ধূমপান ছেড়ে দেয়া কোন ব্যাপারই না। কত বার যে ছাড়েছি তার হিসেব নাই ! ভবিষ্যতেও যে কত বার ছাড়বো তাও জানা নাই! ধূমপান করাটা কিছুটা পারিবারিক ঐতিহ্যের মত। একসময় আমার বাবা খেত এখন আমি খাই। আমি ছাড়লে আমার সন্তান খাবে তারপর তার সন্তান, প্রগতিশীল ঐতিহ্য । বাবা যখন সিগারেট খেত তখন চেয়ে চেয়ে দেখতাম আহ কি মজা যেন তিনি কোন রাজা বাদশা ! মনে মনে ভাবতাম বড় হয়ে একদিন আমিও খাব। সেই ছোট বেলাতে একদিন কৌতুহুল মিটাতে বাবার টানা সিগারেট মেঝে থেকে তুলে চলে গেলাম সোজা খাটের নীচে, আয়েশ করে দুটান দিতেই ধরা খেলাম কাজের বুয়ার কাছে, কোন রকমে হাতে পায়ে ধরে পার পেলাম সে যাত্রাতে।
মানুষ ধূমপান করে কৌতুহল বশে না হলে সংগ দূষে। আমর এক বন্ধুর ধূমপান ধরেছে আত্মসম্মান বাঁচাতে। স্কুল, কলেজে পড়াকালিন সময়ে আমরা তাকে কোন দিন সিগারেট খাওয়াতে পারি নাই, তার মতে সিগারেট খাওয়া আর গু খাওয়া একই কথা কিন্তু ইউনিভার্সিটিতে একবছর ঘুরতে না ঘুরতেই সেই ছেলে সিগারেট খাওয়া শিখে ফেলে। তার এই পরিবর্তন দেখে আমি মহা খুশি হয়ে জিগ্যেস করলাম কিরে গু খাওয়া ধরলি কবে থেকে? আর বলিস না দুস্ত ইউনিভার্সিটির মাইয়ারা আমারে দেখাইয়া দেখাইয়া সিগারেট খায়, ইজ্জতের ব্যাপার হইয়া দাড়াইছিল তাই শুরু করলাম। আফটার অল আমি পুরুষ তো। আমি বুঝতে না পেরে তাকে জিগ্যেস করলাম- সিগারেট খাওয়া না খাওয়ার সাথে পুরুষের কি সম্পর্ক? শুন- যারা সিগারেট খায় তারা সুপুরুষ, যারা খায় না তারা কাপুরুষ আর যারা খেয়ে ছেড়ে দিছে তারা হলো মহাপুরুষ। অকাট্য যুক্তি, ইউর অনার আমি আবার চ(**) হয়ে গেলাম, আগে জানতাম না, ধর দুস্ত একটা বিড়ি জ্বালা -
“শুন মুমিন মুসলমানও
বেশি করে বিড়ি টানো
হাশরের ময়দানেতে বিড়ি পাইবা না
একশ একটা লাইন হইবো
একটা মাত্র বিড়ি রইবো
চ্যান্স পাইলেও পাইতে পারো
নেশা হইবো না !”
আফসুস, সিগারেট না খেলে নাকি সুপুরুষ হওয়া যায় না। তাহলে দুস্তর কথা মতে, যে মেয়েরা সিগারেট খায় তারা হলো সুমহিলা, যারা খায় না তারা কুমহিলা (কাপুরুষের স্ত্রীলিং হয় না) আর যারা খেয়ে ছেড়ে দিছে তারা মহামহিলা। সবচাইতে আশার বিষয় হলো দেশে সুমহিলার সংখ্যা দিন দিন বাড়তেছে, দিন বদলাইতেছে।
অফিসে কাজের ফাক ফুকরে একটু ফুয়েল নিতে মাঝে মাঝে নীচে নামতে হয়, একগেয়েমি কাটাতে এককাপ চায়ের সাথে একটা টা খেতে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সেখানে বেড়ে গেছে সুমহিলাদের আনাগুনা, উল্টো দিকেই একটা ইউনিভার্সিটি অবস্থিত হয়েছে। মেয়েগুলা আমাদের দেখাইয়া দেখাইয়া সিগারেট খায়, পুরা ইজ্জতের ব্যাপার হইয়া দাড়াইছে। এতদিনের পারিবারিক ঐতিহ্য মনে হয় আর ধরে রাখা যাবে না। মহাপুরুষ হওয়া ছাড়া আর বুঝি কোন উপায় নাই। আপনাদেরও বলি শুনেন- ধূমপান ফুসফুস ক্যান্সারের কারন, বিশ্বাস না হলে প্যকেটের গায়ে দেখেন বাংলা হরফে বড় বড় করে লেখা আছে, তাছাড়া ইহা খেলে পেট ভরে না, পৃথিবীর একমাত্র ভেজাল খাবার যা জেনে শুনে আমাদের খাওয়া ঠিক না।
স্কুল জীবনের একটা ঘটনা দিয়ে শেষ করিঃ-
এক বন্ধু স্কুলে ঢুকার আগে ধূমপান করতেছিল। দূর থেকে আমাদের অংকের টিচার বিষয়টা দেখে ফেলে। ক্লাশে বন্ধুটিকে বলা হয় তার হাত স্যারের নাকের সামনে ধরতে, তারপর তার নাকের সামনে ধরতে। এবার স্যারের প্রশ্ন- তোমার হাত দিয়ে সিগারেটের গন্ধ কেন আসে?
বন্ধুর উত্তর-আমি জানি না স্যার, মনে হয় সকালে আমি যখন ঘুমাইতেছিলাম তখন কেউ আমার হাত দিয়ে সিগারেট খেয়ে গেছে !
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১১ রাত ৯:৩৩