গতকাল রাত ৩ টা। রাতের এই সময়টাতে আমার খুব খিদা লাগে। এক মাত্র আমার মা' ই তা জানে।যে কারনে রাতের শোবার সময় টেবিল এ কিছু খাবার রেখে দেন যেন রাতে উঠে খেয়ে নিতে পারি। কিন্তু আজ তো আমি বাসায় নেই, গাড়িতে। দূরের জার্নিতে। আজ কে খাবার দেবে? জার্নির সময় খাবার এবং পানি নিয়ে না উঠা আমার পুরনো অভ্যাস। শুকনো গলায় থাকাটা আমি খুব পছন্দ করি। কিন্তু এই অভ্যাসের পরিবর্তন দরকার। তার উপর খাবার প্যাকেট করে দিতে চাইলেও আমি অন্যবারের মত আজকেও না করে দেই।কারন বাসা থেকে খাবার এনে মধ্য রাস্তায় খাওয়া টা আমার কাছে কেন জানি একটু মেয়েলি টাইপের মনে হয়। মেয়ে’রা পারে। গাড়িতে এক গাদা খাবার নিয়ে উঠে। একবারে আচার থেকে অনাচার। আর পুরা রাস্তায় চপ চপ শব্দ করে খেতে থাকে। এই যেমন আমার রো এর ঠিক অন্য পাশে বসা মেয়েটি সেই শুরু থেকে খপখপ খেয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে তো আমার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে 'আপনারা কি কোথাও যাওয়ার জন্য উঠেছেন না খাওয়ার জন্য উঠেছেন?।
ফোন বেজে উঠল। আব্বার ফোন। ভদ্র লোকের একটা প্রবলেম হল আমি কোথাও গেলে ৫ মিনিট অন্তর অন্তর ফোন দিবেন আর জিজ্ঞেস করবেন কোথায় আছি কি করছি। জায়গার নাম বললেই শুরু করে দিবে ওই জায়গায় কি কি আছে, পাওয়া যায় ব্লাহ ব্লাহ ব্লাহ, সব কিছুই উনার নখদর্পণে। ৩০ বছরের চাকরি জীবনে এত জেলা ঘুরেছেন যে বাংলাদেশের হাইওয়ে গুলোর কোন জায়গায় কয়টা খোলা 'ইয়ে খানা' আছে ওটাও নিমেষে বলে দিতে পারবেন। তাই ওনার ফোন একটা বিড়ম্বনা । না ঠিক শুধু বিড়ম্বনা বললে খুব রুঢ় হয়ে যায়। এই বিড়ম্বনা ভালবাসার, আদরের।
'হ্যালো'? ওপাশে আম্মার আওয়াজ।হুম বুঝতে পারলাম ফোন টা আম্মা করেছে। জিজ্ঞেস করল 'কিরে খিদা লাগসে?' হাজার উকিলের আদালত বসিয়েও এখন আম্মাকে আমি বিশ্বাস করাতে পারবনা যে আমার খিদা লাগেনি। মৌনই রইলাম। মৌনং সম্মতি লক্ষনং। তাই আম্মার বুঝতে খুব দেরি হল না। 'ব্যাগ টা হাতে নে' । নিলাম। ব্যাগ টা খুলে নিচে হাত নে। দিলাম। দেখলাম একটা ছোট্ট প্যাকেট। যেই খাবারের প্যাকেট টা আম্মা দিতে চাইলেও না নিয়ে চলে এসেছিলাম।কিন্তু কোন এক বিচক্ষণে উনি প্যাকেট টা ঠিকই আমার ব্যাগ এ রেখে দিয়েছেন। ' প্যাকেট এর ভিতর ন্যুডলস আছে আর পানি দেয়া আছে, খেয়ে ঘুমিয়ে পড়' এপাশ ওপাশ আর করিস না।
হ্যাঁ। এই হল মা। মা'কে কোন সংজ্ঞায় ফেলতে চায় না আমি। কোন সংজ্ঞায় আসলে ফেলা যায় না। তবুও বলি ' প্রিয়া হয়তো চোখের পানি মুছে দিবে, কিছু সময়ের জন্য হয়তো হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ও বন্ধ করে দিবে। কিন্তু ধমনী তে বিশুদ্ধ রক্ত বহনের কাজ আজীবন করে যাবে এই মা।
ফকির আলমগীর তাঁর গানে তাই যথার্থই বলেছেন-
মায়ের একধার দুধের দাম, কাটিয়া গায়ের চাম
পাপোষ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না,
এমন দরদী হবে কেউ হবে না আমার মা’গো।
মা দিবসে জগতের সব মাকে জানাই অগ্রিম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
বিদ্রঃ ছবি গুগল থেকে সংগৃহীত। আর ঘটনাটি গতবছর ঠিক মা দিবসের আগের দিনের।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৯