গণমাধ্যম হচ্ছে সংগৃহীত সকল ধরণের মাধ্যম, যা প্রযুক্তিগতভাবে গণযোগাযোগ কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের গণমাধ্যম বলতে বাংলাদেশের মুদ্রিত, সম্প্রচারিত এবং অনলাইন গণমাধ্যমকে বোঝানো হয়। বাংলাদেশে গনমাধ্যম সরকারি ও বেসরকারির একটি মিশ্রণ। বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে গণমাধ্যমকে প্রধান ৮টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো - বই, সংবাদপত্র, সাময়িকী, ধারণ যন্ত্র, রেডিও, সিনেমা, টেলিভিশন এবং ইন্টারনেট। মোবাইল বা সেল ফোন, কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটকে অনেক সময় নতুন-যুগের গণমাধ্যম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ইন্টারনেট স্বীয় ক্ষমতাবলে ইতোমধ্যেই অন্যতম গণমাধ্যম হিসেবে ব্যাপক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। একটি মিডিয়া বা মাধ্যম, মানুষ কিংবা সমাজের কিছু বিষয় নিয়ে কথা বললেই সেটি গণমাধ্যম হয়ে যায় না। গণমাধ্যম হতে হলে মিডিয়ার সঙ্গে মানুষের সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকতে হয়।
ব্লগ বা ব্লগিং এখন আর আমাদের দেশে নতুন নয়। ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে "সামহোয়্যারইন ব্লগ" এর মাধ্যমে প্রথম বাংলা ব্লগের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে চালু হয় সচলায়তন, আমার ব্লগ, নগরবালক, নির্মাণ ব্লগ (মুক্তাঙ্গন), টেকটিউনস, সোনার বাংলাদেশ এবং বিজ্ঞান প্রযুক্তিসহ আরো কিছু বাংলা ব্লগ। ২০০৮ সালের নভেম্বরে প্রথম আলো ব্লগের যাত্রা শুরু হলে, বাংলায় ব্লগচর্চা আরো বেগবান হয়।
ব্লগকে বলা যায় অনলাইন দিনপঞ্জি। প্রথম দিকে যারা ব্লগ লিখতেন, তাদের অধিকাংশ মূলত নিজেদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি ওয়েবে লিপিবদ্ধ করে রাখতেন। সে অবস্থা থেকে ব্লগ এখন বেরিয়ে এসেছে এবং ব্লগকে একটি আলাদা মিডিয়ার মর্যাদা দেয়া যায় কিনা, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমাদের দেশে প্রচলিত গণমাধ্যমগুলোর মূল সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, সেখানে পাঠকের দিক থেকে লেখক বা বক্তার সঙ্গে সরাসরি মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ খুবই কম। এগুলো মূলত একতরফা বা একপাক্ষিক। কিন্তু ব্লগে মন্তব্যের মাধ্যমে লেখকের সঙ্গে পাঠকের সরাসরি যোগাযোগ করা যায়। লেখাটি ভালো, না মন্দ সেটিও সরাসরি জানিয়ে দেয়া যায়। লেখক যদি ভুল তথ্য দিয়ে লেখা প্রকাশ কিংবা কোন অসত্য তথ্য প্রদান করে, তবে এর প্রতিবাদও করা যায়। প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় লেখক এবং পাঠকের মধ্যে এ ধরনের মিথস্ক্রিয়া অনুপস্থিত।
ব্লগের যে বৈশিষ্ট্যটি বর্তমানে সংবাদ প্রদানের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখছে সেটি হলো, ব্লগে তাৎক্ষণিক সংবাদ পাওয়া যায়। ছড়িয়ে পড়ে মূহুর্তে। জানা যায় পাঠকদের প্রতিক্রিয়া। কারণ অন্যান্য মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের জন্য যেসব পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় কিংবা সংবাদটি তৈরি করতে যে সময় ব্যয় হয়, ব্লগে তার তেমন প্রয়োজন হয়না। একজন ব্লগার সংবাদটি পাবার সাথে সাথেই নিজের মতো করে ব্লগে প্রকাশ করে, তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা প্রথমে কিন্তু অনেকে জেনেছে এই ব্লগের মাধ্যমেই। তাই যে কোন ঘটনা ঘটামাত্রই ছড়িয়ে দেবার ক্ষমতা রয়েছে - একমাত্র ব্লগেরই।
ব্লগের চরিত্র মূলত বৈশ্বিক। অন্যান্য গণমাধ্যমগুলোতে কারা লিখবেন এবং কোন বিষয়ে, সেটি নিয়ন্ত্রিত হয় একটি কাঠামোর মধ্য থেকে। লেখক সেই কাঠামো ভাঙতে পারেন না। অপরদিকে ব্লগ লেখকদের ভৌগলিক সীমানা নেই, নেই কোন কাঠামোগত বাধ্যবাধকতা। বিভিন্ন দেশ থেকে, ভিন্ন প্রেক্ষাপটে অবস্থান করে তারা লিখছেন। কিন্তু পূর্ণ গণমাধ্যম হওয়ার ক্ষেত্রে যেরকম দায়িত্বশীলতা প্রয়োজন, সেটি ব্লগ থেকে এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ এখানে যা ইচ্ছে তা লেখা যায়, এটা যেমন ব্লগের শক্তি তেমনি এটি আবার বিশ্বাসযোগ্য গণমাধ্যম হওয়ার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। ব্লগে বর্তমানে যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো, এর দায়বদ্ধতা। ব্লগ থেকে পাওয়া খবর অনেকে প্রথমে বিশ্বাস করতে চান না, খবরের সত্যতা যাচাই করতে চান। কেননা কিছু ব্লগার কিছুটা বাড়িয়ে লিখেন এবং সঠিক তথ্য আড়াল করে ভুল তথ্য প্রকাশ করেন। যেটি কোনভাবেই কাম্য নয়। ব্লগারদের মধ্যে দায়িত্বশীলতা বাড়লে, ভবিষ্যতে গণমাধ্যম হিসেবে ব্লগ একটি শক্ত অবস্থানে চলে যাবে।
পত্রিকা, পত্রিকার জায়গাতেই আছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়া আসায় পত্রিকার কোন ক্ষতি হয়নি। ব্লগ আরেকটা পরিপূরক মাধ্যম হতে পারে। একটি কার্যকর গণমাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার জন্য আমাদের দুইটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, ব্লগাররা সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে আরো দায়িত্বশীল হওয়া এবং ইন্টারনেট ব্যবস্থার প্রসার। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার সহজলভ্য না হওয়ায় ব্লগ এখনো শহুরে নাগরিক সমাজের নাগালের বাইরে যেতে পারেনি। এ সীমাবদ্ধতাটুকু কাটিয়ে উঠতে পারলে একটি কার্যকর বিকল্প বা পরিপূরক গণমাধ্যম হওয়ার, সব সম্ভাবনা ব্লগের মধ্যেই রয়েছে।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, আমার বন্ধু ব্লগ (গৌতমের ব্লগ) এবং Google Search।
❂ পোস্টটি সপ্তম বাংলা ব্লগ দিবস উপলক্ষে তৈরি করা হয়েছে।
❂ আমি চেষ্টা করবো প্রতিটি প্রতি উত্তরে গণমাধ্যম হিসেবে বাংলা ব্লগকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য আমাদেরকে (ব্লগারদের) কি কি বিষয়ে সচেতন হতে হবে?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১০