ইফতারি টা সেরেই বসে গেলাম থিসিস প্রপোজাল রেডি করার কাজে। ২ মাস যাবত লিটারেচর রিভিউ করতে করতে মাথা জ্যাম হয়ে গিয়েছিল। তার উপর ছাইপাঁশ খেয়ে রোজা রাখা। মোটামটি ক্লান্তই বলা চলে। এরই মধ্যে জেনে গেলাম কাল ঈদ। কিন্তু পরশু যদি প্রপোজাল জমা দিতে না পারি তাইলে সুপারভাইজার খবর করে দিবে। তাই চাপটা একটু বেশিই। কিন্তু না আজ আর টেবিল থেকে নড়া যাবে না। প্রপোজাল এর ফেয়ার কপি রেডি না করে উঠছি না।
৫০০ ওয়ার্ড এর প্রপোজাল রেডি করে ফেয়ার কপি বানিয়ে যখন স্যারকে মেইলটা পাঠালাম ল্যাপটপ এর নিচে ডানপাশে কোনায় তাকিয়ে দেখি ঘড়িতে বাজে ভোর ৪.৩০। আগে থেকেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল সকাল ৬.০০টার সময় হোস্টেলের সামনে ইউনিভার্সিটির বাস আসবে যেটা সবাইকে নিয়ে দিল্লী জামে মসজিদে রওনা দিবে নামাজের জন্য।ভাবলাম এক দেড় ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেয়া যাবে। শুয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙতেই মোবাইলটা হাতে নিয়ে আকাশ থেকে না পরলেও বিছানা থেকে পড়ে গেলাম। ঘড়িতে বাজে সারে আটটা। আর মোবাইলে ২০০ এর উপরে মিসড কল। ভাবতে লাগলাম কি করা যায়!!! জামে মসজিদের জন্য গাড়ি চলে গেছে। তাহলে কাছে মসজিদ কোথায় পাওয়া যায়!! দুইটা মসজিদ আছে। একটা ইন্দিরা গান্ধী এয়ারপোর্ট এর ভিতরে। ওটাতে যেতে অনেক ফর্মালিটি করতে হয় অটা বাদ। আরেকটা আছে আমার হোস্টেল থেকে প্রায় ৫কিমি দূরে রংপুরি নামক জায়গায়। ডিসিশন নিলাম ওটাতেই যাব।
ঝটপট গোসল সেরে রেডি হয়ে নিলাম। বাইরে এসেই ভাগ্যবশত একটা সিএনজিও পেয়ে গেলাম। ১৫ মিনিটে পৌঁছে গেলাম। ততক্ষনে ঘড়িতে ৯.১৫ আর নামাজ হবে ৯.৩০ এ। মসজিদে পৌঁছে দেখি মসজিদের ভিতরে বা বাইরে তিল ধারনের জায়গা নেই। খালি রাস্তার ধারে অনেকেই জায়নামাজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আর ওই রাস্তাটাকে বলা হয় ইন্দিরা গান্ধী এয়ারপোর্ট এর ডোর ওয়ে। ফলে প্রচণ্ড বিজি রোড। আর দিল্লীতে ঈদ এর নামাজ বা জুমার নামাজের দিন সব মসজিদের সামনে প্রচুর পুলিশ থাকে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য। ওইদিনও অইখানে অনেক পুলিশ ছিল। দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম এত বড় খালি রাস্তা থাকতে আমরা দাঁড়িয়ে আছি কেন!! মানুষ নাকি অভ্যাসের দাস। দেশে রাস্তায় নামাজ পড়ে অভ্যাস থাকায় ভাবলাম এখানেও দাঁড়িয়ে যায় কি আর হবে!!দেরি না করে হাতের জায়নামাজটা ছড়িয়ে দিয়ে বসতে যাব এমন সময় এক লোক বলল “ভাই জেল মে জানা হে কিয়া”। এবং ভাল করেই লক্ষ্য করলাম আরেক পাশ থেকে আস্তে আস্তে পুলিশ মামারা আমার দিকেই আসছে। ক্ষণেই মনে পড়ল দিল্লী পুলিশ নাকি খুবই খতরনাক। ক্যামনে বাঁচি ক্যামনে বাঁচি ভাবতে ভাবতেই হুট করে জায়নামাজে নিয়ত বাঁধার মত করে দাঁড়িয়ে পড়লাম।এক পুলিশ আমার হাত ধরতে যাবে এমন সময় আরেক পুলিশ তাকে বলল “আররে ইয়ার উস্কা নামাজ শুরু হ গিয়া হগা, আভ রেহ্নে দে, নামাজ খাতাম হনে দে, ফের দেখাতে হে ইস্কু”। তখন কিন্তু মাত্র মাওলানা সাহেব ওয়াজ করছিলেন। আর সাথে সাথেই দেখলাম আমার দেখাদেখিতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় এক দেড়শ মানুষ রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়ল। পুলিশ গুলা কি করবে ভেবে না পেয়ে রাস্তার দু পাশে ব্যারিকেড ফেলে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিল। এভাবেই আমার কারনে বন্ধ হয়ে গেল দিল্লীর একটি ব্যস্ততম সড়ক
নামাজ শেষ হওয়ার পর যে লোকটা আমাকে জেলের ভয় দেখিয়েছিলেন তিনি আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন “ভাই গত ৩৫ বছর এই মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ি। কোনদিন রাস্তার পাশেই ঠিকমত দাঁড়াতে পারতাম না বিজি রোড তাই পুলিশ ধরবে বলে। তুম তো কামাল কার দিয়া ভাই” । তারে সোজা বাংলায় কইলাম-
“ঘণ্টা হাতে নিয়ে দাঁড়াইয়া থাকলে তো হবে না, বিড়ালের গলায় বাইন্ধাও দিতে হইব”
আমার কথা শুনে বেচারা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:১২