অফিসে কাজের ফাঁকে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় সবচেয়ে বেশি। গত ক'দিন দেশে দুটি বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা শোনা যাচ্ছে। দশ তারিখে ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ ও দেশের ব্যাংক খাত।
দুপুরের দিকে অফিস মোটামুটি ফাঁকা থাকে। এসময় লোকজনের আসা-যাওয়া খুব কম। আমাদের আলোচনা জমে ওঠে এ সময়।
সরোয়ার সাহেব খুবই ঠান্ডা মেজাজের লোক। চিন্তা ভাবনা না করে কথা বলা তো দূরে থাক, হাসেনও না। প্রতিটা কাজ করেন ধীরস্থির ভাবে। কোনো বিষয়ে তাড়াহুড়া করেন না। আলোচনা বা আড্ডার ক্ষেত্রে আগ্রহ কম। তবে কোনো ভাবে আলোচনা বা আড্ডায় জড়িয়ে গেলে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। নিটোল বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন।
আজ কথায় কথায় দেশের অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা হয়। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকে তারল্য সংকটের যেসব সংবাদ শোনা যাচ্ছে সেটা নিয়ে আলোচনা। যে যার মতো নিজস্ব অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। কেউ ইতিবাচক ও কেউ নেতিবাচক মত দেয়। সরোয়ার সাহেব চশমার কাঁচ টিস্যু দিয়ে মুছতে মুছতে বলেন, যাহা রটে যাহা একটু হলেও ঘটে, এটা কিন্তু সত্য।
সরোয়ার সাহেবের কথায় কেউ দ্বিমত প্রকাশ করে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্বিমতের সুযোগ নাই। সমর্থন দেয়। বলে, এটা ঠিক।
সমর্থন পেলে আর যুক্তিখণ্ডনের প্রয়োজন হয় না। সরোয়ার সাহেবও আর ওদিকে যান না। তারপরও সে যে কথা বলেছেন, সে কথার দিকেই ইঙ্গিত দেন। বলেন, এই যে, বাজারে আপেল পাওয়া যায় এর দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। কদিন আগেও যে আপেল একশ টাকা ছিল এখন যেটা দুইশ টাকা। আপেল তো আমাদের দেশে উৎপাদন হয় না। বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। সেদিন আপেল কিনতে গিয়ে দোকানিকে বললাম, তোমরা এত দাম নিচ্ছো কেন?
দোকানি বলল, আমদানি কম একারণে দাম একটু বেশি।
বললাম, আমদানি কম কেন?
দোকানি বলে, এলসি বন্ধ যে।
বললাম, এলসি বন্ধ কেন?
দোকানি বলে, ডলার নাই এলসি চালু করলে ডলার লাগবো না?
সরোয়ার সাহেব সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, চিন্তা করলাম ফুটপাতের সামান্য এক ফল বিক্রেতাও রাখে দেশের অর্থনৈতিক খবর। এলসি ও ডলার সম্পর্কে ফুটপাতের এ ফল বিক্রেতাও এখন অবগত। সেইদেশে যতই আশার বাণী শোনানো হোক না কেন, লাভ নাই। জনগণ ঝুড়ির খবর ঠিকই জানে। কেউ প্রকাশ করে কেউ করে না। তবে এভাবে যদি দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তাহলে অবস্থা খুবই কঠিন হবে।
সরোবর সাহেবের কথায় আমরাও একমত হই।
-সোহাগ তানভীর
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫৫