এই মাত্রই কিছুদিন আগে মাঈনউদ্দিন মইনুল ভাইয়ের লেখার ‘মুড’ না থাকলে আপনি কী করেন/করবেন? লেখাটি পড়ার সময় একটা টার্ম নিয়ে বেশ কজন কে মন্তব্য করতে দেখলাম। আবার অনেকে টার্ম টা সরাসরি না বললেও তাঁদের সুচিন্তিত মন্তব্যে যে ঘুরেফিরে ব্যাপারটি আসছিল তা বুঝা যায়। টার্ম টি র নাম “Writer’s Block”. আবার অপর্ণা মম্ময় আপুর সাম্প্রতিক লেখা টাইম পাস বা ব্লগর ব্লগর পোস্টে আহমেদ জী এস ভাই লিখেছেন “Writer’s block” বলতে কিছু নেই। ব্যাপারটা আসলেই আমাকে খুব ভাবাল। ভাবতে লাগলাম রাইটার্স ব্লক টা কি? কেন হয়? কিভাবে হয়?
এর কারন প্রথমেই বলি আমি সামুর একজন গর্বিত পাঠক, কোন লেখক নই। এবং গত প্রায় ৩ সপ্তাহ আমি বেশ কিছু কারনে বিজি থাকায় সামুতে কোন পোস্ট দিতে পারছিনা ঠিকমত। কিন্তু পরক্ষনেই ভাবলাম আরে এর চেয়ে বেশি বিজি থাকা অবস্থায় আমি মাসে ১০-১২ টা করে পোস্ট দিসি। ব্যস্ততার মধ্যেও আমি ভেবেছি আজ একটা রম্য লেখা লিখব অমুক তমুক ব্যাপার নিয়ে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু সাম্প্রতিক যে পোস্টটা আমি করেছি আমার মনে হল “posting for the sake of posting” লেখাটা আমি পোস্ট করেছি। আমি মোটেও স্যাটিসফাইড ছিলাম না এটা লিখে (আবার তার মানে এই না যে আমি কোন বড় মাপের লেখক)। আবার কোন লেখাও মাথায় আমার আসছিল না। তাহলে কি আমার কোন প্রবলেম হচ্ছে? আমার মাথায় কি কোন আইডিয়া আসছে না? আমি কি আর কিছু লিখতে পারবনা? আমার মাথায় অনেক কিছু আসছে কিন্তু আমি লিখতে পারছিনা কে?
এসব প্রশ্ন নিয়ে আমি হাজির হলাম গুগল মামার কাছে। গুগল মামা আমাকে হাজার ঘাটের পানি খাওয়াইয়ে বলিল হ্যাঁ রাইটার্স ব্লক ব্যাপারটা বিদ্যমান। বিভিন্ন কারনে এটা হয়ে থাকে এবং প্রধানত ১০ টি কারনে রাইটার্স ব্লক হয়ে থাকে। গুগলে পাওয়া ১০ টি কারন নিচে বর্ণিত হল-
১। কোন কঙ্কলুসিভ আইডিয়া তে আসতে না পারাঃ
এটা এমন একটা অবস্থা যেখানে আপনি সামনে একটা খালি পেইজ আছে তাতে লিখছেন আবার কাটছেন, লিখছেন আবার কাটছেন এই অবস্থা। আপনি কোনভাবেই শুরু করতে পারছিনা এমনকি কোন ক্লু ই পাচ্ছেন না কিভাবে শুরু করতে হবে। অবস্থা এরকম যে আপনি কোনকিছু শুরু করার আগেই শেষ হয়ে গেছে। তবে এই অবস্থার দুটি পজিটিভ দিক আছে। ক. এই অবস্থায় পতিত হলে চিন্তার মাত্রা বেড়ে যায়। যার ফলে এর থেকে বের হয়ে আসা বেশ দেরি হয় না। খ. এই অবস্থায় যেকোন কারো বার বার লিখতে চেষ্টা করার কারনে লেখার অনুশীলন টা বাড়ে। এই অবস্থা থেকে উত্তরনের প্রধান উপায় ধুম করে কোন একটা চরিত্র কল্পনা করে একটা গল্প বানিয়ে ফেলা বা নিজের সাথে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনাকে লেখায় রুপ দেয়া বা হুট করে কোন সাম্প্রতিক ব্যাপারে স্যাটায়ার লিখে ফেলা। হয়তো ভাবতে থাকলে আরও অনেক কিছুই চলে আসবে।
