লাস্ট ৫-৬ দিন ধরে খেয়াল করছি আমার রুমে কেউ আসেনা। এমনকি আমার ছোট ভাগ্নিটা আমার রুমে আসলে আম্মা তাকে ফিসফিসিয়ে নিয়ে যায়। একবার শুনলাম আম্মা বলছে “তোমার ছোট’র পরীক্ষা ডিস্টার্ব করোনা”। বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ৫ দিন আগে এরকম একটা কথা শুনলে কই আমার আত্মবিশ্বাস চরমে উঠব!! উল্টা আমার আত্মবিশ্বাস শরমে উঠে গেল। জীবনে কোন কিছুতে সিরিয়াস না হওয়ার পর আমার পরীক্ষা নিয়ে আমার আম্মার এইরকম চিন্তায় আমার শরম পাওয়ার মূল কারন। আবার আমার এও জানা বিসিএস নামক পরীক্ষার প্রিলির বৈতরণী পার হওয়ার জন্য ৫-৬ দিন তো দুরের কথা ৫-৬ মাসের পড়ালেখা ও যথেষ্ট নয় এটা একটা ওপেন টক।
বেশ কিছুদিন একাডেমিক পড়ালেখা নিয়ে বিজি থাকার পর ৫-৬ দিন দুইটা বই বিসিএস পরীক্ষার জন্য পড়েছিলাম। একসময় যখন প্রিলি পরীক্ষা ১০০ মার্কের ছিল তাতে কিছু সিলেক্তিভ স্টাডি, কিছু সাধারণ নলেজ আর কারেন্ট বিষয় সম্পর্কে আপডেট থাকলে অন্তত পাশ করার সুযোগ থাকতো। কিন্তু বর্তমানে ২০০ মার্ক আর রিলেটেড টপিক বেড়ে যাওয়ায় প্রিলি পাশের জন্য পড়ালেখার পরিমানও বেড়ে গেছে।সিলেক্তিভ স্টাডি ব্যাপারটাও আর চলে না। সো সেখানে আমার ৫ দিনের লেখা পড়া করে প্রিলি পাশ আর ইংরেজিতে “You got to be kidding me” একই কথা।
যাহোক অংশ গ্রহনই বড় কথা মেনে নির্দিষ্ট দিন এক্সাম হলে উপস্থিত হলাম আশেপাশে সবকিছু আস্তে আস্তে দেখে নিলাম। তবে এক্সাম হলে কয়জন মেয়ে আছি সেটা খেয়াল করলাম না। ডোন্ট থিঙ্ক যে ভালা পোলা বলে খেয়াল করলাম না। আসলে আমি জানতাম এক্সাম এর মাঝখানে প্রচুর সময় পাব রুমে ঠিক কয়জন মেয়ে এবং কি রকম মেয়ে আছে তা মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখার জন্য। ক্যামনে সময় পাব তা আকাল্মান্দ কি লিয়ে উপরের লেখায় কাফি
প্রশ্ন হাতে আসার পর খুশিতে একটা লাফ দিমু বলে চিন্তা করলাম কারন প্রথম প্রশ্ন কমন। আহহ!!! কিন্তু আস্তে আস্তে ভিতরে ঢুকার পর আইমিন প্রশ্নের ভিতরে যাওয়ার পর আমার ক্লাস বেড়িয়ে আস্তে লাগলো হ্যাঁ, না পাড়ার ক্লাস। এদিক ওদিক করে ঘুরি আর ফিরি। কিসসু পারিনা। হঠাৎ পাশের সিট থেকে একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম। আওয়াজ শুনে হাসব নাকি আমিও ওর মত শুরু করে দিব ভাবতে লাগলাম। ছোটবেলায় একটা খেলা খেলতাম। কোন কিছু চুজ করার জন্য অপু দশ বিশ ত্রিশ চল্লিশ এভাবে একশোতে গিয়ে যেটাতে হাত লাগতো সেটাই আমরা চুজ করতাম। পাশের বেচারার অবস্থা আমার চেয়েও খারাপ। রীতিমত অপু দশ বিশ ত্রিশ খেলে এমসিকিউ চুজ করছে সে এদিকে আমার সময় শেষ হয়না। রুমে কয়টা মেয়ে কিভাবে এসেছে, সিট কয়টা থেকে শুরু করে উপরে ফ্যান কয়টা আছে তা ও গুনা শেষ। এমনকি জানালা দিয়ে পাশের রাস্তায় কয়টা গাড়ি আসা যাওয়া করছে তাও গুনা শেষ হচ্ছে। কিন্তু সময় শেষ হয়না
অবশেষে কোনমতে পরীক্ষা টা শেষ করে রাস্তায় এসেই বলতে লাগলাম প্রশ্ন অনেক কঠিন হয়েছে অনেক,অনেক এবং অনেক। কিন্তু বিধিবাম। চারপাশে আমি শুনি প্রশ্ন সহজ হয়েছে অনেক,অনেক এবং অনেক। একটা ছেলে তো মোটামটি আমাকে চ্যালেঞ্জ করে বসলো ভাই প্রশ্ন ক্যামনে কঠিন হয়ছে আম্রে বলেন সবার সামনে বেইজ্জতি হয়ে যাবে ভেবে তারে একটা চিপায় নিয়া গেলাম। তারপর শুনায়া দিলাম সেই পুরানা জোকস খানা যা হয়তো অনেকের জানা আছে।
একবার এক লোক চোখের সমস্যার কারনে চোখের ডাক্তারের কাছে গেল। ডাক্তার তার আই’সাইড টেস্ট করার জন্য লেন্স বদলিয়ে বদলিয়ে অক্ষর দেখানো শুরু করল। প্রথমে ছোট অক্ষর দেখিয়ে পড়তে বলল। কিন্তু লোকটি পারলনা। এর পরে বড় অক্ষর। তাও দেখে না। এরপর আরও বড়, আরও বড় দেখানোর পরও লোকটি কিছুই দেখেনা, পড়তে পারেনা। ডাক্তার পড়ে গেল মহাচিন্তায়। ভাবতে লাগলেন বেটার চোখে তো মারাত্মক সমস্যা। কিচ্ছু দেখছেনা। ডাক্তার গলা ঝেড়ে বলে উঠলেন “আপনার চোখে তো মহা সমস্যা। আপনি তো কিছুই দেখছেন না। এত বড় বড় অক্ষর দেখাইলাম একটাও পড়তে পারলেন না”। তখনই লোকটার আসল ক্লাস বেড়িয়ে আসলো “স্যার একবারও তো জিগাইলেন না আমি পড়ালেখা পারি কিনা, পড়ালেখায় পাড়ি না, আমি পড়মু ক্যামনে?”
অবশেষে আমি ছেলেটিকে বুঝাতে সক্ষম হলাম কেন আমার কাছে প্রশ্ন কঠিন হয়েছে। পড়া না থাকলে যে কোন কিছুই যে কোন কারো কাছে কঠিন মনে হবে
তবে যারা পরবর্তী বিসিএস দিবেন তাদের জন্য বিসিএসে পাশ করার একটা গোপন টুটকা আমি বলে দিতে পারি যেটা ফলো করলে অবশ্যই অবশ্যই প্রিলির বৈতরণী খুব সহজে পাশ করে ফেলবেন। সেটা হল আজ থেকে-
প্রিলির জন্য প্রচুর লেখাপড়া করুন পিএসসি কর্তৃক প্রদত্ত টপিকের উপর। আর সমসাময়িক বিষয় সম্পর্কে আপডেট থাকুন সবসময়। আপনার পাশ অনন্ত জলিল ও আটকাতে পারবেনা
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১১