১।
শপিং প্রেমিদের জন্য দিল্লীতে অন্যতম পছন্দের জায়গা হল সাকেট। এক টিকেতে দুই শো দেখার মত এখানে এক জায়গাতেই সবচেয়ে দামি তিনটা শপিং মল রয়েছে। মজার ব্যাপার হল এসব শপিং মলে ভিতরে যত না স্পেইস তার চেয়ে ডাবল স্পেইস বাইরে রাখা হয়েছে যেন লোকজন বসে গল্প আড্ডা দিতে পারে। সুন্দর ঘাসের খালি জায়গা বা কনক্রিটের জমানো চেয়ার বানিয়ে দেয়া হয়েছে। এই জায়গাতে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় সানডে তে। সবাই গল্প গুজব করতে আসে। আর আমার মত অনেক ভাল ভাল ছেলেও আছে যারা বিশেষ করে গরম কালে পাখপাখালি দেখার জন্য যায় সেইবার আমি বসেছিলাম এবং ঠিক সামনের সিটে একটা দিল্লিয়ান মেয়ে। গরমের দিন ছিল। তাই তার পোশাকের অবস্থাও একটু গরিবি হালতের ছিল। এই সিটে আমি আর ওই সিটে সে মাঝখানে সুধু একটা হাঁটার ওয়ে। একবারই আমি তার দিকে তাকিয়েছিলাম। আমার সকল চিন্তা ভাবনার মুখে ছাই দিয়ে সে হঠাৎ আমার পাশে এসে বসল এবং বলল “ক্যান আই স্পেনড সাম কোয়ালিটি টাইম ওয়িথ ইউ?” এবং আমি বেকুব হয়ে গিয়েছিলাম!!!!
সদ্য ব্রেক আপ হওয়া স্রেয়া নামের সেই মেয়েটির সাথে সেই জায়গায় বসে আমি পাক্কা ৪ ঘণ্টা আড্ডা দিয়েছিলাম। তার মতে তাঁকে আমি নতুন জীবন পেতে সাহায্য করেছিলাম ওইদিন। সুখের কথা তার সাথে ফেসবুকে এখনো আমার যোগাযোগ থাকলেও দুঃখের কথা সে এখন তার হাজবেনড সহ অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী
২।
পরশু পরীক্ষা। এখনো পর্যন্তও আমার কিছু রেডি করা হয়নি তেমন। নিশ্চিত ফেইল। কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। আমার ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী মেয়েটির ফোন। ফোন রিসিভ করলাম। ওদিক থেকে সে বলল “শুন, কাল বিকেলে আমি পুরোটা সময় তোমার জন্য রেখেছি। কিছু নোট করেছি। লাইব্রেরিতে থেক। আমি যতটুকু পারি তোমাকে পরীক্ষার পড়া বুঝিয়ে দিব” এবং আমি আবেগে বেকুব হয়ে গেলাম!!! আমার সেই বান্ধবী সম্প্রতি দিল্লী ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতির শিক্ষিকা হিসেবে জয়েন করেছে। পাশাপাশি জওহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছে
৩।
ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রুমে পড়ে রইলাম। ব্যস্ততার মাঝে আমাকে কে দেখাশুনা করবে!! মা’বাপ ও নাই ওখানে। হাকিকত মেনে নিয়ে ডাক্তারের সাথে দেখা করে রুমে পড়ে রইলাম। ঠিক সেই সময় আমার তিন ইন্ডিয়ান ফ্রেন্ড (মেয়ে) পালাক্রমে আমাকে সেবা করতে লাগলো হোস্টেলে সকাল,বিকাল,রাত ধরে আমি নিশ্চিতভাবে আবেগে বেকুব হয়ে গিয়েছিলাম। খুব অল্প দিনেই সুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। তাদের মধ্যে একজন ছিল নিধি। যে কিনা গত মাসে আইসিএস অফিসার হিসেবে ‘Revenue’ সেক্টরে জয়েন করেছে
৪।
মানালি যাওয়ার জন্য জনপথ নামক জায়গায় গেলাম গাড়িতে উঠার জন্য। দেখি সেখানে আগে থেকেই নিধি’র বাবা মা উপস্থিত। আইসা নিধির বাবা আমাকে ডাকল। বলল “ওহে গোস খানে ওয়ালা বাঙ্গালী, গোস টোস,তেল মেলের কোন খাবার খাবা না যাওয়ার পথে। কারন গাড়ি যখন পাহাড় বেয়ে উঠবে তেলের খাবার ও উপরের দিকে উঠে মুখ দিয়ে বের হয় যাবে”। এটা বলেই তিনি তার কারের ডিক্কি খুলে বললেন “এই যে পাহাড়ি রাস্তায় যাওয়ার সময় খাওয়া যায় এরকম বেশ কিছু খাবার আমি তোমার জন্য নিয়ে এসেছি”। আবেগে আমি বেকুব থেকে বেকুবতর হয়ে গিয়েছিলাম পাঠকদের জন্য শিক্ষা, আমার এরকম বমি টাইপ প্রবলেম না থাকলেও পাহাড়ি রাস্তায় জার্নির সময় তেল জাতীয় খাবার আর মাংস যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।
(চলবে………)
বিদ্রঃ দুঃখে বেকুব হওয়ার কাহিনী লিখলে উপন্যাস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। তাই উপন্যাস লিখার ইচ্ছে নাই
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৫৪