১।
ইস ! মাত্র দু’দিন আগে একটা কাজ শেষ করে, বাস থেকে নামার সময় বাঁ পায়ের রগে টান লাগে। টান লাগার সময় অনুভব পেলাম, মেরুদণ্ডেও যেন টান লাগল। পা’টা ভারী ভারী মনে হল। হাঁটা যাচ্ছে না। পা মাটিতে ফেললেই টানটা ফিরে আসছে। কোন মতে রাস্তায়, পা ঘষে ঘষে বাড়ি ফিরলাম। ভাগ্য ভালো, তখন প্রায় রাত ৮টার মতো বাজে। তাই কেউ তেমনভাবে আমাকে খেয়াল করেনি।
পরদিন বাবা সাথে করে নিয়ে গিয়েছিল, অর্থোপেডিক এবং নিউরোসার্জনের কাছে। কারণ পরিচিত একজন বলেছিল, দু’জনকেই দেখাতে। উদ্দেশ্য তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়া যায় কিনা ! না, মোটামুটি দু’জনেরই বক্তব্য এক, সাত থেকে দশ দিন পা টান করে সোজা রাখতে হবে। কোন হাঁটা যাবে না।
তিন দিন পর, অনার্স ২য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা। কার্জন হলে। মিরপুর দশ থেকে যেতে হবে। শুয়ে-বসে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে তেমন কোন সমস্যা হলো না। তাই হাতে একটু সময় নিয়ে, এলাকার ছোট ভাইকে সঙ্গি করে একটা সিএনজি নিয়ে বের হয়ে পড়ি। এ মা, একি !! শ্যামলীতে আসার পর সিএনজি আর চলে না। আগে নামা হয়নি। কারণ হাঁটতে পারবো না। তাই সামনে পিছনে গাড়ির জটলা বেঁধে গেছে। এক পাশের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। লোকমুখে শোনা যাচ্ছে, একজন নাকি ভিআইপি আসবে ! তার জন্যই শতশত সাধারণ মানুষের এই দুর্ভোগ। সাধারণ মানুষগুলোর কি স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার নেই !
স্বাধীন দেশে এ কোন পরাধীন আমি !
২।
কি, আমাকে চেনা চেনা মনে হচ্ছে ! ভয় পাচ্ছো। নাকি আমাকে দেখে ঘাবড়ে গেলে। একটু অবাক হচ্ছো, সেটা মেনে নেওয়া যায়। কারণ আমি, তোমার রূপ নিয়ে তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যেতে এসেছি। তুমি এখন আর কোন কথা বলতে বা শব্দ করতে পারবে না। শুধু মরা মাছের দৃষ্টি নিয়ে কিছুক্ষণ আমাকে দেখতে পাবে। তোমার প্রাণ পাখি এখনো উড়ে যায়নি। তাই তোমার সাথে থাকা এ মানুষগুলোর আশা, তুমি বেঁচে যাবে !
দেখতে পাচ্ছো, ওপাশের রাস্তা একদম ফাঁকা। তোমাদের দেশের একজন নাকি ভিআইপি আসবে। তাই এপাশে তোমার অ্যাম্বুলেন্স আর চলছে না। চালক ভেবেছিল সাধারণ জ্যাম। তাই আর গাড়ি, আইন ভেঙ্গে বিপরীত লেনে ছুটে যায়নি। এখন আর গাড়ি ঘুরাতে পারবে না। সামনে-পিছনে তোমার বেঁচে থাকার প্রতিবন্ধকতা।
আমাকেও হঠাৎ হুকুম করে বলা হলো, তোমাকে নিয়ে আসতে। আরে বোকা, এখনো চিনতে পারোনি। আমিই যমদূত। তোমার আত্মা নিতে এসেছি। যদিও তোমার আরো কিছু দিন বেঁচে থাকার কথা ছিল। আশা ছিল। চেষ্টা করার সুযোগ ছিল।
কিন্তু না, স্বাধীন দেশে তুমি পরাধীন মৃত্যু পথযাত্রী ! যেখানে অনিয়ম করে নিয়ম ভাঙ্গে প্রতিনিয়ত।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৪