প্রথমেই একটা তথ্য দেই। বিশ্বে করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর হার ৩ শতাংশ। সেখানে কোরিয়ায় মৃত্যুর হার মাত্র দশমিক ৮৪ শতাংশ। অবাক হচ্ছেন। আসুন, জেনে নেই কীভাবে মারত্মক ভাইরাস আক্রান্ত দেশের একটি হয়েও যুদ্ধে জয়ী হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা:
আমার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করি। কোরিয়ার এক ব্যক্তি করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে আমাদেরকে জনবহুল এলাকায় না যাওয়ার অনুরোধ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাদেশিক সরকার ও সরকারের সহযোগতামূলক সংস্থা কইকা থেকে মেইল করা হয়। সব ধরণের পাবলিক ইভেন্ট বন্ধ করা হয়। এর মধ্যে আমাদের মতো বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য কোরিয়ান সিনেমা প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়েছিল। তাও বন্ধ করে দেয়া হয়। আমাদের ডরমিটরির প্রবেশ পথে বসানো হয় থার্মাল মেশিন। প্রবেশ পথে রাখা হয় পাঁচ ছয়টা হ্যান্ড সেনিটাইজার বোতল। থার্মাল মেশিন পার হলেই অটোমেটিক সেনিটাইজার মেশিন। এটা হাত ধুয়ে হাতের পানি শুকানোর মেশিনের মতো। তবে বড়। দুই হাত ঢুকিয়ে দিলেই অটোমেটিক হাত জীবানুমুক্ত হয়। আমাদের ডরমিটরির লবিতে প্রবেশের পথে বসানো আছে অথেনটিকেশনের ব্যবস্থা। এটা থাম্বস নয়। ওই মেশিনে রুম নম্বর দিয়ে হাতের কব্জির উপরের অংশ চেপে ধরতে হয়। অথেনটিকেশন শেষ হলে রোলিং গেট ওপেন হয়। মেশিনটি নার্ভ সনাক্ত করে। প্রেসার পরিমাপসহ হেলথের বেসিক কিছু বিষয়ে রিপোর্ট চলে যায়। একজন শিক্ষার্থীর প্রেসারের কী অবস্থা বা অ্যালকোহল পান করেছে কীনা তা রেকর্ড হয়ে যায়। এরপর একটু এগিয়ে গেলে লিফট। সেই লিফটের সামনে আবার হ্যান্ড সেনিটাইজার বোতল। ডরমিটরির বেইজমেন্টে কিচেন। সেখানে প্রবেশের পথেও হ্যান্ড স্যানিটাইজার। করোনা আসার পর এভাবেই চলেছে ডরমিটরি জীবন। তখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শীতকালীন ছুটিতে বন্ধ ছিল। এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কোন ব্যবস্থা নিতে হয়নি।
গত ১ মার্চ থেকে আমাদের স্প্রিং সেমিস্টার শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে এরমধ্যেই ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যাটা বেড়ে যায়। স্প্রিং সেমিস্টার পনের দিন পেছানো হয়। এরপর সিদ্ধান্ত হয়, আরো পনের দিন অর্থাৎ ১৫ মার্চ থেকে আরো ১৫ দিন ক্লাস চলবে অনলাইন। এখন অনলাইনে ক্লাস করছি। কোরিয়ায় চাইনিজ শিক্ষার্থীদের আধিক্য রয়েছে। প্রায় ৬৯ হাজার ২৮৭ জন চাইনিজ শিক্ষার্থী কোরিয়ায় লেখাপড়া করে। এদের মধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে চাইনিজ শিক্ষার্থীদের সংখ্যা চার হাজার ৭২৭ জন। যা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেশি। তারা শীতকালীন ছুটি কাটাতে বেশিরভাগই চীনে গিয়েছিলো। এবার ফেরত আসার সময় ঘনিয়ে আসতেই কোরিয়ানরা আন্দোলন শুরু করে। আমাদেরও অস্বস্তি লাগতে শুরু করে। সরকার সিদ্ধান্ত নেয়। চাইনিজ শিক্ষার্থীরা পনের দিন আগে কোরিয়া আসবে। তারা এই পনের দিন কোয়ারিন্টিনে থাকবে। আমরা যে ডরিমটরিতে ছিলাম, সেই ডরমিটরি চাইনিজ শিক্ষার্থীদের কোয়ারিন্টিনের জন্য মনোনিত করা হয়। আর আমাদেরকে আরেকটা ডরমিটরিতে স্থানান্তরিত করা হয়।