somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৫ আগষ্ট শোকদিবস : বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক চিন্তা এবং বাংলাদেশের বাম ও ইসলামিকদের রাজনীতি

১৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৫ আগষ্ট শোকদিবস : বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক চিন্তা এবং বাংলাদেশের বাম ও ইসলামিকদের রাজনীতি
সৈয়দ মবনু

১৫ আগষ্ট এলেই ভাবনায় বঙ্গবন্ধু, একাত্তর এবং ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের বিভিন্ন ঘটনা উঁকি দিয়ে নাড়িয়ে যায়। যে মানুষটি জীবন-মৃত্যুর মুখোমুখি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের গতিকে চূড়ান্ত সফলতার দিকে নিয়ে গেলো, অবশেষে তাঁকে নিজ জাতির কিছু মানুষই হত্যা করলো! বিষয়টা আশ্চর্যজনক, মর্মান্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য। এই বিষয় নিয়ে অনেক কথা অতীতের মিটিং, মিছিল এবং লেখালেখিতে এসেছে। খ-িতভাবে বিচারও হয়েছে। কিন্তু কেন এমন ঘটনা ঘটলো? এই প্রশ্নের বিচার-বিশ্লেষণ নিরপেক্ষভাবে খুব একটা হয়েছে বলে আমাদের মনে হয় না। আমরা মনে করি স্থিতিশীল বাংলাদেশের জন্য ইতিহাসের নিরপেক্ষ একটা বিচার-বিশ্লেষণের খুবই প্রয়োজন। আমরা জানি, ফারুক-রশিদ গং বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। আমাদের এই জানা ভুল নয়। তবে কিন্তু এখানেও রয়েছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি প্রথম আঙ্গুল উঠিয়ে কথা বলেছেন তাঁরই রাজনৈতিক সহকর্মী তাজ উদ্দিন আহমদ। বঙ্গবন্ধু হত্যার পটভূমি বলতে গেলে এখান থেকেই সূত্রপাত। আমরা বলছি না বঙ্গবন্ধু হত্যায় তাজ উদ্দিন আহমদের হাত ছিলো। তবে পটভূমি তৈরিতে তাঁর ভূমিকা অবশ্যই ছিলো। তাজ উদ্দিন আহমদের সাথে বঙ্গবন্ধুর মূল সংঘাতটা ছিলো আদর্শিক। তিনি ছিলেন চিন্তা-চেতনায় কিছু সংখ্যক বামদের গুরু এবং ভারতের খুব ঘণিষ্টদের একজন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন-এর বিপরীত। তিনি ছিলেন একজন খাঁটি বাঙালি মুসলমান। বটগাছে আশ্রয় নেওয়া ভূতের মতো তাঁর ছায়ায় কিছু বামরা আশ্রয় নিয়েছিলো এবং এই আশ্রয়ের প্রথম পথ খুলে দিয়েছিলেন তাজ উদ্দিন আহমদ। অনেকের ধারণা, বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী পরিষদের অনেক তথ্য ভারতকে সাপ্লাই করতেন তাজ উদ্দিন আহমদ। আমার কাছে এই ধারণার পক্ষে কোন দলিল-প্রমাণ নেই শুধু কিছু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বিশ্লেষণ ছাড়া। এখানে বিশ্লেষণকে সঠিক স্থানে নিয়ে যেতে কিছু প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়া খুবই জরুরী।

১) একাত্তরে ভারতে বসে অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমদের ভূমিকা কি ছিলো?

২) স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের জেলে রেখে তাজ উদ্দিন আহমদ ভারতের সাথে যে চুক্তি করেছিলেন বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে সেই চুক্তির উপর নারাজি কেন প্রকাশ করেছিলেন?

৩) যে মন্ত্রী সভায় বঙ্গবন্ধু ওআইসি সম্মেলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেখানে এমন কে ছিলো যে এই সংবাদ ভারতের কাছে মূহুর্তের মধ্যে পৌঁছিয়েছিলো?

৪) কেন মন্ত্রী পরিষদ থেকে তাজ উদ্দিন আহমদকে বাদ দিতে বঙ্গবন্ধু বাধ্য হয়েছিলেন?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়ে গেলে বুঝা যাবে তাজ উদ্দিন আহমদ কতটুকু বঙ্গবন্ধুর শত্রু কিংবা মিত্র ছিলেন।

দুই
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলার স্বাধীনতা যুদ্ধের আধ্যাত্মিক এবং মাটি ও মানুষের নেতা। তিনি জানতেন কিংবা জানতেন না, তবু তা সত্য ছিলো যে, আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য, আমাদের মুক্তির সংগ্রামকে গতিশীল করে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য তাঁর বেঁচে থাকাটা খুবই জরুরী ছিলো। তাই শ্রদ্ধেয় তাজ উদ্দিন আহমদ যখন তাঁকে আন্ডার গ্রাউন্ডে গিয়ে সংগ্রাম করার জন্য বুদ্ধি দিয়েছেন তখন তিনি তা গ্রহণ করেননি। মরহুম তাজ উদ্দিনের মেয়ে শারমিন আহমদের মতে তিনি সেদিন আন্ডার গ্রাউন্ডে না গিয়ে স্বেচ্ছাবন্দি হয়েছেন পাক সরকারের কাছে। এই স্বেচ্ছাবন্দিকে শারমিন আহমদ বলেছেন ‘আত্মহত্যা’। শারমিন আহমদ এবিষয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ব্যঙ্গও করেছেন। (তাজ উদ্দিন আহমদ, নেতা ও পিতা, পৃষ্টা ৫৯-৬০)।

