কয়েট প্যাকেট ত্রাণ নিয়ে সিলেট গিয়ে বন্যার্তদের সাথে ছবি তুলে ফেসবুকে দিলে ব্যাপারটা বেশ হতো!
মানুষের ভালেবাসা পাওয়া যেত। ভোটের সময় এই ছবি প্রচার করে মানুষের কাছে ভোট চাওয়া যেত। আর তাছাড়া বন্যার্তদের ত্রাণ দিয়ে অনেকেই হিরো বনে যাচ্ছে। হিরো বনের যাওয়ার এই সীমিত সময়ের সুযোগ হাত ছাড়া করা কিছুতেই ঠিক হবে না।
ঢাকায় জনৈক নেতার এমন ভাবনা উদয় হলে সেক্রেটারিকে ডাকলেন। জনৈক নেতার মানবসেবার ইচ্ছার কথা জেনে প্রেসক্লাবে খবর পাঠান হলো। ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন নিয়ে দলে দলে সাংবাদিকেরা আসলেন। জনৈক নেতা মায়াভরা কণ্ঠে বললেন, মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। আমার সিলেটবাসী পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। কি করে আমি ঘরে বসে থাকি! আনাহারে অর্ধহারে অন্ধকারে আমার সিলেটবাসী দিন কাটাচ্ছে। আমি ঘরে থাকতে পারছি না। আমি যাব। আমার সিলেটবাসীর দুঃখ কষ্টের সাথী হতে আমি সেখানে যাব।
জনগণের প্রতি নেতার ভালোবাসা দেখে সাংবাদিকেরা হা হুতাশ করতে করতে কনফারেন্স রুম হতে বের হলেন। নিউজ করলেন, বন্যা কবলিত দুঃখী মানুষের দুঃখের সাথী হতে নেতার সিলেট গমন! বানভাসী অসহায় মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার টানে নেতা যাবেন সিলেট!
কনফারেন্স শেষে সেক্রেটারিকে ডেকে নেতা বলেন, যার ক্যামেরার লেন্স ও ফোকাস ভালো তাকে সঙ্গে যেতে বলবে। আর সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থা কি কিছু ঠিক করেছো?
- জ্বী। গাড়ি করে যাবেন। যাওয়ার পথে বন্যা কবলিত কিছু এলাকা দেখবেন আর তাছাড়া রাস্তায় আশ্রয় নেওয়া মানুষদের খোঁজ খবর নিবেন। ভালো হবে। পাবলিসিটি হবে খুব।
- না না। গাড়ি করে নয়। এত সময় গাড়িতে বসে থাকতে পারবো না। বয়স হয়েছে। প্রকৃতির চাপটা এখন একটু বেশি। সুতরাং অল্প সময়ে কাজ সেরে বাসায় ফিরতে হবে। বাসার কমোড ছাড়া আমি আবার কম্ফোটেবল ফিল করি না। শোন, হেলিকপ্টার ঠিক করো। খেয়াল রেখ, হেলিকপ্টারের এসিতে যেন কোনো সমস্যা না থাকে। বুঝেছো?
- জ্বী, স্যার। একদম সিলেটের বানের পানির মত পরিষ্কার বুঝতে পেরেছি। ত্রাণ বিতরণের জন্য নৌকা ঠিক করে রাখবো কি? নৌকায় করে আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে ত্রাণ দিবেন।
- তুমি জানো না আমি সাঁতার জানি না? নৌকায় চড়তে পারবো না। একটা জায়গা ঠিক করো সেখানে গিয়ে ত্রাণ দিব।
- সিলেটে এখন নৌকার সংকট স্যার। আট শ টাকার নৌকা ভাড়া এখন চল্লিশ হাজার টাকা। এতো টাকা নৌকা ভাড়া দিয়ে তো কেউ ত্রাণ নিতে আসবে না।
- তাহলে হেলিকপ্টার করে কয়েক প্যাকেট ত্রাণ নিয়ে গিয়ে ফেলে দিলেই হবে।
- খাবার ও প্রয়োজনীয় দ্রব্য পানিতে পরে নষ্ট হয়ে যাবে স্যার।
- এতো চিন্তা করলে তো তোমার চাকুরি থাকবে না। যাও হেলিকপ্টার ঠিক করো।
হেলিকপ্টারে করে গিয়ে শতাধিক ফিট ওপর থেকে বয়োবিক ব্লুটুথ সংযোগে বানভাসি মানুষের দুঃখ ও কষ্ট উপলব্ধি করেন নেতা। সাথে থাকা সাংবাদিক লাইভ করার আগে এক্সপ্রেশন বুঝিয়ে দেন। নেতা হেলিকপ্টারের গদিতে বসে কাঁদো কাঁদো এক্সপ্রেশনে জানালায় চোখ রাখেন। দেশবাসি লাইভ ভিডিও দেখে চোখ মুছেন।
সোহাগ তানভীর
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০২২ সকাল ১০:৩২