
পিচ্চিবেলায় ঈদ ছিল হেব্বি মজার ! রোজা করা লাগবে না , নতুন ড্রেস, সালামি , ইচ্ছে মতো খাওয়া (ওই একটা দিন চাইলেই বেশি বেশি মাংস খেতে পারতাম । এমনিতে দুই টুকরা'র বেশি পেতাম না ) ! ইশ ! সব থেকে আনন্দের বিষয় ছিলো , ওই দিন কেউ বকা দিতো না ! আহারে ! আম্মা , আব্বু সব্বাই কতো ভালো ব্যবহার করতো । ছোট ভাই ও অকারণে মারামারি করতো না ।


এখন ঈদ মানেই ব্যস্ততা ।ঈদের আগের রাতে সারারাত জেগে রান্না করি । ভোরে মিষ্টি কিছু বাকি থাকলে করি । খিচুড়ি ,ঝাল মাংস ,জিরা পানি ( তেতুলের টক মিষ্টি সরবত ) আর নানা রকমের মিষ্টি খাবার থাকে সকালের মেন্যুতে । বরকে জোর করে একটু মিষ্টি মুখ করিয়ে নামাজে পাঠাই ( সে যখন তার পুরনো পাঞ্জাবী বের করে নামাজের জন্য , তখন লুকিয়ে রাখা নতুন পাঞ্জাবী বের করে দিয়ে বলি , এটা পরে দেখ তো ! আমি খুব সারপ্রাইজ দিতে ভালোবাসি ।বরের মুখটা দেখবার মতো হয় ! এটা মেয়েদের জন্য ও করি । কিছু জিনিস শেষ মুহূর্তের জন্য লুকিয়ে রাখি ।

তারপর ঘর গুছিয়ে মেয়েদের ঘুম ভাঙ্গাই । নামাজ শেষ হবার পর থেকে শুরু হয় মেহমান ! আল্লাহ ! আমাদের এতো আত্মীয় ! ঝান্তাম না !

আব্বু বেঁচে থাকতে ঈদের দিন সকালে নাস্তা করতেন আমার বাসায় । সেটাই ছিলো তার সারাদিনের মূল খাওয়া । তার প্রিয় খিচুড়ি এখনো তার একমাত্র মেয়ে তিতির রান্না করে কিন্তু শুধু তিনি পথ ভুলে চলে গেছেন অন্য কোথাও ! এই মানুষটা আমাকে প্রতি ঈদের সকালে অপেক্ষা করান ! মনে হয় এসে বলবেন , কি রান্না করেছিস ? খিচুড়ি হলে দে তো ! আব্বু ! এভাবে কেন চলে গেলেন ? মাত্র ৬২ বছর বয়সে !আপনার মেয়েটা যে প্রতি ঈদে রান্না করে আর লুকিয়ে কাঁদে !ঈদে সবার জন্য কাপড় কিনি । আপনি কেন বাদ পড়ে গেলেন ?

নাহ ! আর মন খারাপের কথা না । আমার মেয়েদের কথা বলি । তারা তাদের সারা মাসের ঈদের জন্য গোছানো বিশাল ব্যাগ ( যা সারা মাস তাদের সাথে ঘুরে বেরিয়েছে , এমন কি ঘুমের সময় তারাও মাথার কাছে ঘুমিয়েছে । তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে । সব মন খারাপ এক নিমিষে হাওয়া । মায়ের কাজে সাহায্য করে , তারপর তারা তাদের সাজুগুজু শেষ করে ! দাদুকে সালাম করে , নানু বাড়িতে রওনা তারা । (পাশাপাশি নানু বাড়ি থাকা দারুণ ! ভাগ্যিস ওদের বাবা মা ইয়ে করে বিয়ে করেছিলো ! :!> )
এদিকে শুরু হবে মেহমান আসা । বর তখন কবরস্থানে গেছে মৃত স্বজনদের সাথে দেখা করতে । আমার কিছু স্পেশাল মেহমান আছে। ওরা বিভিন্ন সময়ে আমার বা আমার বিয়ের আগে আমার শাশুড়ির কাজ করতো, আমার বাবার বাড়ি কাজ করতো। ওদের অলিখিত নিয়ম আমার বাসায় এক বেলা খাবে । খুব ভালো লাগে এটা । কি তৃপ্তি করে খায় !! ওই দিন তারা ডাইনিং টেবিলে বসে বিশেষ প্লেটে দামী মেহমান এর মতো খায় ! একটা দিন বছরে উদার হই আমি !


দুপুর হতেই দারুণ সব খাবার ! এবার হবে চিংড়ির বিরিয়ানি ( সাথে এক্সপেরিমেন্ট হিসেবে-মুগ ডাল থাকবে বিরিয়ানিতে । পেপার পড়ে ডাল এর আইডিয়া পেলাম ) ।চায়নিজ টাইপ সবজি , ভয়াবহ ঝাল দেয়া ভেড়ার মাংস , চিকেন ফ্রাই ,কলিজা গ্রিল আর খুব দারুণ সালাদ ( আমার নিজের রেসিপি ! হুহ !


একে একে মেহমান আসবে। শাশুড়িকে খাইয়ে নিজে রেডি হবার চেষ্টা । ( একবার এতো মেহমান এসেছিলো আমি নতুন ড্রেস পড়বার সুযোগ পেয়েছিলাম রাত ১০ টায় ! )মাঝে বর আর শাশুড়িকে সালাম করা। বর এইদিন ১০০০ টাকা দেয় সালামি । আগে ৫০০ দিতো ।




বিকেলে যদি মেহমানের চাপ কম থাকে তাহলে মায়ের বাসা । মাকে সালাম করি( সালামি নিশ্চিত !এই মহিলাই শুধু আমার দুঃখ বুঝে । ভালো আছে মহিলা ! আমার মা ! ভালো না হয়ে উপায় আছে !

সময় পেলে বাইকে করে বরের সাথে ঘুরাঘুরি । আবার বাসা । আবার মেহমান ।কপাল ভালো হইলে রান্না শর্ট !



এভাবেই ঈদ ফুরুত ! মেয়েরা তাদের বিশাল ঈদ সালামি আমার হাতে দিয়ে বলবে , মা এটা রাখো । নিজের জন্য আর বাবার জন্য কিছু কিনে নিও ! ( এই মেয়েগুলা এতো আজীব টাইপ ভালো কেন ? ! সেভেন এ পড়ে । এখনো কোনদিন বলে নাই এটা আমার টাকা !

সব গুছিয়ে ফ্রি হতে অনেক রাত । ওহ ! একটা জিনিস বাদ পড়ে গেছে ! চান্স পেলেই ফেবু তে ঢুঁ দেবো । এইটা ছাড়া ঈদ মানে সালাম করছি , সালামি পাই নাই। শুধু বেঁচে থাকো মা !


সব্বাইকে ঈদের আগেভাগের শুভেচ্ছা ! খুব খুব আনন্দে কাটুক ঈদ !কোন দুর্ঘটনার খবর যেন না শুনি ! শুধু ভালো থাকা। সব ধর্মের সব মানুষের জন্য অনেক ভালোবাসা !উৎসব হোক সবার (ভাষণ টাইপ হয়ে গেলো না তো ! :!>