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের রচয়িতা সাংবাদিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী আমাদেরকে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, শহীদ হোসেন সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে পুর্নগঠিত আওয়ামী লীগে শেখ মুজিবের পিছনে প্রকৃত বুদ্ধিদাতা ও কর্মী পুরুষ ছিলেন তাজ উদ্দিন।’ (একজন বিস্মৃত নেতার স্মৃতিকথা, যায়যায় দিন, ১১ জুন ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দ, পৃষ্টা ৪)।

শারমিন আহমদের ‘স্বেচ্ছাবন্দি’ এবং সাংবাদিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর ‘শেখ মুজিবের পিছনে প্রকৃত বুদ্ধিদাতা ও কর্মী পুরুষ ছিলেন তাজ উদ্দিন’ কথাটা যদি সত্য হয় তবে প্রশ্ন জাগে,

১) বঙ্গবন্ধু তাজ উদ্দিন আহমদের পরামর্শ ‘আন্ডার গ্রাউন্ড’-এ যাওয়াকে উপেক্ষা করে কেন ‘স্বেচ্ছাবন্দি’ মেনে নিলেন?
২) তা হলে কি বঙ্গবন্ধু তাজ উদ্দিন আহমদের পরামর্শের উপর বিশ্বাস রাখতে পারছিলেন না?
৩) না, তাজ উদ্দিন আহমদের চিন্তার সাথে বঙ্গবন্ধুর চিন্তার দূরত্ব ছিলো?
৪) শারমিন আহমদের বক্তব্য কি প্রমাণ করে না যে দুজনের চিন্তার দূরত্ব একাত্তর থেকেই শুরু হয়েগিয়েছিলো, যা স্বাধীনতার পর বিভিন্নভাবে প্রকাশ্যে এসেছে?
৫) শারমিন আহমদ তাঁর বইতে প্রমাণ করতে চেয়েছেন, সেদিন তাজ উদ্দিন আহমদের পরামর্শে বঙ্গবন্ধু আন্ডার গ্রাউন্ডে না গিয়ে আত্মহত্যার মতো ভুল করেছেন, কথাটা কি সত্য? না তা সত্য, সেদিন বঙ্গবন্ধু আন্ডার গ্রাউন্ডে গেলে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবচে বড় ভুল হতো এবং তা-ই হতো প্রকৃত আত্মহত্যা?

কেউ যদি এখানে এসে বলে, তাজ উদ্দিন আহমদ বঙ্গবন্ধুকে আলো থেকে অন্ধকারে নিতে চেয়েছেন ‘আন্ডার গ্রাউন্ড’-এ যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে। বঙ্গবন্ধুৃ সেদিন আন্ডার গ্রাউন্ডে গেলেই আটকে যেতেন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের খপ্পরে। এমনও হওয়া বিচিত্র ছিলো না যে, বাঙলার স্বাধীনতার শত্রুরা তাকে ক্রসফারে হত্যা করতো কিংবা যেকোনভাবে জিম্মি করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করতো। বঙ্গবন্ধু আলোতে থেকে বিশ্ব মিডিয়ার সামনে বসে লড়াই করেছেন, ফলে পাকিস্তানিরা তাঁকে গ্রেফতার করলেও হত্যা করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিষয়গুলোর বিশ্লেষণ হওয়া প্রয়োজন। তাজ উদ্দিন আহমদকে ছোট করার জন্য এই প্রশ্নগুলো নয়, বরং তা বিশ্লেষণ হওয়া প্রয়োজন বাংলার স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্বকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য। একের পর এক দেশপ্রেমিক নেতা হত্যা করে আজ আমাদেরকে দেশপ্রেমিক নেতাশূন্য জাতিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। আমরা আর কোন দেশপ্রেমিক নেতাকে হারাতে চাই না। তাই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বের করে সমস্যার সমাধান করতে হবে। আবেগি যারা তারা এই বিশ্লেষ মূলক প্রশ্ন শোনে বলতে পারেন, আমি প্লেটে মাছের মাথা শাক দিয়ে টেকে চার দিকে শুধু কাটা খুঁজছি, তাদেরকে বলবো দয়া করে শাক সরিয়ে মাথাটা বের করেদিলে আমার মতো অনুসন্ধানী মাখালরা খুব উপকৃত হবে। আর দলান্ধ যারা এসব প্রশ্নের কারণে প্রশ্নকারির আদর্শ নিয়ে সন্দিহান প্রশ্ন করবেন, তাদের বুঝা প্রয়োজন, অনুসন্ধানী লেখকরা সবসময়ই সবকিছুর উর্ধ্বে থাকে। বঙ্গবন্ধু বা তাজ উদ্দিন কারো ব্যক্তি বা দলগত নয়, তারা জাতির জন্য করেছেন, তারা জাতীয়।

