমি কোন ঐতিহাসিকের কাছে পাইনি।
দীর্ঘদিন পরে আমার নিজের জীবনেই এ ঐতিহাসিক ঘটনার পুনরাবৃর্তি দেখতে পাই। একবার পবিত্র শবে বরাতের পুর্বে আমি অসুস্হ হয়ে পড়ি। আমার মা শবে বরাতের দিন আমার হাতে এক টাকার নোটের একটি বান্ডিল দিয়ে ভিখারিদের তা দান করতে বললেন। আমি পায়জামা পান্জাবি পরে বাড়ির দরজার বাইরে প্রতিটি ভিখারিকে একটি করে এক টাকার নোট দেওয়া শুরু করি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমি ভিখরিদের দ্বারা ঘেরাও হয়ে যাই। ভিড়ের ঠেলাঠেলিতে ভিখারিরা আমার পান্জাবি ছিড়ে ফেলে এবং আমার হাত থেকে নোট ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আত্বরক্ষার্থে আমি দৌড়ে বাড়ির ভিতরে চলে আসি এবং সেই মুহুর্তে হঠাত করেই আমার হর্ষবর্ধনের কথা মনে পড়ে।
আমার বদ্ধ ধারনা যে সম্রাট হর্ষবর্ধন হয়ত ইচ্ছে করে তাঁর পরনের কাপড়-চোপড় দান করেননি। তিনিও হয়ত আমার মতই ঘেরাও হয়েছিলেন এবং পরনের কাপড়-চোপড় দান করার সময়ই পাননি। হয়তো তার পরনের কাপড় ছিনিয়ে নেয়া হ্য় এবং বাধ্য হয়েই তাকে গঙ্গাতে ঝাপিয়ে পড়তে হয়েছে।
-আমাদের দেশের বাস্তবতায় এটা সত্য। প্রতি বছর যাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে প্রাণ হারায় শত শত মানুষ। আর কতদিন আমরা এই দৃশ্য দেখবো?? আমাদের অর্থনীতি কবে আমাদের সকলের মৌলিক আধিকারগুলো পুরণ করতে পারবে???