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি আমরা রুম তালাবদ্ধ রেখে ক্যাম্পাসের মধ্যেই আরেকটা ডরমিটরিতে চলে যাই। এরপর প্রতিদিন সকালে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা চেক করা হয়। ডরমিটরির নিচে গিয়ে প্রতিদিন সকালে তাপমাত্রা পরিমাপ করা মহা ঝামেলায় পড়ে যাই। আমরা প্রতিবাদ করি। পরে তারা প্রত্যেককে একটা করে ডিজিটাল থার্মোমিটার দেয়। আমরা সকালে শরীরের তাপমাত্রা মেপে হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে দেই। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও কইকা ডেটাবেজে সংরক্ষণ করছে। মাস্ক শেষ হয়ে গিয়েছিলো। আমাদেরকে কইকা থেকে তিনটা মাস্ক ও ৫০০ মিলি হ্যান্ড সেনিটাইজার সরবরাহ করে। গত ১৩ মার্চ আমরা আগের ডরমিটরিতে ফেরত এসেছি। এখন চাইনিজ শিক্ষার্থীদের সাথেই এক ডরমিটরিতে থাকি। বাইরে ঘোরাফেরায় কড়া নিষেধ চলছে।
জাতীয় ব্যবস্থা:
কোরিয়ায় প্রথম দিকে দুই একজন করে আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছিল। ঠিক আমাদের দেশের মতো। এর মধ্যে হঠাৎ বিষ্ফোরণ। রাজধানী সিউল থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরের শহর দেগুতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাস ছড়েনোর পেছনে রয়েছে একটি ধর্মীয় গোষ্ঠি। কীভাবে? এর ব্যাকগ্রাউন্ডটা বলছি। ২০১৫ সালের হিসেবে কোরিয়ায় বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী হচ্ছে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রটেস্টান্টদের সংখ্যা ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ। ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সংখ্যা ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। বাকী ৫৬ দশমিক ১ শতাংশ মানুষের কোন ধর্মবিশ্বাস নেই। কোরিয়া উদার ও বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী দেশ। যার যা ইচ্ছা বলতে পারে, যেকোন ধর্ম পালন করতে পারে, তাতে সরকারের কোন বাঁধা নেই। খ্রীস্টানরা এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছে। তারা ধর্মপ্রচারে মারমুখী। এর মধ্যে কয়েকটা ধর্মীয় বিশ্বাস আছে। তাদের ধর্মগুরুও আছে। তারা বিভিন্ন কায়দায় ধর্ম প্রচার করে। খ্রীস্টানদের এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে তাদের দলে টানতে মরিয়া। ধর্ম নিয়ে আরেকদিন লিখবো। এরকম একটা খ্রীস্টীয় ধর্মবিশ্বাসের একটি দল সিনচিওনজি। এর প্রধানের নাম ম্যান হী লি। তিনি আলোচিত ধর্মগুরু। আমাদের মুসলমানদের মধ্যে কাদিয়ানীদের মতো। কোরিয়ার বেশিরভাগ খ্রীস্টান তাকে সহ্য করতে পারেনা। তিনি তার বিশ্বাসকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য একটা একটা শান্তি প্রচারের সংগঠন করেছেন। যার নাম হ্যাভেনলি কালচার, ওয়ার্ল্ড পিচ, রেস্টোরেশন