তিন.
স্বাধীনতার পর গঠিত জাসদ প্রকৃত অর্থে নিয়মতান্ত্রিক কোন রাজনৈতিক দল ছিলো না। তা ছিলো বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে ছোট করার একটি জঙ্গি আন্দোলন মাত্র। এই আন্দোলনে শরিক হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের বিরোধীতাকারী বিভিন্ন চিন্তা ও পেশার লোকেরা। চীন বা রাশিয়া তখন ছিলো সামাজতান্ত্রিক সুপার পাওয়ার। জাসদ সেই পাওয়ারের আশ্রয়ে কিংবা আশ্রয় পাওয়ার প্রত্যাশায় বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের শ্লোগানে গঠিত হয়। দাদা ভাই সিরাজুল আলম খান তো ছিলেন প্রথমে বঙ্গবন্ধুর সাথে-ই। কিন্তু পরে হয়ে যান জাসদের তাত্ত্বিক নেতা। কর্ণেল তাহের, মেজর জলিল, আসম রব, হাসানুল হক ইনু প্রমূখরা সবাই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিভিন্ন চিন্তা থেকে এসে সমবেত হয়েছেন জাসদের ব্যানারে। ওরা সবাই মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিভিন্নভাবে কাজ করেছেন। কিন্তু যুদ্ধের পর তারা জাসদ নাম নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে পৃথক হয়ে যান। জাসদের নেতৃত্ব মুক্তিযোদ্ধের পক্ষে থাকলেও এই ব্যানারের নীচে বেশির ভাগে আশ্রয় নিয়েছেন মুসলিম লীগারদের ছেলেÑভাইরা, যারা একাত্তরে পাকিস্তানিদের পক্ষে ছিলেন। মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করলে যে কেউ তা বুঝতে পারবেন। বঙ্গবন্ধুর শাহাদতের পর খুশি হয়ে মিষ্টি বিতরণ করেছে এই জাসদের নেতা-কর্মীরা। তাদের কোন কোন নেতা ফারুক-রশিদ গং-এর টেংকের উপর দাঁড়িয়ে নৃত্যও করেছেন, যার ছবি আজও বিভিন্ন মিডিয়ায় ছাপা হয়। কমিউনিস্ট পাটি-সহ এই ধারার বাকিরা বঙ্গবন্ধুর আশ্রয়ে থেকে বাকশালের মতো গণ-বিচ্ছিন্ন নীতি প্রণয়নে বঙ্গবন্ধুকে বাধ্য করেছেন। বঙ্গবন্ধু যে অর্থে সংবিধানের নীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতাকে মেনে নিয়েছেন, সেই অর্থেই বাকশালকে গ্রহণ করেছেন। প্রকৃত অর্থে এগুলো বঙ্গবন্ধুকে গণ-বিচ্ছিন্ন করার একটা ষড়যন্ত্র ছিলো। তখন তিনি ভাবতেও পারেন নি তাঁর আশপাশের বামরা কত গণবিচ্ছিন্ন। তিনি তাও ভাবেন নি, নিজের জাতির মধ্য থেকে কেউ তাঁকে এভাবে হত্যা করবে। বামরা বুঝে হোক, কিংবা না বুঝে বঙ্গবন্ধুকে বাকশালের মতো একটি গণ-বিচ্ছিন্ন নীতি তৈরির দিকে নিয়ে গেছে, যা ৭৫-এর ১৫ আগস্টের পথকে সহজ করে দিয়েছে।
অন্যের ওপর আশ্রয় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার অভ্যাস বামদের প্রধান বৈশিষ্ট্যের অন্যতম একটি, যা তাদেরকে এবং তারা যার কাছে আশ্রয় নিয়েছে তাকে ধ্বংস করেছে। ১৯৪৭-এর পূর্বে তারা ছিলো কংগ্রেসের ছত্রছায়ায়, পাকিস্তান আন্দোলনে মুসলিমলীগের ছত্রছায়ায়, একাত্তরের পটভূমিতে ভারতের ছত্রছায়ায় মস্কোপন্থীরা আর পাকিস্তান সরকারের ছত্রছায়ায় চীনপন্থীরা, একাত্তরের পর তারা বঙ্গবন্ধুর ছত্রছায়ায় চলে আসেন, দীর্ঘদিন তারা আওয়ামীলীগের ছায়াসংগঠন হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকেন। স্বৈরাচারী সামরিক শাসক আয়ূব খানের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম পাকিস্তানের আলেমরা আন্দোলন শুরু করলে বামদের একটা অংশ আয়ূব খানের সাথে দীর্ঘদিন সহযোগী হয়েছিলেন। আর অন্য অংশ মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ছত্রছায়ায় আশ্রয় নিয়ে সুযোগের সন্ধানে থাকেন। মাওলানা ভাসানীর আয়ূব বিরোধী আন্দোলনই এক সময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বায়ত্ত্ব শাসন, পরে স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নেয়। রুশপন্থী বামরা তখন বঙ্গবন্ধুর সাথে থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নেন, আর চীনপন্থী বামরা থাকেন পাকিস্তানের পক্ষে। স্বাধীনতার পর জাসদের ব্যানারে একদল বাম যদি বঙ্গবন্ধুর সাথে বিদ্রোহ না করে সহযোগিতা করতো তবে হয়তো নিশ্চিন্ত মনে তিনি দেশকে গড়তে পারতেন, আর যদি একদল বাম ভেতরে বসে বাকশালের মতো গণবিচ্ছিন্ন নীতি তৈরির প্রতি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে না যেতেন তবে হয়তো ৭৫-এর পটভূমি তৈরি হওয়ার সুযোগ আসতো না। প্রশ্ন হলো, ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনায় তাদের মিষ্টি বিতরণ ও খুশির নৃত্য কি প্রমাণ করে না যে তারা এর সাথে জড়িত ছিলেন?