২।আপনার মাথায় অনেকগুলা আইডিয়া আছে, কিন্তু কোন আইডিয়াই আপনি দাঁড় করাতে পারছেন নাঃ
এটা কিছুটা কঠিন ব্যাপার। আপনি দুয়েকটা প্যারাগ্রাফ লিখলেন। কিন্তু হঠাৎ ওই লেখায় আপনি আগ্রহ হারালেন এবং অন্য ভাবে লেখা শুরু করলেন। আবার কিছুক্ষন পর দেখলেন লিখতে গেলেন একটা হয়ে যাচ্ছে আরেকটা। এই অবস্থাতে এরকম ও হয়ে থাকে সবচেয়ে মজার এবং পছন্দের আইডিয়াটাই মাথা থেকে চলে গেল এবং যে ই আইডিয়া টা আপনি দাঁড় করাতে চাননি তাইই আপনার লেখাকে এগিয়ে নিয়ে গেল। আপনি যখনই “অনেকগুলা আইডিয়া, কিন্তু কোনটাই কাজ করছেনা” টাইপ সমস্যায় ভুগবেন আস্তে করে লেখা বন্ধ করে দিয়ে সময়টা উপভোগ করুন। কিছুদিন বাদেই আবার নতুন উদ্যমে লিখুন।
৩। সুন্দর শিরোনাম থাকলেও এটার উপর লিখতে পারছেন নাঃ
অনেকেই আছেন খুব সুন্দর এবং আকর্ষণীয় শিরোনাম দিয়ে লেখা আর আগাতে পারেন না । আবার উল্টাও হয় লেখার শিরোনাম ঠিক করতে পারেন না। শিরোনামের পরে আটকে যাওয়ার মুলত দুটি কারন ক. আপনার শিরোনামে কোন সমস্যা আছে কিন্তু তা আপনি মানতে নারাজ। যেমন আপনি চরিত্র ১ থেকে ৩ এ যেতে পারছেন না। কারন মাঝখানে চরিত্র ২ কোন ভাবেই আপনি ক্লিয়ার করতে পারছেন না। বাট সেটা আপনি মানতে চাচ্ছেন না।
খ. আপনার শিরোনাম ঠিক আছে, কিন্তু কোন একটা কিন্তু কোন একটা অংশে আপনি আটকে আছেন। আপনার মনে হচ্ছে এটা বোরিং বা দুটি সুন্দর দৃশ্য আপনি কল্পনায় রাখলেও কিভাবে সাজাবেন বুঝতে পারছেন না।
৪। আপনি লেখার মাঝখানেই আটকে গেলেন এবং বুঝতে পারছেন না এরপরে কি হবেঃ
৩ নাম্বার সমস্যার কিছুটা বিপরীত এটি। হয় আপনার কাছে কোন শিরোনাম না অথবা আপনি কিছু ছেড়ে যাচ্ছেন। গতকাল আপনি অনেক কিছু চিন্তা করেছেন, অনেক কিছু লিখেছেন অনেক ভাবনা গেঁথেছেন। কিন্তু আজকে আপনি আপনার লেখাটা খুলে বুঝতে পারছেন না কি হয়েছিল বা কি হবে। আপনার চিন্তার মাঝে হঠাৎ এমন ছেদ পড়ল যে আপনি বুঝতেই পারছেন না কি লিখবেন। তবে এ সমস্যার সমাধান হল আগে কি লিখেছেন তা আবার বেশ কয়েকবার দেখা এবং প্লট টা আবার ভেবে দেখা। অথবা লেখার মধ্যে নতুন কোন টুইস্ট নিয়ে আসতে হবে।
৫। অনেক কিছু লেখার পর বুঝতে পারলেন আপনার লেখা ভুল পথে মোড় নিয়েছে এবং কোন পথেই গেল না লেখাটাঃ
এটিই সবচেয়ে করুন অবস্থা। আপনি এমসিকিউ এর গোল্লা ভরাট করছেন ১ থেকে। ৫০ তম গোল্লা টা ভরাট করতে গিয়ে আপনি বুঝতে পারলেন আপনি আসলে ২ নাম্বার গোল্লা থেকে ভরাট শুরু করেছিলেন এবং এখন আপনি ৫১ নাম্বার গোল্লা টা ভরাট করছেন। তবে এ ক্ষেত্রে খুব বেশি কনফিডেনট না থাকলে আর না এগোনই ভাল হবে। অথবা সামনে এগিয়ে পুকুর না বানিয়ে পিছে গিয়ে করে আসা গর্ত ভরাট করে এগিয়ে আসা টা ভাল হবে।
৬। আপনি নিজেই আপনার সৃষ্ট চরিত্র নিয়ে বিরক্ত, না কিছুই হচ্ছে নাঃ