অব লাইট বা এইচডাব্লিউপিএল। শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে এরা সারাবিশ্বে যাচ্ছেন। বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এদের টার্গেট। বাংলাদেশেও সাংবাদিক থেকে শুরু করে বিভিন্নজনকে এরা শান্তি দূত করে রেখেছে। এরা তাদের ছবি দিয়ে এদেশে তার ভক্তদেরকে দেখায়। অনুসারির সংখ্যা বৃদ্ধি করে। এসব গ্রুপগুলোর মধ্যে এমন অবস্থা যে, একগ্রুপ আরেক গ্রুপের মধ্যে ছদ্মবেশে যোগ দেয়। পরে তাদের অনুসারীদের ভাগানোর চেষ্টা করে। কোরিয়ায় সিনচিওনজির অনুসারীর সংখ্যা দুই লাখ ১২ হাজারের মতো। এরা সরকারের অনুরোধ সত্ত্বেও দেগু সিটিতে তাদের চার্চে অনুষ্ঠান করে। সেখানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত একজন যোগ দেয়। এ নিয়ে পক্ষ বিপক্ষে কথা আছে। সিনচিওঞ্জি বলছে, অন্য গ্রুপ তাদের মধ্যে ঢুকে এ রোগ ছড়িয়েছে। আবার খ্রীস্টানদের বাকী গ্রুপ বলছে, এই সিনচিওঞ্জিরা চীন থেকে গোপনে দেশে ফিরে ভাইরাসের বিস্তার করেছে। কোরিয়ায় যত করোনা ভাইরাসের রোগী পাওয়া গেছে তার মধ্যে এই গ্রপের ৯০ ভাগ অনুসারী রয়েছে।
যাই হোক সরকার তাদের কাছ থেকে তাদের অনুসারীদের তালিকা সংগ্রহ করেছে। প্রত্যেকের শরীর পরীক্ষা করেছে। দেখা গেছে, কোন সিম্পটম নেই। অথচ তিনি করোনা ভাইরাসের রোগী। কারণ ভাইরাস শরীরে ঢুকলেও তা প্রকাশে কমপক্ষে পাঁচ দিন আর সর্বোচ্চ ১৪ দিন সময় নেয়। কোরিয়ার সফলতা হলো- অল্প সময়ে সিনচিওঞ্জির প্রায় সব অনুসারীদের শরীর পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ১৩ মার্চ পর্যন্ত দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষের করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করা হয়। গতকাল ১৪ মার্চ লস অ্যাঞ্জেলস টাইমের এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের করোনা ভাইরাস পরীক্ষা ব্যবস্থার সাথে কোরিয়ার ব্যবস্থার সাথে একটা তুলনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনের শিরোণাম ‘সাউথ কোরিয়াস র্যাপিড করোনা ভাইরাস টেস্টিং ফার অ্যাহেড অব দা ইউএস। কোরিয়া একদিনে ২০ হাজার মানুষের করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করে। যুক্তরাষ্ট্র এতদিনেও সে সংখ্যাটা করতে পারেনি। সাউথ কোরিয়া জুড়ে ১১৮ জায়গায় করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একটা কীটে একশ জন রোগীর পরীক্ষা করা যায়। মাত্র চার ঘন্টায় ফলাফল পাওয়া যায়। পুরাটাই অটোমেটিক। মানুষের স্পর্শ ছাড়া। রবোটিক হ্যান্ড কাজটি করছে নিরাপদে। পেছনে আছে একটা উদ্ভাবন আর একটি কোম্পানির গল্প। কোম্পিানির নাম সিজিনি। গত ১৩ মার্চ সিএনএন এই কোম্পানিটিকে নিয়ে একটা প্রতিবেদন করেছে। কীভাবে মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে এরা সহজে পরীক্ষা করার মতো টেস্ট কীট তৈরি করে ফেলেছ। দক্ষিণ কোরিয়া ঘোষণা করেছে এটা অন্য দেশেও তারা সরবরাহ করবে। বাংলাদেশকে এখনি যোগযোগ করা দরকার। কারণ চীন থেকে যে ৫০০ টেস্টিং কীট পাওয়া গেছে তাতে ফলাফল পেতে অনেক দিন লাগে। আর ৫০০ শেষ হতে পারে এক ফুৎকারে। সুতরাং এখনি সময়।
একটি আণবিক জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি:
আগেই বলেছি কোম্পানিটার নাম সিজিনি। কোরিয়ার আরেকটি সফলতার কাহিনী। কোরিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নের যুদ্ধে স্যামসাং, এলজি, হুন্দাইসহ কয়েকটি কোম্পানি ভূমিকা রেখেছিল। এবার করোনা ভাইরাস যুদ্ধ জয়ের পেছনে এই কোম্পানিটির নাম উঠে এসেছে। তখনো এই ভাইরাসের নামকরণ করা হয়নি। কোরিয়ায় কেউ আক্রান্ত হয়নি। এরমধ্যেই ওই কোম্পানি ভাইরাস টেস্ট কীট তৈরিতে হাত দেয়। গত ১৬ জানুয়ারি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী চুং জন উন তার সহকর্মীদের নিয়ে মিটিং করে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কীট তৈরি করতে নির্দেশনা দেন। তিনি বলেছিলেন, আমরা আণবিক জৈবপ্রযুক্তির কোম্পানি। একারণে আমাদের আগেভাগেই তৈরি থাকা দরকার। রাজধানী সিউলে কোম্পানিটির ভবনের বেজমেন্টে পরীক্ষাগার চালু করা হয। তাদের একটা সুবিধা ছিল। সেটা হলো এই কোম্পানির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ডেটাবেজ ছিল। যা তাদের কাজকে সহজ করে দেয়। ২৪ জানুয়ারি কোম্পানির বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা শেষে কাঁচামালের চাহিদা দেয়। ৫ ফেব্রুয়ারি তারা করোনা ভাইরাস টেস্টিং কীটের প্রথম ভারসন তৈরি করে ফেলে। এরপর কোরিয়া সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল বা কেসিডিসি যা আমাদের দেশের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইডিসিআর) এর মতো একটি প্রতিষ্ঠান, টেস্ট কীটকে দ্রুত অনুমোদন দেয়। কোম্পানিটি সপ্তাহে ১০ হাজার কীট তৈরি করতে পারে। প্রতি কীট দিয়ে একশ মানুষকে পরীক্ষা করা যায়। প্রতিটি টেস্টের দাম ধরা হয়েছে ২০ ডলার বা সাড়ে সতেরশ টাকা। এত সহজলভ্য হওয়ায় কোরিয়া সরকার মানুষকে বিনামূলে টেস্ট করার সুযোগ দিয়েছে। এটা কীভাবে প্রাণ বাঁচিয়েছে কোরিয়ার মানুষের তা সরকারের তরফে স্বীকারও করা হয়। কোরিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী পার্ক নিউং হু বলছিলেন, করোনা রোগীকে প্রথম পর্যায়ে পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। এটা হয়ে গেলে মাত্র ১০ ভাগ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এজন্য দরকার ছিল পর্যপ্ত টেস্ট কীটের। আমরা ওই কোম্পানিটির কাছে পেয়ে যাই। এর ফলেই স্বল্প সময়ে দুই লাখ ত্রিশ হাজার মানুষের পরীক্ষা শেষ করা সম্ভব হয়েছে।
বিগ বাজেট বরাদ্দ:
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ কোরিয়া করোনার বিরুদ্ধে আর্থিক বাজেট ঘোষণা করে। এর পরিমাণ মার্কিন ডলারে ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন। যা বাংলাদেশের টাকায় ২৩ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। শুনলাম বাংলাদেশ করোনার জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। বুঝতেই পারছেন। ব্যবধানটা। একটি উন্নত দেশের সাথে বাংলাদেশের মতো একটা উন্নয়নশীল দেশের ব্যবধান। এজন্য উন্নত দেশের সাথে কোন কিছু নিয়ে তুলনা করা ঠিক নয়। এরা