চার
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের পর ভারত ভেঙে জন্ম হয় পাকিস্তানের। মাওলানা সৈয়দ হোসেন আহমদ মাদানী ভারত ভাঙার বিরুদ্ধে ছিলেন। তিনি স্পষ্ট করে সেদিন বলেছিলেন, ‘ভারতে মুসলমানেরা সংকটে রয়েছে সত্য, কিন্তু পাকিস্তান হওয়ার পর ইসলাম সংকটে আটকে যাবে।’ হলোও তাই। ইসলামের নামে যে পাকিস্তান হলো তার প্রথম এবং প্রধান নেতা হলেন মুহাম্মদ আলী জিন্নার মতো একজন অনৈসলামিক মানুষ, যিনি ধর্ম বিশ্বাসে ফার্সিয়ান শিয়া ছিলেন। ফার্সিয়ান শিয়া সম্প্রদায় কাদিয়ানিদের মতো নিজদেরক মুসলিম দাবী করলেও ইসলামী আইনে ওদেরকে মুসলমান বলা যাবে কি না তা ইসলামি আইন বিশেষজ্ঞরা বলবেন। মুহাম্মদ আলী জিন্নার পাকিস্তানে আর আলেম সমাজের কোন মূল্য থাকলো না। শায়খুল ইসলাম আল্লামা শিব্বির আহমদ ওসমানী, যিনি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন এবং সর্বপ্রথম পাকিস্তানের পতাকা আকাশে উঠিয়েছিলেন, আজ পাকিস্তানের করাচি শহরে তাঁর নিজের বাড়িটা পর্যন্ত বে-দখল।

মোটকথা, পাকিস্তান হওয়ার পর পশ্চিম পাকিস্তানে নেতাদের মধ্যে কেমন একটা মুনাফেকি চরিত্র এসে যায়, ভারতে হয় মুসলমানেরা দুর্বল, আর পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলার) মুসলমানেরা পশ্চিম পাকিস্তানিদের কর্তৃক হয় শোষণ-নির্যাতনের শিকার। কিন্তু আলেম সমাজ আর আগের মতো কোন দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের জন্ম দিতে পারলেন না। খ- খ- আন্দোলনের সূত্রপাত হলেও তা মধ্যপথে থেমে যায়। ভাঙা কমর নিয়ে নুন আনতে পান্তা নেই অবস্থায় ৪৭-এর পর থেকে আলেমদের সব সময়ই আন্দোলনের মাঠ ছাড়তে হয়। স্বৈরাচারি আয়ূব বিরোধী আন্দোলনের সময়ও তাই হয়। আলেমরা আন্দোলনের মাঠ ছাড়লে বামরা মাওলানা ভাসানীকে সামনে রেখে সেই মাঠ দখল করে। কিন্তু যেহেতু মাওলানা ভাসানী মার্কসবাদি বাম ছিলেন না, তিনি প্রথম দিকে সরাসরি ছিলেন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা মাওলানা সৈয়দ হোসেন আহমদ মাদানীর রাজনৈতিক শিষ্য। চিন্তাগতভাবে তিনি শায়খুল হিন্দ মাহমুদুল হাসানের রাজনৈতিক চিন্তার অধিকারী ছিলেন। বৃটিশ বিরোধী খেলাফত আন্দোলনের নেতা মাওলানা শওকত আলী, মাওলানা মোহাম্মদ আলী ছিলেন তাঁর মূল প্রেরণা। সন্তোষে আজও রয়েছে মাওলানা ভাসানী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মাওলানা হোসেন আহমদ মাদানী পাঠগার এবং মাওলানা শওকত আলী, মাওলানা মোহাম্মদ আলীর নামে কলেজ। রাজনৈতিক মাঠে তাঁর চিন্তার দিকে তিনি বড়-ই একা ছিলেন, তবে জনগনের কাছে বিপ্লবী ভাসানীর অনেক গুরুত্ব ছিলো। বামরা তাকে পছন্দ না করলেও তাঁর জনপ্রিয়তাকে ব্যবহারের চেষ্টা করে। তিনিও কম কৌশলী ছিলেন না। তিনি ওদের ডাকে গেলেও সুবিধা হাসিলের সুযোগ দেননি। কৌশলে তিনি তাদের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সবসময়ই আল্লাহÑরাসুলের কথা বলেছেন। সন্তোষে একটি মাদরাসা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা শওকত আলী, মাওলানা মোহাম্মদ আলীর নামে কলেজ এবং মাওলানা সৈয়দ হোসেন আহমদ মাদানীর নামে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছেন। হককথা’র মতো পত্রিকা প্রকাশ করেছেন।