আপনি এমন কিছু চরিত্র সৃষ্টি করলেন খুবই আকর্ষণীয় এবং বোল্ড। সেই চরিত্র নিয়ে আপনি ডজন ডজন লাইন ও লিখে ফেলেছেন। কিন্তু এক পর্যায়ে গিয়ে আপনি নিজেই ভাবছেন দূর কি লিখেছি। অথবা এমন কিছু চরিত্র সৃষ্টি করলেন যেগুলাকে আপনি আর প্রয়োজনও মনে করছেন না। তবে এ ক্ষেত্রে একটা সুবিধা হল হঠাৎ করে কোন এক ছোট চরিত্র এসে কেন্দ্রীয় চরিত্রের আসন দখল করে নেয়।
৭। “পাছে লোকে কিছু বলে” টাইপ স্বভাবঃ
অনেকের এটা হয় যে আমি এটা লিখছি তাহলে অন্যরা কি ভাববে বা কিভাবে নিবে। অথবা ‘সেলফ ক্রিটিক’ হওয়া। আপনার মনে হচ্ছে যা লিখছেন ছাইপাঁশ হচ্ছে। কিন্তু পাঠকের কাছে উল্টাও হতে পারে। আপনার যে লেখা আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য না তা অন্যরা লুফেও নিতে পারে।
৮। সঠিক শব্দচয়নে ভাব প্রকাশে অক্ষমতাঃ
আপনি জানেন আপনি কি লিখতে যাচ্ছেন, কি করতে যাচ্ছেন বা আপনার লেখা কোন দিকে মোড় নিবে। কিন্তু আপনি এগুতে পারছেন না কোনভাবেই সঠিক ভাবে মনের ভাব প্রকাশ করার মত সঠিক শব্দ বা বাক্য পাচ্ছেন না বলে। এবং হঠা ৎ করে এমন একটা শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করলেন যেটা লেখার অর্থকেই ভিন্ন খাতে পরিচালিত করে। এক্ষেত্রে একটা লাইনের জন্য ও কিছু সময় ব্যয় করে সঠিক শব্দ ব্যাবহার করাই শ্রেয়। আপনি যেটা বুঝাতে চাচ্ছেন সেটা বুঝতে না পারলে তাড়াহুড়া করে কিছু লিখলে সেটার কোন মানে থাকবেনা।
৯। আপনার মাথায় খুব চমৎকার একটা লেখার প্লট আছে, কিন্তু যখনই লিখতে গেলেন আপনি ব্ল্যাক আউটঃ
হুম সিরিয়াস অবস্থা। আপনার মাথায় সুন্দর লেখার প্লট কিন্তু লিখতে পারছেন না এর চেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার আর হতে পারেনা। তবে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। আপনার আইডিয়া টা হয়তো চমৎকার। পরে অন্যকোন গল্পে বা লেখায় হয়তো আপনি এটি ইনট্রুডিউস করাতে পারবেন।
১০। পুনঃ পড়তে গিয়ে দেখলেন আপনি যা লিখেছেন তার কিছুই ঠিকমত পাচ্ছেন না বা দেখছেন নাঃ
‘রিভাইসিং ইজ এ নাইটম্যায়ার’(অবশ্য পড়ালেখার ক্ষেত্রে নয়)। পুনঃ পড়তে গেলেই দেখা যায় দূর কি লিখলাম যা লিখলাম তাইই তো নাই। কোথায় কি লিখলাম। তবে এর একটা সুবিধা হল অনেক বিখ্যাত লেখক যারা লিখে আবার পড়েননি। পরে অন্য কেউ না জানলেও নিজে জেনেছেন আসলে যা তিনি লিখতে চেয়েছেন টা লেখাতে ছিল না।
এই লেখার আসল লিঙ্ক এইখানে
বিদ্রঃ এই লেখাটা লেখার সময় এক হাজার বার ভেবেছি পাঠক রা হয়তো পইড়া হাসবে কি সব ভারতীয় চুল লিখলাম। আর দুই হাজার বার ভেবেছি মডু ভাই আইসা বলব 'এসব কপি পেস্ট দিয়া প্রথম পেইজ ভরানির কোন দরকার আছে? আপনেরা এইসব ছাইপাঁশ লেখেন বলেই তো বলগের আসল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হচ্ছে'। এবং মনে হয় ইহাকেই বলে "WRITER’S BLOCK"
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:২২