কয়েকদিনের মধ্যে হাজার হাজার অ্যাম্বেুলেন্স তৈরি করে ফেলেছে। সব সময়ের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে এসব অ্যাম্বুলেন্স। তৈরি করা হয়েছে পর্যাপ্ত লাইফ সাপোর্ট। হাজার হাজার কর্মীকে জীবানুমুক্ত করতে মাঠে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এদের গায়ে সাদা পোশাক। দেখলে মনে হবে চাঁদে গমনের পোশাক। জীবানুমুক্তের লিকুইড ছাড়াচ্ছে পুরো শহরে। দেগু শহরের রাস্তাঘাটও জীবানুমুক্ত করা হচ্ছে একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর। এটা কত ব্যয়বহুল তা বলা বাহুল্য। বাংলাদেশের যে ফ্লাইটটি চীনের উহানে গিয়েছিলো, সেটি জীবানুমুক্ত করতে কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এখানে রাস্তায় বের হলেই দেখতে পাওয়া যায় এসব কর্মীদের। কোন ট্রেন আসলে যাত্রীরা চলে যাওয়ার পর আবার জীবানুমুক্ত করার কাজ করা হয়। শুধু জীবানুমুক্তকরণের পেছনেই হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করছে দেশটি। বিষয়টি আগাগোড়া চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। চীন থেকে ফেরতদের চৌদ্দ দিন নয় প্রায় এক মাস কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল।
কোরিয়া আক্রান্ত হওয়ার পরপরই অনলাইনে ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, কোথায় রোগী পাওয়া গেছে। রোগী পাওয়া গেলেই তার কন্টাক লিস্ট করা হয়। যাদের সাথে যোগযোগ হয়েছিলো তাদের সবাইকে কোয়ারিন্টিনে নিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। কোন সুপার শপে গেলে তা বন্ধ করে জীবানুমুক্ত করা হচ্ছে। সাবইকে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। সবার মুখে মাস্ক। সবাই মাস্ক কিনে ফেলায় সব মার্কেট আউট হয়ে যায়। পরে সরকার পোস্ট অফিসের মাধ্যমে মাস্ক বিক্রি করেছে। এখানে দেখলাম পোস্ট অফিসকে কত ধরণের কাজে লাগাচ্ছে সরকার। আর আমাদের পোস্ট অফিসগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এগুলো চালু রাখা দরকার। পোস্ট অফিসের মাধ্যমেও সরকারের অনেক সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব। যার প্রমাণ দক্ষিণ কোরিয়া।
সর্বশেষ:
কোরিয়া করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় যেভাবে সফলতা দেখাচ্ছে, তাতে বিস্মিত হতে হয়। সর্বশেষ গতকাল ৭৬ জন আক্রান্ত হয়েছে। অথচ প্রতিদিন ৫০০ এর অধিক হারে আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছিল। এপর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে আট হাজার ১৬২ জন। কয়েকদিনের মধ্যেই হয়তো ভাইরাস যুদ্ধ জয়ের ঘোষণা আসবে।
যেদেশে পা রেখেই পকেটে কী আছে তার নিরাপত্তা নিয়ে কখনোই চিন্তার উদ্রেক হয়না, সেখানে আসলে করোনা ভাইরাসেও একটু উদ্বিগ্ন বোধ করিনি। এদের হাতে আছে অর্থ। আর আছে টেকনোলজি। আছে ডেডিকেশন। সেখানে ভাইরাস যুদ্ধে জয় লাভ সময়ের ব্যবধান মাত্র। আমরা সব পারবোনা, তবে কিছু শিক্ষা তাদের কাছ থেকে নিতে পারি।
দক্ষিণ কোরিয়া
১৫ মার্চ ২০২০
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৮:০৭