অতি-চালাকির কারণে বাংলার রাজনীতির ইতিহাসে বামরা সবসময় স্বয়ংসম্পূর্ণ রাজনৈতিক আন্দোলন সৃষ্টিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তারা একেক সময় একেক জনের লেজুড় ধরে বক্তৃতা-বিবৃতি আর দেওয়াল লিখনিতে আন্দোলনকে রেখে নিজেরা স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় কখনও বিভিন্ন দূতাবাসে, আবার কখনও সরকারী দলের লেজুরে তন-মন বেঁধে রেখেছেন। তাদের এই চেষ্টারই অংশ স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর ছত্রছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ। বঙ্গবন্ধু কোনদিনই তাদের সাথে ছিলেন না দৈহিক কিংবা মানসিকভাবে। তাঁকে বাম এবং স্যাকুলার হিসেবে চিহ্নিত করতে আজীবন প্রধান ভূমিকা রেখেছে বামরাই। সুবিধাবাদি বামরা বঙ্গবন্ধুকে বাম হিসেবে পরিচিত করতে খুব চেষ্টা করেছেন-বটবৃক্ষকে নিজেদের পক্ষে দেখানোর জন্য। তাদের নিজেদের তো কিছু করার সাধ্য নেই, যিনি করে সফল হয়েছেন তাকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসতে পারলে খুব ভালো হয়, তাই এ চেষ্টা। এই চেষ্টায় মরহুম তাজ উদ্দিন আহমদ ছিলেন আওয়ামীলীগের ভেতরের কারিগর, আর বাইর থেকে মূল কাজ করেছেন ন্যাপ নেতা অধ্যাপক মুজাফ্ফর আহমদ। বঙ্গবন্ধুকে তারা প্রথম হত্যা করলেন ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে বাম চিন্তায় সংবিধান তৈরি করে। ৭২-এর সংবিধান আর ন্যাপের সেই সময়ের নীতি বা সংবিধানের মধ্যে কতটুকু ব্যবধান? তা বিবেচনা করলেই বুঝা যাবে কাজটা কে করেছে এবং কি হয়েছে। তখন ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়ন সুপার পাওয়ার। ভারত ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়নের গ্রুপে। বাংলাদেশের মধ্যে তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে সবচে বেশি সম্পর্ক ছিলো অধ্যাপক মুজাফ্ফর আহমদের। বঙ্গবন্ধু তখন আটকে গেছেন ডান-বাম কিছু চক্রান্তকারীর জালে। একদিকে খন্দকার মোস্তাক গং, অন্যদিকে তাজ উদ্দিন গং। এই ‘গং’-দের কারণে আর বঙ্গবন্ধু তাঁর চিন্তা-চেতনার বাংলাদেশ গড়ার দিকে যেতে পারলেন না। আমরা যদি এখানে এসে বলি, এই ‘গং’-রা-ই ফারুক-রশিদের মাঠকে তৈরি করে দিয়েছেন, তবে কি ভুল হবে?

পাঁচ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা একাত্তরের পূর্বে বন্ধি ছিলো পাকিস্তানি শাসক ও তাদের রাজাকারদের কাছে। আর একাত্তরের পর তা বন্ধি হয় রুশ-ভারত আর তাদের রাজাকার বা সভ্যদের কাছে। বঙ্গবন্ধু কিংবা মাওলানা ভাসানি ওদের কারো সাথেই ছিলেন না। তারা পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন মাত্র। যেহেতু ভাসানীর প্রাতিষ্ঠানিক কোন দায়বদ্ধতা ছিলো না, তাই তিনি সন্তোষে আশ্রয় নিয়েছিলেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধু তো দায়বদ্ধ ছিলেন রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের জনগণের কাছে। তবে শুধু জনগণ দিয়ে তো কিছুই হয় না, আন্তর্জাতিক সর্দারদের সাহিয্য-সহযোগিতাও লাগে। বঙ্গবন্ধু কিংবা মাওলানা ভাসানি ছিলেন সরল মনের দেশপ্রেমিক। তারা মাঠ গরম করতে পারতেন, কিন্তু পলিসি তৈরি করতো অন্যরা। এই পলিসি তৈরিকারিদের একদল ছিলো আওয়ামীলীগের ভেতরে, আরেকদল বাইরে। ভেতরে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন তাজ উদ্দিন আহমদ, ড. কামাল হোসেন, মিজানুর রহমান চৌধুরী, দাদা ভাই সিরাজুল আলম খান প্রমূখ। বাইরের মধ্যে ন্যাপের মুজাফ্ফর আহমদ প্রমূখ। ওরা ঘিরে ফেলেছিলেন বঙ্গবন্ধুকে। ওরা নিজেদের বাম চিন্তা থেকে জনগণের নেতাকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন স্বাধীনতার পর। একটা নতুন দেশ গঠনের আগেই জাসদের মতো জঙ্গি সংগঠনের জন্ম এবং পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পাটির জঙ্গি তৎপরতা সত্যই বাংলাদেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্বকে ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু আর দেশ গঠনের চিন্তা করতে পারেন নি, জাসদ আর পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পাটিকে সামাল দিতে দিতেই তিনি হিমশিম খেয়েছেন। স্বাধীনতার পর জাসদ ছিলো অনেকটা হিজবুত তাহরিরের মতো একটি গলাবাজ সংগঠন। আর পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পাটি ছিলো শায়েখ আব্দুর রহমানদের জিএমবির মতো সশস্ত্র বিশৃংখলা সৃষ্টিকারি সংগঠন। ব্যবধান শুধু হিজবুত তাহরির আর জিএমবির লোকেরা ইসলামের কথা বলে, আর জাসদ আর পূর্ব বাংলার কমিউনিস্টরা বলতো সমাজতন্ত্রের কথা। ওদের কর্ম বঙ্গবন্ধুর দেশ গঠনে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। চিন্তাশূন্য আবেগপ্রবণ মানুষগুলো গলাবাজিতে আটকে যায়। দেশ গঠনের প্রতিবন্ধক এই সব আন্দোলন বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তাকে হ্রাস করে। জাসদের ছাত্র সংগঠনে বেশির ভাগ লোকই ছিলেন স্বাধীনতা বিরোধী মুসলিমলীগের নেতা-কর্মীদের ছেলে-ভাই। পর্যবেক্ষণ করলে বিষয়টি সবাই বুঝতে পারবেন। এখানে নামÑঠিকানা দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।

