খলিল ভাইকে জানা যাবে এই লেখায়
খলিল ভাই-২য় পর্ব
১।
সোনার কেইসে ফেঁসে প্রায় অনেকদিন হয়ে এল খলিল ভাই জেলে। আমরা জনাকয়েক ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে বসলাম। খলিল ভাই যতই খারাপ হোক বা বোকা হোক ছোট ভাই বলে একদিন আমাদের কাঁধে হাত রেখেছেন। দোয়া মহব্বতও দেখিয়েছেন। তাঁর উপর জেঠীও কাঁদতে কাঁদতে দু’একবার আমাদের কে বললেন খলিল ভাইয়ের খোঁজ নিতে। তাই আমাদের একটা দায়িত্ব আছে তাঁর খোঁজ খবর নেয়া। সেই ভাবনা থেকেই আমি আর আমার এক ছোট ভাই ডিসিশন নিলাম আমরা খলিল ভাইকে দেখতে যাব। উপরের মহলের এক মামাকে ধরে একদিন দেখতে যাওয়ার অনুমতি ও নিয়ে নিলাম।
খলিল ভাই খবর পাঠিয়েছেন উনি সরিষা ইলিশ আর ঢ্যাঁড়স ভাজি খাবেন। ঢ্যাঁড়স কি এক কারনে খলিল ভাইয়ের খুব পছন্দ। গ্রামে এক বার ঢ্যাঁড়স ক্ষেতে কি আকাম করতে গিয়ে নাকি ধরাও খেয়েছিলেন তিনি। এর পর থেকে এলাকায় ‘ঢ্যাঁড়স মিয়া’ নামে একটা রটনা রটেছিল। সে গল্প আরেকদিন হবে।
থানা হাজত ব্যাপারটা মোটেও সুখকর কোন জায়গা না। লোকে বলে “থানার দিকে নাকি কানা ও যাইতে চায়না”। শেষ কোন একবার আব্বার সাথে গিয়েছিলাম নির্বাচনের সময় লাইসেন্স করা অস্ত্রটা জমা দেয়ার জন্য। তবে সেইবার একটা সেই লেভেল টাইপ ভাব ছিল। ইয়ু ম্যান বুঝতে হবে। কিন্তু এইবার তো গেলাম আসামি দেখতে। তাই ভাব খানা ও আমাদের চোরের মত। যাইহোক আমাদের স্ট্রিক্টলি বলে দেয়া হল ৩০ মিনিটের বেশি থাকা যাবেনা।
খলিল ভাইয়ের সেলের দরজায় পৌঁছতেই গেটের কনস্টেবল বলল গত রাতে নাকি ডোজ বেশি চলছে। কারন কি জানতে চাইলে জানালো কি খাবার আনবে এই খবরটা নিতে জেলার সাহেব আসলে খলিল ভাই নাকি বলেছে সরিষা ইলিশ আর লেডিস ফিঙ্গার ভাজি। জেলার সাহেব লেডিস ফিঙ্গার ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে খেইচ্চা পিডাইসে আর বলেছে “হালারপো জেলে বইসা লেডিস ফিঙ্গার চাস?”। তিনি অবশ্য ঢ্যাঁড়স বলতে পারতেন। কিন্তু ‘ঢ্যাঁড়স মিয়া’ স্ক্যাম্প এর পর তিনি এটাকে আর বাংলায় বলেন না, যেমন আমাদের এলাকার এক ভাবী ভূমিকম্প কে ধাক্কা বলেন। কখনো ভূমিকম্প হলে উনি বলেন “আজকে যে ধাক্কা গেসে টের পাইছো”? কারন উনার স্বামীকে এলাকায় সবাই ভূকম্প বলে ডাকে।
খলিল ভাইকে চেনা যাচ্ছে না। ঠিকমত না খেতে পেয়ে বুকের সাথে বুক আর পেটের সাথে পিট লেগে গেছে। আবেগ দেখিয়ে একটু চোখে পানি আনতে যাব ঠিক সেই সময় ছোট ভাই খলিল ভাইকে প্রশ্ন করে বসল-
-“ভাই সোনা দিসেন?”
