আজ আবার সাঈদি ভক্তরা বলছেন সাঈদি সাবকে চাঁদে দেখা গেছে। তাও আমি বিশ্বাস করছি না। কৃষ্ণভক্তরা কৃষ্ণকে চাঁদে দেখে তৃপ্ত হয়। সাঈদি ভক্তরা সাঈদিকে চাঁদে দেখে তৃপ্ত হচ্ছে। এর সত্য-মিথ্যা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। ফালতু লোকেরাই এগুলো নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করে। আমি মনে করি বিষয়টি সম্পূর্ণ নিউরনিক প্রেমের। প্রেমিকদের বিষয় সর্বদাই সাধারণ বিষয় থেকে ভিন্ন হয়। প্রেমিকজন দেখতেই পারে। আমরা পীর মজির উদ্দিনের একটি গান থেকে বিষয়টি আমলে আনতে পারি। কবি বলেন-
‘লাইলী মজনু দুই জনা পিরিতি করিয়া।/আখেরে হইয়া গেলা লা-মৌত আউলিয়া/ - কেহ যদি কহিত মজনু বন্দা তুমি কার।/মজনুয়ে কহিত লাইলী সকলি আমার -লাইলী বিনে অন্যরূপ চক্ষে নাহি আসে।/যে দিগে ফিরাই আঁখি লাইলী রূপ ভাসে - দুই তনে এক তন ভিন্ন নাহি ছিল।/ পিরিতি করিয়া তারা এ মতে মিশিল -একদিন মজনু এয়ছা কান্দিয়া কান্দিয়া।/ লাইলী রূপে বসে ছিল ধ্যান করিয়া ধ্যানে বসিয়া এছা মোহিত হইল।/ নিজ রূপ ছাড়িয়া তখন লাইলী রূপ ধরিল হেন কালে লাইলী আসি সম্মুখে দাড়ায়।/ বলে ওহে প্রাণনাথ দেখনা আমায় মজনু বলে আমি লাইলী তোমারে চিনি না।/ মজনু এখানে নাই লাইলী কয় জনা এমত মোহিত যেবা মাশুকে হইব।/ অজুদে মজুদ খোদা জুদা না থাকিব/ মজনুর তাল্লাসে লাইলী বাহিরে যাইত।/আখেরেতে মাও বাপে বেড়ি দিয়া রাখিত একদিন বেড়ী ভাঙ্গি বাহিরে চলিল।/ ধরিয়া আনিয়া বাপে চাবকে মারিল লাইলীর পিঠেতে চাবক মারে তার পিতায়।/ মজনুর পিঠেতে দাগ বসিল হেথায় আশক ছাদিক এছা মিলে দুই জন।/ নিশ্চয় পাইব আল্লা রছুল সে জন ’ ( পীর মজির উদ্দিন, প্রেমমালা)
মোটকথা, অন্ধ না হলে প্রেমিক হওয়া যায় না। আমাদের দেশের হিন্দু-মুসিলম শিক্ষিত-অশিক্ষিতরা বেশিরভাগ-ই ভাববাদি। ইসলাম যদিও নিচক ভাববাদে নয় কিন্তু বাংলায় এসে তা ভাববাদকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বস্তু বা যুক্তি-প্রমাণ-শাস্ত্র ইত্যাদিকে ছেড়ে দিয়েছে। এখানে শিক্ষতরাও যুক্তির কথা_দর্শনের কথা চিৎকার দিয়ে বলেন, কিন্তু নিজেরা শাস্ত্রীয় ধর্মকে অনেক ক্ষেত্রে মানতে রাজি নয়।
সাঈদি সাবকে চাঁদে দেখার বিষয়টি মূলত ভাববাদেরই একটি অংশ। এবং তা একদিন মিথ হয়ে যাবে হয়তো। হয়তো খুঁজে একজনকেও পাওয়া যাবে না যিনি নিজে দেখেছেন। কিংবা যারা দেখেছেন তারা হয়তো বেশি আবেগি মানুষ কিংবা ভক্ত-শিষ্য। আমার শশুড় সাহেব আমাকে প্রায় বলেতন- জানো বাবা, `পীররা আকাশে উড়ে না-মুরিদরা উড়িয়ে ফেলে'। সে যাই হোক। সাঈদি সাহেব আকাশে উড়লে যা না উড়লেও তা । এতে তার বরকতের কিছু বৃদ্ধিও পাবে না, হ্রাসও পাবে না।
কেরামতির সাথে ওলি হওয়া না হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। ওলি যিনি তিনি কেরামতি নিয়ে ভাবেনও না। ওলিআল্লাহদের কেরামতি হয় কি না আমি সেই বিতর্কে যেতে চাই না। হতেই পারে। নাও হতে পারে। কেরামতি নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। আমি বলি যিনির কেরামতি হলো তিনি কোন কর্মের বিনিময় তা লাভ করলেন তা বিবেচনা করলেই আমরা বেশি উপকৃত হতাম। সাঈদি সাবকে চাঁদে দেখা নাদেখা নিয়ে বিতর্কের কোন সুযোগ নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৫৮