একাত্তরে পাকিস্তান সরকার এবং তাঁর সহচর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসের লোকেরা বঙ্গবন্ধুকে ইসলাম বিরোধী ভারতের দালাল প্রমাণের চেষ্টা করে। এর মূল কারণ, শেখ মুজিবুর রহমানকে ইসলামের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করতে না পারলে সাধারণ মানুষ রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসে যাবে না। তাদের বক্তব্য কিছু সরলপ্রাণ মুসলমানের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেলেও বেশিরভাগ মুসলিম জনতা তা প্রত্যাখান করে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন। পাকিস্তানের তৎকালিন বিশ্ববিখ্যাত আলেম মুফতি মাহমুদ (যিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ওল-পাকিস্তানের সেক্রেটারী ছিলেন) তখন শেখ মুজিবের পক্ষে নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে পাকিস্তানে ইয়াহিয়া-ভূট্টোর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু মিডিয়াতো ছিলো হয় বামদের হাতে, নয়তো পাকিস্তান সরকার বা সরকারপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে। সাধারণ মানুষের কথাতো মিডিয়ায় স্থান পায়নি। ইসলামের বক্তব্য তখন সরকারি মিডিয়াগুলো নিয়েছে শুধু জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সমমনাদের কাছ থেকে। জামায়াতে ইসলামির চরিত্র হলো, তাদের বিপদের সময় তারা মুসলিম উম্মাহের ঐক্যের কথা বলে, সুবিধার সময় সবাইকে অস্বীকার করে। প্রয়োজনে তারা অন্যের নাম বিক্রি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে। এই কা-টা তারা কিছুদিন আগে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের সময়ও করেছে। আল্লামা আহমদ শফি মূলত আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন নাস্তিকদের বিরুদ্ধে, জামায়াত তাদের মিত্রদের সহযোগিতায় সেই আন্দোলনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারের সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। বিশাল আন্দোলনকে আহমদ শফি পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও জামায়াতের খেলার শিকার হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। প্রথম দিকে জামায়াত হেফাজতে ইসলামের পক্ষে কথা বললেও পরে তারা স্বার্থ হাসিল হচ্ছে না বলে বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করে। একাত্তরে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে আলেমরা জামায়াত ও মুসলিম লীগের অপপ্রচার থেকে নিজেদেরকে পূর্ণাঙ্গ বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বলে দীর্ঘদিন জামায়াতের কলঙ্ককে তাদেরও বহন করতে হয়েছে। তবে এখন বিষয়টা অনেকের কাছে পরিস্কার হয়েছে। মুফতি মাহমুদের ভূমিকা এখন ঐতিহাসিকভাবে অনেকের কাছে স্পষ্ট।

স্বাধীনতার পর সাধারণ মানুষ যখন রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদেরকে ধিক্কার দিতে শুরু করলো তখন আত্মরক্ষার্থে জামায়াত ও মুসলিমলীগ শেখ মুজিবুর রহমানকে ইসলামের শত্রু হিসেবে প্রচার করতে আরো ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে। তারা অত্যন্ত ন্যাক্কার জনকভাবে শেখ সাহেবের জন্ম নিয়েও নানা অপপ্রচার শুরু করে। অথচ ঐতিহাসিক সত্য, শেখ মুজিবুর রহমান হলেন শায়েখ আব্দুল আউয়াল বোগদাদী (র.)-এর বংশধর। শায়েখ আব্দুল আউয়াল বোগদাদী (র.) বাগদাদ থেকে এই অঞ্চলে এসেছিলেন ইসলামের দাওয়াতি কাজে। এখনও টুঙ্গিপাড়া শায়েখ আব্দুল আউয়াল বোগদাদী (র.) বাড়ি রয়েছে।
রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের এবং জাসাদ সহ কিছু বামদের আক্রমণ ও অপপ্রচার, আর ন্যাপ সহ কিছু বামদের ঘিরে রাখা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পথ সুসংহত করে দেয়। বাম যারা বঙ্গবন্ধুর বিরোধীতা করেছেন তাদের সম্পর্কে ইতোমধ্যে লিখেছি। এখন ইসলামের ব্যানারে যারা একাত্তরের স্বাধীনতা এবং পরবর্তীতে শেখ মুজিবুর রহমানের বিরোধীতা করেছেন তাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন,

১) পাকিস্তানের তৎকালীন নেতা মদ্যপ ইয়াহিয়া এবং স্যাকুলার ভূট্টো থেকে কি উন্নত চরিত্রের অধিকারী শেখ মুজিব ছিলেন না?
২) শেখ মুজিবুর রহমানের চিন্তা-চেতনা ও চরিত্রে বাম কিংবা স্যাকুলারিজম কোথাও দেখা যায় কি?
৩) একাত্তরে তাঁকে অনুপস্থিত রেখেই কি ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতার হাত এগিয়ে দেয়নি? তা ছাড়া তিনি ভারতের দালালিটা কোথায় এবং কীভাবে করেছেন?

একটু নিরপেক্ষ এবং ঈমানদারীর সাথে বিবেচনা করে উত্তর দিন। ইয়াহিয়া-ভূট্টো শুধু চরিত্রহীন স্যাকুলার নয়, নিয়মতান্ত্রিক মদ্যপ এবং নর্তকিবাজও ছিলো। জুলফিকার আলী ভূট্টো তো ঐ ব্যক্তি যিনি বিশ্বাস করতেন হযরত মোহাম্মদ (সা.) পৃথিবীর প্রথম কমিউনিস্ট। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁর এক বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দিলে পাকিস্তানের উলামায়ে কেরাম তাকে কাফের ফতোয়াও দিয়েছিলেন। পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামির বড় নেতা ‘মাওলানা কাওসার নিয়াজী’ এই ফতোয়ার সমর্থনে একটি বইও তখন প্রকাশ করেছিলেন। পাকিস্তানের প্রতিটি মসজিদের জুম্মায় ভূট্টোকে কাফের ফতোয়া দিয়ে খতিবরা বক্তব্য রেখেছেন এবং একদিন কালো দিবসও পালিত হয়েছে। (নিউ ওয়ার্ল্ডওডার, ইসলাম আউর পাকিস্তান, অক্টোবর ১৯৯৮, পাকিস্তান-এ গ্রন্থের লেখক ভূট্টোর দল পাকিস্তান পিপলস পাটির নেতা তারেক ওয়াহীদ বাট)।

এখানে প্রশ্ন, শেখ মুজিবুর রহমান এতো জঘন্য কথা কি কোনোদিন মুখে উচ্চারণ করেছেন?