‘না’ খলিল ভাই উত্তর দিল। ছোট ভাই কেন জিজ্ঞেস করাতেই খলিল ভাই ধমক দিয়া বলল-
-আররে বেটা একটা একটা মাত্র সোনার বার নিয়া আসছি ওইটাই তো দিয়ে দিলাম। আর কত্তেইকা দিমু?
না খলিল ভাইকে চ্যাতানো যাবে না। খাবারের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লেন তিনি। উনার কোন এক আত্মীয় উকিল আছেন। তাঁকে বলে তাড়াতাড়ি তাঁর জামিনের ব্যবস্থা করার কথা আমাদের কে বললেন খলিল ভাই।
২।
বৃষ্টি আজ ছাদের কোনায় তার চেয়ারটিতে বসা নেই। অর্ধেক পড়া শীর্ষেন্দুর ‘পার্থিব’ বইটাও হাতে নেই। নিয়ম করে সে আজ চুল খোলা রাখেনি। এমনকি চোখে ঘুটঘুটে কাল কাজল ও পরেনি। চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে এই বৃষ্টি স্বাভাবিক বৃষ্টি না। কিন্তু বৃষ্টিকে আজকেও অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে ঝুম বর্ষণের পর হালকা লাল টিকরে পড়া সূর্যের আলোর মত। মনের মানুষরা মনে হয় এরকমই হয়। যাইহোক, যেভাবেই হোক সুন্দর। মনে হয় মনের চোখ দিয়ে দেখার কারনে এরকমই হয়।
গতকাল ফোরথ সেমিস্টারের এক্সাম শেষ করেছে বৃষ্টি। খুশি থাকার কথা। কিন্তু চেহারায় সেই খুশি নেই।
-খলিল ভাইকে দেখতে গিয়েছিলেন?
-হ্যাঁ।
-কেমন আছেন উনি?
-ভাল নেই!
আর কোন কথা বলল না বৃষ্টি। আমার এক শব্দ বা দুই শব্দের উত্তর বৃষ্টি কোন কালেই পছন্দ করেনি। সবসময় আমার ওয়ার্ড স্টক নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে। তবে কিছুক্ষন চুপ থেকে যে কথাটি সে বলেছে তার জন্য আমিও মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
প্রিয়জন হারানোর ব্যথা আমার নেই বললেই চলে।আর মনের ঘরে তো খালি একজনেরই বসবাস। বাসায় সবার ছোট হওয়াতে অতিরিক্ত আদরে বড় হয়েছি বা হচ্ছি। বুকের ভেতরের চিনচিনে ব্যথা ব্যাপারটার সাথে আমি পরিচিত নই। প্রেমে ব্যর্থ বন্ধু বা গভীর রাতে সঙ্গীত বাংলা মিউজিক চ্যানেলে সানি লিওনের ‘লাভ ফরেভার’ নামক এক ওষুধের বিজ্ঞাপনেই শুধু আমি এই শব্দটা শুনেছি। কিন্তু আজ আমি চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছি। মনে হচ্ছে আমার পৃথিবী ভেঙে পড়ছে। আর আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। দম আটকে আসছে। মনের ঘরে শূন্যতা অনুভব করছি।
সপ্তাহখানেক আগে দেখে যাওয়া ছেলেপক্ষ ‘হ্যাঁ’ বলে দিয়েছে বৃষ্টির বাবাকে।
বিদ্রঃ আমার প্রিয় ব্লগারবৃন্দ, যাদের লেখা না পড়ে আমি থাকতে পারিনা তাদের কাছে যেচে ক্ষমা চাচ্ছি। 'বিজি লাইক হেইল' হওয়াতে ব্লগে মোটেও সময় দিতে পারছিনা আর আপনাদের লেখা পড়া হচ্ছে না বলে। আর এই লেখার ১ নাম্বার পার্ট ডাঃ মারজান ভাইকে মনে করে লেখা।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৬