।১।
হুমকি দাতা একটা আহাম্মক। অপরিপক্ক। ক্ষ্যাত। বেকুব। যদিও হুমকি দেবার সময় দেশ থেকে পলাতক, অন্যতম এবং প্রধান সন্ত্রাসীর নাম ব্যবহার করেছিল। তবুও হুমকি গৃহীতার সাথে সে বেকুবের কিছুদিন আগে এ প্রসঙ্গে, অপ্রত্যক্ষভাবে একটা যোগাযোগ হয়েছিল। আরে বাবা, এটাতো ডিজিটাল যুগ। অনলাইনের যুগ। ফেসবুকের যুগ। তাছাড়া, হুমকি দাতা এবং গৃহীতা একই ডিজিটাল বৃত্তের উপর ভিন্ন ভিন্ন চাপে বসবাস, যে বৃত্তের পরিধি ও তেমন বড় নয়। তাই হুমকি গৃহীতা আগেই বুঝেছিল, কাজটি ঐ আহাম্মকের এবং হুমকি পাবার সময়ই কাঁদো কাঁদো সুরে বলে উঠে, “ভাই, আমিতো দিনে এনে দিনে খাই। মাস শেষে ধার করি। শুধু কি পদবী দেখলে হবে? আমি ক্যামনে আপনেরে চার লক্ষ টাকা দিমু?“
এসব আহাম্মকের জন্য করুণা হয়। নির্বিণ্ণ লাগে। ধুর, শুধুশুধু দুইটি দিন নষ্ট হলো।
।২।
হুমকি নোটিসটি রাখা ছিল, বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কর্মব্যস্তময় বৃহত্তর শপিং কমপ্লেক্সের অভিযোগ বক্সে। তাতে সাদা অফসেট কাগজে কালো কালিতে টাইপ করা ছিল, “আগামী নয়দিনের মধ্যে এ ভবনটি বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া হবে। বিস্তারিত জানতে অবিলম্বে নিচের নাম্বারে যোগাযোগ করুন। ০১৭১.......।“ এর বেশী কিছু লেখা ছিল না।
এর প্রায় ৪০ কিংবা ৪৩ দিন পর, হুমকি দাতা ঐ নাম্বারে একটি কল পায়। ওপাশ থেকে বোমার কথা জিজ্ঞেস করার সাথে সাথে সে বলে উঠে, “আরে ভাই, নয়দিন তো সেই কবে পার হয়ে গেছে ! তারমানে আপনারা অভিযোগ বক্সটি গুরুত্বসহকারে নেন না। তাহলে আর রেখে লাভ কি ! “
লাইনটি কেঁটে যায়। এরপর আর কোনদিন ঐ নাম্বারে সংযোগ পাওয়া যায়নি।
।৩।
হুমকি পাইনি সেটা বলছি না। যখন বাংলাদেশে প্রথম মধ্যবিত্তের নাগালে মোবাইল ফোন আসল, তখন মধ্যরাতে ভুল করে কোন নেশাখোর ফোন দিয়ে উল্টোপাল্টো কথায় হুমকি বা নোংরা কথা বলেছে। পাত্তা দেইনি এবং ভয় পাবার প্রশ্নই আসেনি। বরং হেসেছি। কবি কিংবা দুঃসাহসী প্রেমিক, কোনটাই ছিলাম না। তাই প্রণয়ালয় থেকে সুশ্রাব্য কোন হুমকি ও ভাগ্যে জোটেনি। যা বলছিলাম, সব ছিল তরঙ্গ ভিত্তিক হুমকির কথা।
মুখোমুখি রাশভারী, হুমকির কথা কখনো চিন্তা করা হয়নি। কোন কারণ ছিল না। বেশতো পার করে দিলাম, নিষ্কলুষ ২৬টি বছর। তবুও পেলাম, সেই প্রধ্বংস হুমকি। নিজের আত্মারামের জন্য নয়। সেটা ছিল তোমাকে ছাড়ার, হুমকি !
আর হুমকি দাতা ছিলেন, আমার বাবা।
আগের অল্প গল্পসমূহ:
অল্প গল্প: এক
অল্প গল্প: দুই
অল্প গল্প: তিন
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৪