১৯৭০-এর নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের বিজয় হলে ভূট্টো সাহেব ঘোষণা করলেন-‘উধর তুম ইধর হাম’ অর্থাৎ ওখানে তুমি এখানে আমি। অতঃপর ঘোষণা দিলেন-‘ যে পূর্ব-পাকিস্তানে এসম্বলিতে যাবে সে আর পশ্চিম-পাকিস্তানে ফিরে আসতে পারবে না, যদি আসে তবে তার পা ভেঙে দেওয়া হবে’।-(প্রাগুক্ত)।

আবারও প্রশ্ন :
১) পাকিস্তান ভাঙার জন্য পাকিস্তানের বাম-নেতা জুলফিকার আলী ভূট্টো প্রকৃত দায়ী নয় কি?
২) কেন আপনাদের লোকেরা বঙ্গবন্ধুর চরিত্রকে ধ্বংস করতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে, কারো চরিত্র হনন কি ইসলাম সম্মত?
৩) সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের যুদ্ধের প্রেক্ষাপট বলছে, পাকিস্তান ভাঙার জন্য গাদ্দার শেখ মুজিব নয়, স্বয়ং ভূট্টো। প্রশ্ন জাগে মনে, মুফতি মাহমুদের মতো আলেম যখন শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য দিলেন, যখন জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্র সংঘের নেতা শহীদ সৈয়দ শাহ জামাল জামায়াতকে প্রকাশ্য জনসভায় অনুরোধ করলেন, এখন আর জালেমদের পক্ষে থাকা যাবে না, আসুন আমরা মজলুমদের (বাঙালীদের) পক্ষে লড়াই শুরু করি, তারপরও জামায়াতে ইসলামী কোন যুক্তিতে ইয়াহিয়া-ভূট্টোর পক্ষ নিলো?
৪) জামায়াত কি একটু ব্যাখ্যা দিবে তাদের সেই বিপ্লবী কর্মী সৈয়দ শাহ জামাল সেদিনের বক্তব্যের পর থেকে কোথায়?

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রেক্ষাপটে এই সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়া খুবই জরুরী। দলীয় চিন্তা থেকে নয়, বিচার-বিশ্লেষণের চিন্তা থেকে।

ছয়
তথ্য নিলে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতি শুরু হয়েছিলো মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী, মাওলানা আতহার আলী, মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগিশ প্রমুখদের চিন্তা-চেতনায় পরিচালিত রাজনৈতিক আন্দোলনের কর্মী হিসেবে। মাওলানা আতহার আলী (র.)-র সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের এতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো যে, শেখ সাহেব তাঁকে দাদা ডাকতেন। আর মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরীর সংস্পর্শে তাঁর যাওয়া-আসা হতো প্রায়ই। তারা দুজন একই এলাকার লোক। মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী সেই সময়ে যেমন বড় আলেম ছিলেম তেমনি বিএ পাশও ছিলেন, ফলে স্কুল-মাদরাসার সকল শিক্ষিতের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিলো। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর পূর্বেই মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরীর কথাও উল্লেখ করেছেন।
সে যাই হোক, শেখ সাহেব কোনোদিনই বাম রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর অবস্থানটা যখন বটবৃক্ষের মতো হয়ে গেলো তখন বামরা দলবেঁধে তাঁর ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। একাত্তরে তিনি পাকিস্তানের জেলে বন্দি থাকতেই তৎকালীন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমদ, ড. কামাল হোসেন প্রমুখদের মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু শেখ সাহেব জেল থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশে ফেরার পর একদিন তাজ উদ্দিন আহমদকে ধমক দিয়ে বললেন-‘তাজ উদ্দিন ঐ বেটি (ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধী) যা বলেছে তুই চোখ বুজে মেনে নিলি, কী লিখেছে তা দেখে কি দস্তখত করেছিস? জিজ্ঞেসও করিস নাই কিসে দস্তখত দিচ্ছিস?’ (গিয়াস কামাল চৌধুরী, সাক্ষাৎকার, ইকরা-দ্বিতীয় সংখ্যা, মার্চ ২০০১, বার্মিংহাম, ইউকে)।
পূর্ব-পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্মসম্পাদক এবং ‘বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট’-এর প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি, ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা বিভাগের সাবেক বাংলাদেশ প্রতিনিধি, গিয়াস কামাল চৌধুরীর মতে-‘বঙ্গবন্ধু ভারতের সাথে গোলাম-মুনিবের ন্যায় চুক্তির ব্যাপারে ক্ষুব্ধ ছিলেন বলেই শেষ পর্যন্ত ভারতের সাথে বাণিজ্য চুক্তি অগ্রসর হতে দেননি। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে ইন্ধিরা গান্ধীর বাংলাদেশ সফরকেও বঙ্গবন্ধু সুনজরে দেখেননি। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন আমরা কোন ফাঁদে পা দিয়েছি’। (প্রগুক্ত)।

