অফিসে যাওয়া মাত্র কলিগ জামান সাহেব ডাকলেন। কাছে যেতেই বললেন, এই দেখুন কি ঘটনা ঘটেছে!
সামনে থাকা কম্পিউটার মনিটরে চোখ রাখি। জামান সাহেব পত্রিকার একটা নিউজ দেখালেন ও পড়ে শোনালেন। নাটোরে ছাত্রকে বিয়ে করে ভাইরাল কলেজ শিক্ষিকার মরদেহ উদ্ধার!
সংবাদটা দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। ভীষণ রকমের খারাপ। এতোটাই খারাপ হলো যে, কাছের কেউ মারা গেলে যেমন খারাপ হয় ঠিক তেমন বা তার কাছাকাছি পর্যায়ের খারাপ।
জামান সাহেবের কথা, তুই শিক্ষিত মানুষ তুই কেন মরবি? প্রয়োজনে আরেকটা বিয়ে কর। নায়ক-নায়িকাদের অনেকেই দেখি চার-পাঁচটা বিয়ে করে। তুই করতে পারলি না।
চারিদিক হতে যখন একের পর এক কটুকথার তীর আক্রমণ করে। কাছের মানুষগুলো দূরে সরে যায় তখন জ্ঞান বুদ্ধি ও বিবেক হতাশা ও বিষন্নতার কাছে পরাজিত হয়। জীবন হয় বড়ই দুর্বিসহ। আমাদের কাছের মানুষেরা সফলতায় গর্বের ভাগ নিয়ে গর্বিত হলেও ব্যর্থতা বা দুঃসময়ে কলঙ্কের ভাগ নিয়ে কলঙ্কিনী হয় না।
এতোকথা জামান সাহেবকে না বলে শুধু বলি,মৃত্যু কোনো সমাধান নয়। রাত যত গভীর হয় প্রভাত তত নিকটে আসে।
নিজের রুমে গিয়ে বসি। মন খারাপ থাকায় কাজে মন বসাতে পারি না। বসে বসে ভাবি। মানুষ মানুষকে অস্ত্র দিয়েই কি শুধু খুন করে? মুখের কথা দিয়ে খুন করে না? 'মুখের কথা বন্দুকের গুলির চেয়েও মারাত্মক' কথাটির মর্ম এখন আমার কাছে পরিস্কার। শিক্ষিত বা অশিক্ষিত যে-ই হোক না কেন, সমাজে একশ্রেণির মানুষ যারা অপরের ভালো থাকা মোটেও সহ্য করতে পারে না। কেউ যদি চিরাচরিত সমাজ ব্যবস্থার বাহিরে কোনো বৈধ কাজ করে ভালো থাকে এতেই গা জ্বালা করে ঐসব মানুষ রূপী কীটদের।
যে মানুষ কয়েকদিন আগে মিডিয়ায় বলে, তারা ভালো আছে। সুখে আছে। কলেজ টিচার হয়ে কলেজ ছাত্রকে বিয়ে করে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। দুজনের বুঝাপড়ায় কোনো ভিন্নতা নাই। ছেলের পরিবার বিষয়টিকে স্বাভাবিক ভাবেই গ্রহণ করেছে। এত অল্প সময়ে সেই মানুষটার মৃত্যু সংবাদ শুনতে হবে ভাবিনি।
নাটোরের একটি গ্রামের বিয়ের এই ঘটনা দেশব্যাপি ছড়িয়ে দিয়ে আলোচনা সমালোচনা জন্ম দেওয়ার দায় মিডিয়ারও কম নয়। প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার দৃষ্টিতে অসামঞ্জস্য এমন একটি বৈধ ঘটনা একাধিকবার নানা রংয়ে ঢংয়ে প্রচার করে তাদের দাম্পত্য জীবন দুর্বিসহ করে তোলার পেছনে মিডিয়া ও কিছু ইউটিউবারদের দায় কিন্তু একেবারেও কম না। মিডিয়া সন্ত্রাসও এ মৃত্যুতে দায়ী বলে মনে করি।
পরিবার ও সমাজিক কটুকথার পাশাপাশি দেশব্যাপি জন্ম নেওয়া কটুকথা কি করে সহ্য করবে বেচারা।
এই সমাজ মেয়েটিকে বাঁচতে দিল না। কটুকথার তীর বিদ্ধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করলো। বুঝা গেল মন্তব্য গন্তব্য ঠেকাতে পারে কিনা জানি না তবে মৃত্যু ঘটাতে পারে।
-সোহাগ তানভীর
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:১৭