শেখ মুজিবুর রহমান স্যাকুলার এবং ভারতের দালাল না হওয়ার পক্ষে গিয়াস কামাল চৌধুরীর স্বাক্ষী এজন্যই গুরুত্বপূর্ণ, যেহেতু সাংবাদিক হিসেবে তিনি খুব কাছ থেকে শেখ সাহেবকে শুধু দেখেননি বরং ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে নির্মল সেন, আতাউস সামাদ এবং তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশাল নীতির বিরুদ্ধে সংগঠিত সাংবাদিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। শেখ সাহেব যে ইসলামদ্রোহী ছিলেন না তাঁর বড় প্রমাণ-একাত্তরে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসরা এতো অপকর্ম করার পরও তিনি শুধু ইসলাম এবং উলামায়ে কেরামের শ্রদ্ধার্থে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। খুলে দিয়েছিলেন বাম মুক্তিযোদ্ধাদের কর্তৃক বন্ধ করে দেওয়া সকল মাদরাসা, মসজিদ এবং ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইসলামিক ফান্ডেশন। দিয়েছেন বিশ্ব ইজতেমার জন্য স্থান বরাদ্ধ করে। বন্ধ করেছিলেন জুয়া ও মদের পারমিট। ভারতের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে গিয়েছেন ওইসি’র ইসলামী সম্মেলনে।
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর প্রাণ দানের সঠিক ঘটনা বুঝতে হলে দয়াদর্শনের আলোকে এই বিষয়গুলোকে বিবেচনায় আনতে হবে। হৃদয়ে দয়ার জাগরণ ছাড়া সত্য ও সঠিক কখনও বেরিয়ে আসতে পারে না। আমরা ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির আমবাগানে নবাব সিরাজ-উদ- দৌলার পরাজয়ের মধ্যদিয়ে যে স্বাধীনতা হারিয়েছিলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসে সেই স্বাধীনতাকে ফিরিয়ে আনতে চুড়ান্ত লড়াইয়ের ডাক দিয়ে এ জাতিকে চিরদিনের জন্য কৃতজ্ঞতায় বেঁধে গেছেন। তা আমাদের স্বীকার করতে হবে। ইতিহাস পর্যালোচনায় বঙ্গবন্ধু বিতর্কের উর্ধ্বে, তা আমরা বলছি না। আমরা জানি তিনি মানুষ ছিলেন, তাঁরও ভুল আছে। আমাদের সঠিক নেতৃত্বের স্বার্থে তাঁকেও আলোচনা-সমালোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে হবে, নতুবা ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়া হবে। আবেগ কিংবা হিংসা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বিচার-বিবেচনা করলে চলবে না, তাকে বিচার-বিবেচনায় আনতে হবে সঠিক ইতিহাসের সূত্র ধরে। যেকোন বিষয়ের আলোচনা কিংবা সমালোচনায় যখন জ্ঞান, বুদ্ধির সাথে প্রেমের সম্বয় হয় তখন তা সঠিক পথে এগিয়ে যায়। সত্যসন্ধানিরা নিজের বিরুদ্ধে সত্য উপস্থাপিত হলেও ক্ষুব্ধ হন না। বুদ্ধিমানেরা নিজের ভুলের জন্য আফসুস করে নিজকে পরিবর্তন করেন। তা হোক ব্যক্তিগত কিংবা রাজনৈতিক। বাঙালীদের এই চরিত্র আজও গড়ে উঠেনি। বরং আমরা নিজের ভুলকে শুদ্ধ প্রমাণে প্রয়োজনে আরও একশ মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করি। নিজকে ভুলের উপর যুগের পর যুগ রাখতে সত্য সমালোচনাকারিকে যেকোন ভাবে থামিয়ে ফেলি। ব্যক্তিগত কিংবা রাজনৈতিক কোন সত্য সমালোচনা-ই আমরা সহ্য করতে পারিনা। ইসলামে ‘এহতেসাব’ (অর্থাৎ আত্ম-সমালোচনা)-এর উপর গুরুত্ব দেওয়া হলেও আমরা সত্যসন্ধানে ঘরেÑবাইরে কোথাও এহতেসাবের মুখোমুখি হতে চাই না। ফলে বাম ও পূঁজিবাদিদের মতো আজ ইসলামি দলগুলোও সত্যকে ছেড়ে মিথ্যাকে অহংকারের সাথে প্রতিষ্ঠিত রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। অসংখ্য প্রমাণ দেওয়া যাবে। প্রমাণ দিয়ে আলোচনাকে আর দীর্ঘ করতে চাই না। সবাই নিজেদের অবস্থান থেকে বিবেচনা করে নিলেই অনেক কিছু পেয়ে যাবেন। আমরা মনে করি এহতেসাবের নিয়তে দয়াদর্শনের মূল চারনীতি জ্ঞান, বুদ্ধি, কর্ম এবং প্রেমের আলোকে বাংলাদেশের ডান-বাম-ইসলামিকদের রাজনৈতিক ইতিহাসের পর্যালোচনা বার বার হওয়া প্রয়োজন। শ্লোগান দিয়ে কিংবা রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে শাসন করে সত্য প্রতিষ্ঠা করা যায় না, সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে হয় হৃদয়ে ধারণ করে।

সবশেষে আমরা নিন্দা জানাই যারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমরা পৃথিবীর সকল খুন ও হত্যার নিন্দা জানাই। আমরা অবস্থানুসারে সবার রূহের মাগফেরাত কামনা করি।





সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×